সুপার কাপঃ আবারো সুপার ফাইনাল
বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢেলে রাতারাতি গজিয়ে ওঠা দলগুলোর প্রতি আমার খানিকটা এলার্জি আছে। যে কারণে চেলসি বা রিয়েলের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই, যে কারণে ইদানীং শেখা জামাল দলটার উপর খানিকটা আক্রোশই তৈরি হয়েছে বলা চলে। মোফাজ্জল মায়া ও মঞ্জুর কাদের সাহেবরা যখন অর্থের জোরে আফ্রো-বঙ্গ তন্ন তন্ন করে দু রাজ্যের সমস্ত ভালো খেলোয়াড় জড়ো করেন এক সামিয়ানার নিচে, এদিকে দেশীয় খেলোয়াড়দের গোটা মৌসুম সাইডবেঞ্চে বসিয়ে রেখে ফুটবলকে পঙ্গু করার পাকা বন্দোবস্ত সম্পন্ন করেন, তখন আপনা থেকেই দলটির প্রতি এক ধরণের বৈরীভাব তৈরি হয়। সুপার কাপের সেমিতে তাই যখন দলটি মোহামেডানের কাছে নির্মমভাবে পরাজিত হয়, আমি তখন মোহামেডানের ঘোর বিরোধী হয়েও উল্লাস করি। উল্লাসটা দ্বিগুণ হয় যখন ফাইনালটা আবাহনী-মোহামেডানের ফাইনালে রূপ নেয়।
আবাহনী-২ (৩) : মোহামেডান-২ (২)
পেনাল্টি শুটআউটের সময় মনে হচ্ছিল না, এটি বাংলাদেশ লীগের কোন খেলা। মনে হচ্ছিল, আফ্রিকান জুলু কাপের কোন ম্যাচে দয়া করে দু-চারটে বাংলাদেশীকে খেলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে এই সময়টায় আবাহনীর গোলকীপার সোহেলের নৈপুণ্য তাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে নিঃসন্দেহে। প্রতিপক্ষ শুটারের মাইন্ডসেট বোঝার এক অদ্ভূত ক্ষমতা আছে এই তরু্নের। ৫টি শটের ৫টিতেই সঠিক দিকে ঝাঁপ দেয়া তাই নেহাত কাকতালীয় কোন ঘটনা মানতে আমি নারাজ। মাত্র কিছুদিন আগেই ফার্নান্দো মুসলেরার কিপিং দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, এই ব্যাটাকে ম্যানইউ কিনে ন্যায় না কেনো? গতকাল মুগ্ধ হলাম দিশি পোলা সোহেলের গোলকিপিং দেখে। সোহেলকে তাই 'আমাদের মুসলেরা' বললে হয়তো খুব বেশি বলা হয় না।
বাংলাদেশ-২ : লেবানন-০
বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে হতাশা করার মানুষের অভাব নেই। প্রথম লেগে বাংলাদেশ যখন ৪-০ গোলে হারলো, একদল স্বঘোষিত ভবিষ্যদ্বক্তার আবির্ভাব হল, যারা কিনা পূর্বেই ধারণা করেছিলেন যে এমন একটা কিছু ঘটবে। তারপর দেশের মাটিতে এমিলি-জাহিদরা যখন ২-০ গোলের জয় ছিনিয়ে নিলো, তখন এই ভবিষ্যদ্বোদ্ধাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমিলি-জাহিদদের সাফল্যে একটা কষা অভিনন্দন পোস্টও লেখা শুরু করে দিয়েছিলাম। শিরোনামটা হতে পারতো এরক, "এমিলি-জাহিদদের বিলম্ব অভিনন্দন।" আবেগের প্রকাশে আমি যথেষ্ট দুর্বল। বিধায় একই কথা ঘুরেফিরে বারবার চলে আসে। লেখাটা পোস্ট করে তাই আর পাঠকের বিরক্তির কারণ হতে চাইনি। এদিকে, শিরোনামটা দেখতে শুনতে বেশ হলেও ফ্যাক্টের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। ফ্যাক্ট হচ্ছে, জাহিদকে ঐদিন ৩০ মিনিটের মাথায়ই মাঠ থেকে তুলে নেয়া হয়। এমিলি আর মিঠুনের দু' গোলেই বাংলাদেশ তুলে নেয় মধ্যপ্রাচ্যের কোন দলের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রথম বিজয়। চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাতের ভাষায় বললে বলতে হয়, দুটো গোলই ছিল "যাকে বলে দেখার মত"। আগ্রহী দর্শকদের জন্য ম্যাচের ইউটিউব ভিডিওর লিঙ্ক জুড়ে দিলামঃ
[url=ইউটিউব লিঙ্ক]http://www.youtube.com/watch?v=1sD8hA1S8Do[/url]
এমিলি-জাহিদদের প্রতি
সেদিন খেলার পাতায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ড্র'র খবর দেখে একটা ব্যথা চাগিয়ে উঠলো। প্রথম লেগে আরেকটু ভালো খেললেই আজ বাংলাদেশ এই ড্র্যয়ের অংশ হতে পারতো। থাক সে কথা। সময় তো আর ফুরিয়ে যায়নি। তবে আমাদের দর্শকদের জন্য অপেক্ষার পরিধিটা আরো চার বছরের জন্য বেড়ে গেল। অপেক্ষা করতে আমাদের আপত্তি নেই। আপত্তি নেই প্রার্থনা আর শুভকামনা করতেও। আমাদের মুখে আজ যে ক্ষীণ হাসির রেখা সে আপনাদেরই সাফল্যে, বুকের ভেতর যে অপ-স্বল্প কষ্টের গল্পগুলো জমা হয়ে রয়েছে সেও আপনাদেরই বিগত ব্যর্থতায়। প্রার্থনা করি, আপনাদের খেলা দেখে কেউ যেন আর দম্ভভরে বলতে না পারে, "বাংলাদেশের ফুটবলারদের মাথায় কিছু নেই, পায়েও কিছু নেই।"
আশফাক আহমেদ
মন্তব্য
আপনার পোস্ট গুলোর একটা তালিকা contact এট সচল বরাবর পাঠাবেন প্লিজ?
