একটা মেয়ে যখন জানতে পারে সে অন্তঃস্বত্তা ততোদিনে তার ভেতরের স্বত্তাটির বয়স প্রায় এক মাস হয়ে যায়। মা’র শরীর ভ্রুন টাকে মানতে চায়না প্রথমে, এদিকে ভ্রুনটা চায় যেকোনো প্রকারে মা’র শরীরে টিকে যেতে। ব্যস শুরু হয় যুদ্ধ, ভ্রুনটার টিকে থাকার লড়াই। প্রথম তিনটা মাস এই যুদ্ধ চলে। মা’র শুরু হয় প্রচন্ড শরীর খারাপ লাগা,বেশির ভাগ মেয়ের বেলায় ই বমি হয়। অনেকে সবকিছুতে গন্ধ পান। একটা ক্ষুদ্র সংখ্যার ভাগ্যবান মেয়ে ছাড়া বাকি সবাই খেতে পারেন না।
আমাদের দেশের মেয়েরা অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় দুই রকম আচরন করে। একদল মনে করে প্রেগন্যান্সি কোনো জটিল ব্যাপার না,স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধা নেই কোনো। সিঁড়ি ভাঙ্গা, এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় রিকশায় চড়া,অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া কিছুই বাদ দেয়না এরা। বেশির ভাগ সময় এর ফল ভালো হয়না,মিসক্যারেজ এর রিস্ক থাকে। আরেক দল মেয়ে ভাবে ‘সর্বনাশ আমি প্রেগন্যান্ট, আমার এখন হাঁটা চলা সব নিষেধ শুধু শুয়ে থাকতে হবে’। এরাও পরবর্তিতে বাচ্চা ক্যারি করার এবং প্রসবের ধকল খুব ভালোভাবে সামলাতে পারেনা। পরিবারের বয়স্ক মহিলারা ও দুরকম আচরন করেন তাদের ভুমিকা কি সেই অনুসারে। শ্বাশুড়ি হলে তারা বউকে বলেন ‘আমরা বাচ্চা পেটে নিয়ে এই করতাম, ওই করতাম’। মা হলে বলেন ‘আমার মেয়েটার যত্ন- আত্তি লাগবে, এই সময়ে বিশ্রাম খুব দরকার’। (জেনারেলাইজ করেছি, ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে)
আমাদের দেশে প্রেগন্যান্সি লুকানোর একটা বাজে অভ্যাস আছে। অনেক মেয়েকে দেখেছি পেটটা চোখে পড়ার মতো বড় না হওয়া পর্যন্ত কাউকে বলেনা সে প্রেগন্যান্ট। অনেকে খুব অহংকার নিয়ে বলে ‘আমি প্রেগন্যান্ট এটা কেউ বুঝতেই পারেনি’! বাচ্চা হবে এটা যেনো কতো লজ্জার অথবা লুকানোর বিষয়। ফলে তাকে অনেকে অনেক কিছু করতে বলে বা খেতে বলে যা ঐ অবস্থায় অ্যাভয়েড করা উচিত। আমার মাকে অন্তঃস্বত্তা হবার খবর জানানোর পরে সে আমাকে বলেছিলো অবশ্যই তোমার অফিসে কালই জানিয়ে দেবে। প্রথম তিনটা মাস খুব সতর্কতার সাথে চলতে হয়। নিজের চারপাশে একটা সাপোর্ট সিস্টম তৈরি করা জরুরী। আমি তাই করেছি। আমার ছিলো নিখাদ কাস্টমার সার্ভিস। কাস্টমারের সাথে কথা বলতে বলতে এক এক সময় মনে হতো পৃথিবী দুলে উঠছে, গলা পর্যন্ত বমি উঠে আসছে...আমি বলতাম, ‘এক্সকিউজ মি আমি বেবী এক্সপেক্ট করছি তো, শরীরটা খারাপ লাগছে, আমার কলিগ আপনাকে সাহায্য করবে’। সবাই ভীষণ সহমর্মিতা দেখাতো,কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।
আমার বেলায় প্রথমে ভেবেছিলাম গ্যাসট্রিকের সমস্যা, দিব্যি চলতে ফিরতে পারছিলাম। যেদিন প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর রেজাল্ট নিয়ে বাসায় ফিরলাম পাঁচতলা বেয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে ঢুকে আর বাথরুম পর্যন্ত যেতে পারলাম না,মেঝে ভাসিয়ে বমি করে ফেললাম। আমার বর কোলে করে আমাকে বিছানায় রেখে এসে বমি পরিষ্কার করতে শুরু করলো। প্রচন্ড ঘোরের ভেতর আমার খালি একটা কথাই মনে হচ্ছিল-এই শরীরটা কি আমার শরীর? প্রথম তিনমাস আমি রুটিন করে প্রতিদিন তিনবার বমি করতাম, সকালে সন্ধায় আর রাতে। কেনো জানিনা অফিসে বমি হয়নি কখনো। প্রতিদিন হাঁক ছেড়ে কাঁদতাম অনেকবার। বারবার মনে হতো ‘আমি পারবোনা’, ‘এতো কষ্ট সহ্য করতে পারবোনা’। আমার ওজন পাঁচ কেজি কমে ৪০ কেজি হয়ে গেলো (আমি এমনিতেই তালপাতার সেপাই ছিলাম!)
প্রেগন্যান্সির সাথে অবধারিতভাবে আসে অসম্ভব ‘ফ্রাসট্রেশন’। আমার নিজের মনে হয়েছিলো মানুষ তো বড় কিছুর জন্য অপেক্ষা করে, নতুন কিছুর জন্য বাঁচে। পড়াশুনা, প্রেম, রেজাল্ট, চাকরি, সংসার, সন্তান। মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে আমার সব শেষ। এতো তাড়াহুড়া কেনো আমার জীবনে? আমার জীবনে আর নতুন কিছু ঘটবেনা...আমি একটা বাচ্চা তৈরির মেশিন... আই এ্যাম ফিনিশড...
কনসীভ করার পর এতো একা লাগে। দুনিয়ার সব মানুষকে খুব সুখী মনে হয়! সবাই কী সুন্দর সব জামাকাপড় পরছে! আমার জিন্সগুলোর কি হবে! কতো মজা করে খেতে পারছে! আমার মুখোমুখি ফ্ল্যাটের মেয়েটাকে স্কিপিং করতে দেখে মনে হয়েছিলো আহা আমি কবে আবার এইরকম দড়ি নিয়ে লাফাতে পারবো!
প্রায় সব মেয়ের ব্যাখ্যাতীত রাগ হয় হাজব্যান্ডের উপর। আমার বেলায় বর গপাগপ খাচ্ছে, উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে সব দেখে কেমন যেনো ক্রোধ আর আক্রোশ বোধ করতাম। ও যে তিনবেলা বমি পরিষ্কার করতো, রান্না করতো, খাইয়ে দিতো সব ভুলে যেতাম। (তিনমাস পর আমরা একজন কাজের মানুষ পাই, তার আগে আমার বর একা হাতে সব সামলেছে। তারপর ও আমি হাপুস করে কাঁদতাম আর বলতাম তোমার কি, বাচ্চা হবে কোলে নিয়ে আহ্লাদ করবে আর এদিকে আমি মরে যাচ্ছি!) আমি সব মেয়েকে বলি বর বুঝবে না মনে করে নিজের ভেতর গুটিয়ে থাকবেন না। বউ কনসীভ করার পর ছেলেদের ও একটা অদ্ভুত মানসিক অবস্থা হয়। শারীরিক কষ্টটা শেয়ার করতে না পারার জন্য এক ধরণের অপরাধবোধ হয়। মেয়েরা তাদের কেমন লাগছে, কী মনে হচ্ছে সব শেয়ার করলে দুজনের জন্যই ব্যাপারটা ভালো।
প্রথম তিনমাস হরমোনের পরিবর্তনের জন্য শরীরের অনেক পরিবর্তন আসে। প্রচন্ড ক্লান্তি, স্টমাক আপসেট বা কারো বেলায় কন্সটিপেশন, মর্ণিং সিকনেস, মাথাব্যাথা, গরম লাগা আরো কতো হাজাররকম অসুবিধা হয়। প্রেগন্যান্সির একেবারে গোড়া থেকে দৈনন্দিন রুটিন পালটে ফেলতে হবে। নিয়মিত একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, একটু পরপর অল্প পরিমানে খাওয়া, হাঁটাচলায় সাবধানতা মেনে চলা, বাথরুম সিঁড়ি এইসব জায়গায় সতর্ক থাকা, ভাঙ্গা রাস্তা পিচ্ছিল জায়গা এড়িয়ে চলা এসব করতে হবে। কেউ যদি বলে ‘আমি এমন করিনি’ ‘এতো বাড়াবাড়ির দরকার নেই’ অন্তঃস্বত্তা মেয়েরা এসব কথায় কান দেবেন না। মনে রাখতে হবে প্রতিটা মেয়ে যেমন একজন আরেকজন থেকে আলাদা, প্রতিটা প্রেগন্যান্সি ও আলাদা।
এইভাবে নিজের শরীরটাকে বোঝার মতো টানতে টানতে, বমি করতে করতে ফার্স্ট ট্রাইমস্টার পেরিয়ে গেলে কোনো একদিন পেটের ভেতর সোনামনিটা একটু নড়েচড়ে উঠে! আর একা লাগেনা...
দিহান
মন্তব্য
চালিয়ে যান
দিহান আপু, gynecologist এর ভাত মারা যাবে মনে হচ্ছে।
সন্তান ধারণ করা অনেক অনেক কষ্টের মা'দের জন্য তার থেকেও কষ্টকর প্রসবকালীনব্যথা, বাবারা আসলেই অসহায়বোধ করে তখন, হয়তো অপরাধবোধও!!
কিপ রাইটিং...............
আপু আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগবে আশা করছি। একটু ভয় ও পাচ্ছি আপনার অবস্থার কথা মনে করে। লিখা খুব ভালো হচ্ছে।
দারুণ হচ্ছে। চলুক।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
অপছন্দনীয়, দোয়া রাখবেন! সাইফ জুয়েল, আমার খুব ইচ্ছা বাংলাদেশে এই বিষয়টা স্বাভাবিক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠুক। ডাক্তাররা খুব নির্দয় আচরন করেন, পরে লিখবো আমার অভিজ্ঞতা। মৃত্যুময়-ঈষৎ' অনেক বাবা অসহায়বোধ করে এটা সত্যি...সবাই কিন্তু বুঝেনা।
পড়ে কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হইল......আমর আম্মাও এই একি অবস্থা পার করে আসছেন...আর আমার এখন পান থেকে চুন খসলেও চলেনা...........দিহান আপু লেখাটার জন্য ধন্যবাদ......
মা-জননীদের প্রতি প্রণতি। নমস্য, নমস্য!! আরো একটু ডিটেইল করবেন কি? যত ডিটেইল তত তার প্রভাব থেকে যাবে। শুভেচ্ছা!
খুব প্রয়োজনীয় পোস্ট। অতিথি হয়ে লিখার এই এক ঝামেলা প্রয়জনিয় পোস্ট গুলা লিস্ট করে রাখা যায়না, তবে আপনার পোস্টের লিঙ্কটা মেইলে সেভ করে রেখেছি, কোন দিন নিজের নিকে লিখতে পারলে প্রয়োজনীয় পোস্টের তালিকায় রাখব
ভালো থাকেবন আপা
মাহমুদ
জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
দারুণ, দারুণ। তাড়ায় আছি তাই বেশি কিছু বলছিনা। চালিয়ে যান।
আসলেই দারুণ। লেখা চালিয়ে যান।
চলুক
পুরো লেখাটাই খুব ভাল। তবে শেষের লাইন দুটো অসাধারণ! চলুক......
