ছেলেটির বয়স মাত্র ১৪ বছর।এই বয়সেই তার জীবনের উপর নেমে এসেছে স্থবিরতা। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে ও আজ অনেকটা জড় পদার্থই হয়ে গেছে।জীবনের উপর এই বৈরিতায় ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।মাঝে মাঝে ওর মনে হয় ধান ক্ষেতে পোকা মারার জন্য ওর মা আলমারির মধ্যে যে বিষ রেখে দিয়েছে তার থেকে কিছুটা খেয়ে সারা জীবনের জন্য ঘুমিয়ে যেতে।কয়েক বার বিষের শিশিটা নিয়ে নেড়েচেড়ে ও দেখেছে কিন্তু খেতে পারেনি।একটা জায়গায় ও আটকা পড়ে আছে- “ধর্মে আছে আত্যহত্যা মহাপাপ,এখন আত্যহত্যা করলে মৃত্যুর পর অনন্ত কাল দোজখের আগুনে পুড়তে হবে।আর এখন যদি ও সৃষ্টি কর্তাকে ডাকে তাহলে মৃত্যুর পর উপভোগ করবে স্বর্গীয় সুখ।তখন ও দুটো পা পাবে,আবার আগের মত দৌড়াতে পারবে,হাটতে পারবে।ও আবার পরিপূর্ণ মানুষ হবে।এই একটি মাত্র আশায় ও বেচে থাকে পৃথিবীতে নরকের চেয়ে বেশি জ্বালা নিয়ে।
ওর মা ফাতিমা বেওয়া,বয়স পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ এর মত।এমন কোন কষ্টের ঝড় নেই যা ফাতিমার উপর দিয়ে যায় নি।যেন তার জন্মই হয়েছে শুধু কষ্ট পাওয়ার জন্য।গরিব ঘরের মেয়ে সে।এক বছর বয়সে মা কে হারিয়ে সৎ মায়ের অত্যাচারে দুবেলা খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে বেচে ছিল। এ ধরনের পরিবারে যা হয় তার ক্ষেত্রেও তাই হল অল্প বয়সেই বিয়ে হল তার এক গৃহেস্তের ছেলের সাথে। অনেক নতুন স্বপ্ন নিয়ে সে বিবাহিত জীবন সুরু করল ফাতেমা। কিন্তু বিয়ের রাতেই বুঝতে পারল তার স্বপ্নের পরিসমাপ্তি, তা না হলে বিয়ের রাতেই পানি দিতে সামান্য দেরি হওয়াতেই মার খেতে হয়!!!
ভোর না হতেই শুরু হল শ্বশুর শাশুড়ির অত্যাচার। নতুন বাড়িতে সৎ মায়ের অভাব টা ভালো করেই পূরণ করে দিল শাশুড়ি। ও বাড়িতে তাকে মধ্যযুগীয় দাসীর মত দিন রাত খাটানো হত। এত কিছুর পর ও সে হাসি মুখে সব কাজ করে যেতে লাগল কারণ ধর্মে আছে শ্বশুর শাশুড়ির খেদমত করা সোয়াবের কাজ।এত কিছু করার পরও রাতে স্বামীর কাছ থেকে মার ছাড়া আর কিছুই জুটত না। এটাও সে মেনে নীল কারণ স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত(এটা যদিও ইসলামের কোথাও উল্লেখ নেই,কিন্তু পুরুষ শাসিত সমাজের এক প্রকার ঘৃণ্য পুরুষ এটাকে এমন ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে ধর্মেরই একটা অংশ হয়ে গেছে)।
তিন সন্তানের মৃত্যুর পর শরিফের জন্ম। শরিফের যখন চার বছর তখন ফাতেমার স্বামী মারা গেল। স্বামীর মৃত্যুতে ফাতেমার উপর অত্যাচার আরও বাড়ল। অনেক যুদ্ধকরেই ও বাড়িতে টিকে রইল ফাতেমা কারণ তার তো যাবার আর কোন যায়গা নেই। এভাবেই চলতে থাকল, শরিফ স্কুলে ভর্তি হল। ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত সব ক্লাসেই ফার্স্ট হল ও ফাইভে ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তিও পেল। গ্রামের সবাই যখন ছেলেকে ঘিরে ফাতেমার দুঃখের দিন শেষ হবাই প্রহর গুনছে তখনি ঘটল ঘটনা টা। পোড়া কপাল,এই কোপালে সুখ আর জুটল না। শরিফ যাচ্ছিল হাই স্কুলে ভর্তি হতে, একটা বাস এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল। অস্ত গেল রবি। আজ ফাতেমার দুচোখ জুড়ে শুধুই অন্ধকার। বেচে আছে মৃত্যুর থেকেও বেশি যন্ত্রণা নিয়ে। শুধু একটি আশা – এক জীবনে তো সুখ কি জিনিস বুঝল না। পরপারে নিশ্চই বেহেশতে যাবে। সেই সুখই তো বড় সুখ দুনিয়ার সুখ কিছুই না।
ধর্ম সফল একথা মানতেই হবে। পরপারের আশায় এভাবে লাখো শরিফ ও কোটি ফাতেমাকে সে বাছিয়ে রেখেছে। লাখো শরিফ ও কোটি ফাতেমাকে মৃত্যুর পর সৃষ্টি কর্তা সুখ দিবেন কিনা আমি, আমরা কেউ জানি না। দিলে ভালোই হত, তাই না?
পুনশ্চ: লেখাটা কত টুকু লিখতে পেরেছি আমি জানি না। তবে আবেগের কোন কমতি ছিল না। এ রকম অনেক শরিফ ও ফাতেমা আমাদের আশে পাশেই আছে এটা তাদের জীবন কথা, এটা কোন গল্প নয়। আমরা কি পারি না তাদের জন্য কিছু একটা করতে?
যারা কষ্ট করে পড়েছেন সকল কেই অনেক অনেক ধন্যবাদ।
গৃহত্যাগী
মন্তব্য
সত্য ধর্ম অক্ষয় হয়ে থাকুক
মুখোশধারিরা ম্যানহলে পড়ে মরুক!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
আবেগী আবেদনে কতটুকু সাড়া পড়বে জানি না, তবে সবাই মিলে চেষ্টা করতে দোষ নেই।
আর একটু গুছিয়ে লিখলে ভালো হতো।
লিখতে থাকুন। তবে আশা রাখি আরো বেশী বেশী পড়বেন। তাহলেই ধাচটা এসে যাবে।
নতুন মন্তব্য করুন