দিচ্ছি, ভাইয়া
আশফাক, ভালো বিষয়ে লিখছো। দেশীয় ফুটবল নিয়েও আমাদের লিখতে হবে, তা যত দৈন দশাই হোক। খেলার মানের দিক থেকে মোহামেডান আবাহনীতো মনে হয় কাছাকাছিই। মোহামেডানের ঘোর বিরোধী কেন রে ভাই?
অটঃ আগের পোস্টের লিংকগুলো সচলে মেইল করে দাও দ্রুত।
_____________________
Give Her Freedom!
ছোটবেলা থেকে আবাহনী ভালু পাই। মোহামেডান বিরোধী মনে হয় সেই কারণেই
ও হা হা.............বুঝলাম এইবার..................
_____________________
Give Her Freedom!
আপনেও খেলা দেখছেন? মাঠে আপনারে পাইলে......
যাই হোক একজন বাংলাদেশী ফুটবল প্রেমিক পেয়ে খুশি হলাম। মোহামেডান এর কট্টর সমর্থক হলেও কাল আবহানীর খেলা দেখে সন্তুষ্ট ছিলাম। যোগ্য দল হিসাবেই জিতেছে এইবার। যদিও হারলে জব্বর মজা হইত । ৪ বার হইত টানা ফাইনাল এ হারা। তয় গতকাল খেলা দেইখা যে কারনে মজা পাইছি তা হইলো পিয়র দেশি ফুটবল। কাদার মইধ্যে জরাজরি সোহেল ভাইজান না থাকলে আপনারা গেছিলেন। আর বিদেশি দের কথা ঠিক ই বলছেন। তয় ওরা না থাকলে খেলা বেশী মজা হয় না। কারন দেশি কাউরেত পাই না। খালি খেপ খেলতে উস্তাদ আসল খেলায় নাইকা
কথা সত্যি, ভাই। কী করা?
সব জায়গায় ভিনদেশী ফুটবল আর তাদের জয়গানের ছড়াছড়ি। তুই দেশীয় ফুটবল নিয়ে কিবোর্ড ধরলি বলে তোকে সাধুবাদ। আসলে আমাদের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে হলে খেলোয়াড়রে মাঠে যেমন খেলবে, তেমনি বিভিন্ন লেখালেখির মাধ্যমে আমাদেরও একটা 'ভালো লাগা' তৈরি করে নিতে হবে।
আপনার লেখা পড়ে ফুটবল নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করছে।
facebook
লিখে ফেলেন, ভাই। দেরী ক্যানো?
পূর্বে দেশি ফুটবল দেখে ছে ছে ছো ছো করতাম। কিন্তু ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরে নিজের ডিপার্ট্মেন্টের ছেলেদের খেলা দেখে আসলেই এখন নিজেদের ফুটবলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য।
আহারে, আবাহনী মোহামেডান ফাইনালের সেই আশির দশকের উত্তেজনার কথা মনে করায়ে দিলেন। কী সব দিন ছিলো... মহল্লায় মহল্লায় প্রতিযোগিতা, কে কতো বড় পতাকা বানাইতে পারে, এখন যেমন ব্রাজিল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা করে, আমরা করতাম আবাহনী মোহামেডান নিয়া।
কই গেলো সেইসব দিন...
আবার ফিরে আসুক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঠিকই কইসেন বস...আহারে সেই দিনগুলান; আগের রাইতে ঘুমই আইতোনা...আর হাইরা গেলে রেফারিরে যেমনে গাইল পাড়তাম............
ভালো লেখা
... রিয়াল মাদ্রিদ তো 'রাতারাতি' টাকার জোরে গজিয়ে ওঠা দল নয় !! চেলসির সাথে ম্যানসিটি এই তালিকায় আসতে পারে, কিন্তু মাদ্রিদের ঐতিহ্য তো দীর্ঘদিনের।
... আরো লেখা আসুক। আরেকটু গুছিয়ে এবং আকারে বড় পরিসরে আসলে খেলাধূলা সংক্রান্ত পোস্ট পড়তে ভালো লাগে।
সহমত...............রিয়ালের ঐতিহ্য বহুদিনের। এটি ইউরোপীয়ান প্রতিযোগিতায় সফলতম ক্লাব।
উৎসাহ পেয়ে ভাল্লাগলো। কিন্তু কবি এইখানে নীরব। খেলাধুলা বিষয়ে তোর মত জানাশোনা, স্ম্তিশক্তি বা বড় পরিসরে লেখার মত ধৈর্য---কোনটাই নাই রে। তাই মাঝে মাঝে ব্লগর ব্লগর করি
দেশের ফুটবল নিয়ে আপনার চিন্তা আমাকে সত্যি আপ্লুত করেছে। তবে কিছু জিনিসের সাথে সঙ্গত কারনেই দ্বিমত প্রকাশ করছি।
টাকা খরচ করলেই একটা জিনিস রাতারাতি যেমন ভাল হয়ে যায় না আবার টাকা খরচ করতে না পারাটা বা টাকা না থাকাটাও ভাল কিছু নয়। এটা আপনি বাংলাদেশের চার বছর আগের ঘরোয়া ফুটবলের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। তখন ফুটবল ভাল না করার একটা খুব যুক্তি ছিল "আমাদের টাকা নাই।" টাকা খরচ না করলে ভাল প্লেয়ার আসবে কেন? হ্যাঁ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একটি ক্লাব রাতারাতি টাকা ঢেলে অন্য ক্লাবকে হীনবল করতে চায়। দেশের সেরা খেলোয়াড়দের বসিয়ে রেখে খেলানো হয় আমদানি করা ফুটবলার।
কিন্তু এটার সাথে যখন আপনি ইউরোপের ফুটবলের তুলনা করেন তখন আমার দ্বিমতটা হয়।
রিয়েল মাদ্রিদ কখনো নব্য পয়সায় গজিয়ে ওঠা ক্লাব নয়। ওরা ৩১ বার লীগ জিতেছে, ৯ বার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছে এবং ১০০ বছরের বেশিদিন ধরে ফুটবল খেলছে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ প্রথম জিতেছিল এস্টন ভিলা। এখন যদি কেউ এস্টন ভিলা কিনে নেয় আর অনেক টাকা খরচ করে আবার একটা হইচই ফেলে দেয় তাহলে আপনি তাদের নিশ্চয়ই রাতারাতি গজিয়ে ওঠা দল বলবেন না।
আবার লিভারপুল লীগ জিতেছে সেই ১৯৮৯-১৯৯০ এ।তাহলে গত দশকে যারা ফুটবল দেখছে তাদের কাছে তাদের ১৮ বার লীগ জেতার রেকর্ডের কোনও মূল্য নেই।
ফুটবল খেলাটা কারা কিভাবে খেলবে সেটা ক্লাবগুলোই ঠিক করবে। কেউ আর্সেনাল এর মত টাকা খরচ না করে লীগ জিততে চাইবে। সেটাতে দোষের কিছু আছে বলে মনে হয় না।
টাকাপয়াসা খরচ করুক, গুড। আপত্তিটা এইখানে না। আপত্তিটা ওঠে তখনই যখন নিজের দেশের সেরা খেলোয়াড়দের কিনে সারা বছর সাইডবেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় হোক-এতে এক ঢিলে দুই পাখি মরে। অন্য ক্লাবগুলো তো পঙ্গু হয়ই, জাতিয় দলটাও পঙ্গুত্বের পথে এগোয় ধীরে ধীরে
ফুটবল নিয়ে কেউ লেখেনা, আগের দিনগুলো মনে পড়ে খুব। ৮০’র দশকে সকুলে পড়তাম, দলবেধে নিয়মিত খেলা দেখতে যেতাম ষ্টেডিয়ামে, মোহামেডান-আবাহনী খেলা মিস পড়তোনা। একবার বাবা টের পেয়ে টাকা দিলেননা, মনে আছে ২৩ টাকা নিয়ে হেটে হেটে ষ্টেডিয়াম গিয়েছিলাম, ২০ টাকা দিয়ে টিকেট, ১ টাকার ঘুগনি আর ২ টাকা দিয়ে ফেরার পথে টেম্পো! খেলায় মোহামেডান জিতেছিলো ৩-২ গোলে, শেষ গোলটা করেছিলেন বাবুল ভাই! পাড়ায় ফিরে দেখি গরু জবেহ হয়েছে, তুমুল পটকা ফাটছে আর তারাবাতি। কতদিন ঢাকা ষ্টেডিয়ামের উত্তর গ্যালারীতে ঢাকাইয়া হয়ে খেলা দেখিনা! বলিনা - “ঝাইড়া বহেন, ঝাইড়া বহেন, কুফা লাগছে”!!
আপনার অভিজ্ঞতা পড়ার আশায় রইলাম
নতুন মন্তব্য করুন