১.
'আপু, আপু, ওই জিনিসটা আমাকে কিনে দাও।'
'কোনটা? ওটা তো বার্বিডল। মেয়েদের খেলনা। ওটা দিয়ে তুই কি করবি?'
'না না না। আমাকে দিতেই হবে, দিতেই হবে। দাও দাও, এক্ষুণি দাও।'
এই হচ্ছি আমি। আমার অনেক রাগ। কেউ কিছু না শুনলে আমার অনেক রাগ হয়। আমার কেউ নাই। শুধু রানু আপা আছে। রানু আপারও কেউ নাই। খালি বাবা আছে। রানু আপার বাবাকে আমি পছন্দ করি না। কিন্তু রানু আপাকে পছন্দ করি। অনেক অনেক।
রানুপা দেখতে খারাপ। খুব খারাপ। তবু রানুপাকে আমি ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। অনেক অনেক।
আমি লেখক। আমি লিখি। সব লিখি। কবিতা লিখি, উপন্যাস লিখি। এখন গল্প লিখছি। গল্পের নাম 'ভালোবাসা ভালোবাসা'।
গল্পের নায়কের নাম অনিমেষ। হি হি। আমার মত নাম। নায়িকার নাম রুনু। রানুপার নামের সাথে কেমন মিলে যাচ্ছে। হি হি।
আমি লিখতে শুরু করলাম। ‘অনিমেষ রুনুকে ভালোবাসে। অনেক অনেক ভালোবাসে।‘
আচ্ছা, অনিমেষ কি রুনুকে আসলেই অনেক ভালোবাসে? আমি রানুপাকে যতটা ভালোবাসি, ততটা?
আমার খুব হিংসা হল। আমি 'অনেক' শব্দটা ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে কেটে দিলাম। অনিমেষ রুনুকে ভালোবাসে। শুধু ভালোবাসে। ব্যস।
আজ অনেকটুকু লিখে ফেলেছি। আর না। বাকিটা পরে লিখবো।
২.
আমি রানুপার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। রানুপার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি কিন্তু পুরাপুরি ঘুমাই না। রানুপা একটু উঠতে গেলেই আমি জেগে যাই। খপ করে রানুপার হাত ধরে ফেলি। 'তুমি যাবে না রানুপা। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।'
রানুপা হাসে। 'আচ্ছা পাগল তো। আমি যখন থাকবো না, বিয়ে হবে, শ্বশুরবাড়ি চলে যাবো, তখন তোকে কে ঘুম পাড়িয়ে দেবে?'
'ইহ।' আমি ঠোঁট উল্টাই। 'আমিই তো তোমাকে বিয়ে করবো।'
'আচ্ছা করিস'। রানুপা বাচ্চা মেয়েদের মত হাসে। আমার চুলে হাত বুলায়। ঘুমাবো না, ঘুমাবো না করেও আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
অনেক পরে আমার ঘুম ভাঙে। জেগে দেখি, রানুপা নেই। আমার খুব রাগ হয়। রানুপা চলে গেল কেন?
আমার আর ঘুম আসে না। আমি আমার গল্প লিখার খাতাটা টেনে বের করি। অনিমেষ আর রুনুর গল্পটা শেষ করতে হবে। আমি লিখতে শুরু করি, 'রুনুর বিয়ে হয়ে গেছে।'
কিন্তু এটা আমি কি লিখলাম? রুনুর কেন বিয়ে হয়ে যাবে? ও তো অনিমেষকে ভালোবাসে। ওর সাথে অনিমেষের বিয়ে হবে। ওদের খুব সুন্দর একটা বাচ্চা হবে। বার্বিডলের মত একটা বাচ্চা। রানুপা আমাকে যে ডলটা কিনে দিয়েছে, ঐরকম একটা বাচ্চা।
আমি লাইনটা আবার কেটে দিয়ে লিখতে শুরু করলাম। কিন্তু একী? প্রতিবার আমি শুধু একই লাইন লিখছি কেন?
আমি লিখে আবার কাটি। আবার লিখি। আবার কাটি। আবার......
৩.
গত দুদিন আমার অনেক জ্বর ছিল। আমাকে কেউ দেখতে আসেনি। আদর করেনি। রানুপাও আসেনি। না আসুক। কাউকে দরকার নেই আমার। কাউকে না।
আমি গল্পের খাতাটা নিয়ে বসি। আজকে গল্পটা শেষ করতেই হবে।
আমি লিখি, 'রুনুর বিয়ে হয়ে যায়। তাই অনিমেষের অনেক রাগ হয়। সে রুনুকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে।'
এটুকু লিখে আমার খুব মন খারাপ হলো। অনিমেষ কেন রুনুকে মারবে? ওতো রুনুকে ভালোবাসে। আমি লাইনটা কেটে দিয়ে আবার লিখলাম, 'অনিমেষ পিস্তল দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করে।'
আহ। গল্প শেষ। এখন আমি বাইরে ঘুরতে বেরুব। অনেক রাত এখন। তাতে কি? রাতই ভালো।
হাঁটতে হাঁটতে আমি কালেশ্বরী নদীর কাছে চলে এলাম। এখান থেকে রানুপার বাসা একদম কাছে। আমার মাথায় একটা মজার বুদ্ধি এল। আমি ঠিক করলাম, আমিও অনিমেষের মত আত্মহত্যা করব। কিন্তু আমার কাছে তো পিস্তল নাই। আমার কাছে আছে নেইলকাটার। রানুপা দিয়েছিল। ঐটা দিয়ে গলার রগগুলো ছিঁড়ে ফেলা যাবে না?
আমি রানুপার বাসার দিকে রওনা দিই। মরেই তো যাবো। তার আগে রানুপাকে শেষবারের মত একবার দেখে আসি, কেমন? অনেক রাত এখন। তাতে কি? রাতই ভালো।
রানুপা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলে। রানুপা আমাকে দেখে খুব অবাক হয়। আমি বলি, 'আপু, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।' রানুপা আমার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে, 'আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি সোনা'।
আমি রানুপার দিকে তাকিয়ে থাকি। তাকিয়েই থাকি। রানুপা অবাক হয়ে আমাকে দেখে। হঠাৎ আমার মনে হতে থাকে, এই আমি আমি না। এই আমি অন্য কেউ। এই আমিকে আমি চিনি না।
সিকান্দারের কথাঃ
ষাট বছরের বুড়ো নাইটগার্ড সিকান্দারের কাছে এটা ছিল একটা অসহনীয় দৃশ্য। নেইলকাটার দিয়ে এমন ভয়ংকর হত্যাকান্ড সে জীবনে দেখেনি।
মন্তব্য
দুঃখিত, নিজের নাম লিখতেই ভুলে গেসলাম।
------------
সাত্যকি
-----------
:)
মেরেই ফেললে শেষপর্যন্ত!!
আর বলোনা ভাই। গল্পটা লিখার পর কাল রাত থেকে নিজেকেই সাইকো মনে হচ্ছে।
অলি, তোমার প্রোফাইল পড়লাম। সুন্দর লিখেছো।
আগের লিখার লিঙ্কু দিতে কেমন জানি লইজ্জা করে।
আরে না না নিজের লেখা দিতে লজ্জা ক্যান করবে!!! অতিথি লেখকদের যেহেতু আলাদা একাউন্ট নাই, তাই পাঠকের পূর্বের পোস্ট পড়তে ইচ্ছে করলে কী করবে বলো তো? লেখকই যদি দিয়ে দেয় তবে ভালো হয় না?
_____________________
Give Her Freedom!
ভয়াবহ গল্প দেখি!!!! ভালোবাসার মানুষকে নায়ক-লেখক সবাই মেরে ফেলছে!!!!
অটঃ নিয়মিত লেখা দাও সৌমিত্র্যদা, আর পোস্টের শেষে পূর্বের সবগুলো লেখার লিংকুও দাও, তাহলে আমরা পাঠকরা লেখকের পূর্ববর্তী লেখাগুলোও দেখতে পারব।
_____________________
Give Her Freedom!
কেন যেন মনে হল, লেখায় অন্য কারও লেখার স্টাইলের ছাপ। জানিনা হয়ত ভুলও হতে পারে!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
জানিনা বললে হবেনা ত্রিমাত্রিকদা। ভালো করে ভেবে বের করেন কার সাথে লিখা মিলে যায়। তারপর ক্যাক করে চোর ধরি ফেলবেন। পালাবি কোথায়? :)
(বিনীত হাসির ইমো)
বেশ বেশ
সুন্দর
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
মোটেও সুন্দর না ভাইয়া। এটা একটা অসুস্থ গল্প। গল্পটা লিখে আমি খুব কষ্টে আছি।
লেখার স্টাইলটা ভাল লেগেছে। সিকান্দার বুড়োর ভয় পাওয়া দেখে বুঝে নিলাম কত 'ভয়ংকর' ভাবে হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছেন!!! শিউরে উঠেছি...
ধন্যবাদ দিদি। কিন্তু আমি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছি, এমন অপবাদ দিতে পারলেন?
তাই বলে মেরেই ফেললা?
যাই হোক, অনেকদিন পর তোমার গল্প পড়ে ভাল্লাগলো। খুব শিগগিরই আরো চাই
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
গল্পটা লিখে আমি খুবই কষ্টে আছি রে দোস। খুবই অস্থির লাগছে।
শেষের দিকটা বেশ ভালো লাগলো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
তাই বুঝি শিমুলাপু?
লেখার স্টাইল চমৎকার।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ রতনদা।
তাই শিমুলাপু?
দারুন ঢং, শেষটায় এসে ধাক্কা! ধাক্কা মেরে নিজেই কষ্টে আছেন দেখছি, নিজের লেখায় এতটা দায় খুউউব ভালো লাগলো! লেখা চলুক,
জয় গোস্বামীর 'সেইসব শেয়ালেরা' উপন্যাসটার কথা মনে পড়ল কেন যেন.....
গল্প ভালো লেগেছে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
স্টাইলটা ভালো লাগছে। চারদিকেই খুন খারাবি, বিনা কারনে লোকজনকে মেরে ফেলা যাচ্ছে... গল্পে সেগুলোর বিস্তার... এইজন্য ভালো লাগে নাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমারো ভালো লাগে নাই নজরুলভাই। যেদিন আমার অনেক লিখা হবে, সেদিন এই গল্পটা আমি মুছে ফেলবো।
শিফট+ডিলিট।
দারুণ লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
@এহসান ভাইঃ কবিতা না বুঝলেও আপনার কবিতা আমার খুব ভাল্লাগে।
@শিমুলাপুঃ 'সেইসব শেয়ালেরা' উপন্যাসেও বুঝি এইরকম খুনখারাপি? খুব খ্রাপ কথা তাইলে।
@তাসনীম ভাইঃ এই গল্প ভাল্লাগছে? বলেংকি? আপনি তো সুবিধার লোক না।
ধন্যবাদ বরকন্দাজ ভাই।
ভালো। চলুক।
লেখার স্টাইল পছন্দ হইসে। (গুড়)
একবার টিভিতে মমতাজউদ্দিন আহমেদের একটা স্বাক্ষাৎকার দেখেছিলাম। সেখানে তিনি তার নাটকের এক চরিত্রের ফাঁসি হবে, সেটা বলতে বলতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন! এই লেখার পরিণতির কারণে আপনিও কষ্ট পাচ্ছেন জেনে(মন্তব্যে জানলাম) সেই স্মৃতিটা মনে এলো। নিজের সৃষ্টিকে ধ্বংসের কষ্ট বুঝি এভাবেই বাজে কারো কারো বুকে।
কিন্তু, আমি কঠিন মনের পাঠক(কিছু ক্ষেত্রে), তাই যে গল্প লেখে আপনি অস্বস্তিতে আছেন, আমি নির্দ্ধিধায় সেটাকে চমৎকার বলতে পারছি! সত্যিই চমৎকার গল্পটা, লেখনী আরো লেখুন ভাইয়া
অনেক ধন্যবাদ আয়নাদি। অনেক বড় কমপ্লিমেন্ট দিলেন !
লেখার ধাঁচটা দারুণ!
তবে অনিমেষ বেচারিকে জানে না মারলেই বোধ হয় বেশি খুশি হতাম.........
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন