প্রেগন্যান্সির প্রথম পাঁচমাস পর্যন্ত পাঁচতলায় ছিলাম। অফিস থেকে এসে বেহুশের মতো শুয়ে থাকতাম। বর আসতো আমার আরো ঘন্টা দুয়েক পরে। একদিন ফোন করলো -দিহান, একটা পাখি আনবো?
-কি পাখি?
-ঈগল পাখি।
-ঈগল আমরা কোথায় রাখবো? আচ্ছা নিয়ে আসো।
বর ফিরলো। আমি বললাম ‘পাখি কই’?
-আরে পাখি নাতো, আমি একটা শীতল পাটি কিনবো কিনা সেটা জিজ্ঞেস করেছিলাম। তুমি ভেবেছো পাখি?
-আমি ভেবেছি ঈগল পাখি!!
-কী পাগল! ঈগল পাখি কই পাবো?
আমার এমন দুঃখ লাগলো। মনে হলো যেনো ঈগল না এনে আমার প্রতি একটা অবিচার করেছে! অন্তঃস্বত্তা হলে মেয়েরা নিজেরা বাচ্চা হয়ে যায় প্রথমে। একবার মার্চ মাসে আমার খুব ইচ্ছা হলো লটকন খাবো! লটকন কমন ফল না, আবার সারাবছর পাওয়া ও যায়না। আমার বর বললো বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করেও এই বস্তু এখন পাওয়া যাবেনা দিহান। আমার মনে হলো সামান্য লটকন তাও আমাকে কেউ দিচ্ছেনা! আমার এক বন্ধু প্রেগন্যান্ট অবস্থায় একটা গান শুনে খুব অবাক হয়ে গেলো। ও আমাকে বললো গানের কথাগুলো কেমন আশ্চর্য রকম। এটা কেমন গান ‘ও উট পাখির লেজ...’। গানটা শুনে আমি উদ্ধার করলাম ‘ও ফুটপাতের মেয়ে’। (মৌসুমী ভৌমিকের গান)
অবশ্য শ্রমজীবি, গ্রামের মেয়েদের বাস্তবতা আলাদা। আমার বুয়া একদিন বলে ‘ধান মাড়াই করার সময় ব্যাথা উঠলো, আমি তাড়াতাড়ি করে ভাত বসালাম’।
-ব্যাথা উঠলো আর আপনি ভাত বসালেন এর মানে কি?
-ওমা, আমিতো আর ৮-১০ ঘন্টা অন্তত উঠতে পারবোনা। জামাই, পোলা এরা খাবে কি?
এরা হচ্ছে বাংলাদেশের মেয়ে! এরা আজরাইল কে বসিয়ে রেখে স্বামী-সন্তানের খাবারের বদোবস্ত করে!
একদিন অফিসে গিয়ে দেখি এগারোটা বাজতেই সবাই লাঞ্চ করে নিচ্ছে। ঘটনা কি? ঘটনা হলো সেদিন ছিলো সুর্যগ্রহণ! গ্রহণের সময়ে কিছু খেলে বিরাট বিপদ হয় এরকম বিশ্বাস চালু আছে আমাদের দেশে। অনেকের জন্মকালীন ঠোঁট কাটা থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস বলে অন্তঃস্বত্তা মা কাটাকাটির কোনো কাজ হয়তো করেছে গ্রহণের সময়। (ইংরেজিতে একে বলে ‘cleft lip ’ বা cleft palate। cleft মানে দুটা জিনিসের মধ্যে গ্যাপ বা ফাটল। ফাটল বা গর্ত উপরের ঠোঁটে অথবা তালুতে হতে পারে। আবার কখনো কখনো দুজায়গাতেই একসাথে ও হতে পারে। এটা পৃথিবীব্যাপী কমন সমস্যা, প্রতি একহাজার শিশুর মধ্যে ১/২ জনের এমন জন্মগত ত্রুটি থাকে। সাধারনত মুখ আর নাক তৈরি হয় প্রেগন্যান্সির প্রথম ৬-১২ সপ্তাহের ভেতর। কোনো কোনো ভ্রুনের ক্ষেত্রে ঠোঁট আর তালু একসাথে বৃদ্ধি পায়না। ঠোঁট আর তালু আলাদা ডেভেলপ করলে ফাটল, গর্ত বা গ্যাপ থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। এই সমস্যার কারন অজানা। জেনেটিক,ভিটামিনের অভাব, ঔষধের সাইড এফেক্ট এইসবই সম্ভাব্য কারন। কারনটা নিশ্চিতভাবে জানা নেই তবে তার জন্য গ্রহণ কোনোভাবেই দায়ী না!)
কোনদিন এইসব কুসংস্কার বিশ্বাস করিনি আমি, সবাইকে নিয়ে হাসাহাসি করলাম অনেক। একে তাকে ফোন করলাম এবং ভয়াবহ বিরক্ত হলাম। বাংলাদেশে সবাই এই কুসংস্কার মানে! আমার ডাক্তার বন্ধুরা পর্যন্ত বললো পাঁচ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে পারবিনা? না পারবোনা। একপ্রকার জেদের বশে খেয়ে নিলাম। কিন্তু প্রেগন্যন্সির পরের কটা মাস খুব দুঃশ্চিন্তায় ভুগেছি। ঐ যে বললাম মন দুর্বল হয়ে যায়...
আমি শহরের সবচে বিখ্যাত ডাক্তারের কাছে যেতাম। উনি আগে সিরিয়াল নেন না। (কিন্তু যত আগেই যাইনা কেনো সিরিয়াল কখনো ৩০ এর আগে পাওয়া যায়না। এই রহস্যের কিনারা করতে পারিনি আমি!) প্রথমদিন ভেবেছিলাম আগেভাগে লাঞ্চ সেরে চেম্বারে গিয়ে বসে থাকলে ২-৩ ঘন্টা পর উনার সামনে হাজির হবার সৌভাগ্য হবে । বসতে বসতে একসময় ডাক পড়লো। আহ বাঁচলাম, খুশি মনে রওয়ানা দিলাম। অবাক কান্ড, নিয়ে বসালো আরেকটা ছোট রুমে। কোনো মানে হয়? সেখানে অপেক্ষা আরো ২০-৩০ মিনিট। তারপর ডাক্তারের রুমে ঢুকে আরো পাঁচ মিনিট। আগের রোগিকে ঔষধ লিখতে লিখতেই পরের জনকে ঢুকায়।
আমার মাথা বোঝাই Google পড়া বিদ্যা। ভালো বই পড়লে, গান শুনলে বাচ্চার মানসিক বৃদ্ধি আর বিকাশ কতো হবে সব জানা। কিন্তু আমার কাছে মা বা মাতৃস্থানীয় কেউ নেই যে এটা সেটা বানিয়ে খাওয়াবে! দিনের বেশিরভাগ সময় অফিসে থাকি, খাওয়া দাওয়া যতোটা করার কথা ততোটা হচ্ছিল না। ফলে আমার বর আমাকে ফ্যাকাশে দেখতে শুরু করলো। ডাক্তার কিন্তু প্রতিবার ওজন দেখে, প্রেশার মাপে আর ঘ্যাসঘ্যাস করে লিখে দেয় ‘ক্যালসিয়াম, আয়রন চলবে.....’।
দ্বিতীয় ট্রাইমস্টার শেষেও আমাকে একটু ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিলো তাই বর মিন মিন করে ডাক্তারকে বলল -ওকে একটু হলদেটে দেখাচ্ছে,ব্লাড টেস্ট করার দরকার আছে?
উনি বললেন ‘আপনি যখন বলছেন করেন’! (আপনি যখন বলছেন...!)
