আল্পস্ শিখরে

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৭/২০১১ - ৪:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মঁ ব্লা, আল্পস্ পর্বতমালা আর ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ (ইউরোপে মঁ ব্লার সাথে সাথে অনেকে জর্জিয়ার এলবুর্জকেও সর্বোচ্চ ধরে থাকে), পৃথিবীতে যেখানে ফি বছর সবচেয়ে বেশী অভিযান চলে, খ্যাতির বিচারে মাউন্ট এভারেস্টের পরপরই যার অবস্থান সেই হল ফ্রান্সের আল্পসে অবস্থিত মাউন্ট ব্ল্যাঙ্ক, যাকে ফরাসীরা নাম দিয়েছে মঁ ব্লা অর্থাৎ শ্বেত ললনা !
[img=6x4]15[/img]
প্রতিবছর আল্পসে যেমন সবচেয়ে বেশী পর্বতারোহণ চলে তেমনি এখানে হতাহতের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশী, গ্রীস্মের যে কোন রোদ্রকরোজ্জল দিনে মঁ ব্লা তে যেমন ১৫০ জন পর্বতারোহী আরোহণে সক্ষম হন, ঠিক তেমনি শতকরা ৭৫ জন খারাপ আবহাওয়া, ভগ্নস্বাস্থ্য ও অন্যান্য কারণে ব্যর্থ হয়। এসবই জানা ছিল, আর জানা ছিল দুঃখজনক ভাবে আজ পর্যন্ত মঁ ব্লাতে কোন বাংলাদেশীর পা পড়েনি, লাল সবুজের মায়াময় পতাকা ওড়েনি ঐ জাদুময় তুষার ছাওয়া শৃঙ্গে।
আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২২শে জুন, ২০০৮ আলপাইন ফ্রান্সে, নিরিবিলি পার্বত্য শহর সেন্ট জেভিয়ার্সে। সূর্যদেব সারাদিনের ক্লান্তিময় কর্তব্য শেষে পশ্চিম দিগন্তের কোন নাম না জানা পর্বতের পিছনে প্রস্থানের জন্য উদ্যত, অদ্ভুত কমলা কোমল এক আভা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উপত্যকা জুড়ে, এর মধ্যে আমরা হোটেল খোজায় ব্যস্ত। আমরা বলতে আমি আর হেলেন, আল্পসের কোলেই বেড়ে ওঠা ফরাসী তরুণী, বহু বছরের পুরনো বন্ধু। দলের তৃতীয় সদস্য গাইড পিয়ের যোগ দেবে পরদিন সকালে। সেন্ট জেভিয়ার্স সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৮৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, এখানে থেকে আমরা মঁ ব্লা চামোনিক্স নামের বিখ্যাত কেবল ট্রেনে যাব ১৮০০ মিটার উচ্চতায়, সেখান থেকে শুরু হবে পাহাড় বেয়ে ওঠা, প্রথম দিনে গন্তব্য ৩৮০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত রিফিউজ দ্য গুটে।
পরদিন কাকভোরে ষ্টেশনে দেখা হল পিয়েরের সাথে, আপাদমস্তক পেশাদার হাসিখুশি মজাদার মানুষ আমাদের এই গাইড। ফ্রান্সে কেউ পর্বতের গাইড হতে চাইলে ৫ বছরের স্কুল শেষ করতে হয়, তার উপর আবার কয়েক বছর নবিস হিসেবে রূক্ষ পর্বতে কাজও করতে হয়। তারপর এই দুর্গম এলাকায় জীবনের ঝুকি নিয়ে মানুষের ভার নেবার দায়িত্ব হাতে পায়। ৪০ মিনিটের কেবল ট্রেনজার্নি শেষে হাজির হলাম ১৮০০ মিটার উচ্চতায় শেষ ষ্টেশনে, শুরু হল যাত্রার কষ্টকর পর্ব।
[img=6x4]4[/img]
চড়াই-উৎরাই, রূক্ষ পাথরে ভর্তি ঢালের পর ঢাল, বরফগলা স্রোতস্বিনী, এরই মাঝে জীবন বয়ে চলেছে আপন ধারায় স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে। পাথুরে শরীরে লেগে রয়েছে সবুজ, কালো, হলুদ নানা বর্ণের লিচেন, সামান্য মাটির অস্তিত্বেই মরুভূমির মরূদ্যানের মত গড়ে উঠেছে নাম না জানা সবুজ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের বাগান, অনেকেই ফুটিয়ে তুলেছে নয়নাভিরাম ফুল। সবার দৃষ্টি চক্ষুচড়কগাছ করে দিয়ে ব্যাঁ ব্যাঁ করতে করতে সামনে দিয়ে গট গট করে চলে গেল আলপাইন পাহাড়ি ছাগলের একটা পরিবার, ছাগল কর্তা বার কয়েক অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিবান হেনে সপরিবারে চলে গেল আপন পথে।
[img=6x4]5[/img]
আমরা যেমন আকাশ পানে উঠছি, অনেকেই তখন পর্বতারোহণ শেষ করে সমতলভূমির টানে অবতরণরত। সম্মুখে বিস্তৃত বরফের রাজ্যে। সেখানে প্রবেশের আগে পিয়ের জানান দিল খাবারের বিরতির, খাবার বলতে বাগোত্তি রুটির মধ্যে টমাট্যো আর মাংসের ফালি দিয়ে বানানো ফ্রেঞ্চ স্যান্ডউইচ আর রোদে শুকানো অ্যাপ্রিকট ফল, যা উচ্চতাজনিত কারণে খাবার হিসেবে একেবারে পয়লা সারির,সেই সাথে ভিটামিন সি মেশানো জল।
সামনে বরফের পিচ্ছিল প্রান্তর বিধায় পায়ের বুটের সাথে ক্রাম্পন (বরফে না পিছলানোর জন্য এক সারি ধাতব কাঁটা বসানো জুতা বিশেষ, অতীব ভয়াল দর্শন কিন্তু পর্বতারোহণের জন্য অত্যাবশ্যকীয়) বাঁধতে হল। আবার উপর পানে যাত্রা, এ যেন বরফ আর পাথরের সমন্বয়ে তৈরি এক অন্তবিহীন তেপান্তর ।
[img=6x4]11[/img]
পার্থক্য এই, তা সমতল ভাবে বয়ে না চলে উঠে গেছে খাড়াখাড়ি। মূল সমস্যা হল, সব জায়গাতেই যে বরফ সমান পুরু তাতো নয়, আলগা ঝুরঝুরে তুষারে ভর্তি অধিকাংশ জায়গা আর সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি করে নগ্ন পাথরপৃষ্ঠগুলো। পর্বতারোহী মাত্রই জানেন ক্রাম্পন পায়ে পাথরের উপর হাইকিং করা কতটা অসুবিধাজনক! সমস্যা আরও বাড়ল যখন দেখি পিয়ের মাথায় হেলমেট পরে নিয়ে আমাদেরও মাথায় গলিয়ে নিতে বলল সেই ধাতব টুপি! সে জানাল, এই এলাকা অত্যন্ত বিপদসংকুল, যে কোন মুহূর্তেই পর্বতের আতংক বরফধ্বস শুরু হতে পারে, আবার আলগা পাথরও গড়িয়ে নামতে পারে। ২০০৭ সালে শুধু মাত্র এই পথেই রিফিউজে যেতে একাধিক পর্বতারোহী পাথরধ্বসে মারা গেছেন। হেলমেটের সাথে সাথে আমরা হারনেসের মাধ্যমে পরস্পরকে দড়ির মাধ্যমে বেঁধে নিলাম, সেই সাথে বরফ কুঠারও তৈরি, হঠাৎ পতন ঠেকানোর জন্য। অতিমাত্রায় বিপদজনক বলে এই এলাকার অধিকাংশ স্থানেই পাথরের সাথে ধাতব দড়ি বাঁধা আছে, যাতে অন্যরা এই দড়ি ধরে যত দ্রুত সম্ভব এলাকাটি পার হতে পারেন। এত তাড়াহুড়োর মধ্যেই শুনি উপর থেকে ভেসে আসছে উদ্বাহু চিৎকার, তাকাতেই মনে হল বিদ্যুৎগতিতে এক ঝাক পড়ন্ত পাথর ঠিক মাথার উপর দিয়ে পেরিয়ে গেল, এর মধ্যে দুটো আবার পিয়েরের হেলমেট আর হাতে আঘাত করে নিচের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল। সাত তাড়াতাড়ি চলেও ঘণ্টাখানেক লাগিয়ে বরফধ্বসের এলাকা পার হতে হল, এর পর ছোট্ট এক বিরতির ফাঁকে ক্রাম্পন খোলার পালা। তখন আমাদের অবস্থান সী লেভেল থেকে প্রায় ৩৩০০ মিটার উপরে, চারিদিকে তুষার ছাওয়া সুউচ্চ শৃঙ্গের সমাহার, প্রায় কালের বয়সী বিশালাকৃতির হিমবাহগুলো স্থবির হয়ে পড়ে আছে থেকে থেকে, এর মাঝেই দৃষ্টিসীমায় আসে আল্পসের প্রতিটি উপত্যকার মাঝেই প্রানে মুখরিত অগণিত জনবসতি। বোঝা যায় হিমালয়, আন্দেজের মত আল্পসের আদিম জনগোষ্ঠীও হিমরেখার নিচে সবুজে ছাওয়া উর্বর উপত্যকায় আদি বসতি স্থাপনের মাধ্যমে এখানে রাজত্ব বিস্তার শুরু করেছিল।
[img=6x4]6[/img]
[img=6x4]7[/img]
আবার উপরে উঠার পালা, প্রায় ৬০০ মিটার হাড় ভাঙ্গা কসরতের পর ডেয়ার ডেভিলের মত খাড়া ঢাল বেয়ে আমরা ৩৮০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত রিফিউজ দ্য গুটেতে পৌছালাম দুপুর সাড়ে তিনটায়, সেদিনের মত যাত্রাবিরতি। মেঘের রাজ্যের উপরের এই আস্তানাটি মঁ ব্লা আরোহণে ইচ্ছুকদের মাঝে অতি জনপ্রিয়, দুটো লম্বাকৃতীর হলঘরে ১২০ জনের বিছানা দুই সারিতে (এক সারির উপরে আরেক সারি) গাদাগাদি করে ফেলা আছে, একটা বড় খাবার ঘর কাম রান্নার জায়গা আর কোনমতে তৈরি একখানা সবেধন নীলমণি টয়লেট, এই হল ইউরোপের সব চেয়ে উচুতে অবস্থিত হোটেল!
[img=6x4]7-1[/img] গাইড দাঁত বের করে বলল, সারাদিনের ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষে গোসলের ইচ্ছে থাকলে ভুলে যাও, কোন টেলিভিশন না ইন্টারনেটও নেই, কাজেই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ- পেট ভরে খেয়ে সোজা বিছানায় যেয়ে লম্বা হও। অথচ এই রিফিউজেই রাত কাটাতে হলে অন্তত দুই মাস আগে থেকেই বুকিং দিতে হয়! অনেককেই দেখলাম বুকিং দিয়ে না আসায় মহাবিপদে পড়েছে, কোন বিছানা পাওয়ার আশা না থাকায় মেঝেতে শোয়ার তদবির করছে, কেউবা বাহিরে তুষারের মধ্যে গর্ত করে তাবু ফেলতে ব্যস্ত।
রিফিউজের রেলিংয়ের নিচে তাকাতেই চোখে পড়ে তখনো আরোহণরত অন্যদের, কি কষ্ট করেই না পাথর আর বরফের রাজ্য ডিঙ্গিয়ে আস্তে আস্তে উঠে আসছে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ঘণ্টা কয়েক আগে নিজেরাই সেখানে ছিলাম।
[img=6x4]13[/img]
[img=6x4]12[/img]
মেঘের রাজ্যের অনেক উপরে আমরা, ঝকঝকে রোদ্দুরের বন্যায় প্লাবিত চারিদিক, সফেদ তুষারে প্রতিফলিত আলোয় চোখ ঝলসে যায়, এর মাঝেই নজরে আসে হিমরেখার নিচ থেকে শুরু গাঢ় সবুজ কনিফারের বন, রূপোলী জাদুময় হ্রদগুলোকে বুকে রাখা সারি সারি উপত্যকা, আরও আবছা ভাবে প্রান মুখরিত শহরগুলোর অস্পষ্ট অবয়ব চোখে পড়ে। চারিদিকে অবশ্যম্ভাবী ভাবে সুউচ্চ বরফ ছাওয়া পর্বতশৃঙ্গের দল, আর সে পর্বতমালার কি নয়ন জুড়ানো শোভা! কোথাও খাড়া নেমে গেছে হাজার মিটার, কোথাও বা নগ্ন রূক্ষ পাথরের স্তূপ, একমাথা আলগা বরফ নিয়ে দাড়িয়ে আছে কোনটা, বরফধ্বসের অপেক্ষায়! সফেদ চকচকে বরফপৃষ্ঠে মেঘের দল মনের সুখে তৈরি করেছে দুর্বোধ্য সব আঁকিবুঁকি। এর মাঝেই এক ঝাক জ্যা মুক্ত কালো তীরের মত উড়ে বেড়াচ্ছে আল্পসের কাক খ্যাত হলদে ঠোঁটের চ্যাফ পাখিগুলো।
[img=6x4]9[/img]
খাবারের ঘণ্টা পড়ল, ধোঁয়া ওঠা গরম সব্জীর স্যুপ দিয়ে আমাদের ডিনারের শুরু, একে একে আসল ফ্রান্সের সাভোয়া অঞ্চলের বিখ্যাত চীজ, মাংস আর আলুর তৈরি একটা ডিশ, নানা ধরনের সব্জী দিয়ে তৈরি অনেকটা হালুয়া ধরনের একটা খাবার , সবার শেষে ডেজার্ট হিসেবে চকোলেট আইসক্রিম। পানীয় হিসেবে কেবল সুপেয় জল। উল্লেখ্য রিফিউজ দ্য গুটে এত উপরে হবার কারণে একমাত্র হেলিকপ্টারে করেই এখানের সব রসদ আনা যায়, যার ফলে সবকিছুর দাম আগুন গরম, এক ক্যান কোকাকোলার দাম ৫ ইউরো( বাংলাদেশী প্রায় ৫৫০ টাকা) । আমাদের অবশ্য জল ছাড়া এযাত্রা কিছু কিনতে হয় নি। খাবার পরপরই সোজা বিছানায়, এর মধ্যেই উচ্চতাজনিত কারনে অক্সিজেনের অভাবে সামান্য মাথা ব্যাথা দেখা দিয়েছে। সহযাত্রীদের কাছে জানলাম, এই উচ্চতায় স্বল্প অক্সিজেনের কারনে এটা অতি স্বাভাবিক ব্যাপার, ভাল একটা ঘুম হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, আর এত উপরেতো উঠিও নি এর আগে!
রাত আড়াইটায় ঘুম ভাঙ্গল পিয়েরের ধাক্কায়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাক প্যাক গুছিয়ে অন্যদের সাথে মিলিত হবার জন্য ছুট দিলাম কফি টেবিলের দিকে। তখনকার বরাদ্দ এক কাপ কড়া কফি, সেই সাথে নোনতা বিস্কিট আর তাজা কমলার রস। কোনমতে গলাধঃকরণ করে পায়ে ক্রাম্পন এঁটে আমরা আবার মঁ ব্লার পানে।
রাত তিনটে, প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস, প্রবল শোঁ শোঁ শব্দে চারিদিক তোলপাড়, ঘুটঘুটে আঁধারের মাঝে পথ দেখাচ্ছে আধখানা চাঁদ, এর মধ্যে আমরা ৪০০ মিটার উচ্চতার এক কঠিন বরফময় ক্লীফে চড়ার চেষ্টারত। প্রত্যেকের মাথার সাথেই লাইট বাঁধা, তাই দূর থেকে মনে হচ্ছে এক ঝাক জোনাকি পোকা সারি বেঁধে চলেছে রাতের আঁধারে। সামনে পিছনে মিলে অন্তত ৪০ জন পর্বতারোহীকে দেখলাম একই প্রচেষ্টায়। আস্তে আস্তে প্রায় শম্বুক গতিতে সেই সফেদ ক্লীফের মাথায় পৌছালাম সবাই, সব পর্বতপ্রমাণ বাঁধা দূর করে প্রথম বারের মত দেখতে পেলাম স্বপ্নের মঁ ব্লাকে!
দিগন্ত দখল করে থাকা, আকাশ ছোঁয়া ধবধবে সাদা এক দৈত্য, আসে পাশের সবকিছুকে ছাড়িয়ে সোজা উঠে গেছে অমরাবতীর পানে। মুগ্ধাচ্ছন্ন হয়ে সবাই দাঁড়ালাম সেই মোহময়, প্রবল আকর্ষণীয় পর্বতটির দিকে যাকে বলা হয় আমাদের গ্রহের সবচেয়ে রোমান্টিক পর্বতশৃঙ্গ। মঁ ব্লা নজরসীমার মধ্যে আসার পরপরই মনের ভিতরের আত্নবিশ্বাসটা এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে গেল, মনে হল ঐ সুমহান শিখরে পা রাখা কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার মাত্র!
যদিও আমরা তখন কেবল ৪২০০ মিটার উচ্চতায়, কিন্তু উচ্চতাজনিত কারনে এখন প্রতিটি মিটার উচ্চতাই অনেক বেশি মনে হতে লাগল, প্রবল বন্ধুর পথ যেন আর ফুরোয় না। এর মাঝে ক্রাম্পনের তীক্ষধার ফলার আলতো ছোয়া লেগেই উইন্ডব্রেকার ট্রাউজারের দুই পা গেল ছিড়ে, নিচে ভাল মত স্কিনটাইট ইনার পরে থাকায় ঠাণ্ডার প্রকোপ কম মনে হলেও অল্প পরেই বোঝা গেল পায়ের আঙ্গুলগুলো অবশ হয়ে আসছে ধীরে ধীরে, এমন চলতে থাকলে পর্বতারোহণের আতংক ফ্রস্টবাইটের সমূহ সম্ভাবনা! কাজেই অল্প জলপানের বিরতির পর অভিযানের নতুন পন্থা ঠিক হল- পিয়ের সবার আগে, আমি মাঝে আর সবার শেষে হেলেনা। সবাই সবার সাথে হারনেসের মাধ্যমে দড়িতে বাঁধা, আর আমার আলাদা ভাবে দায়িত্ব ছিল চলন্ত অবস্থাতেই বুটের মধ্যে পায়ের আঙ্গুলগুলো পরস্পরের সাথে ঘষে গরম রাখা, যাতে কোন মতেই সেগুলো অসাড় না হয়। এই সময় আল্পসের বুকে সূর্যদেবের আবির্ভাব, চারিদিক ভেসে যাচ্ছে তীব্র আলোর বন্যায়, দূরদূরান্তের সুউচ্চ শিখরগুলো একসাথে তাদের সফেদ ঝলমলে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে সূতীক্ষ আলোক বর্শার ক্রমাগত আঘাতে জমে থাকা আঁধার দূর হয়ে যাওয়ায়। পিয়ের জানাল আর মাত্র আধা ঘণ্টা, তারপরই আরাধ্য শিখর। আধা ঘণ্টা তো আর আধা ঘণ্টা নয়, প্রতিটি মুহূর্ত যেন একযুগের মত। এর মাঝেই আবার শুরু হয়েছে দমকা ঝড়ো বাতাস, হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় নাকের পানি ঝরতেই আছে অনবরত, ফুসফুস আর পারছে না যেন টাটকা বাতাস সরবরাহ করতে, পায়ের মাংসপেশি গুলো একসাথে বিদ্রোহের জানান দিচ্ছে থেকে থেকেই, তার মাঝেই নিশিতে পাওয়া মানুষের মত এগিয়ে চলেছি পায়ে পায়ে শিখর পানে সমস্ত বাঁধা দলে। অবশেষে ২৪ জুন,২০০৮- স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টা, বাংলাদেশ সময় সাড়ে আটটায় প্রথম বারের মত বাংলার লাল-সবুজ পতাকা উড়ল ইউরোপ এবং আল্পসের উচ্চতম শৃঙ্গে, স্বপ্নের মঁ ব্লাতে! বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং ক্লাবের ( বি এম টি সি )সদস্য হিসেবে মঁ ব্লা জয়ের পরপরই আমার মনে হয়ে ছিল এই কৃতিত্ব আমাদের সবার, সমস্ত দেশবাসীর, সব অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের। আশা করি ভবিষ্যতে এই যাত্রা অব্যাহত রাখবেন অন্যরা।
[img=6x4]19[/img]
[img=6x4]17[/img]
পায়ের নিচে সুবিশাল আল্পস্ পর্বতমালা, যে দিকেই তাকাই শুধু মাইলের পর মাইল বিস্তৃত রহস্যে মোড়া পর্বত, সে কি আবেগময় মুহূর্ত। পথের সমস্ত কষ্ট এক নিমিষে তুচ্ছ মনে হল, এমন সার্থক অনুভূতির জন্যই মানুষ বুঝি চায় জীবনের ঝুকি নিয়ে পর্বতারোহী হতে। এত উঁচুতেও দেখি মাথার উপর উড়াউড়ি করছে গোটা দুই চ্যাফ পাখি, শিখর বিজয়ীদের কাছ থেকে খাবার পাবার আশায়।
[img=6x4]16[/img]
উত্তেজনা একটু থিতিয়ে আসতেই পিয়ের জানাল আর খুব বেশি হলে ১০ মিনিট, তার পরপরই অবরোহণের পালা। চূড়োয় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৫ ডিগ্রী নিচে,কিন্তু প্রবল পাহাড়ি বাতাস একে অনেক বেশী ঠাণ্ডায় পরিণত করেছে, তার প্রমাণ পেলাম একেবারে নতুন অত্যাধুনিক সনির ভিডিও ক্যামেরাটি ঠাণ্ডায় জমে কাজ না করায়! অবশেষে চটজলদি কিছু ছবি তুলে শেষবারের মত আল্পসের নয়নাভিরাম রূপ দু চোখ ভরে অবলোকন করে নিচের পথে আমরা।
জানতাম আল্পসে ফি বছর যত দুর্ঘটনা ঘটে তার অধিকাংশই ঘটে নামার সময়, এর প্রধান কারন অভিযাত্রীদের অসতর্কতা। অনেকের ভাবে যেহেতু পর্বতে ওঠার চেয়ে নামা অনেক সহজ, কাজেই নামার সময় এত সতর্ক হবার বা কালক্ষেপণের কিছু নেই, আর এখানেই হয় ভুলটা, কারণ পর্বত কখনোই অসতর্ক কাউকে ছাড় দেয় না! নামার সময় হেলেন সবার আগে, আমি মাঝে, গাইড পিয়ের সবার পিছনে। শুরু হল প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসের মাঝেই অবরোহণ, পোশাকের সামান্যতম ফাঁকা জায়গাটিতেও আলপাইন বাতাস তার ঠাণ্ডা তীক্ষ চাবুক হানতে ভুলছে না।
[img=6x4]14-1[/img]
কয়েকবার মনে হল উড়েই যাব মনে হয় বাতাসের তোড়ে, এর মাঝে একবার পিয়েরের উদ্বাহু ফরাসী চিৎকারে থামা মাত্র মনে হলে সাদা বরফের উপর দিয়ে সবুজ বিদ্যুতের মত কি একটা ছুটে গেল, তার মাঝে আবার লালের আভাস! বোঝা গেল আল্পসের বাতাস আমার প্রিয় বাংলাদেশের পতাকাটিকে ছিনিয়ে নিয়েছে! আহা, এই পতাকাটি আমার বিশেষ প্রিয় ছিল, কত জায়গায় না গেছি একে সঙ্গী করে- উত্তর মেরুতে, হিমালয়ে, বিশ্বকাপ ফুটবলের স্টেডিয়ামে, নরওয়ের পর্বতে, কত দেশে- স্মৃতিবহুল জিনিসটা আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ! হেলেন সান্তনা দিয়ে বলল- মনে কর তোমার পতাকা সবসময় মঁ ব্লাতেই থাকবে, এর চেয়ে ভাল জায়গা আর কয়টা হয়?
আবার নামার পালা, পথে অন্যদের সাথেও দেখা হল যারা কেবল রিফিউজ থেকে রওনা হয়েছে শিখরের উদ্দেশ্যে, ঝড়ো বাতাসের কথা বলে সাবধান করলাম সবাইকেই, পিয়ের মাথা নেড়ে জানাল আজ এমন আবহাওয়ায় উপরের পানে ওঠা পানে সাক্ষাৎ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া, পরে খবর পেয়েছিলাম আমাদের অভিযানের একমাসের মধ্যে নানা দুর্ঘটনায় ২০ জন পর্বতারোহী সেবার আল্পসে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। বেশ কবার আছাড় খাবার পরে পৌছালাম যেন অনেকদিনের আবাসস্থল চিরচেনা রিফিউজ দ্য গুটেতে অথচ সেখানে কাটিয়েছি কেবল একটি রাত।
মাত্র মিনিট পনেরর বিরতির পর আবার নামার পালা, যা ওঠার চেয়ে অনেক কঠিন মনে হল জমে থাকা বাড়তি আলগা তুষারের কারণে, বোঝা গেল তাপমাত্রা বাড়ার কারণেই এই অবস্থা। অবশেষে শিরা-উপশিরায় অ্যাড্রিনালিনের বন্যা বইয়ে অনেকটা বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আবার ট্রেন ষ্টেশনে।
[img=6x4]7-4[/img]
দূরে পর্বতের মাথায় রিফিউজটাকে আবছা ভাবে দূরবীনে দেখা যায়, মঁ ব্লা দৃষ্টির আড়ালে। সে দিকে তাকিয়ে যেন স্বপ্ন মনে হল ঐ মোহময় চূড়ায় আরোহণকে, অথচ সে স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত। আশাকরি অচিরেই আমাদের কেউ এমন ভাবে স্বপ্ন আর বাস্তবের মিলন ঘটাবে ম্যাককিনলে, কিলিমাঞ্জারো, ভিনসেন, কার্সটেনজ, অ্যাকনকাগুয়া এবং মাউণ্ট এভারেস্টে। উড়বে সেখানে অমল ধবল আলোয় লাল-সবুজ পতাকা। --- তারেক অণু
( উল্লেখ্য, অতি ঘনিষ্ঠজন সহ অভিযাত্রী এম এ মুহিত ২০১১ সালে মাউণ্ট এভারেস্ট শিখর জয় করে আমাদের সকলকে অশেষ আনন্দ ও গর্বের বন্যায় ভাসিয়েছেন, এবার অন্যান্য পর্বতের পালা--- অণু)


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

লেখা ছবি মিলিয়ে গুল্লি

ফাহিম হাসান এর ছবি

ছবি দেখে স্তম্ভিত। আপনার ছবি তোলার হাত তো অসাধারণ। আপনার ট্রাভেলগের ঝুড়ি থেকে আরো লেখা/ছবি বের হোক, আমার মত গৃহবন্দীরা সেকেন্ড হ্যান্ড স্বাদ পাই আর মনে মনে আপনাকে অভিশাপ দেই -এটাই প্রত্যাশা।

আরেকটা ব্যাপার- ফরাসি ভাষায় শ্বেত ললনা "লা দাম ব্লশ" হওয়ার কথা না?

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ কৌস্তুভ দা, কাজ হয়েছে তাহলে বলছেন !-- অণু

সজল এর ছবি

দুর্দান্ত ভ্রমনকাহিনী, মনে হচ্ছিলো আপনার সাথেই আছি। অনেক জীবন্ত বর্ণনা দিয়েছেন, ছবিগুলো এত ঝকঝকে। এক কথায় বলতে গেলে ভয় জাগানিয়া সুন্দর!

আর, অতি অবশ্যই পাঁচ তারা।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কিন্তু বুদ্ধমূর্তীর লগে ছবি কই? চোখ টিপি

অসাধারণ... এসব পড়লে দেখলে মনটা ভরে যায়... যান... আমার ঈর্ষা নিয়ে সারা পৃথিবী জয় করতে থাকেন... ফি আমানিল্লাহ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

চলুক

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার (অফ্লাইন) এর ছবি

ছবি এম্বেড হয়েছে দেখে ভালো লাগলো, কিন্তু পাশের [img] ... [/img] গুলি আসছে কেন? চিন্তিত
আপাতত চট করে ছবিতে চোখ বুলিয়ে গেলাম। দারুণ! চলুক লেখা পরে পড়ে আবার মন্তব্য করে যাব...

মুস্তাফিজ এর ছবি

বছর ১২ আগে একবার সুইস আল্পস্‌ মাউন্ট তিতলীতে চড়েছিলাম। আমাদের পোষাক সেই মানের ছিলোনা বলে উপরে কষ্ট হয়েছিলো খুব। তিতলীর গ্লেসিয়ারে স্কী করতে যেয়ে দুবার আছাড় খেয়ে খান্ত দিয়েছিলাম।

লেখা ছবি ভালো লেগেছে।

...........................
Every Picture Tells a Story

প্রখর রোদ্দুর এর ছবি

বাহ!

এমন পোষ্ট শেয়ার করার জন্য কৃতজ্ঞতা।

বিলাস এর ছবি

আহ! আল্পস! খুব ভাল লাগল। অনুদা, ছবি লেখা চমৎকার।

তানিম এহসান এর ছবি

ভাই আপনাকে সংগ্রামী (পলিটিকাল না) শুভেচ্ছা! কি অদ্ভূত ঘুরে বেড়াচ্ছেন সারা পৃথিবী জুড়ে, চরম জীবন! ভালো থাকবেন, শরীরের যতœ নিবেন, আপনাকে দেখে কিন্তু দুবলাপাতলা মনে হলো দেঁতো হাসি

guest_writer এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে। খামোখা অভিশাপ দিয়েন না রে ভাই, তার চেয়ে সামনে বছর কিলিমানজারো চড়বার একটা চিন্তা চলছে্‌ ইচ্ছে থাকলে আওয়াজ দেন (জীবনের কোন ঝুকি নাই)।
ঠিকই ধরেছেন ফাহিম হাসান ভাই, ফরাসি ভাষায় শ্বেত ললনা "লা দাম ব্লশ"ই, এটা মঁ ব্লার আরেক নাম, যেমন ইতালিয়ানে এটা মন্তে বিয়াঙ্কো হলেও অনেকেই আদর করে এল বিয়েঙ্কো বা The White বলে ডাকে। ছবির বাপারে আমার কোন ক্রেডিট নাই, জায়গাটা অমন অদ্ভুত সুন্দর, আর এখানে দেয়া সব ছবিই তো কোনরকম ফটোশপের স্পর্শ ছাড়া, তাহলেই বুঝেন বাস্তবে কেমন হতে পারে!
নজু ভাই, বুদ্ধ মূর্তির সাথে ছবি তোলা কিন্তু লিস্টের এক জায়গায় আছে, কিন্তু আপনি বার বার জিজ্ঞাসা করলে স্পন্সরের দায়িত্ব আপনের কাধেয় চাপিয়ে দেব বলে রাখছি ( চলেন ২ জন মিলেই ট্রাই দি, আপনার ছবি আমি তুলে দেব, আমার টা চাইলে আপনি!)== অণু

বন্দনা- এর ছবি

অসাধারন ছবিগুলো। এইবছর আমি ইতালির তুরিন থেকে ট্রেনে করে পাহাড়ের গা বেয়ে বেয়ে সেইন্ট মরিস নামে সুইজারলেন্ডের একটা জায়গায় গিয়েছিলাম। পথ মধ্যে আল্পস দেখতে পেলাম কিন্তু তখন স্নো সব গলতে শুরু করেছে, তাই এইসব বরফ সাদা দৃশ্য দেখা হয়নি, আপনার ছবি দেখে মনে হচ্ছে অনেক মিস করছি। কিন্ত সেইন্ট মরিসের লে,ক রঙ বেরঙ্গের প্রকৃতি দেখেছি পাগলের মত মুগ্ধ হয়ে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমাদের দুইজন মাসুদ রানার মধ্যে আপনি একজন নিশ্চিত হলাম। আপনার লেখা অসাধারণ। কেন যেন ছবি দেথতে পাচ্ছি না এখন, তাই ছবির কমেন্ট পরে পাবেন।

আপনার বিভিন্ন লেখা পড়ে আপনাকে হিংসার তালিকায় আপাতত সবার প্রথমে নিলাম! মাঝে মাঝে বিশ্রী রাগ হয় আপনার উপর। হিংসার জন্যেই।

অট. আপনি কি রেজিস্ট্রেশন করেছেন সচলে?

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আশালতা এর ছবি

ইশ্‌ ! কি দারুন !!

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

guest_writer এর ছবি

আবারো অনেক ধন্যবাদ, এখন তো আফসোস লাগছে নরওয়ের লেখাটার সবচেয়ে সুন্দর ছবিগুলো আপলোড করতে পারি নাই দেখে, তাহলে সবাই আরো উপভোগ করতেন, তবে সামনে মাসে সাগর তলের ছবি দেখাব, আগেই জানিয়ে রাখলাম।
ভাই তানিম এহসান, এমনটাই থাকতে চাই মৃত্যু পর্যন্ত যেমনটা আছি, সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম স্যারও তার এক লেখায় আমার শারীরিক বর্ণনা দিয়েছিলেন অণু লম্বা,পাতলা মানুষ কিন্তু মনের জোর অনেক , এই বলে ! হা হা

অনার্য সঙ্গীত, নারে ভাই, আমার দুই কাধে এত মাংস নাই, যে রানার মত গুলি খেয়েও বার বার অল্প আহত হইয়ে বেঁচে যাব। সচলে তো এখনো হাচল হয় নি, কত দিন লাগবে?
ধন্যবাদ বন্দনা, বিলাস, প্রখর রোদ্দুর, মুস্তাফিজ ভাই । সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা--- অণু

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এইটাকে বলে রিয়েল অ্যাডভেঞ্চার!
আপনাদের সাথে নিজেকে কল্পনাতে জুড়ে নিয়ে সাংঘাতিক লাগলো রে ভাই!
ছবিগুলো ফাটাফাটি!

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মৌনকুহর. এর ছবি

চলুক হাততালি

সাইফ জুয়েল এর ছবি

কি চমৎকার আমাদেরও আল্পসে আরোহন হয়ে গেল।

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ সুলতানা পারভীন শিমুল, সাইফ জুয়েল, মৌনকুহর, আশালতা- অবশ্যই আপনার সবাই ছিলেন আমার সাথে সেই অভিযানে, সে কি আর বলতে। পর্বতের কাহিনী আপনাদের এতই ভাল লেগেছে দেখি ভাবছি ঝটপট একটা হিমালয় নিয়ে লেখা পোস্ট করব, শুভেচ্ছা--- অণু

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

পড়েছি অনেক আগে, কিন্তু কিন্তু প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মঁ ব্লা জয় করার জন্য অভিনন্দনটা জানাতে ভুলে গেছি। জানায়ে গেলাম....

তারেক অণু এর ছবি

গুরু গুরু প্রথম না, শেষ হিসেবে জয় করতে পারলে অনেক বেশী খুশি হতাম

আয়নামতি1 এর ছবি

বাপ্রে! আপনি আল্পস ছুঁয়ে দেখেছেন! নামের পাশে জলদি 'পরমাণু' লাগান। আমি যদি আপনার জায়গাতে থাকতাম তবে ওটাকে 'মহামহা পরমাণু' লিখে দিতাম দেঁতো হাসি সেজন্যই আমার পাহাড় চড়াটা স্বপ্নই কেবল, আপনার কাছে যেটা বাস্তব। লেখাটা পড়িনি, ছবিগুলো দেখেই মুগ্ধ উত্তম জাঝা! । পরে পড়ে নেবো। কালিমানে যেতে হলে কী করতে হবে ভাইয়া? অনেক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন (গুড়) (গুড়)

তারেক অণু এর ছবি

গুরু গুরু আরে স্বপ্নটাই আসল, সময় সুযোগ বুঝে বাস্তবে পরিণত করবেন, কিন্তু স্বপ্ন থাকতেই হবে। কালিমান! বুঝি নাই কিন্ত!! ধন্যবাদ

আয়নামতি1 এর ছবি

খাইছে ভাইয়া রোজায় ধরেছিলো আমাকে ইয়ে, মানে... তাই 'কালিমান্জ্ঞারো'(বানানটা লেখা বেশ কঠিন কিন্তু পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম ) লিখতে গিয়ে অর্ধেকটা খেয়ে ফেলেছি দেঁতো হাসি ঠিক কথা স্বপ্নটাই আসল। আমি যার মধ্যে ডুবে থাকতে, ভেসে বেড়াতে ভালোবাসি। অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।

তারেক অণু এর ছবি

সত্যি কথা বলতে আমাদের এই মাসেই কিলিমানজারো যাবার কথা ছিল কেনিয়া হয়ে, কিন্তু সমস্যায় পড়ে সেটাকে এক বছর পেছানে হয়েছে( সেই ছুটিতে আমার পাহাড় না ডিঙিয়ে সাগরে ডোবা হচ্ছে!), যাবার ইচ্ছে থাকলে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে থাকেন, ১ বছর পর দেখা যাবে, তবে কিলিতে জীবনের কোন ঝুকি নেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

"কিলি"তে কিল হবার ঝুকি নাই দেঁতো হাসি

নিচে নামার ছবিটা তো ভয় ধরাইয়া দিল । গুল্লি
লেখার কথা নাই বলি । হাততালি


ছে

কড়িকাঠুরে

তারেক অণু এর ছবি
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এর ছবি

লেখাটা চোখে পড়েনি এতদিন।একশ্বাসে পড়ে ফেললাম,সাথে সাথেই একটা দীর্ঘশ্বাস।আহারে,যেদিকে থাকাই সব জায়গাই অণুদার পদধূলি পেয়ে ইতিমধ্যে ধন্য হয়েছে মন খারাপ আপনার জন্যে হিংসে।
একটা প্রশ্ন ছিল,সেসময় আপনি সব মিলিয়ে কত টাকার ভিতর আল্পস শিখর জয় করে এসেছিলেন?
তথ্যটা জানলে উপকার হত।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বছর দুএকের মধ্যে আল্পস এ চড়ার ইচ্ছে আছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।