”সাগর নেয়না শুধু, ফিরিয়েও দেয়
শূণ্যতা প্রতিসথাপিত হয় প্রশান্ত আবেশে!”
এখানে আসতে হলে পথিকের প্রাণ চাই, চাই প্রকৃতীর কাছ থেকে সব ক্লান্তি মুছে নেবার চর্চিত অভ্যেস। এখানে আসতে হলে পাড়ি দিতে হবে অজস্র জলধারা, সে জল কোথাও কোথাও বাঁক নিয়েছে সতেজ গাছের নির্বিচার বেড়ে উঠায়, কোথাও কালভার্ট আর ব্রীজ তার সতত বয়ে চলাকে ব্যাহত করেছে, তবু নদীমাতৃক বাংলাদেশ এখানে এখনও স্রোতে স্রোতে, জোয়ারে-ভাটায় বর্ধিত। আর জলের সাথে সবুজের কাব্য কতটা বাঙময় হতে পারে তা এখানে না আসলে বোঝা যাবেনা।
সুলুক সন্ধান এর কথা বলেছিলেন আশালতা আপা, সুলুক সন্ধান জানিনা, যতটুকু দেখেছি কিংবা জেনেছি তাই বলার চেষ্টা করবো। আমি বরিশালের মানুষ নই, বাড়ী কিশোরগঞ্জ কিন্তু একটা কাজের সুবাদে এখানে এসে এখানকার জলজ প্রকৃতীতে মজে গেছি। বরিশালের প্রকৃতীতে মজেছি শুনে বন্ধুরা অবাক হয়, বলে “মামা, তুমি সারা বাংলাদেশ ঘুরলা কিন্তু কোনদিন বরিশাল তোমারে নিয়া যাওয়া যায় নাই আর আজকে গণেশ উল্টাইলো কেমনে?”। গণেশ এম্নি এম্নি উল্টোয়নি, মাজেজা আছে।
উপকূলীয় বাংলাদেশ ভয়াবহ সুন্দর, শুধুমাত্র নদীর অবিরল রুপরস পান করার জন্যে হলেও আসা চাই। এখানে উপকূলীয় বাংলাদেশ বলতে আমি পুরো উপকূলীয় এলাকাকে বোঝাচ্ছি কিন্তু আমরা আজকে শুধু কুয়াকাটার কথা বলার চেষ্টা করবো। হাসফাঁস করা নাগরিক জীবন থেকে পালিয়ে প্রিয় গন্তব্যে পৌছার জন্য আমরা সবচাইতে সহজে যেখানে যাওয়া যায় সেখানেই যাই, কুয়াকাটায় আসতে হলে সহজ আরামে আসা যাবেনা। কষ্টকে মেনে নিয়ে ‘কেষ্ট’ বাবুকে ধরার আকাংখা থেকে আসতে হবে।
কুয়াকাটা আসতে হলে আপনাকে বরিশাল আসতে হবে, অথবা পটুয়াখালী (এখানকার মানুষ বলে পৌট্টাখালী) দিয়েও যেতে পারেন কিন্ত আমি জোর সুপারিশ করবো বরিশাল হয়ে আসার জন্য। এবং সড়ক পথে আসবেন না, আসবেন নৌপথে। এ যাত্রার নাম হবে ‘জলযাত্রা’ এবং এ যাত্রা শুরু হোক পূর্ণিমার লগ্ন ধরে। যাদের গাড়ী ছাড়া চলেনা, তারা গাড়ী আগেই বরিশাল পাঠিয়ে দিন, পরে কাজে লাগবে কিন্ত জলযাত্রায় যতদূর সম্ভব চাক্কা পরিহার করাই শ্রেয়! (বরিশালে এসে কবি জীবনানন্দ দাশের বাড়ী দেখতে পারেন, দেখতে পারেন তার বি.এম কলেজ, চারনকবি মুকুন্দ দাশের বাড়ীতে কালী মন্দির দেখতে পারেন, দেখতে পারেন আগের দিনের রাজাদের পদ্মপুকুর, চৈত্র মাসে সেই পদ্মপুকুর জোছনায় যে কি অসাধারন! এমনকি কীত্তনখোলা নদীতে ভাসতেও খারাপ লাগবেনা, নদীতে ঘোরার জন্য দেশী নৌকো মজুদ থাকে কয়েকটা ঘাটে)।
অবশ্যই আধেকটা পূর্ণিমা সাথে নিয়ে আপনি ঢাকা সদরঘাট থেকে যাত্রা শুরু করুন। সদরঘাট থেকে প্রতিরাতে আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে যে জলযানগুলো বরিশাল এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে তাকে সবাই লঞ্চ বললেও আমি বলিনা। পুরোপুরি ম্যানুয়ালি তৈরী করা এই সুবিশাল যানগুলোর মধ্যে সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেম এর কায়দাকানুন আছে, আছে ভিআইপি কেবিন বলে কেবিন যেগুলোকে আপনার কল্পনাজগত অনায়াসে পাঁচতারকা হোটেলের স্যুইট রুম হিসেবে দিব্যি মানিয়ে নিতে পারবে, এগুলোতে ফ্রিজ, টিভি এবং এটাচ্ড বাথ সহ একটা বারান্দা থাকে, একলা একটা বারান্দা নিয়ে জোছনা দেখতে নিশ্চয়ই খারাপ লাগবেনা। ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ১৫০০ থেকে ৩৫০০। আপনি সিঙ্গেল এসি কেবিনও নিতে পারেন, ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ৭০০, ডাবল কেবিন আছে আছে আরও নানানরকম গা এলানোর এন্তেজাম। তবে নদীর ধারের কেবিনগুলোতে এসি নেই। কেবিন থেকে বের হবার সময় অবশ্যই রুমের দরোজা বন্ধ করে যেতে ভুলবেননা।
আপনি রওনা দিন, বুড়িগঙ্গার বিষাক্ত গন্ধ আর নাকে না এলে চলে যান ডেকে, নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশ যে নদীমাতৃক তা উপপাদ্যসহ প্রমাণ করে ফেলতে পারবেন। আর অর্ধেক পূর্ণিমায় স্নাত নদীর পর নদী পেরুবেন, পথে দেখবেন একরত্তি আলো জ্বালিয়ে জেলে নৌকা জলের সাথে তাল মিলিয়ে নাচে, কোথাও বহুদূর একসাথে অনেকগুলো আলো বৃত্ত তৈরী করে কৈবর্তরা মাছ ধরছে। কোথাও খুব শার্প একটা টার্ন নিতে নিতে আপনার জলযান পেছনে ফেলে আসবে অগণিত মত্ত ঢেউ আর ঢেউখোলা বাতাস আপনাকে জাগিয়ে রাখবে, ঘুমোতে দেবেনা। রাতের খাবার খেয়ে নিন লঞ্চে, ডালচচ্চরি খেতে ভুলবেননা, ওটা বরিশালের ইসপিশাল। মাঝরাতের একটা সময়ে আপনি চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদী যখন পার হয়ে যাবেন তখন বরিশালের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলোর আলোয় অসাধারন একটা চিত্রকল্প তৈরী হয়। আপনি বরিশাল পৌছাবেন ভোরবেলা, যদি ভিআইপি কেবিনে যান তাহলে সেখানেই এটাচ্ড টয়লেট, পুরো ফ্রেশ হয়ে নিন, চাইলে ব্রেকফাস্টও করে নিতে পারেন, কেবিন বয়কে বললেই এনে দেবে। লঞ্চ থেকে নামলেই কুয়াকাটার বাস, বিআরটিসি এবং ডিরেক্ট নামের অর্ধ ডিরেক্ট সার্ভিস। বিআরটিসি বাস ছাড়ে সময় মেপে এবং অন্য বাসগুলোও তাই। তবে আমাদের ‘মাজুল’ সরকারী সেবাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে এখনও বিআরটিসি বাস এখানকার মানুষের পছন্দের তালিকায় অগ্রগণ্য। আর আপনার গাড়ী যদি দাড়িয়ে থাকে আপনার জন্য তাহলে সোনায় সোহাগা, কিন্তু যদি ছোট গাড়ী হয় তাহলে বাসে যাওয়াই ভালো।
আপনি প্রথমেই পাড়ি দেবেন কীত্তনখোলা নদী, ব্রীজ হয়ে গেছে, ব্রীজ পেরুলেই আরেকটা ব্রীজ যে জলধারার উপর সেটাও এককালে কীত্তনখোলা ছিলো, সেখান দিয়ে বড় বড় নৌযানে করে মানুষ পটুয়াখালী আর বরগুনা যেত, এখন সেদিন নেই। তারপর পথের দু’পাশে চোখ রাখুন, কোথাওনা কোথাও কচুরীপানার ফুল চোখে পড়বেই আর পড়বে ছোট ছোট অগণিত জলাধার। যেতে যেতে আপনি একসময় পৌছে যাবেন লেবুখালী ফেরীঘাট, নদীর নাম লেবুখালী হলেও এটি আসলে পায়রা নদীরই একটি অংশ। পায়রা নামকরনের সার্থকতা যাচাই করার জন্য নদীর পাশে কান পাতুন, থপ্থপ্ একটা আওয়াজ শুনতে পারবেন। লেবুখালী পার হয়ে কিছুদূর গেলেই একটা ব্রীজ আর তার ওপাশেই পটুয়াখালী।
পটুয়াখালী থেকে সড়কপথ একদম টানা চলে গেছে আমতলী এবং সে পথের দুপাশে অগণিত গাছ তাদের মগডাল ছুয়ে ছুয়ে যাওয়ায় মনে হবে সুরঙের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। আমতলী একটা ষ্টপেজ দিতে পারলে মাছ খেতে পারবেন। আমতলী মোড় থেকে একটু ভেতরে উপজেলা পরিষদ পার হয়ে জয়নালের ‘ভাই-ভাই’ হোটেলে খেয়ে নিতে পারেন, ভাই-বেরাদরের এই হোটেলে দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ খেতে আসে। পুরাই জরাজীর্ন মনে হবে কিন্তু আপনার সামনে যখন বিশাল থালায় করে তাজা মাছের তরকারী এনে দেবে তখন খেয়ে দেখুন। আমি সেখানে গেলে ফোন দিয়ে যাই (০১৭৩৬৪৬০১৯১), আগেই জেনে নিই কি আছে, পনেরো কেজি ওজনের বোয়াল মাছের টুকরো খেয়েছিলাম একবার, বলিহারি তার সোয়াদ। এরকম সাইজের মাছ অহরহ বিক্রি হয় এখানে। পোমা মাছের ভাজি খেতে ভুলবেন না, এই মাছটা আমরা ঢাকায় পাইনা। যাদের মাগুর মাছ পছন্দ তাদের ভাগ্য ভালো থাকলে সেখানে পেয়ে যাবেন ‘কাইম মাগুর’, আহা, কি তার সাইজ আর কি তার রস! মাছ খান বেশী করে, ঝাল খেতে ভালো লাগলে বলুন বোম্বাই মরিচ দিতে, গন্ধে খাওয়ার রুচি বাড়বে, আর সে মরিচ খেলে আপনার ভেতরের সব জল ফোয়ারার মত বেরিয়ে আসবে কিন্তু আপনার মুখের হাসি কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা।
আমতলী থেকে কলাপাড়া পর্যন্ত পথের কাজ অনেকটাই হয়ে গেছে, চারপাশ খুব সুন্দর, অবারিত সবুজ আর ফাকে ফাকে কত জলাধার পার হবেন তার ইয়াত্তা নেই। কলপাড়া পৈাছে গেছেন, এতক্ষন আপনি যথেষ্ট আরামে ছিলেন, আর মাত্র ২৬ কিলোমিটার পথ বাকি। কিন্তু এই ২৬ কিলোমিটারে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে তিনটি ফেরী। ঘাবড়াবেন না, একেকটা নদীই আপনার সব ক্লান্তি মুছিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। তিনটা নদীর সাথেই সমুদ্রের একদম ডাইরেক্ট কানেকশান।
