গিরিরাজ হিমালয়ের অনতিক্রম্য অমোঘ আকর্ষণে প্রতি বছর লাখো লাখো মানুষ ছুটে আসে তার অনন্যসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য, কেউবা পর্বতমালার সুউচ্চ শৃঙ্গগুলো আরোহণের জন্য, আত্নার শুদ্ধিতার জন্য, আবার কেউ বা এর অসাধারন জীববৈচিত্রের টানে।
নেপালের হিমালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেকিং এর পথ হচ্ছে অন্নপূর্ণা সার্কিট। এক নভেম্বরে বাংলাদেশে পর্বতারোহণের পথিকৃৎ ইনাম আল হকের নেতৃত্বে আমরা গিয়েছিলাম পাথূরে শিলাময় আঁকা বাঁকা রূক্ষ বন্ধুর সেই গিরিপথে, বিশ্বের গভীরতম উপত্যকায় আর এক অসাধারণ নদী, যার তুলনা কেবল মাত্র সে নিজেই, সেই কালীগণ্ডকীতে! সেই কাহিনীই বলব আজ আপনাদের-
পোখরা পৌছানোর পরপরই দিগন্ত আড়াল করে অটল দাড়িয়ে থাকা পর্বতমালার মাঝে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ১৪টি পর্বতশৃঙ্গের অন্যতম ধবলগিরি ও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত অন্নপূর্ণা চোখে পড়ল,
সেই সাথে আছে নিষিদ্ধ শৃঙ্গ মৎস্যপুচ্ছ যা মৎস্যদেবীর জন্মস্থান বিবেচ্য বিধায় অতি পবিত্র এবং আরোহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ( এই নীতি অমান্যকারীর জন্য মৃত্যু দন্ডের বিধান রয়েছে),
আমাদের যাত্রাপথের প্রথম গন্তব্য তিব্বতের সীমানায় অবস্থিত এককালের নিষিদ্ধ রাজ্য মুসটাঙের রাজধানী জমসম, সেখান থেকে ট্রেকিং করে নিচের দিকে নামা। গোর্খা এয়ারলাইন্সের ছোট বিমানে (২০ আসনের) করে একেবারে মৎস্যপুচ্ছের পাশ দিয়ে উড়ে মাত্র ২০ মিনিটের উড্ডয়ন সাঙ্গ করে কিংবদন্তীর মুসটাঙে নামলাম সবাই ( এই রাজ্যের রাজা সব ধরনের বিদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলেন, পরে নেপালিরা এই ক্ষুদে পাহাড়ি রাজ্য দখল করে নেয়, এখন সবার জন্যই উম্মুক্ত)। আহা, পথে গিরিরাজের কি অপূর্ব শোভা, জমাট বরফের মুকুট মাথায় নিয়ে ঠাই দাড়িয়ে আছে সারি সারি পর্বত, শান্ত, শুভ্র। তুষার চিতার নরম, কোমল, মোলায়েম, অদ্বিতীয় চামড়ার মত, সেই চকচকে খোলসের নিচেই লুকিয়ে আছে তার অন্যরূপ, সুপ্ত আগ্নেগিরির মত একমাথা বিপদ মাথায় নিয়ে ফুসে উঠতে পারে সে যখন-তখন আপনমর্জি মত।
একরত্তি সেই বিমান বন্দরে নামার মিনিট পনের পরেই আমাদের গাইড ঠিক হয়ে গেল, গঙ্গা বাহাদুর তামাং, সে আগামী কয়দিন হিমালয়ে সর্বক্ষণের সাথী ও গাইড। এই অবসরে সবাই এক কাপ লবণ চা ( তিব্বতের বিশ্বখ্যাত চা-চিনির বদলে এক গাদা লবণ আর সেই সাথে এক ডেলা চমরী গরুর দুধের মাখনের সমন্বয়ে তৈরি, শেষ পর্যন্ত অনেকটা ঘন ক্বাথের সুপ্যের মত দাড়ায়) পান করে, শহরটা একটু দেখে নিয়ে ( এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পদব্রজে কয়েক মিনিটের ব্যপার মাত্র) রওনা দিলাম আমরা। অদ্ভুত একেকটা জনপদ সেখানকার, মহাকাল যেন থমকে আছে হাজার বছর ধরে, কয়েকটা বৈদ্যুতিক টাওয়ার ছাড়া সত্যিকার অর্থে এমন কোন পরিবর্তনই হয় নি! সদাহাস্যরত, কর্মঠ, স্বাস্থ্যবান সেখানকার প্রত্যেকেই। একেবারে তিব্বতের সীমানা হওয়ায় মুসটাং-এর অধিবাসীদের চেহারা, সংস্কৃতি ও মননে নেপালের চেয়ে তিব্বতের সাথে মিল চোখে পড়ার মত।
শহর ছাড়ার খানিক পরেই বিপুল বেগে বয়ে চলা কোন মুখরিত জলধারার কলকল ধ্বনি কানে প্রবেশ করা মাত্র উৎকর্ণ হয়ে চলার গতি বাড়িয়ে দিলাম, দর্শন মিলল পৃথিবী বিখ্যাত কালীগণ্ডকীর। উল্লেখ্য, আমাদের গ্রহের অন্যতম উঁচু দুই পর্বতশৃঙ্গের ধবলগিরি ও অন্নপূর্ণার মাঝে অবস্থিত এই কালীগণ্ডকী উপত্যকা বিশ্বের সবচেয়ে গভীরতম উপত্যকা, প্রায় চার ভার্টিকাল মাইল নিচে,
এর মধ্য দিয়েই সাবলীল ভঙ্গিতে বয়ে চলা নদীটি ভূ-তাত্ত্বিকদের জন্য যথেষ্ট সমস্যার তৈরি করেছে অনেক বছর ধরে। এর উৎপত্তি আর এই অঞ্চলে প্রাপ্ত জীবাশ্মের সমাহার নিয়ে উদ্ভব হয়েছে অসংখ্য উত্তর না মেলা প্রশ্নের, অনেক বছরের নিবিড় গবেষণার পর যে তথ্য পাওয়া গেছে তা মাথা ঘুরিয়ে দেবার মত, কালীগণ্ডকী নদী হিমালয় পর্বতমালার চেয়েও প্রাচীনতর!! ভূপৃষ্ঠে হিমালয়ের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই সুউচ্চ পামির মালভূমি থেকে আদি টেথিস সাগর পানে বয়ে চলত এই নদী, প্রায় ১৪ কোটি বছর আগে প্রাচীন মহাদেশ গণ্ডোয়ানাল্যান্ডের সাথে ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে হিমালয়ের জন্ম শুরু হলে কালীগণ্ডকী মধ্য দিয়েই পথ খুজে নেই নিচের দিকে সাগর পানে, এমন প্রাচীন নদী জগতে আর দ্বিতীয়টি নেই। নদীর দেশের মানুষ আমি, পদ্মার তীরে কেটেছে শৈশবের সোনালী আলোমাখা স্বপ্নময় দিনগুলি, তাই এমন নদীর সন্ধান পেলে কার মনটা না উচাটন হয়ে ওঠে! কালীগণ্ডকীর তীরে পৌছে এক আজলা বরফ শীতল জলে চুমুক দিয়ে মনটা আত্নতুষ্টিতে ভরে উঠল।
দুপুরে পেটপূজোর বিরতি ছিল হিমালয়ে আপেল চাষের জন্য বিখ্যাত গ্রাম মারফাতে। ব্রিটিশরা প্রায় ৬০ বছর আগে এই উঁচু ভূখণ্ডে আপেল বাগান গড়ে তোলে, এই হিমশীতল তুষারস্নাত উর্বর জমিতে ফলন ভাল হবে এই আশায়। মারফার প্রবেশ দ্বারে ফলবান আপেল গাছের সারি প্রমাণ করে তাদের স্বপ্ন স্ফল হয়েছে।
দুপুরে প্রথম বারের মত ইয়াক বা চমরী গরুর মাংস দিয়ে উদরপূর্তি করা হল, সুস্বাদু কোন সন্দেহ নেই তবে একটু শুকনো মাংস, তার জাতভাই সমতলের গরুদের মত রসালো নয়। বরাবরের মতই গঙ্গা বাহাদুরের একমাত্র খাবার ডাল ভাত!
হিমালয়ের জনপদগুলোর এক মজার বৈশিষ্ট্য হল এখানে দুই জায়গার মধ্যবর্তী দূরত্ব কোন সময়ই কিলোমিটারে প্রকাশ করা হয় না, বরং হয় ঘন্টার মাধ্যমে! যেমন ঢাকা- টঙ্গী, ২ ঘণ্টা! কারণ জানতে চাইলে একগাল হেসে একজন জানালো, হয়ত কোন গ্রাম মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে কিন্তু চড়াই আর ঘুরপথের জন্য সেখানে যেতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যেতে পারে, আবার ঢালু পাহাড়ি পথের জন্য সেখান থেকে ফিরতে হয়ত ঘণ্টা খানেকের কম সময় লাগে। কাজেই, আমাদের সমতলের দূরত্বের একক সেখানে অচল।
পথে দেখা মিলল এক ঝাক ল্যামাগায়ারের, অদ্ভূত এক ভয়াল বুনো সৌন্দর্যের অধিকারী, সরাসরি হাড় খাওয়ার ক্ষমতাশালী বিশ্বের একমাত্র পাখি এই দাঁড়িওয়ালা শকুন। তার ওড়ার ভঙ্গি কি যে সুষমামণ্ডিত, যে কোন অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানকেও তা হার মানাবে! ওরা মনে হয় উপর থেকে হাড় ফেলে ভাঙ্গার জন্য কোন পাথুরে চাতাল খুজছিল। পার্বত্য এলাকার সাত তাড়াতাড়ি নেমে আসা সন্ধ্যার কারণে সে রাতের মত আশ্রয় নিতে হল থুকচে গ্রামের লক্ষী লজে।
পা দুটিকে খানিকক্ষণ বিশ্রাম দিয়েই ঘুরতে গেলাম কালীগণ্ডকীর তীরে, যদি কোন নতুন পাখি দেখা যায়, দর্শন মিলে কোন অদেখা বিস্ময়ের। কিছু কাদাখোঁচা ইতস্তত খাবার খুজছে, আর প্রাচীন সেই নদী গর্ভে তখন অপার্থিব নির্জনতার রাজত্ব।
পরদিন সাত সকালে যাত্রা আবার শুরু, প্রথম বারের মত পের হলাম শিহরণ জাগানিয়া ঝুলন্ত সেতু গুলো- দুই পাহাড়ের মাঝে, গিরিখাদ আর নদীগুলোর বাঁধা এড়াতে বিভিন্ন সময়ে স্থাপন করা হয়েছে এগুলো।
দেখে নির্মল আনন্দ হল, কেবল মানুষেরাই নয়, এই বিস্ময়কর সেতুগুলো ব্যবহার করে মালামালবহনকারী খচ্চর আর গাধার দলও!
কোন কোন পশুপালক আবার তাদের খচ্চরগুলোকে কোরবানির গরুর মত রঙচঙে সাজে সাজিয়েছে।
তবে হিমালয়ের অধিকাংশ স্থানেই পণ্য পরিবহনের একমাত্র ব্যবস্থা মানুষ, তারা আমাদের চোখ কপালে তুলে দেবার ব্যবস্থা করে প্রত্যেকেই অনায়াসে ৭০ কেজিরমত মালামাল মাথার চারপাশের এক দড়ির সাহায্যে বেঁধে নিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে!
সেই সাথে মায়েরা বাচ্চা দোলনাসহ পরিবহন করে একই পদ্ধতিতে।
পরিবহনের এই সমস্যার কারণে যতই উপরে উঠতে থাকবেন দ্রব্যমূল্যের দাম ততই বাড়তে থাকে। এক বোতল কোকাকোলার দাম কাঠমান্ডুতে যেখানে ১০ রূপী তা পাহাড়ে একাধিক বার কিনেছি ১০০ রুপী দিয়ে।
এর পরপরই ভ্রমণে আমাদের সঙ্গী রূপে আবির্ভাব ঘটল নীলগিরির, ৭০০০ মিটার উঁচু এই অনন্যসুন্দর পর্বতের পাশ দিয়েই আমরা হাঁটব বাকি দিনগুলো।
প্রতিটি গ্রামে ঢোকার পথেই নজরে আসে প্রার্থনার জপযন্ত্র, যার ভিতরে লেখা আছে বুদ্ধ দর্শনের মহান বাণী- ওম মনি পদ্মে হুম। সকলেই পুণ্যের আশায় বা নিছক কৌতুহল ভরে জপযন্ত্রগুলো ঘুরিয়ে যাচ্ছে।
পথে খাবার জন্য থামতে হল কালাপানিতে, এর মধ্যে শুরু হয়েছে ইলশে গুড়ি বৃষ্টি, থামার কোন লক্ষণ নেই, মেঘদূতের দল একের পর এক ভিড় করছে মাথার উপর, সেই অবস্থাতেই রেইন কোটের আড়ালে শরীর ঢাকা দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পথ চলে, নানা পিচ্ছিল চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রাতের আশ্রয় নিলাম ফ্লোরিডা হাউসে। দেখা হল রাম শেরপা আর তার ভাই অর্জুনের সাথে, রাম এও মধ্যেই চারবার এভারেস্ট জয় করেছেন (অক্সিজেন সহ), অসম্ভব প্রানশক্তির অধিকারী। দেখা হল দালাই লামার অন্ধ ভক্ত ফরাসী তরুণ লিওঁর সাথে, উচ্ছল স্প্যানিশ তরুণী ড্যানিয়েলার সাথে, ইসরায়েলী এক পরিবারও যোগ দিল ডাইনিং টেবিলে আমাদের আড্ডায়, সবাই বিশ্বের নানা কোণ থেকে এসেছে হিমালয়ের অমোঘ আকর্ষণে।
পরের রোদ ঝকঝকে দিনে প্রথমবারের মত দেখা মিলল এক জোড়া সারসের, কি অপূর্ব ভঙ্গিমা সেই উড্ডয়নরত যুগলের। এক জায়গায় কয়েক বর্গমিটারের এক পাথুরে দেয়ালে দেখলাম অন্তত দশ প্রজাতির গাছ- কনিফার, ঘাস, পরগাছা, অর্কিড সবই আছে সেখানে। ইনাম ভাইয়ের কাছ থেকে জানা গেল অন্যান্য পর্বতমালার সাথে এটাই হিমালয়ের অন্যতম প্রধান পার্থক্য, অন্য কোথাও যেখানে ১৫,০০০ ফিটের উপরে প্রাণের দেখা মেলা দুষ্কর, সেখানে হিমালয়ে ১৭,০০০ ফিটের উপরও সবুজের ছড়াছড়ি পাহাড়ের ঢালে ঢালে!
