[প্রথমেই বলে নেই এটা একটা ফাউল লেখা। ফাজলামী করে লেখা। কেউ এটাতে যুক্তি খুজতে যাবেন না।]
কাচ ভাঙার ঝন ঝন শব্দ আর চাকার মাটি কামড়ে ধরার আপ্রাণ চেষ্টার চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেলো রাশেদের। সবাই চেচামেচি করছে। বাসের হেল্পার চিৎকার করে বলল, “চু*র পুত”।
কার মা এরকম সুকর্ম করেছে সহজেই বুঝা যাচ্ছে। শাঁ শাঁ করে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে ‘সমগ্র বাংলাদেশ ১০টন’। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো ঘটনা বুঝতে পারল রাশেদ। রাস্তার এই জায়গাটার পাশে অনেক গাছপালা। সরকারের ‘গাছ লাগান, আক্সিজেন খান’ শ্লোগানের ফসল। পুরো অন্ধকার হয়ে আছে। তাদের বাসটা চলছে মাশাল্লাহ কমপক্ষে ১০০তে। উল্টোদিক থেকে আসছিল সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী। ‘আমার বাপের রাস্তার মাঝখান দিয়ে এত জোড়ে গাড়ি চালায় কেরে? সাইড দিমুনা তরে’- মনে হয় এই বলে ট্রাক ড্রাইভার স্পিড বাড়িয়ে দেয়। ফলাফল ঠুস। অবশ্য খুব বেশি কিছু হয়নি। ড্রাইভারের পাশের গ্লাস ভেঙ্গেছে। আর সামনের গ্লাসে ফাটল ধরেছে।
রাশেদ একটু অবাক হল। যাত্রীরা আনেক চেচামেচি করছে। একটা ছোট বাচ্চা কাঁদছে। গলায় আল্লার কুদরতে জোড় কম না। হেল্পারও চিৎকার করছে। কিন্তু ড্রাইভার গাড়ি থামায়নি। গাড়ি চলছেই। এবং আগের মতই বাপের রাস্তায় ১০০ কিমি প্রতি ঘন্টায়।
রাশেদ হাসান। ডাক্তার। পসার যথেষ্ট। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে যাচ্ছে। রাস্তায় এ কান্ড।
রাত আড়াইটা। চেচামেচি আস্তে আস্তে থেমে এলো। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে এই অবস্থা দেখায় সবার এড্রেনালিন হরমোনের secretion বেড়ে গিয়েছিল। এখন আবার কমে যাচ্ছে। সাথে আবার ঘুমও পাচ্ছে। অবশ্য বাঙ্গালীরা একটা বিষয় নিয়ে ঝুব বেশিক্ষণ চিল্লাচিল্লি করতে পারে না। রাশেদের অবশ্য ঘুম আসছেনা। একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে তার খুব সহজে ঘুম আসে না।
আকাশে বিশাল চাঁদ উঠেছে। আষাঢ়ী পূর্ণিমা। এ পূর্ণিমাতেই সিদ্ধার্থ গৃহত্যাগী হয়েছিলেন। রাশেদ গৌতম বুদ্ধ না, সুকান্তও না। তাই পুর্ণিমা দেখলে ‘ঝলসানো রুটি’র জায়গায় ‘শুণ্য রূপার থালা’ ছাড়া তার আর কিছুই মনে হয় না।
পূর্ণিমা হলে কি হবে? আকাশ মেঘে ভর্তি। আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। ছোটবেলায় ‘প্রিয় ঋতু’ রচনা লিখার সময় রাশেদ সবসময় লিখত, “আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। এইসময় আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে। ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ে। নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যায় না...”। যদিও সে কোনদিন নৌকা চড়েনি। এখন অবশ্য বর্ষার দেখা আষাঢ়ে পাওয়া যায় না। Global Warming! Global Warming! এইবছর কিভাবে কিভাবে আষাঢ়েই বর্ষা চলে এসেছে। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি প্রায় সারাদিনই হচ্ছে।
