রিক্সায় করে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ঢাকা শহরের মানুষগুলোকে বড় বেশী অন্য রকম লাগে। ঠিক বলে বোঝানা যাবে না কেমন, তবে পুরোপুরি মানুষ মনে হয়না এটা ঠিক। মেশিন মেশিন একটা ভাব আছে। মনযোগ দিয়ে দেখতে থাকে সে মেশিন মানুষগুলোকে। এদের হাটাচলা, কথা বলা, অংগভঙ্গি কোন কিছুই মিলেনা স্বাভাবিক মানুষের সাথে। রাস্তায় কেউ কাউকে তোয়াক্কা করছেনা। কাকে ফেলে কে রাস্তা পার হবে সে প্রতিযোগীতা হচ্ছে। কেউ ফুটপাথ দিয়ে হাটছেনা। মানুষ আর গাড়ী রাস্তা দিয়ে একসাথে চলছে। রাস্তায় গাড়ী আর মানুষ কেউ কাউকে তোয়াক্কা করছেনা। শেষ মূহুর্তে হয় ব্রেক করছে গাড়ী আথবা মানুষ। এই মানুষগুলোর কোন ভয়ডর নেই। গাড়ী হর্ন দিয়ে যায়, কারো কর্নগোচর হয়না। মাঝে মাঝে গাড়ী চাপা দিয়ে যায়। মানুষ মরে। গাড়ী ভাংচুর হয়। গাড়ীতে অগ্নিসংযোগ হয়। কেউ নিন্দা করে আর কেউ আন্দোলন করে। পেপারে প্রতিবেদন হয়। আবার সব আগের মত হয়ে যায়। কেউ কিছু মনে রাখেনা। বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রামে থাকা মানুষগুলো আবার অনুভূতিহীন হয়ে যায়।
- কোথায় নামবেন। ইনভার্সিটি তো আইসা পড়ছি।
- চারুকলার সামনে যান।
চারুলকলার সামনে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া বুঝিয়ে সোজা রেসকোর্স ময়দানে ঢুকে পড়ল লুব্ধক। সোহরোয়ার্দী উদ্যানকে রেসকোর্স ময়দান বলতেই বেশী ভালোবাসে সে। এ জায়গাটা খুব আপন মনে হয়। মনে হয়, এটাই বাংলাদেশের হৃদপিন্ড। এখানেই বাংলাদেশের প্রান ভোমরাটা লুকিয়ে আছে। কত রকমের মানুষ আসে এই ময়দানে। কেউ তরুন কবি, কেউ লেখক, কেউ গান গায়, কেউবা মুগ্ধ শ্রোতা, কেউ ছবি আঁকে আবার কেউবা গঞ্জিকা সেবন করে শুধু বুলি আওড়ায়। বড় আজব জায়গা এটা। কে যেন একবার বলেছিল এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাজার। আরো বলেছিল, এইখানে অনেকেই আসে কিন্তু এই জায়গার গরম সবাই সহ্য করতে পারেনা, পালিয়ে যায়। লুব্ধক পালায়নি। ইউনিভাসিটির স্টুডেন্ট যখন ছিল তখনও আসতো, এখনও আসে। এখানে যার যা ইচ্ছা তাই করে, কোন বাধা নেই। এটা দেখতেই খুব ভালো লাগে তার। এখানকার যারা চা দোকানদার, সিগারেট বিক্রেতা, পানি বিক্রেতা সবাই তার মোটামুটি পরিচিত। নানা ধান্দার যেসব মানুষ এখানে আসে তাদের অনেককেই চেনে সে। মাঝে মাঝে দু-একজনের সাথে কথাও হয়, তবে বেশীর ভাগ সময় সে নিজের মধ্যেই ডুবে থাকে আজকাল।
এখানে তার আত্ম মগ্নতার জগতে আর একজন আছে। নাম পৃথিবী। সুদর্শনা পৃথিবী। পৃথিবীর সাথে পরিচয় হল বছরখানেক হবে। এখনতো পৃথিবী তার সব ভাবনারই অংশীদার। সব কথা পৃথিবীর সাথেই হয় আজকাল এখানে আসলে। মাঝে মাঝে পৃথিবী আসেনা। তখন কি যে কষ্ট হয় ওর বলে বোঝানো যাবেনা। তখন সে গিয়ে বসে থাকে মধুর কেন্টিনে। এটা তার আরেকটা প্রিয় জায়গা। একটা কোনার টেবিলে নিঃসঙ্গ বসে থাকে বিকেলবেলা। অবশ্য এক সময় এমনটা ছিলনা। লুব্ধক রাজনীতি করত। ছাত্রনেতা ছিল। সবাই মধুর টেবিলে বসে মুগ্ধ হয়ে শুনে থাকত ওর কথা। আর এখন সবাই কেমন যেন এড়িয়ে চলে। অবশ্য সে নিজেও এড়িয়ে চলতে চায় সবাইকে।
এখানে পৃথিবীকে আজ অনেক বেশী আকাংখা করছে লুব্ধক। আবশ্য সে নিজে ছাড়া আর কেউই জানেনা পৃথিবীর কথা। এ এক অদ্ভুত সম্পর্ক। মনের গভীরের এক সৃষ্টি। এ যেন এক অস্তিত্বহীন অস্তিত্বের সন্ধান। এখানে বাস্তব প্রেম কল্পনার এক প্রেমিকার সাথে।
ওই যে আসছে পৃথিবী। বাতাসে সর্পিল তরঙ্গ তুলে আসছে। কি উজ্জল এক আবয়কে পুরো পথটাকে আলোকিত করে আসছে! গৌঢ় বর্ণের মেয়েটা পিঙ্গল সোজা চুল বাতাসে উড়িয়ে এগিয়ে আসছে। অবাক লুব্ধক তাকিয়ে থাকে আলোকিত রাস্তাটার দিকে। আকাশী শাড়ি পড়েছে সাথে গোলাপী লিপিষ্টিক, কি যে ভাল লাগছে মেয়েটাকে আজ!