পথে এক জায়গায় দেখা গেল আগের রাতে পাথর ধ্বসে ট্রেকিং-এর রাস্তা একেবারে অনুপযোগী করে ফেলেছে, খাড়া তীক্ষ সুচালো ফলায় ভর্তি এক খাড়া ঢাল আমাদের সামনে, নীচে অতল গভীরতার এক বিকট খাদ মুখব্যাদানকরে আছে, এখন কি করা? সিদ্ধান্ত হল, একজন একজন করে হাতের সাহায্যে দেয়াল ধরে সাবধানে এগোতে হবে, পিঠে আবার ১২ থেকে ১৫ কেজির ভারী ব্যাকপ্যাক! তা যেন কারও শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য যথেষ্টরও বেশী !! বেশ খানিকটা সময় লাগিয়ে দেহের রক্তপ্রবাহে খানিকটা অ্যাড্রিন্যালিন হরমোন মিশতে দিয়ে অক্ষত অবস্থাতেই সেই রোমাঞ্চকর বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিলাম আমরা।
সেদিনের গন্তব্য তাতোপানি। নেপালী ভাষায় তাতোপানির অর্থ গরম পানি। এমন নাম হবার কারণ, সেখানে আছে এক উষ্ণ প্রসবণ। পর্বতের গভীর থেকে উঠে আসা এই প্রাকৃতিক গরম জল অন্যদের ব্যবহারের সুবিধার্থে ছোট অগভীর পুল করে ধরে রাখা হয়েছে। জাপানিদের তো দৃঢ় বিশ্বাস এই ধরনের প্রসবণে স্নান যাবতীয় অসুখতো সারাই, এমনকি চামড়ায় বয়সের ছাপ পর্যন্ত হারিয়ে যায়! এতটা সত্য কি না বলতে পারি না, কিন্তু আমাদের সারাদিন পথ চলার ক্লান্তি মুছে গিয়েছিল সেই ঈষদুষ্ণ স্নানের পর। সেই সাথে পানীয় হিসেবে মিলল কিংবদন্তীর তুষার মানব বা ইয়েতির প্রিয় পানীয় ছাং ! দুধ থেকে তৈরি করে স্থানীয়রা। ইয়েতির কাহিনী সারা বিশ্ব জুড়ে, হিমালয়ের কোলে বাচ্চাদের মা ঘুম পাড়ায় ইয়েতির ভয় দেখিয়ে। যদিও বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে বিবেচিত রেইনহোল্ড মেসনার প্রায় এক দশক ধরে নানা অনুসন্ধান ও মুল্যবান গবেষণা চালিয়ে জানতে পেরেছেন ইয়েতি আসল তিব্বতের কিংবদন্তী, দেশান্তরী শেরপাদের সাথে সাথেই হিমালয়ের এই প্রান্তে চলে আসে সেই গল্প, তার মতে অতি বিরল প্রজাতির তিব্বতি ভালুকই আসলে সেই ইয়েতি, স্বয়ং দালাই লামাও একমত তার সাথে।
সে রাতে আকাশ পুরোপুরি মেঘমুক্ত থাকায় তারা পর্যবেক্ষণে বের হলাম, উপর পানে দৃষ্টি মেলতেই চোখে মনে হল ধাঁধা দেখছি, একি পৃথিবীর আকাশ না অমরাবতীর দৃশ্যপট! গোটা আকাশ অনন্ত নক্ষত্র বিথীতে পরিপূর্ণ, কোথাও এক রত্তি জায়গা ফাঁকা নেই যেখানে কোন ণা কোণ নক্ষত্র উঁকি না দিচ্ছে। মনে হল, আলো ও বায়ূদূষণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হিমালায়ের এই এলাকাগুলোয় আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য সবচেয়ে ভাল, ঢাকার চেয়ে অন্তত কয়েকশ গুন নক্ষত্রের মায়াবী উপস্থিতি দেখা দিবে সহজেই।
পরদিন আমাদের ট্রেকিং-এর শেষ দিন, পথের ধুলোয় পা রাঙাতেই দেখা হল স্থানীয় লোকজনের সাথে, ভীড় করে সবাই কোথাও যাচ্ছে। শিশুদের পরনে নতুন জামা, অনেকেই কপালের চন্দনের দোকান, মাথার খোপায় ফুলের সমারোহ, জানা গেল সেদিন দুর্গা পূজা, পূজার আনন্দে ঘর ছাড়া সবাই।
বিশাল এক পাহাড়ে ঝুলে ঠাকা অংশে অবশেষে দেখা মিলল হিমালয়ের বিখ্যাত মৌচাকের, ভয়ংকর পাহাড়ি মৌমাছিরা অনেক উচুতে বিশালাকৃতির মৌচাক গড়েছে, সেখানে সঞ্চিত আছে উন্নত মানের দুর্লভ মধু। অনেক জায়গাতেই চোখে পড়ল স্থানীয়রা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে, তাতে তিব্বতি দ্রব্যের প্রাধান্যই বেশী, তবে সবচেয়ে বেশী বিকিকিনি চলে হিমালয়ে পাওয়া কোটি কোটি বছরের পুরাতন প্রস্তরীভূত বিভিন্ন সামুদ্রিক জীবের জীবাশ্ম। পর্বতের এত উপরে সামুদ্রিক ফসিলের প্রাচুর্য প্রমাণ করে এখানকার আদি সমুদ্রও ছিল নিঃসন্দেহে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। তবে সবকিছুর দামাদামি চলে দস্তুর মত।
অবশেষে বেণীতে পৌছানোর অল্প আগে এযাত্রা আমাদের ট্রেকিংয়ের সমাপ্তি, এখান থেকে জীপে করে বেণী, সেখান থেকে পোখরা। হিমালয়ে এই কয়দিনের ভ্রমণে আমাদের সংগ্রহে যুক্ত হয়েছে অন্তত তিরিশ প্রজাতির পাখি, যা একেবারেই নতুন এবং সেই সাথে কত মনোমুগ্ধকর, অবিশ্বাস্য সব স্মৃতি দাগ কেটে গেছে মনের পর্দায়, সবকিছু বিনিময়ে কেবল ভক্তি ভরে প্রণতি জানালাম গিরিরাজকে, পুনঃদর্শনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। --- তারেক অণু
মন্তব্য
চমৎকার লাগলো। তবে কবে গিয়েছিলেন তারিখটা জানালে ভালো হতো। সেই সাথে একটা গ্রুপ ছবির অভাব বোধ করলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
যথারীতি অনবদ্য লিখা সাথে ছবিগুলা ও।
আমি অন্নপূর্ণা দেখছিলাম কতগুলা দোকানমোকান, তারতুরের উপর দিয়া। হঠাৎ দুইটা পাথুরে শাদা চূড়া। আমার জীবনে দেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ দৃশ্য। আপনার লেখা আর ছবি দুইই খুব ভাল লাগল।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
দারুণ! অসাধারণ! ছবি লেখাদুটোই। পর্ব হিসেবে চলুক।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
অসাধারণ
অণু ভাই
জুড়ি নাই
অনেক ধন্যবাদ সবাইকে। আর বলেন না মুস্তাফিজ ভাই, সেই যাত্রায় আমার কয়েকশ ছবি মুছে গেছিল কার্ড থেকে, একেবারেই হারিয়ে গেছে সব।
অনিন্দ্য রহমান- ঠিক বলেছেন, এই দৃশ্য আসলেই জাদুকরী। আপনি কি পোখরা থেকে দেখেছিলেন?
বন্দনা, অনার্য সঙ্গীত- আপনারা তো সবসময়ই ব্যপক উৎসাহ দিয়েই যাচ্ছেন, কৃতজ্ঞতা রইল। এর পরে নেপালের বন আর তিব্বতের হিমালয় নিয়ে লেখব আসা করি। শুভেচ্ছা সবাইকে--- অণু
annapurna by khichick!, on Flickr
আমার দেখা ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
লেখা ও ছবি দুটোই চমৎকার হয়েছে ! অভিনন্দন !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ রণ দা, ছবিতো সবই ব্যাকপ্যাক টানতে টানতে তোলে, বোঝেনই তো ! তবে সব গুলোয় খাটি র।
ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক_কবি, এর দিগন্তের দেখা অবশেষে মিলল !!!===== শুভেচ্ছা- অণু
চমৎকার বর্ণনা আর ছবিগুলো দেখে তো আমি মুগ্ধ ।
সেরা ভ্রমণ পোস্টগুলোর একটি। ছবিগুলো চমৎকার। আপনি কী ক্যামেরা ব্যবহার করেন?
কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা আপনার সঞ্চয়ে! লেখার গতি অব্যাহত থাকুক।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
দারুণ লাগলো। লেখা ও ছবি দুটোই।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কিছু বলার নাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অসাধারণ।
দেখে নিও একদিন আমিও...............
অসাধারণ।
দেখে নিও একদিন আমিও...............
অসাধারণ।
দেখে নিও একদিন আমিও...............
অসাধারণ।
দেখে নিও একদিন আমিও...............
ছবি আর ভ্রমণের বর্ণনা অসাধারণ লাগল। আসলেই পর্ব হিসেবে চলুক এটা।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
অসাধারণ।
দেখে নিও একদিন আমিও...............
অসাধারণ।
দেখে নিও একদিন আমিও...............
পড়া শুরু করেই টের পেলাম এটা তারেক অনু ভাই নামের দুবলাপাতলা মানুষটা না হয়েই যায়না। পোখারা মনে পড়ে গেলো!
এটাই তবে আপনার সেই ভ্রমন!!
দারুণ লাগলো। লেখা ও ছবি দুটোই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।
ফাহিম হাসান ভাই, এই ফিচারের সব ছবি এক পুঁচকে প্যানাসনিক লুমিক্স দিয়ে তোলা, বর্তমানে অবশ্য ক্যানন ব্যবহার করছি।
মৌনকুহর, না না, ঐ টা আরো ১২ দিন পরে শুরু হবে, তুষার ঢাকা পর্বত থেকে অনেক অনেক দূরে, নীল সমুদ্রে।
উৎসাহ দেবার জন্য আবারো ধন্যবাদ- তানিম এহসান,ধোপার বাড়ীর গাধা, saima, পাগল মন, তাসনীম, নজু ভাইসহ সবাইকে----- অণু
লেখা, ছবি, সবই অসাধারন। অনেক ইর্ষা!
অনিন্দ্য রহমান আপনার এই ছবিটাতে Fish Tail Mountain বা পবিত্র মৎস্যপুচ্ছ পর্বত দেখা যাচ্ছে। একই জায়গা থেকে অন্নপূর্ণাও দেখতে পাবার কথা।
ধন্যবাদ মন_মাঝি। শুভেচ্ছা- অণু
ধন্যবাদ অণু। এইটা একই রেঞ্জের না?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
চমত্কার ভ্রমন্থন!
অনিন্দ্য রহমান .হ্যাঁ ভাই, একই রেঞ্জের।
অনেক ধন্যবাদ পান্থ রহমান রেজা। শুভেচ্ছা-- অণু
ঝুড়ির মধ্যে বাবুটা বেশি জোশ! আর শেষের পিচ্চিটা...
আর জপযন্ত্রের ছবিটা
ও আর হ্যাঁ, মাইনাস!!!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
মাইনাসে মাইনাসে কিন্ত ----, ।। অণু
আরও মাইনাস...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
স্রেফ দুর্ধর্ষ!
আপনারা পোখারা থেকে প্লেনে জমসম গিয়ে সেখান থেকে হেটে ফিরেছেন তাই না? এই বুদ্ধিটা আসলে মাথায় আসেনাই। আমার এইবছরেই প্ল্যান ছিলো জমসম-মুক্তিনাথ ট্রেক করা। কিন্তু লাদাখ যাওয়ার জন্য প্ল্যান বদল করলাম। বেঁচে থাকলে আগামী বছর হয়তো যাওয়া হবে এ পথে। আমি ভেবেছিলাম জমসম পর্যন্ত ট্রেক করেই যাবো, কিন্তু পোখারা থেকে যাওয়া আসা সব মিলিয়ে দশ বারো দিন লেগে যাবে বলে একটু চিন্তা করছিলাম, কিন্তু উড়ে গিয়ে হেঁটে নামা আসার আইডিয়াটা আসলেই ভালো
লেখালেখি জারি থাকুক!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
ঠিক বলেছেন, আসলে সময়ের অভাবেই ঐ কাজ করা হয়েছিল, আমাদের এক সঙ্গী অবশ্য জমসম থেকে মুক্তিনাথ গিয়েছিলেন, তবে আমি একবার গোটা সার্কিট করতে চাই। শুভেচ্ছা--
facebook
সাংঘাতিক পোস্ট অনুদা। ছবি, লেখা--- স্রেফ মাথা নষ্ট করে দেওয়া।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
মাথা নষ্ট কইরেন না আফা, অইডাই সম্বল!
facebook
নতুন মন্তব্য করুন