১। এইসব কুয়াশার ঘুণলাগা মরা জোছনার হাতছানিতে তবুও জেগে থাকে রাত এবং ... ... ...
এইসব কুয়াশার ঘুণলাগা মরা জোছনার হাতছানিতে তবুও জেগে থাকে রাত এবং হামাগুড়ি দিয়ে শেষ হেমন্তের শীত শ্বাসনালী চেপে ধরবার ঠিক একটু আগে খুব করে রিলিফের কম্বল মুড়ে কেবল চোখজোড়ায় অল্প আলোয় পাওয়া পথের ইশারায় গুটিগুটি সলিমের চায়ের দোকানে সারিসারি মাথাগুলো জড় হয়ে ঘাড়টা একটু জাগিয়ে শ্বাসহীন দৃষ্টি মেলে অবাক ঘোরলাগা বিস্ময়ে কেবল দেখতে থাকে আর দেখতেই থাকে চকচকে নতুন পয়সা অথবা খেজুর গাছ কাটার ধারালো শাণিত হেঁসোর মতন শিলা কি জওয়ানি কিংবা বরগুনা ঝালকাঠির সিডরের মতো ভাংচুর ক্যটেরিনা কাইফ আর এইফাকে কখনো কখনো ইরি ধানের মজানো চালের গন্ধ ভাতের বলক উঠার মতন ঢেউ তুলে অসিমুদ্দির চেতনায় চারচালা শনের ঘরের উদাম চকির উপর বিস্রস্ত মালেকা বানুর ভাঁজপরা কুঁচকানো কালো গতর ঝলক দিয়ে উঠলে পরে ভীষণ অতৃপ্তির ঢেঁকুরের মতন উঠে গলায় এসে আটকে যায়-- শালা, এইডা কি মাইনসের জেবন?
২।
তিনকুড়ি পেরিয়ে বয়েসের থেকেও বেশি ভারে তালের লাঠির আশ্রয়ে নুয়ে পড়া শাশুড়ির সংসারের খুঁটিনাটি খবরদারি অবশ্য সমান মাত্রায় নুয়ে না পরায় সন্ধ্যের একটু আগে ‘’হাঁস মুরগি ঘরে তোল’’ অথবা ‘’এহনো সাঁঝের বাত্তি জ্বালাও নাই বউ, অলক্ষ্মী বাসা বানব মরার সংসারে’’ জাতীয় নিয়মিত সান্ধ্য অধিবেশনের কোন এক ফাঁকে দস্যি ছেলেটাকে মেছোপাড়ার উচ্ছন্নে যাওয়া কাবেদ, জলিল গংএর হাডুডুর ঘরের ভিতর থেকে বগলদাবা করে কলপাড়ে আচ্ছামতন ঘসেমেজে কিঞ্চিৎ ভদ্রস্থ করে ঘরে এনে হ্যারিকেনের সলতে একটু উস্কে দেবার পর ছেলেটা কেমন একটু দুলে দুলে ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে’ পড়তে থাকে আর আমাদের মালেকা বানু এইতো বছর কয়েক আগের কিশোরী বেলার ভাদ্র মাসের ঘাঘট নদীর একহাঁটু জলের নিচে পুঁটি মাছের রুপোলী ঝাঁকটাকে আঁচলে তুলতে না পেরে পাওয়া না ভোলা কষ্টর জাবর কাটার ভেতর পাশের ভিটার টিনের চালে দুইটা সুপুরি টুপটাপ খসে পড়লে মনে পড়ে যায় শাশুড়ির বাতের ব্যামোর ওষুধটা দেয়া হয়নি আজ এবং এরপর আর কোন কাজের অথবা অকাজের কোন কথা অকথা ভাবার মত না থাকায় অগত্যা অসিমুদ্দির বাড়ি ফেরার আগে আগে সাঁঝ ঘুম চোখে নামে।
৩।
এই ফাঁকে মালেকা বানু ও অসিমুদ্দি পরিবারের একমাত্র দস্যি ছেলেটা হ্যারিকেনের কেরোসিনের একটু পোড়া গন্ধ ছোঁয়া ম্লান হলুদ হয়ে আসা আলোয় ‘’আমাদের ছোট নদী’’ পেরিয়ে পাশের ছাইতান তলা গ্রামে কেমন উঁচু একটা মোবাইলের টাওয়ার হয়ে গেলে বাবার কাছে কথা কইবার যন্ত্রটা আসছে ঈদের আগেই চেয়ে নেবেই নেবে ভেবে একটু হাসে আর হাসতে হাসতেই মিয়া বাড়ির জামিলের হাতে দেখা চুম্বক লাগানো কলমটার কথা, যা কিনা ক্লাসের সবার ছোঁয়ার বাইরে এবং ঈর্ষার ভিতরে আছে আজও, মনে পড়ে যায় এবং কলমটাই আগে বাবার কাছে চাইবার পন করতে করতে কেমন হুড়মুড় করে শিকদারদের পেছন বাড়ির ছায়া ছায়া বাগানের গলিতে অকস্মাৎ ঢুকে পড়লে গাঢ় সবুজ পাতার আড়ালে কি সুন্দর একটা হলুদ মতন রঙ ধরানো জাম্বুরাটা দেখতে পেয়ে গাছুরে শহিদের সাথে আঁতাত করে কালকেই এর একটু টক আর মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ পেয়ে চোখমুখ কেমন একটু কুঁচকে লালা আসতে থাকবে মুখের ভিতর, তাই ভেবে চৌকির তলায় পলিথিনে মোড়ানো বহুবর্ণ বিচিত্র মার্বেলের অদ্ভুত টুংটাং আওয়াজ তুলতে থাকে।
৪।
অতঃপর অন্ধকার আরও একটু গাঢ় হয়ে এলে সুপুরির ডালে ঝোলা বাদুরের ঝাঁপটায় কয়েকবিন্দু শিশির অসময়ে টুপটাপ ঝরে পাশের ভিটায় টিনের চালে ছন্দ উঠে আর সেইফাকে অসিমুদ্দির বৃদ্ধ মাতা দুইবার শ্বাস ফেলে খুকখুক কেসে উঠে জীবনের অস্তিত্ব জানান দিলে কোথায় যেন একটা রাতপাখি দুদ্দার উড়ে যায় এবং তখন বেল গাছের কোটরের তক্ষকটা ডেকে উঠলে জানা যায় রাত তিন প্রহরের মেইল ট্রেনের পু ঝিক ঝিক আর সেই ড্রাগনের অতিকায় লেজের মতন যন্ত্রদানবটার অবিরাম ঘর্ষণের বিপুল শব্দ পাশের কলার আর বাঁশের ঝাড়ের আবরণী ফুঁড়ে একেকটা ঘুমন্ত অসিমুদ্দিদের শনের ঘরে আততায়ীর মতন অনাহুত ঢুকে গেলে আড়মোড়া ভেঙ্গে ওরা পাশ ফিরে বাম হাতের নাগালেই মালেকাদের পেয়ে যায় কিন্তু কি অবাক, সন্ধ্যার মল্লিকা সেরোয়াতদের হাতের মুঠোর সমান মাপের কোমরের খাঁজের ভাঁজ একটুও খেয়ালে আসে না!
৫।
এভাবেই আমাদের পাঁজরের ইতিহাসমূলে জানা যায় আসছে পৃথিবীর সাতশত কোটি সতের লক্ষ তিপ্পান্ন হাজার দুইশত বত্রিশতম শিশু।
পথিক পরাণ
১১.১১.১১ রাত ১১.১১
মন্তব্য
ভালোই লাগল। তবে আমার মতো অল্পসল্প বুদ্ধিওয়ালার জন্য একটু সহজভাবে লিখুন।
_________________
[খোমাখাতা]
মূল্যবান পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।
তবে হইসে কি। লেখালেখির চেষ্টায় নতুন তো। মনে কয় এর জন্যে ঠিকঠাক লেখাটার ভাব প্রকাশ করবার পারি নাই। এইডা আমার ব্যর্থতা। ভালা থাইকেন।
পথিক পরাণ
অনেক ভালো লাগলো... আরো লিখুন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনুপ্রেরণাদায়ক সুন্দর পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
-----------------------------------
আমার তো পথ নেই পথের আমি
পথিক পরাণ
বাপ্প
ধইন্যা।
---------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
টু গুড। ইয়ার কি লিখেছেন গুরু। বিরাম চিহ্ন ছাড়া এই অপূর্ব বাক্যগঠন এবং কাহিনী বলার ধরণটা ব্যাপক লেগেছে। আরও লেখা চাই শিজ্ঞির
বিয়াফক লজ্জাইতে আছি। লজ্জায় দুই হাতে মুখ ঢাকার ইমু।
ধইন্যা হইলাম। আর আফনের জইন্যে এক মালগাড়ী ধইন্যা পাতা।
---------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
বাহ! আরো লিখা চাই।
পাঠ প্রতিক্রিয়া জেনে ভালো লাগছে ভীষণ। অনেক শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
------------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
মায়াকাড়া গদ্য।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপু
ধইন্না পাতা দিবার মুঞ্চাইছিল। কিন্তু এহন মনে কয় ঐ পাতার আকাল দেইখা ইমুডা কাম করে না। কি আর করা!
ঋতুর দু ধারে থাকে দুজনে, মেলে না যে কাকলি ও কূজনে,
আকাশের প্রাণ করে হূহু হায়॥
---------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
এরকম গদ্য আমার আগে পড়া হয়নি। বিরাম চিহ্নহীন চমৎকার বাক্যবিন্যাস। মুগ্ধ হলাম পড়ে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনার মুগ্ধতা আমায় কৃতার্থ করেছে। মূল্যবান আর প্রেরণাদায়ক পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা।
---------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
নতুন মন্তব্য করুন