- কখন এসেছ? নিশ্চই বেশ কিছুক্ষন হলো? একটা শীতল মায়াবী কন্ঠ ভেসে গেল আকাশে।
- এ্ইতো বেশ কিছুক্ষন।
- এসময়তো তুমি এখানে আসনা?
- তোমার হাত ধরে হাটতে ইচ্ছা করছিল খুব তাই চলে এলাম।
- জানতে আমি আসবো?
- জানতাম।
- আমি তো সব সময় আসিনা?
- যেদিন চেয়েছি সত্যিকারভাবে সেদিনই এসেছ।
- তাহলে তুমি আমাকে সত্যিকারভাবে চাওনা সবসময়?
- না। মন খারাপ হলো?
- না। ভাবছি।
- কি?
- আমাকে ছাড়া আর কি কি ভালাবাসো, তাই ভাবছি।
- আমার সব ভালবাসা মিলেইতো তুমি।
- মানে?
- আমার সব ভালোবাসারা একসাথে মিলেমিশে তোমাকে তৈরী করেছে।
- কারা তোমার ভালবাসা?
- আমার ভালবাসা দেশ, রাজনীতি আর মুক্তির সংগ্রাম।
- এগুলো তো সবাই আছে। তাহলে আমি কেন?
- না, এগুলো নেই। এগুলো মানুষের জন্য নেই। এখন এগুলো অমানুষের চর্চা। সেজন্যইতো এখন তুমি আমার ভালোবাসা।
- তাহলে কি মানুষ নেই পৃথিবীতে?
- আছে। মানুষই বেশী কিন্তু তারা সবাই আজ অমানুষের জালে বন্ধী। পঁচা এ জালে আটকা মানুষগুলোরও পচন শুরু হয়েছে। তাই অমানুষও বাড়ছে এখন খুব দ্রুত।
- তাহলে কি কোন আশা নেই?
- আছে। আশাটাই বেশী। অমানুষের বিপরিতে অনেকেই এখন আরো বেশী করে মানূষ হয়ে উঠছে। নিজের ভেতর আর নিজস্ব বোধের ভেতর দিয়ে।
- তাহলে এই মানুষেরা কোথায়?
- প্রস্তুত হচ্ছে আলো ছড়াতে। আবার একদিন সব আলো মিলেমিশে তীব্র আলো ছড়িয়ে দিবে পৃথিবীতে। সে আলোয় ছাই হবে অমানুষ।
- তাহলে কি আমি তোমার আলো?
- তুমি আমার পর্দা। তুমি আমায় অমানুষের জাল থেকে আড়াল কর। তুমি আলো নও কিন্তু আলোকে সামলে রাখ। সময় হলে নিজেকে গুটিয়ে নাও। আলোকে পৃথিবীময় ছড়িয়ে দাও।
কথাপোকথনে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘণায়, তারপর রাত। আজ আকাশটা পূর্নিমার জোছনায় ভেসে যাচ্ছে। মায়ময় আলোয় আলোকিত হয়ে যাচ্ছে পুরোটা ময়দান, এই শহর, এই দেশ আর পৃথিবী। লুব্ধক আলোর মেলায় চেয়ে দেখে পাশে পৃথিবী নেই। পৃথিবী মিশে গেছে আলোর মিছিলে। হয়ত আবার ফিরে আসবে আলো নিভে গেলে।
সাইফ জুয়েল
(লেখকের অনুরোধে লেখার শেষে নাম সংযুক্ত হয়েছে - মডারেটর)
মন্তব্য
নামটা লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম। মডারেটরকে অনুরোধ করছি গল্পের সাথে নামটা জুড়ে দিতে।
খুব বেশী তাড়াহুড়ো লাগল লেখাটা
আর নামটা?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আনেক ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক কবি। এখন মনে হচ্ছে আর একটু বেশী লিখলে ভাল হতো, একটু তাড়াহুড়া হয়ে গেছে।
মাডারেটরকে অনেক ধন্যবাদ।
কথোপকথনে শেষ অংশটাতে আরো কিযেন একটু বাকী রয়ে গেলো মনে হয়। লেখা চলুক!
তানিম ভাই, এটা ছিল আসলে বিদ্যমান সামাজিক অস্থিরতা আর বৈষম্যের সমাজে এক যুবকের পরিবর্তিত মনোজগত। এখনে সে প্রতিনিয়ত আড়াল করে নিজেকে নিজের জগতে। নিজস্ব বোধ দ্বারা ভ্রান্তিময় এই দুনিয়ায় সে আলোকিত হতে চায় ছেলেটি। বিষয়টা নিয়ে গল্প লেখা ক্রিটিক্যাল। তাই হয়ত ফুটিয়ে তুলতে পারিনি।
ভাল লাগল না । অসম্পূর্ণ মনে হল । লেখা চালিয়ে যান । ভাল কিছুর অপেক্ষায় রইলাম ।
লেখা পড়ার জন্য একবার আর পরামর্শের জন্য আরেকবার ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন