সপ্তাহ খানেক আগে গুগল বাজে কে যেন আমাকে একটা ভিডিও লিঙ্ক পোস্ট করল। ভিডিও টা আমি চালু করে দেখি নাই, ফেইসবুক, ইঊ টিউব লিঙ্ক আমার অফিসে বন্ধ বলে আমার আগ্রহ ও ছিল না। তবে স্পষ্ট মনে আছে ভিডিওটার মেইন পেজে যে ছবি দেখা যাচ্ছিলো তা হচ্ছে, রাস্তার পাশে পার্ক করা একটা গাডীর উপর দিয়ে একটা সামরিক যান ‘ট্যাংক’ চালিয়ে দেয়া হয়েছে। চালক আবার সূটেড কোট পরা, দেখে সাধারন মানুষই মনে হয়।
ছবিটা দেখে আমি ভেবেছিলাম, দুনিয়া পাগলের মেলা! হয়ত এক পাগল এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে মাত্র!
কয়েকদিন আগে অনলাইন প্রত্রিকা বিডি নিউজ পড়তে গিয়ে “গাড়ি ভাঙতে ট্যাংক!” শিরোনামের নিউজ এবং সেই ছবিটা দেখে আতকে উঠলাম। একি, এ যে যেনতেন ব্যক্তি নয়। তিনি আর্তুরাস জুয়োকাস, লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের মেয়র। মেয়র সাইকেল চালাতেই ভালবাসেন। কিন্তু তিনি সাইকেলের জন্য বরাদ্দ লেনটিতে অবৈধভাবে গাড়ি রাখা দেখে ক্ষেপে গিয়েছিলেন। এরপর আস্ত একটি ট্যাংক চালিয়ে এনে সে গাড়িটি গুড়িয়ে দিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘পরবর্তী সময়ে যেনো গাড়ি বৈধভাবে পার্কিং করা হয়’।
গাড়ি ভেঙ্গে ফেলে ভাঙা গাড়ির অংশগুলোও নিজ হাতে সরিয়ে জনাব মেয়র আর্তুরাস জুয়োকাস মিডিয়াকে বলেছেন, ‘আমি সবার কাছে একটি কথা পৌঁছে দিতে চাই আর তা হচ্ছে বড়ো বড়ো দামী গাড়ি যেখানে সেখানে পার্ক করে পথচারীদের বা সাইকেল আরোহীদের অসুবিধা করা যাবে না। তাদের অধিকারকে অবহেলা করা যাবে না।’
ব্যস, এই হচ্ছে এই ভিডিওর সানে নরজুল।
এখন কথা হচ্ছে আমাদের মেয়র সাহেবদের নিয়ে। তারা কি করেন? না, মেয়রের কথা বাদ দেন! বিশাল শহরের পিতা তারা, জনগণের সুবিধা আসুবিধা ভাবনার সময় কই! সবই আমাদের কোপাল। গরীব দেশের বিশাল মেগা সিটির মেয়র হয়ে গেলে কি আর পা মাটিতে ফেলতে হয়! না ফেলতে হয় না! গরীবের হাঁটার জায়গা থাকুক আর নাই থাকুক, মশার কামড় খাক - তাতে কি!
কিন্তু জনাব মেয়র আর্তুরাস জুয়োকাস এর চিন্তা ভাবনা দেখে কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। আমাদের মেয়ররা দুর্বল, ট্যাংক দিয়ে গাড়ী ভাঙ্গা দূরে থাক হাতুড়ী নিয়েও রাস্তায় নামতে পারবে না! কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো দুর্বল নন! তিনি ইচ্ছা করলেই যেখানে সেখানে ট্যাংক চালাতে পারেন। তা না হলেও এই সব নগর পিতাদের ডেকে নিয়ে দুইটা ধমক তো দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। কি করছেন আপনারা? যাদের ভোটে আপনারা আমরা নির্বাচিত হয়েছি তাদের প্রতি কি আপনাদের আমাদের কর্তব্য নেই!
আমি মনে করি সরকারের শীর্ষে থাকা ১০ জন ভাল হলেই একটা দেশ ভাল হয়ে যেতে বাধ্য। সবচেয়ে ভাল হতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। একটা ছোট উদাহরন দিচ্ছি, ধরুন ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেনকে (তিনি কাজ ফাঁকি দিতে চাইবেন কি) আমাদের শেখ হাসিনা প্রতি সপ্তাহে ডেকে নানা ধরনের কাজ করতে বলেন, তিনি কোথায় কোথায় পরিবর্তন চান তার একটা লিষ্ট যদি সাদেক হোসেনকে ধরিয়ে দেন এবং তার উপর নজর রাখেন। তবে সাদেক সাহেব না করে পারবেন! ঢাকার রুপ পাল্টাতে সময় লাগবে কয় মাস!
অথচ আমার মনে হয় না সাদেক হোসেনকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একবার ডেকেছেন! হয়ত আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভাবেন এতে তার মান ইজ্জত যাবে! কিন্তু আসলে কি তাই! হয়ত আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভাবেন, সাদেক হোসেনকে নানা সুবিধা দিয়ে কাজ করালে তার কৃতিত্ব যাবে খালেদার বিএনপির ঘরে! আসলে মানষিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নাই আমাদের রাজনীতিবদদের মনে! মানুষ এখন বোকা নয়। কে উন্নতি করল, তা সহজেই বুঝে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী দিনে ১০-১০টা (সচিব এবং প্রজেক্ট প্রধানকে) কাজের ফোন করলেও দেশের চোহারা বদলে যাবে বলে আমি মনে করি। থাই রাজা যে শহর/গ্রামে যেখানে যেতেন তার ছবি তুলে আনতেন এবং এই মর্মে সংশিলষ্ট সবাইকে সর্তক করে আসতেন যে, তিনি আগামী এক বছর পর আবার আসবেন এবং ছবির সাথে মিলিয়ে দেখবেন! অনেক জায়গায় গিয়ে ছবি মিলাতেন, উন্নতি না দেখলে প্রজেক্ট প্রধানের বদলী সহ চাকুরী চুত্যি হত! উন্নতি না হয়ে যাবে কোথায়! (আমি নিজে সাক্ষী আছি)।
বাংলাদেশ এখনো কোন ভাল পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী পায় নাই। আফসোস। লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের মেয়র আর্তুরাস জুয়োকাস মত চিন্তা ভাবনার নেতাও যদি বাংলাদেশ পেত তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশ গরীবি হাল বহু আগেই কেটে উঠতে পারত।
(দোষ নিজের কাঁধে নিতে হবে - অন্য কি করল, কি করে গেল তা ভাবনার বিষয় নয়। আমি যে জায়গায় যতক্ষন থাকব যেটা আমার, সেটা দেখভাল করার দায়িত্বও আমার! কথা ও কাজ হবে সেই মতই।)
সাহাদাত উদরাজী
মন্তব্য
কিন্তু আমাদের মেয়রের হাতে ট্যাঙ্ক তুলে দিলে বিপদের বারোটা বেজে যাবে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ওটা বোধহয় ট্যাংক নয়, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার
উল্টোপাল্টা জায়গায় গাড়ি পার্ক করার জন্য শাস্তিটা অবশ্য একটু বেশি হয়ে গেছে।
আমার জানতে ইচ্ছা করছে এই গাড়ী ভাঙ্গার জন্য মেয়র/পৌরসভাকে কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
নতুন মন্তব্য করুন