দিনগুলো এখন আর আমাকে সময় দেয়না ।ব্যস্ত সময়,সারাদিন কাজের মাঝে ডুবে থাকতে থাকতে নিজেকেই ভুলে যাই মাঝে মাঝে । হাতের ঘড়িটার সাথেই এখন সমস্ত প্রেম চলে, কখনো নড়চড় করা যায়না ওটার বেরসিক আব্দারকে । দিনশেষে তাই যখন নিজের জন্য মিনিট কয়েক সময় বের করি, হাঁটতে বের হই। ল্যাম্পপোস্ট এর মৃদু আলোয় দুনিয়াটাকে অনেক আপন মনে হয়। সাদা স্বপ্নগুলোকে নিয়ে খেলতে থাকি মনের ভেতর।
আজকের সন্ধ্যাটা একদমই অন্যরকম ।আকাশে এক ফালি বিশাল চাঁদ আর তারাদের মেলায় হারিয়ে যেতে ভাল লাগছিল অনেক। বাসার দমবন্ধ হয়ে আসা গরমে মন টিকাতে পারছিলামনা , বেরিয়ে এসেছিলাম তাই খোলা হাওয়ায়। হাঁটতে হাঁটতে কখন যে বাসার পাশের পার্কটাতে চলে আসলাম, টেরও পাইনি। থমকে দাঁড়ালাম। দোলনাটা দুলছে হালকা হালকা। কেউ মনে হয় একটু আগেই এখানে ছিল, হাওয়ার সাথে মিতালীতে। আধো আলো আর আধো ছায়ার রাজত্বে সবকিছু কেমন অপার্থিব লাগছিল। কচি ঘাসে ছাওয়া জায়গাটা আমাকে টানল খুব। কি যেন মনে পড়তে গিয়েও পড়ল না।নিজের অজান্তেই পা বাড়ালাম ওদিকে।
দোলনাটা দুলছে।মৃদু । মনে হল আমার জীবনটাও যেন তার সাথে সাথে দুলছে, একটু একটু করে। আজকে আমার কি যেন হয়েছে, কখনো এমন করে তো ভাবিনা!
খুব বেশিদিন তো আগে নয়, যখন এই দোলনাটাতে দোল খেতাম আপন মনে। শরতের সাদা সাদা মেঘ ছড়ানো আকাশের নিচে তুমুল বাতাসের সাথে উড়ে যেতাম। আরও উপরে উঠে যেতাম,আকাশটাকেই ছুঁয়ে ফেলব একদিন এই আশায়। এই ঘাসগুলোর উপরেই দৌড়ে বেড়াতাম সবার সাথে, কখনো কানামাছি, কখনো মাংসচুরি,আবার কখনো ক্রিকেট ব্যাটটা নিয়ে নিস্ফল চেষ্টা করে যেতাম,যদি একটা বল কোনোমতে লাগাতে পারি! পিচ ঢালা রাস্তাটার বুক চিরে সাইকেলটাকে হাঁকিয়ে নিতাম প্রায়ই ,হুস হুস শব্দে বাতাস কেটে। বিকেলগুলো এমন করেই তো পার করে দিয়েছি।
স্কুলে বান্ধবীদের সাথে কত ঝগড়া করেছি, আবার মানিয়ে ফেলতাম সাথে সাথেই। হোমওয়ার্ক না করার জন্য শাস্তিও তো কম পাইনি। পিটি পিরিয়ডগুলো ফাঁকি দেয়ার নিত্যনতুন ফন্দি আঁটতাম আমরা,এই ব্যাপারে অনেক পটুও ছিলাম। আর ছুটির পর হইচই করতে করতে বাসায় ফিরে আসতাম, আবারো একটা আনন্দময় দিন কাটানোর প্রত্যাশায়।
সেই বালিকাবেলায় বুঝিনি, শ্রেষ্ঠ সময়টা কাটিয়ে ফেলছি এক এক করে। তখন ছিল বড় হওয়ার নেশা। মায়ের উঁচু হীলটা পরে,মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যেতাম, কখন এত বড় হব এই চিন্তায়। পয়লা বৈশাখ এর অপেক্ষায় থাকতাম, তখন যে শাড়িটা পড়তে পারব! বুঝিনি, বড় হওয়া তো আসলে এতোটা মজার নয়।
আবারো বেরসিক ঘড়িটা জানান দিয়ে দিল বাস্তবতার ।পাগুলো চলছে না।কিন্তু উঠতে হবেই। আবারও ফিরে যেতে হবে কাজের জগতে।এইসব ভাবনার সেখানে জায়গা নেই।
পিছন ফিরে তাকালাম, আবারো দোলনাটা দুলছে।আমার অসাধারণ বালিকাবেলায় সফর করিয়ে একা একাই হাসছে আমার একসময়ের খেলার সাথি........................
মন্তব্য
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লেখাটা ভালো লাগল। কিন্তু লেখিকার নাম নেই...
''স্মৃতি বড় উচ্ছৃঙ্খল, দুহাজার বছরেও সব মনে রাখে.....''
লেখিকার নাম জানতে চাই।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
লিখাটা খুব ছুঁয়ে গেলো , কিন্তু কার লিখা জানতে পারলামনা যে
laptop এ গুঁতোগুঁতি করতে করতে লিখে ফেললাম। post দেয়ার আগে খেয়াল করিনি নামটা দেয়া হয়নি যে......
ধন্যবাদ সবাইকে।
(আফরিনা হোসেন রিমু)
দেরীতে পড়ার সমস্যার পাশাপাশি সুবিধেও আছে, এই যেমন লেখিকার নাম জেনে নিয়েই মন্তব্য করতে বসলাম। ভাই রিমু, ভালো লাগলো, আরো লেখতে থাকুন। শুভেচ্ছা,
ধন্যবাদ। সচলে যাত্রা শুরু করলাম। সাথে থাকবেন সবসময়।
ছোটবেলায় শুধু মনে হত, ইস, কবে বড় হবো?! আর আজ... সেই দিনগুলোকে ফিরে পেতে চাই যে কোনো কিছুর বিনিময়ে। আবাধ্য সময় আর স্মৃতি...
অনেক শুভেচ্ছা আপনার (বিরক্তিকর - কেজো) বড়বেলাটার জন্য...
হয়তোবা একটা সময় আবার এই বড়বেলাটাকে miss করব অনেক, কে জানে।আমরা আসলে পুরনোকে মনে করতে ভালবাসি। আমাদের দুর্বলতা সেখানেই।
শুভেচ্ছা আপনাকেও।
সময়টা পার হয়ে আসার পর লোকজন বোঝে ওটা শ্রেষ্ঠ সময় ছিলো।
আমি ক্যান জানি পার করার সময়েই বুঝতে পারি, দারুণ একটা সময় কাটাচ্ছি।
এটাই আমার শ্রেষ্ঠতম সময় হয়ে থাকবে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপনি ভাগ্যবতী। বর্তমানটাকে ভালবাসার মত বুদ্ধিমানের কাজ আর নেই।
ধন্যবাদ ।
নতুন মন্তব্য করুন