শোঁ শোঁ করে জানালার ফাঁক দিয়ে বাতাস আসছে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে রাশেদের। সাথে আরামও লাগছে। আলসেমিও লাগছে।
“এই যে! জানালাটা বন্ধ করছেননা কেন?” বিরক্ত কন্ঠের বিরক্ত প্রশ্ন।
রাশেদ ঘুরে তাকালো। মুশকো জোয়ান একটা লোক। পিছনে সিট। তার দিকে বিরক্ত ভঙ্গিতে কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে। ততোধিক বিরক্ত হয়ে রাশেদ জানালা লাগিয়ে দিল। কানে আসছে মুশকোর গজগজ-“বা*র একটা বাসে উঠছি। এই হয় এক্সিডেন্ট। এই আরেকজন জানালা খুইল্লা রাখে। আর কোনদিন যদি এই বাসে উঠি......”।
রাশেদের পাশের সিটে বসেছেন এক বৃদ্ধ। মুখে সাদা দাড়ি। মাথায় কাঁচাপাকা চুল। একটু পরপর খুকখুক করে কাশছেন। যক্ষা নাকি। কে জানে? রাশেদ ভাবল নামার আগে বৃদ্ধকে PCR টেস্ট করানোর জন্য বলবে।
রাত ৩টা। চট্টগ্রাম পৌছাতে লাগবে আরো ২ ঘন্টা। রাশেদের চোখে আস্তে আস্তে ঘুম নেমে এলো।
বাস থেমেছে। রাশেদ তার বৃদ্ধ সহযাত্রীর দিকে তাকালো।
-চাচা, আমার মনে হয় আপনার TBর সমস্যা আছে। কোন সরকারী হাসপাতালে গিয়ে PCR টেস্টটা করে ফেলবেন।
উত্তরে বৃদ্ধ তার দিকে জ্বলজ্বল চোখে তাকালো। এত জ্বলজ্বলে চোখ রাশেদ আগে কখনো দেখেনি। বৃদ্ধ কাশতে শুরু করলেন। আশ্চর্য! তার গলা দিয়ে কাশির শব্দ বের হচ্ছে না। কাঁচভাঙ্গার ঝন ঝন শব্দ বের হচ্ছে।
সামনের সিটে প্রচন্ড জোড়ে মাথা ঠুকে যাওয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো রাশেদের। বুঝতে পারছে ঝন ঝন শব্দ বৃদ্ধের গলা দিয়ে নয়, বরং বাসের সামনের গ্লাস থেকে এসেছে। বাস এক্সিডেন্ট করেছে।
রাত ৩.৩০। সুকান্তের রুটি মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়েছে। জায়গাটা আগের চেয়েও আন্ধকার। রাস্তা এ জায়গায় একটা বড় টার্নিং নিয়েছে। বাস টার্ন না করে সোজা গিয়ে একটা বড় গাছের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। ফলাফল প্রথম সিটের যাত্রী মুখ থুবড়ে পড়েছেন সামনে। খুব বেশি কিছু হয়নি। একটু কেটে ছড়ে গেছে। হেল্পারও ব্যথা পেয়েছে। কপাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে। বাচ্চাটা আবার কাঁদতে শুরু করেছে।
“ওস্তাদ! ওস্তাদ!”
ওস্তাদের মুখে কথা নেই। ওস্তাদী কারবার করে চুপ হয়ে গেছেন। কার কি হয়েছে দেখার জন্য রাশেদ সামনে এগিয়ে গেলো। অনেক যাত্রী সামনে চলে এসেছে। সবার চিৎকারে কান পাতা দায়।
রাশেদ একজনকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলল, দেখি।
-আরে মিয়া, আপনি কে?
