নির্বাক প্রেম

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/০৭/২০১১ - ১০:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উইজ এয়ারপোর্ট এর ৩ নম্বর বহির্গমন গেট এর সামনে বসে আছি। গন্তব্য ত্রেবেসু এয়ারপোর্ট হয়ে ভেনিস। ফ্লাইট এর এখনও ঘন্টা খানিক বাকি।উইজ এয়ারপোর্টটা এতটাই ছোট যে ওয়েটিং জোন এ অপেক্ষা করা বা জরুরী নিন্মচাপে সাড়া দেওয়া ছাড়া সময় ক্ষেপন এর সুযোগ বড্ড সীমিত।কিন্তু আমার মন সেটা মানলে ত! সে তার ইচ্ছা অনু্যায়ী চেনা-অচেনা পথে বিচরন করতে লাগল। এম্নিতে গত দুইদিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার বিমান ভ্রমণ…।গতকাল সকালের ফ্লাইট এ লন্ডন থেকে উইজ হয়ে ডুসেডর্ফ। উদ্দেশ্য পুরান ঢাকার পুরাতন বন্ধু আসলাম এর আতিথ্য গ্রহন, ডুইসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা আর পশ্চিম জার্মানির ডাচ সীমান্তের ছোট শহরটার স্মৃতি মনের ডায়রিতে লিখে ফেলা।

এবারের ইউরো ভ্রমনে নিঃসংগতাই আমার সংগী। পিঠে একটা মাত্র ব্যাগ। এমনতর ভ্রমণপিয়াসীদের নাকি ব্যাকপ্যাকার বলে।আমি অবশ্য এর নাম দিয়েছি নিঃসংগ অভিযাত্রি।নিঃসংগদের সংগী হয় বেশি। মনে পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মাধবপুরে বনভোজন করতে যেয়ে কেমন করে বিশাল আকাশটাকে নিজের করে নিয়েছিলাম, সব প্রিয় বন্ধুদের মাঝে থেকেও আকাশপানে চেয়ে মধ্যাণ্যকে গোধূলি বানিয়েছিলাম। অভিযাত্রী শব্দটাতে বিশুদ্দবাদীদের আপত্তি থাকতেও পারে। আমি ত আর চন্দ্রাভিযান বা পর্বোতারোহণ এ যাইনি। তবে সব নতুন কে দেখার অজানাকে জানাই আমার কাছে অভিযান, দ্বিতীয়বার সেখানে গেলে না হয় সেটাকে প্রমোদ ভ্রমণ বলে চালিয়ে দিব।

দুপুরের মাঝেই আসলাম এর কর্মস্থলে পৌছে গেলাম। ও একটা গ্রোসারী শপ এ কাজ করে।ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বলা বাহুল্য ও প্রথমে ওর বাসাতে যেয়ে বিশ্রাম আর ভোজন সারর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ৩০ ঘন্টার সফরের ৬ ঘন্টা চলে যাওয়ার পর সেটাকে বাহুল্য মনে হল।পরিবর্তে আরব দোকানের পিজাতে হল আমাদের মধ্যাণ্য ভোজন।ডুসেডর্ফ শহরটা এম্নিতে ছোট। বাস আর ট্রামে ঘুরা যায়। তবে ঘুরাঘুরির স্বার্থে আর কিছুটা পয়সা বাচানুর চিন্তায় হাঁটাকেই বেছে নিলাম। সেই দুপুর থেকে ঘুরছি। দুপুরই যে শেষ হয়না।হবে কি করে, সন্ধ্যা ত হয় সেই ‘রাত’ ১১টায়। চোখেতে দেখার নেশা আর শরীরে ক্লান্তি। শরীর জয়ী হয়। পার্ক এর বেঞ্চিতে ঘুমিয়ে পরি।। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে সূর্যের তাপ অনেকটা কমে গেছে।বিকেলের কনে দেখা রোদ গালে এসে লাগছে। ঘোমটা খোলা নববধুরূপ শহরটাকে জানতে আবার হাঁটা শুরু করি।