সিরিঞ্জ ভর্তি রক্ত নেবে ভয়ে আমি রাজি হচ্ছিলাম না। আরে বাবা ডাক্তার তো বলেনি। তুমি জোর করছো কেনো? আমার বর মাঝে মাঝে জল্লাদ হয়ে যায়। সে আমাকে টেনে হিঁচড়ে রক্ত পরিক্ষা করতে নিয়ে গেলো। রেজাল্ট পেলাম রক্তে হিমোগ্লোবিন লেভেল সাত।
স্বাভাবিকভাবে ছেলেদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা থাকে ১৪ আর মেয়েদের ১২। বাংলাদেশের মেয়েরা যেহেতু পুষ্টিকর খাবার দাবার কম পায় তাই ১০ কেই স্বাভাবিক ধরা হয়। হিমোগ্লোবিন সাত মানে মোটামুটি ভয়ংকর একটা ব্যাপার। আমি তখন ছয়মাস পেরিয়ে সাত মাসে পড়েছি। বাইরে থেকে রক্ত নেয়াটা রিস্কি হতো,এ্যালার্জিক রি অ্যাকশন হতে পারতো। একমাত্র সমাধান খাবারের মাধ্যমে আয়রন ইনটেক বাড়ানো। একদিন বাজারে গিয়ে পুরো কলাগাছ আর পুরো কচুগাছ কিনে নিয়ে আসলাম।(আক্ষরিক অর্থেই। কলার থোড়, মুকুলি, কাঁচকলা...কচুর মুখি, গাছ এবং কচুশাক!) গরুর কলিজা আর ডালিম কিনে ফ্রিজ বোঝাই করলাম। দুইমাস ধরে আমার খাবার হলো সকালে রুটির সাথে একবাটি গরুর কলিজা আর দুইটা কলা, দুপুরে কাঁচকলা নাহয় কলার থোড় অথবা কচুর একটা কিছু দিয়ে ভাত, বিকালে ডালিমের রস, রাতে আবার গরুর কলিজা! এই খাবারগুলি আমি আর খেতে পারিনা, দেখলেই কেমন বমি পায়। তবে কাজ হয়েছিলো! ডেলিভারির আগে হিমোগ্লোবিন বেড়ে ১১ তে পৌঁছায়।
মা না হলে এইসব বোধ আসেনা। কোনো তুচ্ছ খাবারের জন্য মরীয়া হয়ে উঠা, কুসংস্কারকে উড়িয়ে দিতে না পারা, অযৌক্তিক বিষয় মেনে নেয়া, দিনের পর দিন একই খাবার খেতে থাকা......আহা, আমাদের সবার মা’ই এমন সতর্কতা, ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে নিজের ভেতরে বড় করেছে আমাদের! আমার কী দারুণ সৌভাগ্য নিজে মা হতে পেরেছি। আমার মেয়েরা যখন মা হবে তখন আমার জন্য তাদের বুক ভরে উঠবে ভালোবাসায়, মায়ায় আর কৃতজ্ঞতায়।
এক জীবনে মানুষের আর কীই বা পাওয়ার আছে?
দিহান
মন্তব্য
দারুন সুন্দর, নিদারুন সত্য ! তাইতো, একজীবনে মানুষের আর কীই বা পাওয়ার থাকতে পারে ??!!
দিহানাপু, আপনি অসাধারণ!
আপনার প্রথম দুটি পর্ব খুব মনোযোগ আর আনন্দ নিয়ে পড়েছি। বিভিন্ন ঝামেলার কারণে তৃতীয় পর্ব পড়া হয়ে উঠেনি। একজন মানুষ কিভাবে যেন ঠিকই বুঝে ফেললো! গতকালই ম্যাসেজটা এলো, ''তুমি কিন্তু ম্যাজিকাল জার্নি লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছ না। এখনি পড়। আমি কিন্তু এরকম সময় তোমার কাছ থেকেই বাবা, মা, ভাই সবার ভালোবাসা চাই।''
সেই ম্যাসেজটা পড়ে সম্পূর্ণ এক অজানা অনুভূতি হল।
এরকম একটা সুন্দর সিরিজ লেখার জন্য আপনাকে আবার ধন্যবাদ।
ভয়ংকর সুন্দর দিহান, চালিয়ে যান।
বরাবরের মতই দারুণ। আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। আপনার পরিবারের জন্য শুভকামনা রইল।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সিরিজটা পড়তে ভালো লাগছে।
love the life you live. live the life you love.
অনেক কিছু অনুভব করলাম । অনেক ভালো লাগলো।
চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপু লিখে যান । খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি ।
আপনি আপনার মত করে লিখছেন, আপনার বলতে পারার ক্ষমতা আপনার মত! এবং তা প্রশংসা ছাড়িয়ে যায়! আপনি, আমাদের ভাইয়া আর আপনাদের লিটল এনজেলদের জন্য শুভেচ্ছা আবারো।
আমার অশীতিপর বৃদ্ধা মা দীর্ঘদিন যাবত আমার সাথে আমার বাড়িতেই থাকেন। অনেক লম্বা সময় পার হওয়ার কারনে এখন আর তেমনভাবে প্রতিদিন খোঁজখবর নেওয়া হয়না। আপনার লেখাটা পড়ে একধরনের অপরাধবোধ সৃষ্টি হয়েছে। আজ থেকে আবার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। ধন্যবাদ আপনাকে মায়ের প্রতি কর্তব্যবোধ জাগিয়ে তোলারজন্য।
খুবি ভালো লাগলো...
জহির আহমাদ,সাত্যকি,রাহিল অনেক ধন্যবাদ। ছাইপাঁশ, বাহ দারুণ তো। মেয়েরা আসলে সেই ছেলেকেই ভালোবাসে যাকে তার সন্তানের বাবা হিসাবে কল্পনা করতে পারে। গেরিলা, অনার্য সঙ্গীত, তারাপ কোয়াস সাথে আছেন দেখে ভরসা পাচ্ছি...মুর্খ, আপনি আর এ বিষয়ে অন্তত মুর্খ থাকবেন না এটা আশা করছি! নজরুল ইসলাম, বলছেন চলুক? তাহলে তো চালাতেই হয়!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
পড়ছি...
খুব ভালো লাগলো।
আনার লেখা পড়ে তো আমার ও মা হতে ইচ্ছে করছে'
আপনার লেখার হাত অনেক পোক্ত দিহান। লিখে যান ... পড়ছি।
আপনার পরিবারের সকলের জন্য শুভকামনা।
বরাবরের মতো ইন্টারেস্টিং! আচ্ছা এটা কি আপনার প্রোফাইল? http://www.sachalayatan.com/user/5035
আমি জানি এক এক দেশের ডাক্তারের এক এক ধরণের নির্দেশ থাকে। স্কটল্যান্ডের ধাত্রী আমার বউকে (আরো অনেক কিছুর মত) কলিজা খেতে মানা করেছিল, অতিরিক্ত ভিটামিন এ এর ভয়ে।
+
ভাল লাগছে, ভাল লেখা ... শুভেচ্ছা।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
চলুক।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা। মায়াময়।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
পড়ছি, চালিয়ে যান। তবে উপদেশমূলক না করে এবং নিজের বর্ণনাকে সব মেয়ের কাঁধে চাপিয়ে না দিয়ে শুধু নিজের অনুভূতিগুলো বর্ণনা করলে বোধহয় ভালো হতো। স্টেরিওটিপিক্যাল বর্ণনা পড়তে গিয়ে বোরিং হয়ে যেতে পারে
আপনি প্রেগন্যান্সির সাইকোলজিক্যাল ইফেক্ট হিসেবে ইন জেনারেল যে ব্যাপারগুলো বলছেন সেগুলোর অনেক ব্যতিক্রম দেখেছি আমি পরিচিতদের মধ্যেই।
বাংলাদেশে মেয়েদের একটা সোশ্যাল স্টেরিওটাইপ হচ্ছে তারা মনে করবে পৃথিবীর জনসংখ্যা দু'চারটা বাড়িয়ে দেয়া ছাড়া জীবন সার্থক করার আর কোন উপায় নেই, আহ্লাদী টাইপের হবে, রক্ত দিতে গিয়ে ভয়ে আধমরা হয়ে যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। দয়া করে কিছু মনে করবেন না, আমার কাছে মনে হচ্ছে আপনার কিছু মন্তব্য এই সোশ্যাল স্টেরিওটাইপের সঙ্গে পারফেক্টলি ম্যাচড।
সচলায়তনের এই নন্দনে আরো দৃষ্টিনন্দন হোক আপনার যাত্রা। অগ্রিম অভিনন্দন।
আপনার ঈগল পাখি আর শীতল পাটির কথা শুনে খুব মজা পেলাম। গর্ভবতী হলে যদি এই হয় কানের অবস্থা, তবে তো আমি সারা বছর গর্ভবতী। সেদিন ফেবুতে প্রিয় গানের প্রিয় লাইনটা
স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে ভাল ধরা খেলাম। ওটা নাকি বক পাখি নয়, বক পাতি! চিন্তা করেন অবস্থা!
আপনার সহজ সুন্দর লেখাগুলো ভাল লাগছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
http://www.facebook.com/notes/tanya-kamrun-nahar/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%8B-%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A6%B0/10150242451722101
The Reader, তানিম এহসান, Guest Writer ধন্যবাদ। নীল_অনুকাব্য, আপনি মেয়ে হলে এই সৌভাগ্য নিশ্চয়ই আপনার হবে।বন্দনা ধন্যবাদ। এস এম মাহবুব মুর্শেদ, আমি এই লিঙ্কে ঢুকতে পারছিনা।
দুর্দান্ত, আয়রন ডেফিসিয়েন্সি না থাকলে কলিজা খাওয়া মাঝে মাঝে ক্ষতিকর।
আয়নামতি, শাহীন হাসান, সুমন_তুরহান ধন্যবাদ।
লুৎফর রহমান রিটন, আপনার কমেন্ট আমার লেখায়?! আপনার ইম্পসিবল/ডিম্পসিবল আমার ঘরে নিয়মিত জপা হয়! জীবনের একমাত্র বেতের বাড়ি একটা হুজুরের কাছে খেয়েছিলাম আপনার আর আমীরুল ইসলামের 'রাজাকারের ছড়া' বারবার বলছিলাম তাই! আমি অনেক আনন্দিত। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
অপছন্দনীয়, আমি উপদেশ যথাসম্ভব এড়িয়ে যাচ্ছি। আমিতো লিখলাম ই সব মেয়ে যেমন আলাদা, প্রতিটি প্রেগন্যান্সি ও আলাদা, আপনি খেয়াল করেন নি হয়তো। নিজের আহ্লাদির কথা লিখেই আমার বুয়ার অভিজ্ঞতার কথা ও লিখেছি। অনেক মেয়ে রক্ত দিতে গিয়ে আধমরা হয়না। আমি ঢাকা ভার্সিটির বাঁধন এর মেম্বার ছিলাম রোকেয়া হলের অসংখ্য মেয়ে নিয়মিত রক্তদাতা, আমি দেখেছি। আমার নিজের জন্য দুজন ডোনার রেডি রাখতে হয়েছিল, দুজনেই মেয়ে ছিল। আমি আর যাই লিখি না কেনো মেয়েদের দুর্বল প্রাণী প্রমাণ করার মতো কিছু লিখতে পারার ক্ষমতা আমার নেই! রক্ত পরিক্ষা করতে দিতে ভয় পেয়েছি কিন্তু নরম্যাল ডেলিভারির মাধ্যমে দুটা বাচ্চার জন্ম আমিই দিয়েছি! আর ভাই, ঐ 'ছেলেমানুষ' লেখা পড়ে আপনার যে রি অ্যাকশন ছিল সেটাও সোশ্যাল স্টেরিওটাইপ এর উদাহরন!
আমি শুধু আমার কাছে কী মনে হচ্ছে সেটাই বলতে পারি। আপনাকে আহত করে থাকলে দুঃখিত।
আপনি কিভাবে লিখবেন সেটা আপনার ব্যাপার, কিন্তু আপনি যখন লেখেন
তখন আমার কাছে মনে হয় আপনি নিজের বর্ণনাটা সব মেয়েদের সাধারণ বর্ণনা হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন। অন্য কার কী মনে হবে সেটা তাদের ব্যাপার। কীভাবে লিখবেন সেটা যেমন পুরোটাই আপনার উপরে নির্ভর করে, তেমনি পাঠক হিসেবে সেটার ইন্টারপ্রিটেশনও আমার উপরে নির্ভর করে। এবং কোনকিছু ভালো লাগলে যেমন বলতে পারি, তেমনি খারাপ লাগলেও বলতে পারি বলেই মনে হয়।
আমার রিঅ্যাকশনটা স্টেরিওটাইপ ছিলো এটা পড়ে অবশ্য হাসি পেলো - বলতে চাইলে কত কিছুই তো বলা যায়! "ছেলেরা অমুক মেয়েরা তমুক" দাবী করলেন আপনি, আর 'স্টেরিওটাইপ' কিনা হলো আমার রিঅ্যাকশন!
যাকগে, ভালো থাকুন, আর দয়া করে এই সিরিজটা চালিয়ে যান
কথাটা মনে হয় মিথ্যা নয়।
আপনার বুয়ার যে অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন, আমার তো মনে হল বাংলাদেশের মেয়েদের সোশ্যাল স্টেরিওটাইপ এর সত্যিকার উদাহরন আসলে এটাই !
আমার মায়ের কথাই ধরা যাক, আমরা সাত ভাইবোন আর আমার ভাগ্নে-ভাগ্নি, ভাস্তে-ভাস্তির সংখ্যাও মাশাআল্লাহ বাবারা সাত ভাই পারুলের এক বোন চম্পার পরিবার আর মায়ের দিকেও ছয় বোন দুই ভাই আম্মা-আব্বা দুজনই কুলের বড় !! তো স্বাভাবিকভাবেই এই সবগুলারে পাল্যপালন করে বড় করে তোলার জন্য দুজনকেই নিশ্চয়ই অসম্ভব পরিশ্রম করতে হয়েছিল !!! অথচ এখনো মাকে দেখি একইরকম সতর্কতা, মমতা আর ভালোবাসায় সব্বাইকে আগলে রাখার জন্য সে কী আকুলতা ॥
যেমনটা আপনি লিখেছিলেন----“মা না হলে এইসব বোধ আসে না ।” লেখাটা মায়ের মত মায়াময় হইছে !
ধন্যবাদ ইস্কান্দর।
কৌস্তুভ, রু-আপনাদের ধন্যবাদ জানানো হয়নি! ধন্যবাদ।
Rajkonya, অন্তঃস্বত্তা হলে কানে ভুল শোনা যায় তা কিন্তু না! আমি বলতে চেয়েছি, ক্লান্ত হয়ে কেমন বেঘোরে পড়ে থাকতাম...সেজন্য উল্টাপাল্টা শুনতাম।
দারুণ
আপনি আপনার মতো করে লিখুন দিহান। লেখার স্টাইলও পরিবর্তন করার দরকার দেখি না অন্তত আমি। একজন পাঠক হিসেবে, আপনার এই লেখাতে কোনো ত্রুটি আমার চোখে পড়েনি যেমন পড়েনি আপনার আগের সিরিজের লেখাগুলোতেও।
আগের সিরিজের লেখাগুলো পড়ে খিক খিক করে হেসেছি, আর এই সিরিজের লেখাগুলো পড়তে গিয়ে ভেতরটা নড়ে উঠছে। আগে তো কখনো জানা হয়নি এমন করে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুগো-দার সাথে সহমত। চমৎকার লেখনি সিরিজ চলুক
যতই আপনার ম্যজিকেল জার্নি-র সিরিজ টি পড়ছি ততই ভালো লাগছে। অসাধারণ। চালিয়ে যান।আপনার জন্য শুভকামনা রইল......দিহান।
দীপাবলি।
অসাধারণ! এছাড়া আর কিছু বলার নেই।
মেয়েদের রক্ত দেয়ার বিষয় টাতে আপনার সঙ্গে সহমত। বাঁধনের কল্যানে বিষয়টিকে আমারো কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে কিছুটা। ইউনিভার্সিটি লেভেল এর মেয়েদের একটা বেশ ভালো অংশ আসলে নিয়মিত রক্ত দেয়।
-আসলেই তাই। কিন্তু আফসোস, বড় হয়ে যাওয়ার পর এই সমুদ্রসম ভালোবাসার কিছুটাও কি আমরা সবাই মায়ের প্রতি দেখাতে পারি! কতদিন মা'কে দেখি না, কিন্তু কই, মনে পড়ে কি! মা ফোন না দিলে কথাই হয় না; খারাপ লাগছে বড় নিজের কাছে।
ভালো থাকবেন আপনার মেয়েদেরকে নিয়ে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।
এ পর্বটা পড়ে একটু কষ্ট অনুভব করলাম। মা'রা চিরজীবনই পরম শ্রেষ্ঠ!!!
_____________________
Give Her Freedom!
বাবা হওয়ার সময় একই ধরনের ঘটনায় অংশ নিয়েছি। মনে পড়ল ৪ বছর আগের সময়টা।
সুমন_সাস্ট
মাত্র বিয়ে করেছি, কাকতালিয় আমার বউ এর নাম ও দিহান.... ভাল লাগছে আপনার লিখা, কিপ ইট আপ ডিয়ার, খুব কাজে লাগবে আপনার এক্সপেরিয়েন্স এন্ড এক্সপ্রেশন্স - শুভ কামনা
অন্যান্য পর্বগুলোর মতই সুন্দর হয়েছে আপু। আপনার লেখার স্টাইলটা মজার আর অনেক ন্যাচারাল, কাঠখোট্টা ভাব নেই বলে পড়ে আরাম পাওয়া যায়। আর আমি বেশ স্বাধীনচেতা মেয়ে, আমার কাছে মেয়েরা -টার্মটা পড়ে, সবাইকে এক কাতারে ফেলে দিয়েছেন মনে হয় নাই, যেমন আগেও কোটেশনের মাঝে রাখা 'ছেলেরা' বলতে সব ছেলেই বুঝিয়েছেন এমন মনে হয় নাই। নিজের অনেক ছেলে বন্ধু আছে, তাদের কেউ কেউ অমন, সবাই না, আবার কেউ কেউ আমার থেকে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন আর গোছানো, আর দিন শেষে সবাই মানুষ ভালোই মোটামুটি, নাহলে তো বন্ধুত্ব টিকতো না। (আপনার এই হালকা মেজাজে মজা করতে পারা দেখে মনে হয়, ভাইয়া বোধ করি মজার মানুষ হবেন বেশ কিছুটা... সেন্স অফ হিউমার সমমনা না হলে কারো সাথে দীর্ঘদিন টেকা মুশকিল)
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
facebook
--স্বপ্নাদিষ্ট
=============================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।
আপনার লেখার ধরন, বর্ণনাভঙ্গী, পোস্টের ফরম্যাট চমৎকার লেগেছে। অসাধারণ এই সিরিজটা চলতে থাকুক আপন গতিতে। পাঠক হিসেবে "মেয়েরা"/"ছেলেরা" স্টিরিওটাইপড মনে হয় নাই। আপনার বক্তব্য সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এই পর্ব আগেরগুলোর থেকে অনেক গাঢ় অনুভূতিতে ঋদ্ধ।
শুভেচ্ছা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে। (সব টিভি চ্যানেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা এই এক্সপ্রেশনের জন্য!)
ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।
দিহান আপু, অনেক ভালো লাগছে আপনার সিরিজ টা। আমিও এমন অভিজ্ঞতার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক কি ফলাফল আসে। আপনার লেখা পড়ে আকাঙ্খাটা বেড়ে গেছে
একদম ঠিক বলেছ আপু সূর্য গ্রহন এর ব্যাপারটা আমি ও মাথা থেকে ঝাড়তে পারছি না। কচু আর কাঁচা কলা খেতে একদম ভাল লাগে না। তারপর ও খাচ্ছি।
লেখাটা চালিয়ে যাও আপু। খুব ভাল লাগছে।
বর্ষার গান, আমিও প্রার্থনা করছি আপনার জন্য। জয়ন্তী, মা হওয়া কি মুখের কথা?
ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।
গানে শুনতে পাচ্ছে "ও উট পাখির লেজ..."! অনেকক্ষণ হাসলাম এই লাইনটা পড়ে। যতই পড়ছি ভালো লাগাটা বেড়েই চলেছে।
পেটের মধ্যে বেবী কথা শুনতে পায় ব্যাপারটা চিন্তা করে কেমন যেন অন্য রকম একটা ফিলিংস হলো। কি মায়া লাগে তাই না? কবে যে আমার হবে ।
-মেঘা
নতুন মন্তব্য করুন