প্রথমেই পার হবেন আন্ধারমানিক নদী, রাত্তিরে এ নদীর জল একসময় ফসফরাসের আলোয় জ্বলতো বলে তার এই নাম। আমার খুব পছন্দ এই নদী। আন্ধারমানিক পার হলেন, সড়কের কোথাও মেরামত হয়ে গেছে কোথাও আপনার বডিপার্টস্ আপনি না চাইলেও তার জংধরা জয়েন্ট থেকে জং কেটে মুচড়ে উঠবে, উঠুক, পাত্তা দেবেননা। তারপর একসময় পৌছে যাবেন নীলগঞ্জ নদীতে, একপাশ সবুজ অরণ্য নদীজল ধুয়ে ধুয়ে পৌছে গেছে একটা বাঁকে, সে বাঁকের ওপাশে কি এটা জানার আগ্রহ আমার তীব্র কিন্তু কোনদিন যাওয়া হয়ে উঠলোনা। সেখানে থেমে খাটি গরুর দুধের চা খেয়ে নিলেই তরতাজা হয়ে যাবেন।
নীলগঞ্জ পাড়ি দিয়ে কিছুদূর গেলেই যে নদীটা পড়বে তাতে দুটো ফেরী জোড়া লাগালে অনায়াসে এপার ওপার করা যায়, সেখানে এখন ব্রীজ তৈরী হচ্ছে। নদীর একপাশের নাম আলিপুর, আরেকপাশের নাম মহিপুর। মহিপুর যে একটা মৎস্যবাজার তা নিমিষেই বুঝে যাবেন নদী তীর ধরে সারসার নৌকা দেখলে, প্রতিটি নৌকায় জালের পরত, গলুই বেয়ে রঙবেরঙের পতাকা। মহিপুর খুবই বিখ্যাত মৎস্য বাজার এবং পুরাতন, বাংলাদেশের মৎস্য চাহিদার অনেকটাই যোগান যায় এখান থেকে।
মহিপুর পার হলেই পথের চারপাশ জুড়ে রিয়েল এষ্টেট ব্যবসায়ীদের গেঁথে দেয়া সাইনবোর্ডে চোখ না দিয়ে চোখ রাখুন সামনে, কিছুদূর গেলে পরেই একটা বাঁক ঘুরে আপনি পৌছে যাবেন কুয়াকাটায়।
কুয়াকাটার সৌন্দর্য্য নিরাভরন, এবড়োথেবড়ো পথ, পথের চারপাশে হোটেল আর দোকান কিন্তু কক্সবাজার এর ম ত কোলাহল নেই। কিছুদূর গেলেই একটা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ, সে বাধ পার হয়ে একটু গেলেই অবিশ্রান্ত বাতাসের নাচুনী আপনাকে বলে দেবে আপনি জায়গামত পৌছে গেছেন।
কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকত এর মাধুর্য্য এর নির্জনতায়, মানুষের বানরসুলভ উৎপাত নেই, দুপুরবেলা একদম ল্যাংটি কিংবা কাছা মেরে গোসল করার দৃশ্য দেখতে হবে কম, হৈচৈ কম আর সবচেয়ে কম বাইরের আলো। এই আলোর কার্পণ্য সমুদ্রকে আরো মহৎ করে রেখেছে এখানে। রাতের বেলা জোয়ারের জল একদম বাধেঁর উপর উঠে আসে, আপনি হাটুন, গান গান, কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে যদি নেচে উঠার ছন্দ আসে, নাচতে থাকুন, এখানে কারো সাথে কারো সংঘর্ষ নেই। আমি যতগুলো জায়গায় সমুদ্র দেখেছি তার মধ্যে কুয়াকাটা সবচাইতে প্রাকৃতিক, কুয়াকাটা এখনও কুমারী।
যেতে পারেন মোটরবাইকে করে ডানে বামে, ফাতরার চর খুবই সুন্দর, বনায়ন এর কারনে সবুজের আধিক্যও চোখে পড়ার মত। বামে গেলে অনেকটা দূর পরে একটা বাঁক পরে, সেখানে একটা খালমত চলে গেছে ভেতরের দিকে, দারুন সুন্দর। কুয়াটা কোথায় কাটা হয়েছিলো সেটাও দেখতে ভুলবেন না। ইদানীং সরকার একটা পরিকল্পনা নিয়েছে সমুদ্রসৈকত ধরে সড়ক পথ তৈরীর, সেটা কিভাবে হবে জানিনা কিন্তু ভয় হয় কক্সবাজারের মত পাহাড় কেটে পথ তৈরীর মত এখানকার প্রকৃতীকেও ধর্ষন করা হয় কিনা সেটা ভেবে চিন্তিত। এখানে রাখাইন জনগোষ্ঠীর সবাই বৌদ্ধ, বিশাল একটা বুদ্ধ মুর্তি আছে, একটা মটরবাইক নিয়ে চলে যান, দেখে আসুন, প্রথম দেখায় একটা ধাক্কা খাবেন।
কোথায় থাকবেন? এখন পর্যন্ত সবচাইতে ভালো সেবা দেয় নীলাঞ্জনা, সকাই প্যালেস, কুয়াকাটা ইন (যদিও এর সেবায় আমি মোটেও সন্তুষ্ট নই) এবং মোহনা। সবগুলো হোটেলেই রুমভাড়া বেশী, ১০০০-৩০০০ টাকার মধ্যে, সিজনে আরো বেশী। আরো কিছু হোটেল রয়েছে সেগুলোতে কম ভাড়ায় রুম পাওয়া যাবে।
তবে সমুদ্রের কাছে থাকতে চাইলে দুটো গন্তব্য আছে, একটি হচ্ছে এলজিইডির বায়ো-গ্যাস গেষ্টহাউজ আর আরেকটি হচ্ছে স‹াই প্যালেস এর কটেজ। দুটোই সমুদ্রসৈকত এর উপরে, এর মধ্যে এলজিইডির গেষ্টহাউজের দুটি রুমেই এসি আছে, নীচে আছে ড্রাইভারের থাকার জন্য একটা রুম। বারান্দা অনেক বড়, সেখানে দিব্যি চেয়ার পেতে কিংবা একটু নিচে নেমে সাগরের সাথে মিতালী করা যাবে। সকাই প্যালেসের কটেজটি দোতলা, নীচতলা সুনসান খালি, উপরে দুটি রুম পাশাপাশি, এসি নেই কিন্তু গিজার আছে। দুটো জায়গাতেই দিনের বেলা গরম লাগবে কিন্তু রাতের বেলা জোয়ারের সময় জল একদম সিড়ির গোড়ায় উঠে আসার চেষ্টা করে। এলজিইডি গেষ্টহাউজে থাকতে চাইলে পটুয়াখালীর এলজিইডির এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আমি গেলে এই দুই জায়গাতেই থাকার চেষ্টা করি। সকাই প্যালেসের মালিক সারওয়ার ভাই, ফোন করে দিন কটেজ ভাড়ার জন্য ০১৭২৭৫০৭৪৭৯। এলজিইডির আরেকটা গেষ্ট হাউজ আছে তবে তা বাঁধের ভেতরে, বিশাল বিশাল দুটি রুম, সেখানে একটা রুমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা থেকে গেছেন, প্রধানমন্ত্রীর থেকে যাওয়া রুমে থাকতে যদি প্রাণ আইঢাই করে ওঠে তবে সেখানেও থাকতে পারেন তবে সেটা বাধের ভেতরে।
আপনি যদি এলজিইডির বায়ো-গ্যাস গেষ্টহাউজে থাকতে পারেন তবে খাবার নিয়ে ভাবতে হবেনা, সেখানকার কেয়ারটেকার মোস—ফা ভাইয়ের সহধর্মিনীর রান্নার হাত চমৎকার, আপনি বলে দিন কি খাবেন, টাকা দিয়ে দিন বাজার সদাইয়ের জন্য, বাড়ীর রান্না হাজির হয়ে যাবে। এর বাইরে এখনও পর্যন্ত আমার তিনবার যাত্রায় আমি সবসময় খেয়েছি ‘ফু-ওয়াং কফি হাউজ’ এর নজরুলের রান্না করা খাবার। এই ছেলেটার হাতে সত্যিকারের জাদু আছে। নজরুলের করা ক্র্যাব ফ্রাই অসাধারন, তেম্নি দেশী মুরগী কিংবা রুপচাঁদা আর যদি ইলিশ খেতে চান তাহলে ওকে বলবেন সরিষা ইলিশ করতে, সেই সরিষা ইলিশ খেলে বহুদিন মুখে গন্ধ লেগে থাকবে। যেখানেই খান না কেন, নজরুলের এখানে একবেলা খাবেন, ওর ফোন নাম্বার হচ্ছে ০১৭৪৯১৪২৮২৮। আপনি বলুন কিভাবে কি খাবেন, ও তার সাথে আরো কিছু যোগ করে তারপর আপনাকে খাওয়াবে।
বলতে ভুলে গেছি, এখ ন পর্যন্ত যত ইলিশ খেয়েছি তার মধ্যে কুয়াকাটার ইলিশ অসাধারন, এই ইলিশ আমরা পাইনা; অবাক ব্যাপার হচ্ছে এ ইলিশ নাকি সরাসরি কলকাতা চলে যায় সমুদ্রেপথে চোরাচালান হয়ে। আমি সাধারণত বাসায় তরিতরকারী কিংবা মাছ কোনদিনও আনিনা, প্রথমবার দুই বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম, তারাই একদম বাসায় পৌছে দিয়ে গিয়েছিলো। সাবধানবানী ছিলো বেশী তেল দিয়ে রান্না করা যাবেনা, আমার মা অল্পই তেল দিয়েছিলেন কিন্তু তাতেই তেলে তেলে একাকার। একটা কাজ করতে পারেন, সরাসারি নৌকায় যখন ইলিশ নিয়ে জেলেরা তীরে ভীড়বে সেখান থেকেই কিনে নিন ইলিশ, তারপর ভাত বর্জন করে শুধু ইলিশ ফ্রাই খান। আহা, ২০০৮ এ প্রথমবার যেয়ে এইভাবে খেয়েছিলাম, হাতে এখনো চুটকি বাজাতে পারিনা
এবার আসুন পানীয়। বড় বড় ডাব পাবেন, খান। এর বাইরে যাদের ‘অবাক জলপান’ এর মাজেজা জানা আছে তাদের জন্যও এখানে প্রকৃতী দিলদরাজ। জাতিজাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীগুলোর পানীয় সম্পর্কিত আচার আছে এবং তারা মূলত ভাত থেকে সেই পানীয় তৈরী করে, পার্বত্য চট্রগ্রামের দো-চোয়ানী থেকে চার-চোয়ানীর কদর অভূতপূর্ব, তেম্নি মান্দি কিংবা সাঁতালদের ‘চু’ কিন্তু কুয়াকাটার বিষয়টা ভিন্ন। এখানে রাখাইনদের বাস আর তারা তাদের পানীয় তৈরী করে গুড় থেকে। ঠিকমত ঠিক জায়গায় যদি ঠিক জিনিসটা পেয়ে যান তাহলে জুত করে বসুন ঠান্ডা পানি নিয়ে, সাথে নজরুলকে অর্ডার দিন পছন্দমাফিক, ও এসে দিয়ে যাবে সব। রাখাইনরা তাদের এই পানীয়র সাথে ‘টাইগার’ মিশিয়ে খায় কিন্তু শুধু পানি দিয়েই খেয়ে নিলে নাকি বেশি ভালো
এর বেশী আর কি বলবো বুঝতে পারছিনা। বিভিন্ন সময় যারা গিয়েছেন তারা যদি আরো কিছু যোগ করতে চান তবে খুশী হবো। আমি অন্যদের ছবি তুলে দিই কিন্তু নিজের জন্য ছবি তোলা হয়না, কিছু ছবি আছে কিন্তু এখানে ছবি আপলোড করতে পারিনা কেন যেন। ঠিকমতো ছবি না দিতে পারার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি।
আপনাদের কুয়াকাটা যাত্রা শুভ হোক!!
- তানিম এহসান, যশোর, ০১. ০৮.২০১১
মন্তব্য
একটানে পড়ে ফেললাম। কুয়াকাটায় যাওয়া হয়নি আপনার বর্ণনা পড়ে এখনি যেতে ইচ্ছে করছে। দেশটাই ঠিকমত দেখা হল না! বিদেশের গল্প করে বেরাচ্ছি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক কবি! দেশে আসলে বেড়িয়ে যেয়েন, বাংলাদেশ যে কি অসাধারন সুন্দর!
কি কও! আমি নিজেই জানি কিছু বলতে পারি নাই। ভালো থেকো ভাইয়া!
তানিম ভাই কী যে অসাধারণ লিখেছেন বোঝাতে পারব না। এত সুক্ষ্ম আর নিখুঁত বর্ণনা, চমৎকার লাগলো। মনে হল ভ্রমণই হয়ে গেল........... আপনি তো দেখছি সব্যসাচী লেখক, কবিতা, গল্প সবকিছুতেই দারুণ!!! আপনার প্রয়াস অব্যাহত থাকুক। নতুন যেখানেই যাবেন ঠিক এরকম ভ্রমণকাহিনি চাই।
তবে ছবির অভাব খুব বোধ হল। ছবি সংযুক্তির জন্য এই ফ্যাকটি দেখুন ছবি যুক্ত করব কীভাবে?। ফ্লিকার থেকে করা যাবে এই উপায়ে। এরপরও সমস্যা হলে ফেইসবুকে আমাকে বইলেন।
আর লতাদিকে ধন্যবাদ, উনার কথা রাখতেই আমরা এরকম সুন্দর লেখা পেলাম...........
ছবি যুক্ত করব কীভাবে?
লিংকগুলোর জন্য ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেছিলাম!
যা বলছি আমার তাই মনে হইছে। মন্তব্যটা লাফ দিছে, আরেক কবির কাছে চলে গেছে, পড়ে নিলাম।
আর কাল একটা প্রশ্ন করেছিলেন তানিমভাই, 'অনেকদিন লিখছি না কেন?' ইদানিং একটা বিষয় খুব ভালো লাগছে তা হল শুধু লেখা পড়তে আর মন্তব্য করতে। এতেই দারুণভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ঠিক কবে লিখব বা আর লিখব কীনা জানি না। যদি লিখে ফেলিই, তবে দেখবেন ঠিকি অতিথি লেখকের একাউন্টের কীর্তিকলাপে পোস্ট করে দিয়েছি, মডুদের ভালো লাগলে দেখবেন ছাড়পত্র পেয়ে প্রথম পাতায়ও চলে এসেছে, ভালো না লাগলে হারিয়ে যাবে যেমনে সদ্যপ্রিয় কেউ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তবে যেহেতু একটা অনুবাদে হাত দিয়েছিলাম, সেটা শেষ করতে হবে; ৫ টা বাণীর মধ্যে দুটো বাকি আছে, ঐ দুটো সহ পুরো 'ঔদ'টাই একটা পোস্টে দিব; দেখি একদিন বসতে হবে। শীঘ্রই আর একটা পোস্ট করব এটা নিশ্চিত।
শুভেচ্ছা অনন্ত।
হুম ! কুয়াকাটা যাইতে মঞ্চায় ।
মনটারে নিয়া যান কুয়াকাটায়
হাতের কাছে কুয়াকাটা, যাওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত। বুকমার্ক করে রাখলাম ভবিষ্যতে কাজে লাগবে । লেখায় ।
ধন্যবাদ সোহাগ। বরিশালের মানুষ, ঘর হইতে দু’পা ফেলিয়া ঘুরে আসো, আফসোস রেখোনা।
তানিম ভাএই কঠিন একটা বয়ান দিছেন। এমন বয়ান চলতে থাকুক।
বয়ান দিলাম কখন?
অদ্ভুত সুন্দর করে বর্ণনা দিয়েছেন। যাব যাব করে ও যাওয়া হয়নি, এখন খুব আফসোস লাগছে, যেতে ইচ্ছে করছে।
কোন একদিন হয়তো যাবেন, লেখার সাথে খুব বেশী মিল চোখে পড়বে কিনা জানিনা, বরিশাল বিভাগ জুড়ে এখন উন্নয়নের জোয়ার পরিকল্পনার প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এইসব জোয়ার আমাদের কোনদিন ভালো কিছু দেয়নি। শুভেচ্ছা,
ভালো লাগলো লেখাটা।
মজার বর্ণনা। তানিম ভাই, আপনার ভ্রমণ-কাহিনী লেখার হাত বেশ ভালো। আরো লিখুন। বানানের দিকটা একটু খেয়াল রাখবেন। আর ছবি দিতে কার্পণ্য করবেন না যেনো।
সুমন তুরহান ভাই, বানান নিয়ে একটা জটিলতায় পড়ে গেছি ভাই, বাংলায় একসময় ভালো ছিলাম, চর্চা না করতে করতে সব গোল্লায় গেছে। প্রতিটা লেখা আপলোড করার পর বানান ভুলগুলো চোখে পড়ে, আপলোড করার জন্য একটা কেমন তাড়াও কাজ করে। ছবি আপলোড করতে বিরাট ঝামেলা হতো, আমাদের মৃত্যুময় ইষৎ ছেলে ভালো, একটা লিংক দিয়েছে, দেখি কি করা যায়। ভালো থাকবেন, আপনার পর্যালোচনা আমি সবসময় প্রত্যাশা করি।
জটিল একখান জায়গা। একবার গেছি, আবার যামু। ব্যাক পেইনের জন্যে বেশি আরাম কইরা ঘুরাফিরা এঞ্জয় করতে পারিনাই সেইবার। এবার যখন যামু, দর্কার হইলে ব্যাকটারে বাড়ি থুইয়া যামু।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
হে রাতঃ§রণীয় রাতের দিশারী, আপনার ব্যাক আপনাকে দ্বিতীয় কুয়াকাটা যাত্রায় ব্যাকিং দিয়ে যাক পুরোপুরি। অনেক অনেক ধন্যবাদ, ইদানীং মনে হয় আপনি ’িবজি’। ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা,
যাইতে হবে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আসেন। আপনার কথা মৃদুল এর মুখে শুনেছি, আমার পোষ্টে নজরুল ভাইয়ের মন্তব্য ভালো পেলাম
ডাব-ইলিশ-সমুদ্রসঐকত-দোচুয়ানি ইকুইভেলেন্ট আর পুর্ণিমা বা কি ফার্স্টক্লাস কম্বিনেশান!
লেখা ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ তানিম এহসান। লেখা প্রিয়তে রাখলাম।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
যেতে হবে, লিঙ্কটি টুকে রাখলাম, কাজে লাগবে।
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
যাত্রা শুভ হোক!
নতুন মন্তব্য করুন