-আমি একজন ডাক্তার।
ডাক্তার শুনে সবাই তাকে জায়গা ছেড়ে দিল। রাশেদ ড্রাইভারের দিকে তাকালো। শরীরে কোন কাটাছেড়ার চিহ্ন নেই। চোখ খোলা। মুখটা সামান্য হা হয়ে আছে। রাশেদ তার পালস দেখল। তারপর ক্যারোটিড আর্টারিতে আঙ্গুল রাখল। তাড়াহুড়া করে আরো কি কি চেক করল। তারপর পাংশু মুখে ঘুরে দাঁড়ালো।
-কি? ওস্তাদ কি মারা গেছে? হেল্পারের প্রশ্ন।
-কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে।
এ হাসনাত
মন্তব্য
ড্রাইভার ১ ঘন্টা আগে মারা গেলে - এই এক ঘন্টা ধরে বাস চালালো কে ? ভূত ?
লেখক হিসেবে লেখার শুরুতেই পাঠকের হাত-পা বেঁধে দেয়াটা আমার পছন্দ না। পাঠকের স্বাধীনতা আছে, চাইলেই যুক্তি খুঁজতে পারেন, লেখকের স্বাধীনতা আছে - চাইলেই যুক্তি নাও দিতে পারেন। ব্যাস, তাই না?
লেখাটা পড়ে ফাউল বা ফাজলামি করে লেখাও মনে হলো না। ভালোই লাগলো।
সুযোগ থাকলে এখনি হাত-পা খুলে দিতাম...পারছিনা বলে দুঃখিত
গল্পটা আসলেই ফাযলামী করে লিখা
এ হাসনাত
গল্পটা বেশ ভালো হয়েছে। দ্বিধা ছাড়াই লিখুন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ
এ হাসনাত
টেস্ট
টেস্ট
মুর্শেদ ভাই, আপনার কথা বুঝলাম না
এ হাসনাত
ঢাকায় যে চার বছর ছিলাম প্রতি মাসেই এইরকম জান হাতে করে chittagong যেতাম। অনেকবারই মনে হয়েছে ড্রাইভার মারা গেছে আর ভুত বাস চালাচ্ছে।একবার মনে আছে সাড়ে তিন ঘন্টায় ঢাকায় নেমেছিলাম ।
আমি একবার ৩ ঘন্টায় সিলেট থেকে ঢাকা পৌঁছেছিলাম। বুঝতেই পারছেন এ শুধু হানিফের ড্রাইভারদের পক্ষে সম্ভব। তারপর তওবা করেছি, আর হানিফের বাসে উঠব না।
আর যেনো জ্বীনের আসর ওয়ালা বাসে উঠতে না হয় এ জন্য শুভ কামনা রইল।
এ হাসনাত
বেশ
এটা কিন্তু সত্য ঘটনা!
কস কিরে মমিন??কা কাহিনী একটু ব্যাখ্যা করেন।
এ হাসনাত
সত্যি হলেও হতে পারে।যখন চার ঘন্টায় চিটাং পৌছি ভাবি ড্রাইভারের উপরে সিওর জ্বীনের আসর ছিলো............
আর যেনো জ্বীনের আসর ওয়ালা বাসে উঠতে না হয় এ জন্য শুভ কামনা রইল।
এ হাসনাত
আমার কাছে তো বেশ ভালো লাগলো। এটা পড়ে আমার নিজেরই একটা দুইটা আজগুবী ধরনের গল্প লিখতে ইচ্ছা করছে!
অপেক্ষায় রইলাম।
এ হাসনাত
দারুণ তো!
তবে শুরুর সতর্কবার্তাটা না দিলেও চলত বোধ হয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
পারলে সতর্কবার্তাটা তুলে দিতাম...পারছি না বলে দুঃখিত।
এ হাসনাত
একটু আজগুবিই
একটু না পুরাই
এ হাসনাত
খারাপ লাগেনাই!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
তারমানে ভালো লেগেছে এটাও বলা যাবে না
এ হাসনাত
দারুণ হইছে!
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন