কলেজে থাকতে যে বিষয়গুলো আমাদের বেশি কষ্ট দিত তার মধ্যে একটা ছিল ‘প্র্যাক্টিকাল ক্লাস’। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন আর জীববিদ্যার ভয়াবহ তিনটি ল্যাব আমাদের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসতো। সবচেয়ে অসহ্য ছিল জীববিদ্যা; বায়োলজি ল্যাব ক্লাস। গাছের শিকড়-বাকড় থেকে শুরু করে কেঁচো, ব্যাং, তেলাপোকার মত জঘন্য জিনিস কাটাকুটি করতে হত। আর এর জন্য প্রত্যেকের কাছে ‘ডিসেকশন কিট’ থাকা ছিল বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে থাকতো ব্লেড, চিমটা, ছুরি, কাঁচি আর কত কি! আমার স্মৃতিশক্তি বাড়াবাড়ি রকমের ভাল(!!)বলে দরকারের সময়ে কাজের জিনিস আনতে মনে থাকতো না। শেষে বিরক্ত হয়ে ব্যাগের এক কোনায় রেখে দিলাম ডিসেকশন কিট। যেন ভুলে গেলেও সমস্যা না হয়। পরে ক্লাস পালিয়ে একবার মধুমিতায় গিয়েছিলাম ছবি দেখতে। দেশজুড়ে তখন জেএমবির উৎপাত। হলে ঢোকার আগে পুলিশি চেকিংয়ে ঐ জিনিস ব্যাগে উদ্ধার হবার পর কি জে ঝামেলায় পরেছিলাম......... সে কথা আর না বলি।
আমাদের ল্যাবগুলিতে সহকারী হয়ে আসতেন সদ্য এইচএসসি দেয়া কলেজের বড় ভাইয়েরা। তাদের চেষ্টা থাকতো আমাদের প্র্যাক্টিকালগুলি বারবার দেখিয়ে দিয়ে হাত পাকানো। যেন পরে বুয়েট মেডিকেলে গিয়ে এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়। তাদের বলতাম ‘ল্যাব ব্রাদার’। তেমনই একজন ল্যাব ব্রাদার আমদানি হয়ে এলেন আমাদের বায়োলজি ল্যাবে। মাঝারি সাইজের হাতির সমান তিনি। প্রথমদিন তিনি পরে এলেন ঘাসরঙা একখানা টি-শার্ট। তাতে লেখা ‘Anchor Milk’. মনে পড়ে গেল Anchor Milk এর সেই কালজয়ী জিঙ্গেল......”যে দেশে গরু খায় বারো মাস সবুজ ঘাস/ সেই দেশ গরুর দেশ নিউজিল্যান্ড...”।
যা হোক, ভাইয়া পরিচয় দিয়ে বললেন তার নাম ‘তরু’। আমরা যেন তাকে ‘তরুভাই’ বলে ডাকি। তরুতে-গরুতে একাকার...! বলা বাহুল্য যে ঐ মুহূর্ত থেকে তাকে ‘গরুভাই’ ডাকা শুরু করলাম। কিছুদিনের মধ্যেই গরুভাই তার মাতব্বরি, বাহাদুরি, অহংকার, চিৎকার, আস্ফালন, খাতা সাইন না করা এবং ক্লাস থেকে বের করে দেয়ার হুমকি, ভুল ডিরেকশন, অসহোযগিতা প্রভৃতি গুণাবলির মাধ্যমে মাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে নিলেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা গরুভাইকে আমরাও নানারকম যন্ত্রণা দিতে লাগলাম।
একদিন আমাদের ল্যাব শিক্ষক ও গরুভাই যৌথ ঘোষণা দিলেন, “আগামী ক্লাসে তোমাদের আরশোলার পরিপাকতন্ত্রের ডিসেকশন দেখানো হবে। এ উপলক্ষে সবাই মিনিমাম দুটো করে আরশোলা ধরে আনবে। বেলা দুটায় তোমাদের প্রাক্টিকাল। সকাল দশটার মধ্যে ল্যাবে আরশোলা জমা দিতে হবে। যারা দিবেনা, তাদের ক্লাস নেয়া হবে না।“ আমরা যারপরনাই বিরক্ত হলাম। ক্লাস শেষে কিছু আঁতেল বন্ধু গেলো গরুভাইয়ের কাছে। উদ্দেশ্য, আরশোলা বিষয়ক কিছু শর্টকাট টিপস নেয়া। গরুভাই তাদেরকে হাতিসুলভ ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন।
একসপ্তাহ পর যেহেতু ক্লাস তাই যথারীতি প্রথম কয়েকদিন আমরা সাধারণ ছাত্ররা তোয়াক্কাই করলাম না। ঘরভর্তি তেলাপোকা। ‘আয়’ বলে ডাকলেই চলে আসবে, এমনটাই ধারণা ছিল আমাদের। ঐ প্র্যাক্টিকাল যাদের হয়েছে তাদের থেকে পাকা খবর নিয়ে আসতো আমাদের আঁতেল বন্ধুরা। টিফিন ব্রেকে বেঞ্চিতে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমুবার সময়, কিংবা গল্পের বই পড়ার ফাঁকে তাদের টুকরো কথাবার্তা কানে আসতো।“জানিস, আরশোলাটাকে উপুড় করে শোয়ায়ে আগে পাখা আর পাগুলি ঘ্যাঁচ করে কেটে ফেলতে হয়......!!...তারপর দুই সাইড কেঁচি দিয়ে কাটতে হয়......!...তখন নাকি আরশোলার গা থেকে সাদা সাদা প্রোটিন বের হয়...।......ইয়াক থু!!” ইত্যাদি।
পরবর্তী ক্লাস যখন আসন্ন, তখন ‘অপারেশন আরশোলা’ হাতে নিলাম। তেলাপকাদের সিক্সথ সেন্স দেখে অবাক হলাম। যেখানে ১২মাসে ১৩বার গণহত্যা চালিয়েও তেলাপোকার জ্বালায় থাকতে পারিনা!সেখানে একটা তেলাপোকাও খুঁজে পাচ্ছিনা আমি! নট এ সিঙ্গেল ওয়ান! এমনকি রাতভর স্টোররুম-রান্নাঘর হানা দিয়েও না! কী মুশকিল! ঘুমের মাঝে দুঃস্বপ্নে দেখি ‘তেলাপোকা’! মশার পিনপিন শুনলেও মনে হয় ‘তেলাপোকা’! আকাশে-বাতাসে ‘তেলাপোকা’!বাড়ির সবাইকে ব্যস্ত করে তুললাম দুটো তেলাপোকা ধরে দেয়ার জন্য।কিন্তু তেলাপকাময় এই দুনিয়ায় কোন তেলাপোকাই আমার জন্য দাখিল হলনা!সময় যখন ফুরিয়ে আসছে তখনি শুনি প্র্যাক্টিকালের দিন হরতাল! কাজেই বন্ধ!ক্লাস হবে তার পরদিন। জানে পানি ফিরে এল। বাড়তি একটা দিনতো হাতে পাওয়া গেলো।
হরতালের দিনটি আমার জন্য চমতকারভাবে শুরু হল।বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম।উঠে শুনি নানু কিভাবে জানি একটা ‘এ্যত্তবড়’ তেলাপোকা ধরেছেন। কায়দা করে সেটাকে ম্যাচের বাক্সে পুরে রাখা হয়েছে। তেলাপোকাটা ‘কত্তবড়’ সেটা অবশ্য দেখা সম্ভব হলনা। বাক্সের ভেতর দাপাদাপি শুনে আর খুললামনা। যদি বের হয়ে যায়!
অন্তত দুটো পোকা দরকার। জোগাড় হয়েছে মোটে একটা। বাকি দিনটুকু ঘরে অভিযান চালিয়েও লাভ হলনা। হতাশ হয়ে রাতে যখন শুয়ে পড়েছি তখন ফ্যানের মধ্যে হঠাৎ ‘ঠং’ করে আওয়াজ হল। আমি তড়াক করে উঠে বাতি জ্বালিয়েই চেঁচিয়ে উঠলাম, “পাইছি...!পাইছি...!” ঘুম ভেঙে পাশের ঘর থেকে বাবা ছুটে এলেন, “কি? কি পাইছিস?” আমি আঙুল দিয়ে দেখালাম। একটা না, দু-দুটো তেলাপোকা মাটির উপর তড়পাচ্ছে! বাবা চিতকার শুনে নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন সাঙ্ঘাতিক কিছু পেয়ে গেছি। তেলাপোকা দেখে প্রথমে বিরক্ত হলেন, পরে রেগে গেলেন। “গাধার বাচ্চা গাধা!জীবনে কোনদিন তেলাপোকা দেখিস নাই? মাঝরাত্রে ‘পাইছি পাইছি’ বলে চিতকার! ঘুমটাই দিল ভেঙে! গাধার বাচ্চা গাধা!”
ধমকটুকু নীরবে হজম করে নিলাম। আসলেই বাশি জোরে হয়ে গেছে! আর্কিমিডিসও বোধহয় চৌবাচ্চার সূত্র আবিষ্কারের পর এত জোরে চিতকার করেননি! যাইহোক, তেলাপোকা দুটোকে কিসের মধ্যে রাখি? খোঁজাখুঁজি করে হাতের কাছে পেলাম একটা সিডির খালি বাক্স। তাতে লেখা ‘হাম দিল দে চুকে সনম’! এর মানে কি আল্লহপাকই জানেন! পোকা দুটোর একটাকে মনে হল এক্ষুণি উড়াল দেবে। সেটাকে আগে কায়দা করে ভরলাম। অন্যটার অবস্থা মনে হল আশঙ্কাজনক!সেটাকেও পুরলাম। বেশি হলেই ভাল। শুনেছি ল্যাবে তেলাপোকা পছন্দ না হলে নাকি ফিরিয়ে দিচ্ছে। আরেক যন্ত্রণা!
সকালে উঠে আবারও সুসংবাদ পেলাম। ভোরবেলা নাকি বাবা তার হাতুড়ি-বাটালি আর লোহা-লক্কড়ের জঞ্জাল থেকে আরো একটা তেলাপোকা গ্রেপ্তার করেছেন। সেটাকে একটা তেলের শিশিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমি একহালি তেলাপোকার মালিক হয়ে হৃষ্টচিত্তে কলেজে চললাম।
টিফিন ব্রেকে ল্যাবে গেলাম তেলাপোকা জমা দিতে। স্যার বললেন,”ভিতরে যাও। তরুর কাছে জমা দিয়ে আসো।“ আমি আমার ম্যাচের বাক্স, সিডির বাক্স আর তেলের বোতল নিয়ে গেলাম ভেতরে। দেখি গরুভাই তারই মত সাইজের টিফিন বক্স থেকে টিফিন খাচ্ছেন। আমাকে দেখেই হাতিসুলভ গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন,”কি চাই?” বললাম,”তেলাপোকা জমা দিতে চাই।“ গরুভাই দুইচোখ সরু করে বললেন,”তেলাপোকা! What the hell is তেলাপোকা? তেলাপোকা কি?” মনেমনে বললাম,”তোর মাথা!” গরুভাই বললেন,”বইয়ে কি কোন জায়গায় তেলাপোকা লেখা আছে? এই ওয়ার্ডটা যেন আর কোনদিন না শুনি। Understand? সবসময় বলবে আরশোলা।“ আমি বললাম, “জ্বি আচ্ছা। আরশোলা।“
টিফিনবক্স খোলা রেখেই গরুভাই ঢাউস সাইজের ক্যাডবেরিজের একটা বয়াম নিয়ে এলেন। তার খোঁচা খোঁচা দাড়ির মধ্যে দেখলাম ডিমের টুকরা, রুটির গুঁড়া এসব লেগে আছে। হাতের বয়ামের মধ্যে দেখলাম শ’খানেক তেলাপোকা গিজগিজ করছে। গরুভাই আমার আরশোলার কন্টেইনার দেখে যে মুখভঙ্গি করলেন তার বর্ণনা দেবার সাধ্য আমার নেই। ম্যাচের বাক্সের তেলাপোকাটা বের করে বললেন,”এটার এক পা ড্যামেজ!” তারপর চিমটা দিয়ে তুলে সেটাকে রাখলেন বয়ামের ভেতর। এরপর তেলের বোতলেরটার ব্যাপারে তার মন্তব্য,”এত মাইক্রোস্কোপিক আরশোলা এনেছ কেন? তোমাকে তো মাইক্রোস্কোপ দেয়া হবেনা!”
এবার সিডির বাক্স। প্রথমটাকে তুলে বললেন,”এটা কি এনেছ? এটাতো মরা!” আমি কাঁচুমাচু হয়ে বললাম,”ভাই, কাটাকুটির পরে তো ওটা এমনিই মরে যাবে। একটু আগে মরলে ক্ষতি কি?” শুনে গরুভাই চোখ সরু করে এমনভাবে তাকালেন যে মনে হল চোখের আগুনে আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে দেবেন! অবশ্য আমাকে পুড়ে ছাই হতে হলনা। গরুভাইর মুখ থেকে একরাশ থুতুর সাথে কিছু কথা বের হল। “ফাইজলামি করতেছ এইখানে!আমকে চিনো তুমি?একদম ‘জেরো’ পেয়ে যাবা কিন্তু! খবরদার!” জবাবে আমি মিষ্টি করে একটু হাসার চেষ্টা করলাম। একশতে মাইনাস টেন যেখানে পাই, সেখানে ‘জেরো’ পাওয়ার প্রস্তাব মন্দ নয়।
তিন নম্বরটা বয়ামে ভরার পর ফাইনাল আরশোলাটা তুলতে গিয়েই হয়ে গেলো ঝামেলা। গরুভাই আমার দিকে আগুন চোখে তাকানো অবস্থায়ই ওটা তুলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেটা তার চিমটা ফাঁকি দিয়ে ফর্ ফর্ করে উড়ে গেল!আর গিয়ে বসবি বস, সোজা গরুভাইয়ের খোলা টিফিনের ওপর! গরুভাইতো রেগেমেগে টং! “ইডিয়ট! স্টুপিড! উড়ন্ত ‘তেলাপোকা’ নিয়ে আসচো কেন?” আমি তার ‘তেলাপোকা’টা শুধরে দিয়ে ‘আরশোলা’ বলতে যাচ্ছিলাম। ঐ মুহূর্তেই তিনি সিডির বাক্সটা ছুঁড়ে ফেললেন। আমিও চেপে গেলাম।আমার রোল নম্বরের পাশে লিখলেন, “জমা সংখ্যা-০১টি”! ১টি! জমা দিলাম চারটা! নাহয় তিনটাই ধরলাম! আর লিখল ‘০১’! সিডির বাক্স আর বোতল কুড়িয়ে নিয়ে ব্যাটাকে গালি দিতে দিতে বের হলাম।
দুটার সময় প্র্যাক্টিকাল। তার আগেই সবাই ল্যাবের সামনে দাঁড়িয়ে। শেষবারের মত তাদের কাটাকুটির অস্ত্র-শস্ত্র দেখে নিচ্ছে কেউ। বুজুর্গ যারা তারা একে অন্যকে থিওরিটিক্যাল ডিসেকশন এমনভাবে বোঝাচ্ছে যেন তারা কয়েক’শ বার এই প্র্যাক্টিকাল করেছে। কেউবা উদাস নয়নে প্রকৃতি দেখছে। ছেলেদের কথাবার্তায় করিডোর সরগরম। এমন সময়ে হঠাত দড়াম করে ল্যাবের দরজা খুলে গেল।দেখি আমাদের ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট আর চার-পাঁচজন স্টাফ মিলে চ্যাংদোলা করে বিরাট একটা কিছু বের করে আনছেন! আমরা সরে রাস্তা করে দিলাম। তারপর ভালমত একটু তাকাতেই বুঝলাম সেই ‘বিরাট একটা কিছু’ আর কেউই নন, আমাদের গরুভাই স্বয়ং! ‘ব্যাপার কি? ব্যাপার কি? ফিসফিসানি, গুঞ্জন সবার মাঝে। এমন সময় আমাদের ল্যাব টিচার বের হয়ে পাংশু মুখে ঘোষণা দিলেন,”তোমাদের আজকের ক্লাসটা অনিবার্য কারণে হচ্ছেনা। Extremely sorry! এই ক্লাস কবে হবে সেটা পরে তোমাদেরকে নোটিশ দিয়ে জানানো হবে। আর তোমাদেরকে কষ্ট করে আরো একবার আরশোলা ধরে আনতে হবে। Sorry!”
এই ঘোষণায় বুজুর্গ ব্যাক্তিগণ বিশেষ হতাশ হল। অন্যদিকে আমাদের খুশি দেখে কে?খুশির চোটে আমরা এই ঘটনার ভার্চুয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করলাম। সিরিয়াস ছাত্ররা ধরে নিল সাংঘাতিক কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমাদের তদন্ত কমিটি নিশ্চিত রায় দিল যে যাই ঘটুকনা কেন, আরশোলা নিয়েই ঘটেছে! আর আমার উড়ন্ত আরশোলাটা গিয়ে গরুভাইর টিফিনে ডিম পেড়েছে, আর সেটা খেয়েই গরুভাই ‘আরশোলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, এরকম থিওরিও চালিয়ে দিলাম!
ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট নির্মলদা খানিক বাদে ফিরলেন।সবাই তাকে ছেঁকে ধরল ঘটনা জানার জন্য। তিনি এক রাম ধমক দিয়ে তাদের বিদায় করে দিলেন। আমি তাকে এক কোনায় ডেকে নিয়ে গেলাম। যেহেতু তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করি আর মাঝেসাঝে তার সাথে গল্পগুজব করি, তাই আমাকে তিনি বিশেষ খাতির করেন। জিজ্ঞেস করলাম তাকে, ”স্যার ঘটনা কি? গরুভাইয়ের কি হইছে?” তরুকে গরু বলার বেয়াদবিটুকু তিনি নির্বিবাদে মেনে নিলেন। বললেন,”হইব আবার কি? তোমাগো গরুভাইতো আসলেই গরু। গরুরে দিয়া কি মাইনষের কাম হয়?” আমি নানাভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে যেটুকু জানতে পারলাম তার সারমর্ম হল তেলাপোকাগুলোকে ক্লোরোফর্ম করার কথা নির্মল দার। কিন্তু গরুভাই কাজটা করার জন্য লাফালাফি শুরু করলেন। শেষে স্যার বললেন তাকে যেন ক্লোরোফর্ম করতে দেয়া হয়। তাই নির্মলদা কিভাবে ড্রপার দিয়ে খুব সাবধানে ফোঁটায় ফোঁটায় বয়ামে ক্লোরোফর্ম ঢেলে তেলাপোকাগুলো ঝাঁকাতে হয়, সেই টেকনিক গরুভাইকে ভাল করে শিখিয়ে দিলেন। তারপর তিনি যখন একটু চোখের আড়ালে গেছেন, তখনই দুর্ঘটনা! গরুভাই নাকি ক্লোরোফর্মের ‘ডিব্বা’ খুলে গন্ধ শুঁকেছিলেন! ব্যস!আর যাবে কোথায়? মাটির উপর ধপাস! নির্মলদা বললেন তারা নাকি ভেবেছিলেন গোটা ল্যাবটাই ভেঙে পড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলেন অবস্থা আরো জটিল! গরুভাই যেহেতু আসলেই গরু, তাই তিনি তেলাপোকার বয়ামটা খোলা রেখেছিলেন। আর এই সুযোগে তেলাপোকাগুলি বের হয়ে পুরো ল্যাবে ছড়িয়ে গেছে।
কাহিনী শেষ করে নির্মলদা দম নিলেন। এটুকু বলতেই হাঁপিয়ে গেছেন। হাঁপানোরই কথা। বললেন, “বাড়িত যাওগা মিয়া। আমারে আবার তেলাপুকা মারন লাগব। ল্যাব ভর্তি তেলাপুকা!” যাবার সময় তার হাতে আঙ্কোরা নতুন কয়েকটা ঝাড়ু দেখলাম। সন্দেহ নেই, এগুলো ‘তেলাপুকা মারনের’ জন্যই কেনা হয়েছে। আমার ‘আরশোলাইটিস’ থিওরি ঠিক হয়নি বলে কিছু মন খারাপ ছিল। তাই বলে মজা দেখার ব্যাপারে উতসাহের কোন কমতি দেখা গেলনা। লম্বা করিডোরের ল্যাবের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম মজা দেখতে।
জানালা দিয়ে দেখা গেল আমাদের টিচার এবং স্টাফরা ঝাড়ু হাতে ল্যাবজুড়ে দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের দাবড়ানি, মুখ খিঁচানি উপেক্ষা করে চারিদিকে মহানন্দে কিলবিল করছে শ’খানেক ‘তেলাপোকা’। না ...... না! “আরশোলা”!!
------------------------- আইডিয়াবাজ (ওরফে বকাসো) রিলোডেড--------------------------
মন্তব্য
। বেশ সুন্দর। অভিজ্ঞতাও খুব মজার। সত্যিই কি ঘটেছিলো। কাহিনী বলার ধরণটাও বেশ ভালো। সব মিলিয়ে পড়ে মজা পেলাম।
মজা পাইলাম।
_________________
[খোমাখাতা]
মজা লাগল।
আইডিয়াবাজ (ওরফে বকাসো) রিলোডেড, পুরোটাই কি আপনার নিক?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
জ্বে না...!!
শুধু প্রথমটুকুই... ব্র্যাকেটের মধ্যেরটা এককালে আপনারা দিয়েছিলেন
আর বহুউউউদিন পর ঢুকলাম...... তাই শেষের অংশটা
মজা লাগ্লো ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
মজার হয়েছে, আইডিয়াবাজ
ভালৈছে ... মজারু
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
মজাদার।
স্কুলেও অনেক ল্যাব অ্যাসিস্টেন্টকে দেখেছি, 'আমার কত ক্ষমতা জানস?' টাইপের মনোভাব, ধরাকে সরা জ্ঞান করে ছাত্রদের অবজ্ঞা করে, অসহযোগিতা করে। আর প্র্যাকটিকাল ক্লাসে হাতেকলমে শিখতে পারাটা শিক্ষার খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই তেমন একজনকে এমন জব্দ হতে দেখে জিঘাংসাপূর্ণ আনন্দ পেলাম।
মনে পড়ে গেল কলেজ জীবনের সেই দিনগুলোর কথা।ল্যাব ব্রাদারদের কে ঘিরে অনেক তিক্ত মধুর অভিজ্ঞতা আছে।কেমিস্ট্রি আর বায়োলজি ল্যাবেই এদের উপদ্রব ছিল সবচেয়ে বেশি।সময়ে অসময়ে দুর্ব্যবহার করতেন,কিন্তু কেন করতেন তা আজও অজানা।
আপনার লেখনীতে বেশ লেগেছে ঘটনাটা।সুন্দর লিখেছেন।
শুভেচ্ছা রইল।
হাহাহাহাহাহহাআ...নটরডেমের সেই কথাগুলো মনে পড়ে গেল। ভালো হয়েছে
স্কুলের কেমিস্ট্রি ল্যাব অ্যাসিসটেন্টকে এক বন্ধু ভদ্রতা করে বলেছিল, স্যার আজকে বই আনতে ভুলে গেছি! ব্যাটা খুব ভাল নিয়ে বলেছিল- আরে, আমিই তো বই !
facebook
খিক্ক অলটাইম নিজের বিদ্যা জাহির করতে ব্যাস্ত থকত ব্যাটা সেইসাথে স্যারদের থেকে যে বেশি জানে সেটা বুঝাইতে বড়ই তৎপর ছিল।
ক্যামিস্ট্রি ল্যাবের ল্যাব ব্রাদার হওয়ার একটা সমূহ সম্ভাবনা তৈরী হৈছিলো আমার কালে। কিন্তু পোলাপানের গাইল আর অভিশাপ নেয়ার চেয়ে দোস্তগো লগে মিল্যা আমাগো সময়ের ল্যাব ব্রাদারদের হবু শ্বশুর বাড়িতে সম্পর্ক স্থাপনের কাল্পনিক অনুশীলনেই ব্যস্ত থাকায় প্রায়োরিটি দিছিলাম বৈলা সেইদিকে আর যাওয়া হয় নাই।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দারুন
চমৎকার
আরও লেখা চাই।
ব্যাং আমি বেশ ভালই ব্যবচ্ছেদ করতে পারতাম। কিন্তু তেলাপোকা বা কেঁচো ছুঁয়ে দেখারও প্রশ্ন উঠে না। জুউলজির মিসকে এত ভয় পেতাম, তবুও না। প্রতি ল্যাবেই ভুং ভাং করে চালিয়ে যেতাম। কিন্তু ফাইনালে তো সত্যি সত্যিই কাটতে হবে।লটারিতে ব্যাং না উঠলে আমি ধরা। অবশেষে মামাকে দিয়ে তেলাপোকা ধরিয়ে, কোনরকমে না ছুঁয়ে কাটাকুটি। পরের দিন পরীক্ষাতে লটারিতে উঠল কেঁচো। জীবনে সেইদিনই প্রথম কেঁচো কাটলাম।
ভার্সিটিতে ল্যাবে অনেক অনেক মজা করেছি। অনেকটা সময় ওখানেই কাটিয়েছিলাম কি না! ১ম বর্ষটা গেল লবণ বিশ্লেষণ করে। আর ল্যাবের এসিস্টেন্ট? ও বাবা! সূর্যের চেয়ে বালি যে গরম হয় তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছিলেন উনি। স্যার আমাদের কিছুই বলতেন না, অথচ ঐ এসিস্টেন্টের মাতবরির জন্য এক এক্সপেরিমেন্ট যে কতবার করতে হয়েছে! অধঃক্ষেপ পড়লে বলা হত, অধঃক্ষেপ কেন পড়ল? আর যে বন্ধু অধঃখেপ ছাড়া টেস্টটিউব দেখাতো, তাকে শুনতে হত, কেন অধঃক্ষেপ পড়ল না!
আমি ছিলাম "কেঁচো বিশেষজ্ঞ"। কেঁচো শুধু মাটি খায়, তেলাপোকার মতো সর্বভুক না। ইন্টারের ফাইনালের সময় ক্লাসে ঢুকে দেখি বোর্ডে লিখা জোড় রোল তেলাপোকা - বিজোড় কেঁচো, আর আমি ছিলাম জোড়, ভয়ে তো শেষ। পরে দেখি ওটা ছিল সকালের সেকশনের জন্য - এখন হবে উল্টাটা। আমি বেঁচে গেলাম
নতুন মন্তব্য করুন