সমস্ত কাজ মিটিয়ে যখন ফিরলাম তখন বৃষ্টি থেমে গেছে। তবে মেঘ করে আছে খানিকটা। স্টেশন ইঞ্জিনীয়ার লোকটি ভালো মানুষ। আমাকে যা যা দরকার সব ভাবেই সাহায্য করেছেন। জানা গেলো গোমতীর জলস্তর অনেকটাই নেমে গেছে। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেছে। বলতে গেলে তিনটি টারবাইন এর মধ্যে একটি এখন চালু আছে। বাকি দুটি প্রায়ই বন্ধ থাকে। যেহেতু সম্পূর্ণ প্রোজেক্টের রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্বে তিনি আছেন ফলে তার কাছ থেকে অনেক পুরোনো তথ্যও উদ্ধার করতে পারলাম। যাক এইবার একটু শান্তি লাগছে মনে। কাজ শেষ না হলেও মোটামুটি কিছুটা গুছিয়ে নিয়েছি। বিকেলে একবার মেইন অফিসে যেতে হবে, কিছু ডেটা কালেকশানের জন্য। উনি বলেছেন তিনি থাকবেন। তারপর আর চিন্তা নেই। এইবার আমার কাজ শুরু করার পালা।
ফিরে এসে দেখি আমার দুই সঙ্গী বন্ধু একটা ভালো কাজ করে ফেলেছে। ওদের বলে গিয়েছিলাম যদি পারিস নারিকেলকুঞ্জে যাওয়ার জন্য একটা বোট ভাড়া করে রাখিস। ওরা তা করেছে। গোমতীর তাজা রুই মাছ সহযোগে গরম গরম ভাত খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে বোটে চড়ে বসলাম। গন্তব্য নারিকেলকুঞ্জ – দ্যা আইল্যান্ড। মনে একটা চাপা উত্তেজনা। যে আইল্যান্ডের কথা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি আমি সেখানে যাচ্ছি। কিন্তু বোটে উঠেই শরীরে একটা শিহরণ জেগে উঠল। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশী জলপথে সফর। আমার শুটিং এর বেশীর ভাগ শট এই জল পথেই নিতে হবে। কিন্তু আমি তো সাঁতারই জানিনা! যদি মাঝ পথে কোনো কিছু হয়ে যায়। যদিও আমার সাথে দুই বন্ধু এবং আমাদের গাড়ির ড্রাইভার আছে। তাছাড়া আছে বোট এর চালক এবং সহচালক। কিন্তু তারপরও একটা ভয়। ছোটবেলা থেকেই চৌবাচ্চায় স্নান করে বড় হয়েছি, তাই এত বড় জলাশয়ের মাঝে আমি খেই হারিয়ে ফেললাম। বন্ধুরা হাসছিল। ওরা আমাকে সাহস জোগাতে বোট এর ছাদে নিয়ে গেল। মুলি বাঁশের বেড়া দেওয়া ছাঁদে উঠে আমার তো প্রাণ যায়যায় অবস্থা। কারণ ভেতরে বসে অতটা টের না পাওয়া গেলেও ছাদে উঠার পর স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে। স্রোতের সাথে বোট টাল খাচ্ছে বারবার। কয়েক মিনিট আমি চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। তারপর ধীরে ধীরে ধাতস্থ হলাম। না এইবার কাজ শুরু করা দরকার। আমরা মূল জলাশয়ে প্রবেশ করেছি।
অদ্ভুত অনাবিল একটা আনন্দে আমার মনটা ছেয়ে গেলো। আমি চারিদিকে চেয়ে দেখছি। কি অপূর্ব সব দৃশ্য। এই পথ ধরেই গোমতী এগিয়ে গেছে। ভাবতেই খুব ভালো লাগছিল। বোটের ইঞ্জিনের শব্দ নিঃশব্দ প্রকৃতির বুকে অনুরণন করছিল বারবার। হঠাত আমার বন্ধু আমার জামা টেনে ধরল বলল – দেখ দেখ। আমি পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম – একটা হরিণ। তারপর আর বলার মতো নয়, ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ নেমে এল। কিন্তু সেগুলি ক্যামেরার রেঞ্জ থেকে এতটাই দূরে যে শুট করতে পারলাম না। বন্ধুরা বলল – আরে আরও অনেক কিছু বাকি আছে। ভুলে গেছিস ডুম্বুরভ্যালীর স্পেশালিটি। বিমল ভেংচি কাটল। হা হা, অ-তে অজগর আসছে তেড়ে। আমার মনটা কেমন আনচান করছে সত্যি দেখা পাওয়া যাবে কি। পাইথন। তারপর আবার মাথায় হাত। বলা নেই কওয়া নেই, ঝিরঝির করে বৃষ্টি নামল।
---------------*----------------
[url= http://www.sachalayatan.com/node/41371]এবং আমিঃ এইতো জীবন – ১ [/url]
===================================
তাপস শর্মা
আমার শহর
নভেম্বর ০৯ ২০১১
মন্তব্য
ভাল হইছে , কিন্তু ভিডিও কই?
। আসছে ওয়েট এন্ড ওয়াচ
চমৎকার ছবি আর লেখার জন্য অভিনন্দন।
আচ্ছা আপনি না হাচল? তাহলে অতিথি লেখক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখছেন কেন?
ধন্যবাদ।
ছবিগুলো দারুণ তো! ১ আর ৮ নম্বরটি খুব ভালো লাগল।
_________________
[খোমাখাতা]
ধন্যবাদ নিটোল
যথারীতি সুন্দর দাদা। হাচল একাউন্ট ব্যবহার করার অনুরোধ রেখে গেলাম।
_____________________
Give Her Freedom!
ধন্যবাদ অলি
দারুন!
৮ নম্বরের সাদাকালো ছবিটা আর একটু পরিষ্কার হলে মনে হয় আবেদন একটু বাড়তো। এধরনের ছবির কিছু নমুনা পাবেন আমার বন্ধু Jan Grarup-এর ছবিতে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ দাদা।
আপনার লেখা এবং ছবি গুলো দেখে এলাম। অসাধারণ সব ছবি। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ, আমার খুব উপকার হল, পরবর্তী পোষ্টের জন্য।
তিথী, ওটা এখন বন্ধ আছে। সো আমাকে এখানেই লিখতে হচ্ছে। বাই দ্যা ওয়ে ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি হাচল হয়েও 'অতিথি লেখক' অ্যাকাউন্ট থেকে লিখছেন কেন?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
এক্দম বাংলাদেশ বাংলাদেশ সব ছবি। শেষের ছবিটা সেরা লেগেছে বিশেষ করে।
ভাই সাফি, ছিলাম তো একই দেশের। আমাদের রঙ আর আপনাদের রঙ আলাদা নয় ভাই। তাই একাত্মতা।
লেখা এবং ছবি দুটোই ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা রইলো
তানিম ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন