সিঁড়ি বেঁয়ে গাড়ীবারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি। অফিস যাব কিন্তু বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে! আমাকে দেখে বৃষ্টি তার গতি আরও বাড়িয়ে দিলো। উপরওয়ালা মনে হয় আমাকে বিশেষ একটা পছন্দ করেন না, আমি যখন সিরিয়াস মুডে থাকি তখনি দেখা যায় উনি এধরনের ইয়ার্কি করেন! গেট থেকে মাথা বাড়িয়ে রিক্সা খোঁজার চেষ্টা করলাম! একটা রিক্সা দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে ডাকলাম। রিকশাওয়ালা লম্বা লম্বা প্যাডেল মেরে চলে গেলো, আমার দিকে তাকালও না। আমার ছাতা নেই তাই বের হয়ে সামনে যেতে পারছি না। ছাতা নিয়ে আমার একটা ট্রাজেডি আছে –আমি যতো বার ছাতা কিনেছি, কোন অদ্ভুত কারণে সাত দিনের মাথায় সেটা হারিয়ে যায়! তিন বছর আগে কোন একটা বর্ষণ মুখর রাতে বাসায় ফিরে যখন আবিষ্কার করলাম আমি আবারও ছাতি হারিয়ে ফেলেছি, রাগে দুঃখে পণ করলাম এ ইহ জীবন আমি ছাতা ছাড়াই পার করবো! তিন বছর পর আমি পরকালে না গেলেও আমার পণ ভেঙ্গে গেলো! প্রিয় মানুষটার অনুরোধে আবারও একটা ছাতা গিলে ফেললাম! গতকাল রাতে সেটা ট্যাক্সি ক্যাবে রেখে বাসায় চলে এসেছি! এবার অবশ্য সাতদিনের রেকর্ড টি ভেঙ্গে গেছে; ছাতাটা হারাল বারো দিনের মাথায়।
পিছনে খুট করে একটা আওয়াজ শুনে আমার ছাতা বিষয়ক চিন্তা ভেঙ্গে গেলো! ঘুরে তাকিয়ে দেখি আমাদের ফ্লাটের নিচের বাচ্চাটা একটা সাইকেল টেনে আনার চেষ্টা করছে! নীচতলায় একটা খুপরির মতো রুম ভাড়া দেয়া হয়েছে! রুমটিতে টেনেটুনে একটা সিঙ্গেল খাট ঢোকানো যেতে পারে- কিন্তু ওখানে চার জন মানুষের পরিবার কিভাবে থাকে কে জানে!! এই বাচ্চাটিকে আমি দিনের বেলায় দেখিনি, হয়ত আশে পাশেই থাকে কিন্তু আমার ঘার ঘুরিয়ে তাকানো হয় না! রাতে যখন বাসায় ফিরি তখন দেখি ওর বাবার পিছনে দুই ভাই ছুটাছুটি করে খেলছে। ছোট বাচ্চাটি যে সাইকেলটি টেনে আনার চেষ্টা করছে সেটা ওর তুলনায় বেশ বড়। হয়তো এটা ওর বড় ভাইটার সাইকেল! সে হয়তো স্কুলে গেছে এই সুযোগে ও সাইকেলটি নিয়ে বের হয়েছে! বাচ্চাটির হাত থেকে সাইকেলটি পরার উপক্রম হতেই আমি একটু সামনে দৌড়িয়ে গিয়ে ধরে ফেললাম। আমার হাতে সাইকেল পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে বাচ্চাটি একটা বিমের পিছনে লুকল! আমি সাইকেলটা দাড় করে সরে আসতেই বাচ্চাটি আমাকে ডাকল – এই এই! আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম! বাচ্চাটি আবার বিমের আড়ালে লুকল! এরপর মাথাটা একটু বের করে অদ্ভুত সুন্দর একটা হাসি দিলো! বৃষ্টির উপরে বিরক্তি আর ছাতা হারানোর দুঃখ দুটোই নিমিষে উড়ে গেলো! বাইরে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি অনেকটা কমে আসছে ! বড় বড় পা ফেলে গেট থেকে বেরিয়ে এলাম!
অচেনা মুখগুলোর চেনা সেই সব হাসি গুলো তুলে দিলাম –
ফ্লাটের এই বাচ্চাগুলোকে দেখলে আমার খুব মন খারাপ হয়! ভাবি এদের শৈশবের গল্প গুলো আমাদের মতো হবে না ! এই বর্ষার দিনে এরা কাগজের নৌকো বানিয়ে খেলেনা, গামছা নিয়ে মাঠে জমে যাওয়া পানিতে মাছ মারতে যায়না। পুকুর উপচে কৈ শিং মাছের রাস্তায় আসার গল্প ওদের কাছে হয়ত রূপকথার মতো! বালিশের নিচে লাটিম রেখে এরা ঘুমাতে যায়না! কোন দুপুরে ফেরিওয়ালা খেলনা নিয়ে বাড়ির সামনে আসেনা! ভাবতে ভাবতে নিজের শৈশব মনে পড়ে গেলো! মনে পড়ে গেলো বিকালের জন্য মন আনচান করা অস্থির দুপুরগুলো! বিকাল আসতেই মাঠে দে ছুট – চুরি করে আম, পেয়ারা খাওয়া, সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে বুক শূন্য হয়ে যাওয়া! রাতে পড়তে বসা - পরদিন আবার স্কুল!
আমি হয়তো সেইসব শ্রমজীবী শিশুদের কথা বলতে ভুলে যাচ্ছি কাজের বাস্ততায় যারা শৈশব হারায়, রূপকথার পৃথিবী কখনও বাঁধেনি বাসা যাদের মনের কোনায় !
পড়ে আছে এখনো ঘরের কোনায় জড় করা সেই মার্বেল, লাটিম খেলনা - আমি হয়তো ভুলে গেছি কিন্ত মা, ওদের এখনো ভোলে না! চাইলেই কৈশোরের সেই অখণ্ড অবসর ফিরে পাওয়া যায়না – মন খারাপের দিনগুলতে নিজের ভেতরে উঁকি দেয়াও হয়না -
এখনতো বড় হয়ে গেছি, এদানিং ছুটির দিন কাটে অন্য ভাবনায়,অন্য ব্যস্ততায় শৈশবের স্বপ্নে ধুলো জমে গেছে, থাকি প্রিয় মানুষ গুলোর স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায়!
অঞ্জন দত্তের গানের মতো –
এদানিং হঠাৎ সেই সুরটা শুনতে যে খুব ইচ্ছে হয়
কিন্তু সে খেলনা ওয়ালা আসেনা পাড়ায় ,
হয়তো অন্য কোথাও অন্য কোন গলি ঘুরে
অন্য কোন কাউকে সে টানছে অদ্ভুত সুরে।।
হুম , গানটির মতো আমারও প্রশ্ন রইলো সবার জন্য–
শুনতে কি চাও তুমি সেই অদ্ভুত বেসুরো সুর?
ফিরে পেতে চাও সেই আনচান করা দুপুর?!!
- মোঃ মোর্শেদ আনোয়ার (পুলক)
মন্তব্য
মুগ্ধ সুন্দর।
৬ নাম্বারের ছবি দেখে মনে পড়ে গেল 'ছেঁড়া ঘুড়ি, রঙিন বল, এইটুকুই সম্বল... বাদবাকি রোদ্দুরে পাওয়া বিকেলবেলা...'
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
অনেক অনেক ধন্যবাদ ! মন্তব্য পরে অনেক অনেক ভালো লাগলো!
সুন্দর
অসংখ্য ধন্যবাদ!!
মাই গড!
প্রথম বাচ্চাটা তো অ্যানজেল একটা! মন ভালো হয়ে গেলো একে দেখে।
ছবিগুলো সুন্দর।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ! অনেক ধন্যবাদ!
অঞ্জনের সবচেয়ে প্রিয় গানটা মনে করিয়ে দিলেন--- অণু
♫♪''শুনতে কি চাও তুমি ?
ছবিতে (Y)।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অণু , আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ পোষ্টটি পড়ার জন্য!
অসংখ্য ধন্যবাদ!
এই গানটা আমার খুবই প্রিয়! খুব ভালো লাগলো, ছবিগুলোও ভালো লাগলো। সাত নাম্বার ছবিটা কেন যেন টানলো, আমি আর আমার চাচা-বন্ধু এইভাবে বসে থাকতাম!
মন্তব্য পরে অনেক ভালো লাগলো! ছবিটি আমারও অনেক পছন্দের!!
boss, boss, boss, sei rokom hoise!
বস বস বস...অনেক ধন্যবাদ
আশ্চর্য রকম সুন্দর হয়েছে ছবিগুলো!!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!!
অনেক সুন্দর একটি ছবি ব্লগ উপহার দেবার জন্য আসঙ্খ ধন্যবাদ । চমৎকার লাগলো ।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ পোস্টটি পরার জন্য!!
কৌস্তুভ দা ......তথ্যটি দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ !! বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখব!
ভাই, পাবলিক ফোরামে বাচ্চাদের ছবি পোস্ট করার সময় কিন্তু অনুমতি বা রিলিজ ফর্ম ইত্যাদির কথাটা খেয়াল রাখবেন...
বিষয়টা বেশ জটিল। তবে আপনার সাথে আমি সহমত। সবার সতর্ক হওয়া উচিত।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
কৌস্তুভ দা ......তথ্যটি দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ !! বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখব!
খুবি ভালো লাগল, বিশেষ করে ১, ৪, ৫, ১০। চালিয়ে যান।
অসংখ্য... অসংখ্য ধন্যবাদ!!
সুন্দর হয়েছে ছবিগুলো!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ!! অনেক অনেক ধন্যবাদ!!
Onek shundor hoeche chobigulo. . . . .
অনেক অনেক ধন্যবাদ বন্ধু!!
ছবিগুলো দেখে আমি পুরাই বাকরুদ্ধ । বর্ণনা ও ভালো লাগলো পুলক।
মন্তব্য পরে অনেক অনেক অনেক ভালো লাগলো ! রাত জেগে লেখার কষ্টটাও উবে গেলো ! অসংখ্য ধন্যবাদ!
Superb.........khub bhalo laglo.......by the way.....1st pic ta kintu amar bouma r......
অনেক ধন্যবাদ বন্ধু !! অনেক অনেক!!
ধন্যবাদ!! ধন্যবাদ!!
সুন্দর সুন্দর...................
ধন্যবাদ!! ধন্যবাদ!!
ছেলেবেলার ছবি সহ গল্পের বই এর ক্থা মনে হল।
অসাধারন photography.
অনেক অনেক ধন্যবাদ!!
অনেক ধন্যবাদ!
অনেক ধন্যবাদ!
ছবিগুলো দারুণ, কথামালাটাও মনছুয়ে গেলো।
অনেক ধন্যবাদ!! মন্তব্য পেয়ে আমারও মন ভরে গেল
অনেক অনেক ধন্যবাদ!! ওর নাম তাথৈ !!
খুব সুন্দর। প্রথম বাচ্চাটা আসলেই দেবশিশু।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!! ওর নাম তাথৈ !!
তাথৈ নামটা আমার কপিরাইটেড ছিলো! খেল্বোনা!
সুন্দর পোস্ট! ভালো লেগেছে!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
তাথৈ নামটা আমার কপিরাইটেড ছিলো! খেল্বোনা!
সুন্দর পোস্ট! ভালো লেগেছে!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
তাথৈয়ের খেলার বেপারে কখনই আপত্তি করতে দেখি নি! ঠিক আছে ! ভাবীকে জানায় দিব তার নেক্সট পিচ্চিটার ক্ষেত্রে কপিরাইট বেপারটা মাথায় রাখতে! ... অনেক অনেক ধন্যবাদ!
সুন্দর ছবি-কথা ...
আপনার কি আগেও ছবি-পোস্ট ছিল কোন?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
অসংখ্য ধন্যবাদ!! হুম আমি এইত কিছুদিন হলো লিখছি! এর আগেও তিনটা পোস্ট ছিল জার একটিতে মনে হয় আপনার মন্তব্য দেখতে পেলাম!! লিঙ্ক গুলো দিয়ে দিচ্ছি -
১. http://www.sachalayatan.com/guest_writer/39451
২. http://www.sachalayatan.com/guest_writer/39732
৩. http://www.sachalayatan.com/guest_writer/39892
লাইনটা অনেক সুন্দর!! খুব ভালো লাগলো :)। অনেক ধন্যবাদ পোষ্টটি পড়ার জন্য !!
খুব সুন্দর!!!!!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!!
চরম!
আমি ঠিক করছি, আমার যদি কোনোদিন পোলাপান হয়, ঐগুলারে ঘাড় ধরে রিয়েল শৈশব উপভোগ করাবো।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আইডিয়া খারাপ না !! সব বাপ-মা এম্নে ভাবলে মজাই হইত !! অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অসংখ্য ...অসংখ্য ধন্যবাদ!
দারুণ ছবি। ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়।
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
অনেক অনেক ধন্যবাদ!!
ফিরে যেতে চাই সেই ছোট্ট বেলায়...!! অসংখ্য ধন্যবাদ অসাধারণ এই ছবি ব্লগটির জন্য...
অসংখ্য ধন্যবাদ!!
নতুন মন্তব্য করুন