চোখেতে তৃষ্ণা আমার তৃষ্ণা যে মেটেনা,
বুকেতে হৃদয় একটা জায়গা যে ধরেনা।

ফ্লাইট এর দেরী হবে কিনা কে জানে? এমন কোন ঘোষনা অবশ্য হয়নি। আমার সামনে দুটা লাইনে জনা পঞ্চাশেক লোক দাঁড়িয়ে আছে বিমানারোহনের জন্যে। স্বল্পব্যায়ী বিমান কোম্পানীগুলুতে আবার আসন নির্দিষ্ট করা থাকেনা, ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে পছন্দানুযায়ী আসন নিতে হয়।মনে পড়ে সেই স্কুলবেলার কথা। প্রভাতী শাখার ছুটির ঘন্টা বাজার সাথে সাথেই আমরা দিবা শাখার ছেলেরা এক দৌড় লাগাতাম পছন্দের আসনে বসার জন্য। ছোটখাটো বচসা মাঝে মাঝেই মারামারিতে রূপ নিত।বিমানে জানালার পাশের আসনে বসার জন্য বরাবরই আমার দুর্বলতা কাজ করে। এখন গিয়ে লাইনে না দাড়ালে ওইসব আসন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। তবু আমি অলস ভংগিতে বসে রইলাম।

মেয়েটা মাত্রই এসে লাইনে দাড়াল। আবার লাইন থেকে বের হয়ে গিয়ে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করে আবার আগের লাইনে এসেই স্থির হল। আর আমার রেটিনা আর লেন্সও বিচ্ছিন্ন চাহনি বাদ দিয়ে তার ফোকাস খুজে নিল।

একে তো যাচ্ছি একা। ভেনিস এ গিয়ে বেড়াবও একা। লাইনের শেষ প্রান্তের মেয়েটি আমার একাকী অনুভূতির উপর কেমন যেন পরশ বুলিয়ে গেল। ইচ্ছার পালে দমকা হাওয়া লেগে আমকে মেয়েটার পাশে দাঁড় করাতে চাইল। নিজকে সামলে নিলাম। পরিবর্তে একটু দূর থেকে অবলোকনকেই শ্রেয় মনে করলাম। আমার পাশের আসনের স্থূলকায় কালো মহিলা (নিজকে বর্ণবাদী বলে গালি দিয়ে নিলাম) আর তার হালিখানেক বাচ্চাকাচ্চা বাদ দিয়ে বাকি সবাই প্রায় লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

মেয়েটা মাঝারি গড়নের। পরনে জিন্স, ছোট টি-শার্ট আর উপরে আলতো করে একটা স্কার্ফ জড়িয়ে নেয়া। হাতে ব্রেসলেট আর মোটা বাজু ছাড়া সাজ-সজ্জার তেমন বাহুল্য চোখে পড়লনা।কিন্তু পুরা মুখায়ব আর চোখের মাঝে কি যেন এমন ছিল- যা আক্ষরিক অর্থেই আমার দৃষ্টিকে তার করে নিল।মেয়েটা চুইংগাম চিবুচ্ছে। অদ্ভুত সে সুন্দর দৃশ্য আমার চুইংগামের তেষ্টা বাড়িয়ে দেয়। না- সব পকেট খুঁজেও কোন অবশিষ্ট পাওয়া গেলনা। মনে পড়ে একবার বন্ধুপ্রতীম মান্না ভাই রাত দুপুরে জন আব্রাহাম এর কোন এক মুভি দেখে সিগারেট এর নেশায় আমকে তার সাথে সিলেট মেডিকেল এলাকায় যেতে বাধ্য করেছিলেন।একটু উঠে গিয়ে পাশের শপ থেকে চুইংগাম কিনতে যাওয়া যায়। কিন্তু ওতে যে আমার দৃষ্টি সুখের ব্যাঘাত ঘটে। আমি আমার জোছনা রাতের চাঁদকে হাতের কাছে দেখতে লাগলাম। আমার দৃষ্টি তার সুন্দর চাহনী আর মুখায়ব ছড়িয়ে অন্যত্র যে পড়ছিলনা এমনটা বললে অন্যায় হবে। সর্বোতরূপেই তাকে মনোহরিণী বলা যায়।এরই মাঝে তার চঞ্চল চোখ আমার চোখকে কয়েকবারই খুঁজে নিয়েছে।আমার বেয়াড়া দৃষ্টির তাতে থোড়াই কেয়ার। তার মাঝেও কোনা ভাবান্তর দেখলামনা। আরো কয়েকবার দৃষ্টি বিনিময়ে আমি লজ্জাবনত হলাম।

বিমানে কিংবা যেকোন দীর্ঘ যাত্রায় সব পুরুষই পাশের আসনে বিপরীত লিংগের কাউকে কামনা করে। আমার মধ্যে এই উচাটন হয়না- এটা বললে বড় মিথ্যে হয়ে যায়। একবার হল কি পারাবাত এক্সপ্রেস- সিলেট টু ঢাকা। আসন গ্রহনের পরেই দেখলাম পাশের আসনে এক যুবতী। আসলে যুবতী না কিশোরী ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারি নাই, এরি মাঝে বুকের ভিতর কুপিটা দপদপ করতেছে। জানালা দিয়ে এক আগুন্তুক মুখ ঢুকিয়ে মেয়েটার উদ্দেশ্যে বলছে “চিন্তা করিস না মা, সাথে ত হুজুর আছে”- আচমকা বাতাসে আমার কুপি দপদপ বন্ধ করে অবশেষে স্থির হল। আরেকবারের কথা-এবারও পারাবাত এক্সপ্রেস তবে ঢাকা টু সিলেট। পাশে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে হার্টথ্রব মেয়ে ‘ঝিনুক’। করার ছিলনা কিছুই; সে যে আমার প্রিয় বন্ধু ‘জয়’ এর হারিকেন এর সলতে। এক পাশে চেয়ে থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে ঘাড় ব্যাথার দাওয়াই নিতে হয়েছিল। তবে সব বেলাতেই আমার যাত্রা নির্বাক থাকেনি। বিমান যাত্রা তো নয়ই। একবার এক বিশালদেহী নানি আরেকবার এক দস্যি পিচ্ছি মেয়ে। বলার অপেক্ষা রাখেনা একজনের সেবা-যত্ন করতে আর আরেকজনেকে সামাল দিতে আমার অবস্থা ছিল ‘ত্রাহি ব্যাঙ’।

না আর দেরী করা যাবেনা। সবাই প্রায় বিমানে উঠার জন্যে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। আসলামকে ফোন করে শেষ বারের মত বিদায় জানালাম। নিজকে কি বিদায়ী রাষ্ট্রপ্রধান মনে হচ্ছে? সবার শেষে যে আমিই উঠলাম। হাত নাড়াব নাকি পিছন ফিরে? না এমন কিছুই করলামনা। ‘পরে আসলে পরে পাবেন’ ভিত্তিক আসন খুঁজতে লাগলাম। আমার লেন্স কি আটো-ফোকাস নাকি নাকি বলব অটো ফেস ডিটেক্টিব? একটু এগুতেই আমার নয়ন জ়োড়া তাকে কবজ়া করলো। সেই সুহাসিনী, সুনয়না চুইংগামওয়ালী। উইন্ডো সিট নিয়ে বসেছে। পাশের দুটা আসনই ফাঁকা। এমন ক্ষেত্রে আমি সাধারণত এক আসন ফাঁকা রেখে বসি। আজ সেটাকে অতিমাত্রিক ভদ্রতা মনে হল।। আমি সেটা হতেও গেলাম না। “মে আই হ্যাব দ্যাট সিট প্লিজ”… স্মিত হেসে ইশারায় বসার অনুমতি দিল।করিডর সিট এ জ্যাকেটটা রেখে পাশের আসনটা নিলাম। আমার মনের ভিতর এর শাহেনশাহ হুঙ্কার দিল “দিস ইস আওয়ার প্রাইভেট প্লেস নাউ। ডু ইউ আন্ডারস্টান্ড অল?”

‘হাই- ওয়াটস ইওর নেইম?’ ডুসেডর্ফ থেকে বিমানপথে ভেনিসের দুরত্ব ঘন্টা দুয়েকের বেশি না। আমি পরিচয় পর্ব দ্রুত সে্রে নেয়ার তাড়া বোধ করি। ‘নো ইংলিশ, ইতালিয়ানো’ মেয়েটার কন্ঠ কর্কশ শোনায়। তবে চেহারা তা নয়।হাসি হাসি চোখে দৃষ্টি ধরে রেখেছে। সে এক অপরূপ ঝর্ণা। আমি সেই ঝর্ণার শীতলতা ছুঁয়ে দেখতে চাই। এবার ভাঙ্গা ইংরেজিতে ‘নেইম’? ভাঙ্গা বাংলা বা ফরাসিতে ‘নাম’, ‘নম’? আমার ধারণা ‘নাম’ শব্দটা সব ভাষাতেই কাছাকাছি। প্রমান পেলাম সে যখন আমায় নাম জিজ্ঞেস করল, ওখান থেকে ‘নম’টাই শুধু উব্ধার করতে পারলাম। ওর নাম মাড়া’- নাম শুনে কোন আগ্নেয়গিরির গলিত লাভা মনে হল। ভিসুবিয়াস এর দেশের সবাই কি এমন গরম উচ্চারনে কথা বলে? মনে মনে আমি তার নাম দিলাম মারিয়া।মারিয়া আর আমি কথা বলছি। অর্থহীন কথা। কি করা, কোথায় থাকা--- এমন সব। মারিয়া ও কি আমকে এগুলুই জিজ্ঞেস করেছিল? কি জানি? আমার প্রতিটা কথার প্রত্যুত্তর ইতালিয়ান ভাষাতেই আসছে এবং কোন রকম সঙ্কোচ ছাড়াই। এই প্রথমবারের মত ইতালিয়ান না জানার জন্য নিজকে অপরাধী লাগছে।

প্লেন এখন টেইক অফ করবে। যদিও প্রকাশ করিনা তবে উঠা-নামার সময় আমার ভিতরে ভয়টা কাজ করেই। সিট বেল্ট বেঁধে দুপাশের হাতল ধরে শক্ত হয়ে বসলাম। একটু পরেই আমার বাম হাতে নরম আর আর্শ্চয শীতল স্পর্শের অনুভব।মারিয়ার ডান হাতও হাতলের অংশীদারী দাবি করছে যে! ভয় ভয় অনুভুতির মধ্যেও আমার ভাল লাগছে। অস্বস্তিকর ভাললাগা। নিরাপদ উড্ডয়ন শেষে প্লেন এখন সুষম গতিতে চলছে। আমি নড়েচড়ে বসি।মারিয়া ম্যাগাজিন পড়ছে, হাত ব্যাগেই ছিল সেটা। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ব্যাগ থেকে প্রসাধনের এটা-ওটা বের করে স্বাভাবিক রূপ চর্চাও হচ্ছে। হাত ব্যাগটা দু পায়ের মাঝখানে মেঝেতে রাখায়া কিছুটা পা ছড়িয়ে বসেছে ও। পায়ে পায়ে মাঝে মাঝেই স্পর্শ হচ্ছে। ওর তাতে কিছু আসছে যাচ্ছেনা। আমার আর বৃথা সঙ্কোচে কাজ কি? আমি তাকে আগাগোড়াই লক্ষ্য করছি। সেও কি? আমার মধ্যে আবার অস্বস্তি কাজ করা শুরু করছে। আমার বা হাত কখন যে হাতল থেকে সরিয়ে নিয়েছি, খেয়াল করিনি। মারিয়া পুরো হাতলের দখল নিয়ে আছে। মস্তিস্ক বলছে হয় দুটা হাতই হাতলে রাখ নাহয় দুটাই নীচে রাখ।এই হাতলের সমস্যাটা আমার প্রায়সই হয়।দখল না পেলে অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকি। মারিয়া কি বুঝতে পারছে? যাক বাঁচা গেল! মারিয়ার হাত ব্যাগ থেকে চুইংগাম বের করে মুখে দেয়। আমাকেও তার আতিথ্য নিতে হয়। আমি আবার বিপন্ন বোধ করি। তাকে দেয়ার মত আমার কাছে কিছু নেই। এরমাঝে আমি আমার হাতলের দখল বুঝে পেয়েছি।মারিয়া আমার মত এত সুংকীর্ণমনা না। এক রকম আমার হাতের উপরেই তার হাত রাখে, যেন কত দিনের বন্ধু! তাকেই এবার গল্প করার মেজাজি মনে হয়। আদিম মানুষের ভাষায় আমরা কথা বলি। আবেগ আর ইশারার ভাষাই অনেক আপন মনে হয়। ইংরেজি আর ইতালিয়ান এর ব্যবহার একে অপরের কাছে বিচ্ছিন্ন আওয়াজ মনে হয়, তবুও আমরা সেইসব আওয়াজ করি, হাত আর মুখের নাড়াচাড়ায় একে অপরকে বুঝার চেষ্টা করি।আমাদের শরীরের উর্ধভাগ আরো বেশি কাছাকাছি হয়, আরো বেশি মুখোমুখি হয়। বাপ্পা মজুমদারের গানের কথার মত আমদের দুচোখের কথায় নিরবতা উড়ে পালায়।

প্লেনের ফেরিওয়ালার কথায় আমাদের ব্যঘাত ঘটে। স্বল্পব্যয়ী এই এয়ারলাইনসগুলা কোন কিছুই বিনে পয়সায় দেয়না। নাস্তা, চকলেট, এমনকি পানিটাও কিনে খেতে হয়। বিমানবালা আমাকে লটারীর টিকেট কিনতে উতসাহিত করছে। প্রথম পুরস্কার বিএমডব্লিউ। দুই ইউরোতে কিনে নিলাম।তিনটা ম্যাজিক নাম্বার মেলাতে হবে নুন্যতম পুরস্কারের জন্যে হলেও। আমার মেলে দুটা। আমার বোকামীতে মারিয়া শুধু হাসে।

মারিয়া হঠাত খোঁচা দিয়ে বাইরে দেখতে ইশারা করে। আমি তাকিয়ে দেখি নিচে সাদা পাহাড়ের সারি। মারিয়া শব্দ করে ‘মাউন্টেন, ফুসসস ইতালিয়া’। আমি বুঝে নেই আমরা এখন জার্মানি সীমানা পার হচ্ছি। ওই সাদা পাহাড়ের আরেক পাশেই মারিয়ার দেশ ইতালি। মারিয়া থাকে ভেনিস এর পাশে কোন একটা শহরে, যার নাম আমি ধরতে পারিনি।ফরাসি ভাষার কিছু বিদ্যে জানা থাকাতে বুঝে নিলাম ইতালিয়ান সাপ্তাহিক দিনের নাম ও যেটা বলছে সেটা হয়ত শনিবার বা রবিবার হবে। কাল আমি ভেনিস থাকব, কাল ত শুক্রবার। আবার বিকালেই ত্রিয়েস্তে চলে যাব। আমি যতটুকু বুঝেছি মারিয়া শনি-রবিতে ভেনিস আসছে আর এসে আমাকে ফোন দিবে! আমি তাকে আমার অপারগতার কথাটুকু বুঝাতে পারিনি। মনে মনে হাসি পেল। সামনাসামনি এ আমরা কিছু আবেগ আর শব্দ ছাড়া কিছু বুঝিনি, ফোন এ আমি কি বুঝব? আমিও আর বুঝাবার বা বুঝার চেষ্টা করিনি।

প্লেন ল্যান্ড করছে। আমি শক্ত হয়ে হাতল ধরে বসে আছি। খুব ইচ্ছা করছে মারিয়ার হাতটা আমার হাতে নেই। তার স্পর্শ এখন আর আমাকে অস্বস্তিকর আনন্দটা দিচ্ছে না। ভেনিস দেখার উত্তেজনাও কাজ করছেনা। আমার আকাশ ছেয়ে আছে বিষাদে। প্লেন থামতেই তড়িঘড়ি করে নেমে এলাম। মুসলিম আর বাংলাদেশি হওয়ার সুবাদে ইউরোপিয়ান দেশে প্রায়শই আমদেরকে ইমিগ্রেশান এ ‘বিশেষ আতিথেয়তা’ দেয়া হয়। আমি সেদিকে মনযোগী হই। তবে শেংগেন ভুক্ত দেশ থেকে যাত্রা শুরু করায় এবার বিনা বাধাতেই বের হয়ে আসি। আমি বাস খুজতেছিলাম। মারিয়ার ডাকে পিছন ফিরে তাকাই। ওর বাবা ওকে নিতে এসেছেন। মারিয়া আমার কাছে এগিয়ে আসে। ও কি কিছু বলতে চায়? ওর চোখে জল ছল ছল।নির্বাক কিছু পলক।

কুনো ব্যাঙ
২৮ জুলাই ২০১১


মন্তব্য

নিটোল ( অতিথি) এর ছবি

খাড়ান, একটু রেস্ট লইয়া লই। এতো বড়ো লেখা পইড়া শ্যাষে মনে হইল কামটা তেমন খারাপ করিনাই। লেখা ভালো। হাসি

guest_writer এর ছবি

আমিও জিরায়া জিরায়া লিখসি। হো হো হো আপ্নে এক ঝাটকায় পড়তে পারলেন, তাইলে? ভালোলাগাটা ভাল্লাল হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

খাইছে! হো হো হো

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অপছন্দনীয় এর ছবি

কী সর্বনাশ!!!

"ভেক ও রাজকুমারী"র গল্প মনে করিয়ে দিলেন তো দেঁতো হাসি

 উত্তরার ছেলে এর ছবি

...বিষয় বস্তু সরল কিন্তু গল্প বলার ভঙ্গিতে নতুনত্ব আছে...ভাষা ঝরঝরে...বিনয়ী আবার অকপট...খুব ভলো লাগলো

কৌস্তুভ এর ছবি

গল্প ঠিক আছে। কেবল শেষে চোখে জল আনাটা ঠিক জমল না।

The Reader এর ছবি

খাইছে

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

চলুক

দিহান এর ছবি

ত্রিয়েস্তে? ICTP তে নাকি?

guest_writer এর ছবি

জ্বি। সময় আগষ্ট ২০০৯

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

এত তাড়াতাড়ি চোখে জল আসলো!
ইতালিয়ানরা কি ছিচকাদুনে নাকি!!! খাইছে
ভালো লাগলো।

guest_writer এর ছবি

এমনও হতে পারে লেখক ঐ দু'চোখে জলের ছায়া দেখেছে খাইছে লেখার কিছু এডভান্টেজ নেয়া মনে হয় যায়েজ দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।