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। অনেকেরই উপকারে আসবে। চালিয়ে যান।
চমৎকার - চলুক।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
চেনা পরিচিত একজন দুজনকে দেখেছি, সুস্থ সবল মানুষ, কিন্তু কনসীভ করার পর খুবই অসুস্থ হয়ে যায়, এত বেশি কষ্ট পায় যে দেখে অসহায় লাগে, ভয়ও লাগে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপু আপনার লেখার স্টাইলটা অসাধারণ।
ম্যাজিক্যাল জার্নির আসল শুরুটা ভালো লেগেছে। পরের পর্বগুলো আরেকটু বিশদে বলবেন কি! এই যেমন ধরেন, হাজব্যান্ডের ওপর ব্যাখ্যাতীত রাগের কারণ, উপসর্গ, উপশমের তরিকা এই ব্যাপারগুলো ইন ডিটেইল জেনে রাখা জরুরি। রুটি বেলার বেলুনের বাড়ি খেয়ে যাতে শিখতে নাহয় আরকি! বুঝেনই তো ইজ্জতের সওয়াল! না কাউরে বলা যাবে, না সওয়া যাবে। তারচেয়ে আগেভাগে জ্ঞানপ্রাপ্ত হলে ঘটনা ঘটার পূর্বাভাসের সাথে সাথেই লাব্বায়েক হুজুর বলে রাগ নিরসনে ঝাঁপিয়ে পড়া যাবে!
আর তাছাড়া, যাঁরা রাগটা ঝাড়বেন, তাঁদেরও জানাটা দরকার- হাজব্যান্ডের মতো অলরেডি নিপিড়িত, নিষ্পেশিত জনগণের উপর রাগ ওঠানো বেঠিক কাজ। সারা জীবন তো তাঁরা রাগ দেখানই, এই নয়টা মাস নাহয় একটু রেহাই দিলেন বেচারারে। আফ্টার অল আপনার হাজব্যান্ড তো আপনারই মেয়ের বাপ! দুজনে মিলেই যেনো এই ম্যাজিক্যাল জার্নির অসাধারণ সময়টা উপভোগ করা যায়!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কাউকে বলা যাবে না কেন? আপনি বেলনের বাড়ি খেয়ে এই সচলেই 'আ রিয়েল-লাইফ জার্নি' সিরিজ ফেঁদে বসবেন।
@দিহান, আপনার লেখা খুব ভালো লাগছে। আপাতত খুব ব্যস্ত আছি তাই নিয়মিত মন্তব্য করি না। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই নিয়মিত হতে পারব। ভালো থাকবেন।
ধুগোদা, গাছে কাঁঠালই হল না আপনে সেটা দিয়ে কেমনে সালুন রান্না করবেন সে চিন্তা করছেন?
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
আপনার বর্ণনাভঙ্গী বেশ ভালো লাগল।
আর অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। চলুক।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
আপনার লেখা পড়ে ওরিয়ানা ফাল্লাচির ''A letter to a child never born'' বইটির কথা মনে পড়ছে।
দৌড়াক...
@ Rajkonya ...Oriana Fallaci negative wayতে লিখেছিল,্কিন্তু দিহান আপুর লেখটা positive আর খুব sweet এটাই difference।
shoptorshi : কই আমার কাছে তো নেগেটিভ মনে হয় নি! বইটা আপনি আবার পড়ে দেখতে পারেন।
অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে। আরেকটু বিশদ লিখবো যাতে আসলেই কেউ কেউ যেনো কিছুটা হলেও উপকৃত হন।
আপু,
আমি ও baby expect করছি। আমার অভিজ্ঞতা ও প্রায় তোমারই মত। একদম যেন মনের কথা গুলো লিখেছ।
আহা কি দারুন সুন্দর একটা খবর। জয়ন্তী, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। ভালো থাকুন, হাসিখুশি থাকুন। জীবনের দারুন একটা সময়ের মাঝে রয়েছেন, হাজার কষ্টের মাঝেও প্রতিটা সেকেন্ড মা হওয়ার তীব্র আনন্দ উপভোগ করুন। সবাই এই আনন্দ পায়না। অবশ্যই অবশ্যই আপনি স্পেশাল।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
সত্যিই অনেক আনন্দে আছি আপু। আশীর্বাদ করবেন আমার বেবির জন্য।
লেখায়
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
খুব খুশির খবর জয়ন্তী! আপনি ভালো থাকুন আর অনেক শুভকামনা! সুস্থ সবল একটি দেবশিশু আপনার জীবনের সমস্ত দুঃখ ভুলিয়ে দিক!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
জয়ন্তী, শুভকামনা তোমার জন্য। EDD কবে? মনে জোর রাখবে আর নিজেকে বলবে 'আই এ্যাম স্পেশাল!'...
ডিসেম্বর এর ১৬ তারিখ। আশীর্বাদ করবেন আপু।
আমাদের দেশে মেয়েরা এইসব বিষয় লুকাতেই অভ্যস্ত যেন! আপনি দ্বিধা ভেঙ্গে বলছেন, ভালো লাগছে। চালিয়ে যান!
ধন্যবাদ পান্থ। (ঢাবির ক্যাম্পাসে অনেকবার দেখা হয়েছে আমাদের, তুমি করে বলতাম তোমাকে! ঢাবির আইনে জুনিয়রদের তো পিচ্চি ডাকতে হয় আর তুমি করেই বলতে হয় তাইনা?)
ঞ! (চোখ কচলানোর ইমো)
আমি ঢাবিতে পড়েছি বটে! ফিন্যান্সে! আইন অনুষদের ধারেকাছেও কখনো গেছি বলে মনে পড়ে না। তবে শামসুন্নাহার হলের সামনে জনৈকা আইন পড়ুয়ার সাথে আড্ডা হয়েছে, পুরোনো স্মৃতি ঘেঁটে এটুকু মনে করতে পারি!
এর মানে এই নয়, তুমি বলা যাবে না! অবশ্যই বলবেন। আপনি ঢাবি'র কোন ব্যাচ!
শুভেচ্ছা
চমৎকার! প্রয়োজনীয় লেখা। অনেকের কাজে লাগবে। দিহান, চলুক...।
সুমিমা ইয়াসমিন
ইস্কান্দর, সুমিমা আপনাদের ধন্যবাদ।
প্রযোজনীয় একটি লেখা
আপনার আগের লেখাটাও পড়েছিলাম।
দুটোই খুব ভালো।
অবশ্যই লেখাটা জারি রাখবেন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
দিহান, প্রথমত আপনার এবং আপনার বাবুর জন্য শুভকামনা।
এটা প্রতিটি মেয়ের জীবনেই একইসাথে গুরুত্বপুর্ণ এবং আনন্দের ঘটনা। আমার জীবনেও এই রকম দিন এসেছিলো। কিন্তু আনন্দটুকু উপলব্ধি করার আগেই হারিয়ে গেছে। আমি এখন অধীর আগ্রহে আবার সেই দিনগুলো ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকি। যেদিন আমি আমার বাবুর সাথে কথা বলতে পারব..................আমার ভেতরে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকা ছোট্ট প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারব...............
ভালো থাকবেন, দিহান......
শুভকামনায়
দীপাবলি।
চমতকার। আপনার মাতৃত্বকে শ্রদ্ধা এবং আপনার লেখার উপস্থাপনকে প্রশংসা জানাই।
পড়াচোর।
দূর্দান্ত হয়েছে লেখাটা।অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের।
নীলতারা, রানা মেহের-ধন্যবাদ। দীপাবলি, সেই দিন ফিরে আসুক আপনার কাছে দোয়া করি। পড়াচোর, কৃতজ্ঞতা জানবেন।
যেটা সন্তান সম্ভাবা মায়ের কাছে ম্যাজিকাল জার্নি সেটা হবু বাবার কাছে রোলার কোস্টার রাইড। যত ঝড় ঝাপ্টা সামলাতে সামলাতে বেচারা বাবার অবস্থা খারাপ। কিন্তু সেটা মুখে ফুটে বলবার সাহস নেই। টুঁ শব্দ করেছো কি শুনিয়ে দেবে, হুঁহু বাবা দশ মাস ধরে পেটে রেখে দ্যাখো কিরকম লাগে! আরে বাবা সেটা করা গেলে করতামই। যেটুকু করছি তার ক্রেডিট টুকু দেবে না?
সহমত মুর্শেদ ভাই! হুদা গালি-রান্নার দুর্ণাম-চরি্ত্রে্র দুর্ণাম-অকম্মার ঢেঁকি..অনেক কিছু মুখবুঝে চুপচাপ সহ্য করতে হয়! যাদের গন্ধের সমস্যা থাকে, তাদের তো এক বিছানায় ঘুমানোর আশা বাদ...সোফাই সম্বল! (ভাল বাবাদের জন্য প্রযোজ্য, কেউ কেউ আছে কিছু না করেই হম্বিতম্বি করে)
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
ভাল লাগছে...খুব ভাল! শুভেচ্ছা...শুভকামনা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
এস এম মাহবুব মুর্শেদ, হবু বাবার ক্রেডিট? ঐ কবিতার মতো বলতে হয় 'শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করে শির......'!
স্বপ্নহারা, সবাই যদি ভালো বাবা হতো...
দুজনকেই ধন্যবাদ।
চমৎকার হচ্ছে! চলুক অবশ্যই!
আমি মনে হয় এই প্রথম কোন মেয়েকে এত অনেস্টলি আর খোলামেলাভাবে এই ব্যাপারে কথা বলতে দেখছি। আপনাকে শুধু এই জন্যেই লাল সেলাম, হ্যাটস অফ, ইত্যাদি!
মেয়েদের লুকাবার ব্যাপারটা আমার ধারণা প্রধাণত সামাজিক কুসসংস্কারবশত, বাইরের মানুষে জানলে নজর লেগে যাবে, পরিবারের অমঙ্গল চায় যারা, শত্রুভাবাপন্ন তাদের বদ্দোয়া পাবে, ব্লা ব্লা। মানুষের ভালো উইশের দাম আছে মানি। সবার ভালো উইশ পরোক্ষভাবে কাওকে পজিটিভ রাখে, মন ভালো রাখে। খারাপের প্রভাবও আছে হয়তো, তবে তা দুর্জনের কটু কথা-চিন্তা মোকাবেলায় ব্যক্তির মানসিক শক্তির দৃঢ়তার সমানুপাতিক মনে হয়। আর আমাদের সমাজে তো মেয়েদের মানসিক দৃঢ়তা গুঁড়িয়ে দেবার প্র্যাক্টিসই করা হয় জেনেরালি। কাজেই কী বলবো!
কিন্তু এই লুকানোর ব্যাপারটা বেশ বিরক্তিকর হয়ে যায় বা কাজের ক্ষেত্রেও ঝামেলার সৃষ্টি করে ক্ষেত্রবিশেষে। উদাহরণ দেই। মাত্র মাস তিনেক আগেই ল্যাবের ঘটনা, আমার কো-ওয়ার্কারকে ডিউটি রোস্টারে পরপর কয়দিন ৬ ঘন্টার ডিউটি দিয়েছি আমি, তাকে জিজ্ঞেস করেই, চতুর্থ দিনের মাথায় অসুস্থ, সাতসকালে ডিউটি মেকাপ করতে গিয়ে যতটা না মুশকিলে পড়লাম, তারচেয়ে নিজেরই খারাপ লাগলো তাকে এভাবে বেশি ওয়ার্কলোডে রাখায়, আমাকে জানালেই আমি সুন্দর গুছিয়ে করতাম ব্যবস্থাটা, ওর কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে। আরও বড় ব্যাপার তার যদি গোপনীয়তা পছন্দই হয়, সেদিকেও খেয়াল করা যেত।
আবার একই ল্যাবে তার কিছুদিন আগেই একজন অসুস্থ হয়ে পড়লো। কথা বলে জানলাম এই বেচারি হলে থাকে, একা, হাজব্যান্ড ঢাকায় কোন একটা ব্যাংকে কর্মরত, মা আসবে কিছুদিন পরে, সামনে তার গ্র্যজুয়েশন, সে পড়ছে, নিজের ক্লাশ-ল্যাব সব সামাল দিচ্ছে, আবার নিজের আর বেবির দুইজনের খেয়াল রাখতে হচ্ছে!! তার ছুটি, বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা ইত্যাদি করলাম, আবার উলটা আমাকেই বুঝাতে হলো, চিন্তা করো না, প্রথম ট্রাইমেস্টারটাই বেশি গিয়াঞ্জামের... কিন্তু আমার চিন্তা লাগলো সে ট্রাইমেস্টারের মানে বুঝলো কিনা...!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
যাযাবর ব্যাকপ্যাকার, আমার অভিজ্ঞতায় অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষই আপনার মতো হেল্পফুল। তবু মেয়েদের দ্বিধা ভাঙছে না। তবু আমি আশাবাদী, পরিবর্তন আসবেই। বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আমার অফিসেও দুইজন আছেন যারা হবু মা ! একজনের প্রথম ট্রাইমেস্টারের শেষের দিকে আরেকজনের ডিউ ডেটের মাত্র দেড়মাস বাকি। পুরো অফিস বলতে গেলে এই দুইজনকে আগলে রাখে। কিছু খেতে ইচ্ছা করছে কী না, মন ভালো কিনা, কিছু দরকার হলো কিনা এইসব নিয়ে অবসময়েই সবাই অনেক কনসার্ন্ড। মনে হয় বাবু পৃথিবীতে আসার পরে আমাদের সবাইই অফিস শিফট করে আপুর বাসায় নিয়ে যাবে বাবুকে সার্বক্ষণিক তত্বাবধানে রাখার জন্যে!
দিহান, আপনার লেখা ভালো হচ্ছে। আরও টুকরা টুকরা কথাগুলাও লিখে ফেলুন। কিচ্ছুটি বাদ রাখবেন না। একসময় নিজের এই লেখাগুলো মেয়েকে পড়াবেন!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আমার এক কলেজের বন্ধু, বিয়ে হয়ে গিয়েছিল বিবিএ'র মাঝামাঝিতেই... লাস্ট সেমিতে একদিন জোর করে নিয়ে গেল খাওয়াতে। আমরা বেশ অবাক, [ও বেসিক্যালি টাকাপয়সার ব্যাপারে বেশ একটু হিসেবী বলেই পরিচিত] ভাইয়াও হাজির সেখানে, চুটিয়ে অর্ডার দিচ্ছেন তো দিচ্ছেনই... কাহিনি কী?
পরে জানা গেল সুখবরটা।
কিন্তু সেবার নানা শারিরীক জটিলতায় মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আমরা আর সুখবরটা পাইনি।
অনেক ডাক্তারি ধকলের পর বেচারি অবশেষে আবারও বেবি এক্সপেক্ট করছে। দোয়া করবেন সবাই ওর জন্য প্লিজ।
আর অসাধারণ এই সিরিজের জন্য আপনাকে সিম্পলি হ্যাটস অফ দিহান আপু।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অসাধারণ এগুচ্ছে, বর্ণনার ধরণ খুব চমৎকার!
ভালো থাকবেন।
ইস আপু ! কি কষ্ট ! আমার কাছে সব সময় মনে হয় একটা মেয়ে মা হতে পারে শুধু মাত্র এই একটা কারণে আমি আল্লাহ-র কাছে কৃতজ্ঞ আমাকে মেয়ে করার জন্য। তবে কষ্টের কথা পড়ে ভয় লাগছে। যখন হবে না জানি কেমন কষ্ট সহ্য করতে হবে ! কিভাবে যে সহ্য করে মেয়েরা ! কেমন করে যে এই কষ্ট সহ্য করে জন্ম দিয়েছে মা আর সেই মার সাথে একটু কিছু হলেই কত রাগ করি ।
আপু আরো একটু ডিটেইল লিখো তোমার অনুভূতিগুলো। সুন্দর লেখা বড় হলেও পড়তে ভালো লাগে।
-মেঘা
নতুন মন্তব্য করুন