গোমতী হাইড্রো প্রকল্পের এক ঝলক
১৯৭৫ সাল। আর এখন ২০১১। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে অনেক সময়। সময় থমকে থাকেনা। বয়ে চলে আপন ধারায়। বয়ে চলছে গোমতী। কিন্তু ডুম্বুর ভ্যালীর অন্তর্গত মন্দিরঘাট কিংবা নারিকেলকুঞ্জের জনজাতির দল থমকে আছে। প্রায় পাঁচ সাতটি গোষ্ঠীর জনজাতির বাস এখানে। চাকমা, জমাতিয়া, দেববর্মা, রিয়াং, নোয়াতিয়া – এই সব। তাছাড়া রয়েছে কিছু বিহারি এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু উদ্বাস্তু বাঙালি। বেশির ভাগ মানুষের পেশা তথা জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন মাছ ব্যবসা। ডুম্বুরের উপকন্ঠের এক গ্রাম্য যুবক সুবলহরি জমাতিয়া। স্কুলে যায়নি কোনদিন। ছোলেবেলা থেকেই বাবার সাথে মাছ ধরতে নামে গোমতীর বুকে। তার কথাগুলি সরাসরি এই রকম – যত জমি আছিল সব নদীর মইদ্যে এছেগা। ধান করার লাইগ্যা জমি কই পাইব। মাছ ধরে আমরা। আমার বাবা ধরত। আমিও ধরে। মাছ বেইচ্যা যা টাকা পায় তা দিয়া কোনো রকমে খায় আরকি। এই কথা শোনার পর আর কিছু বলতে পারিনি। বলার মতো ভাষাও খোঁজে পাইনি। মানুষটি ঠিকঠাক বাংলা বলতেও পারেনা। পারার কথাও নয়। সমতলে কবে গিয়েছিল সে নিজেই ভুলে গেছে। ওপাশ থেকে সুবলহরির সাত বছরের ছেলে বিরজিৎ খালি গায়ে মায়ের আচলের নিচে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে ছিল। খুব ইচ্ছে করছিল তাকে ডেকে এনে কিছু একটা দেই। আসলে আমার বাচ্চাদের দেখলে খুব মায়া হয়। কিন্তু আমার কাছে আছে, পকেটে তিনটি ক্লোরমেণ্ট ( চকলেট কাম বাবুলগাম)। আর সুবলহরির পরিবারে বাচ্চার সংখ্যা পাঁচ। শুধু বিরজিৎ’ই নয়। সুবলের আরও চারটি সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কন্যা সন্তান। বাচ্চা গুলির বয়স তিন থেকে শুরু হয়েছে। বড়টার বয়স নাকি দশ বছর। সবটাই বুঝলাম। অশিক্ষা, কুসংস্কার আর অভাবের জঞ্জালে মানুষগুলি কি করে বেঁচে আছে। এমন করেই চলছে।
একেকটি মানুষের সংসারে পাঁচ সাতটি করে সন্তান। তাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব কে নেবে? প্রকৃতি? বেঁচে থাকলে থাকবে – না না থাকলে, মরে যাবে। তাতে কারও কিচ্ছু যায় আসেনা। এইভাবেই বছরের পর বছর বেঁচে আছে রতনবিকাশ চাকমা, ভক্তিকর চাকমা, মন্দারানী রিয়াং, সদ্রাই নোয়াতিয়া, কুঞ্জলাল চাকমারা। ধানের জমি প্রায় নেই বললেই চলে। জুম চাষ এখন প্রায় অচল। রেশনিং ব্যবস্থা আছে, কিন্তু তা নাম কে ওয়াস্তে। রাস্তাঘাট বিপর্যস্ত। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে নারিকেলকুঞ্জের(আইল্যান্ড) মানুষের অবলম্বন জলপথ, বাহন নৌকা। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য স্কুল আছে, কিন্তু সেটার অবস্থা আর বলার মতো নয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থা খুবই খারাপ। সামান্য জ্বর, সর্দি হলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। বছরে কত মানুষ বিনা চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসায় ( গ্রাম্য বুজরুকি ) মারা যায় তার খতিয়ান কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি খাতা রাখেনা। তার উপর আছে এক্সট্রিমিস্ট এর উৎপাত। স্বাধীন ত্রিপুরার ডাক। পাহাড় কান্নায় ভেঙে পড়ে। উগ্রপন্থী নামধারীরা স্বাধীন ত্রিপুরার নামে আসলে জনজাতির উপরেই অত্যাচার চালায়। যদিও আগের তুলনায় এখন অনেকটা উপদ্রব কমেছে। কিন্তু একেবারেই থেমে যায়নি। কিছু দিন পরেই ওরা আসে। এসে চাঁদা চায়। অতএব নুন আনতে পান্থা ফুরায় মানুষদের চাঁদা দিতে হয় বাঁচার তাগিদে। তার উপর অত্যাচারের কথা আর বলার মতো নয়।
অত মনমাতানো প্রকৃতির খেলা। গহীন অরন্যভুমি ও জলরাশির কলকল শব্দ। কোথাও কৃত্তিমতা নেই। তবে ‘অভাব’ আছে। সেই অভাব জনজাতির জীবন গাঁথায় লেখা আছে। আমাদের শহুরে সভ্যতা এবং যান্ত্রিকতার রঙ ফিকে হয়ে যায়...
---------------*----------------
=========================
আমার শহর
নভেম্বর . ১২ . ২০১১ .
মন্তব্য
গোমতী হাইড্রো প্রকল্পের এরকম বিস্তারিত ছবি দিয়েছেন যেটা আইনতঃ নিষিদ্ধ হতে পারে। খোঁজ নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন তো? ছবি সরাতে চাইলে contact এট সচল বরাবর ইমেইল করে জানান।
আমি যখন ছবি তুলেছিলাম, তখন প্রশাসনিক ভাবে কেউ কিছু বলেনি যে ছবি ব্যাবহার করা যাবেনা। তবে আপনি যেহেতু বলছেন সমস্যা হতে পারে তাহলে আমি ইমেল দিচ্ছি। কোন কোন ছবি বাদ দিতে হবে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই।
(বাংলায়)
ওই মিয়া নিজেই নিজেরে বাংলায় লেখতে কন কেলা?
আপনাকে বলেছিলাম কল্যাণ ভাই।
বাংলাদেশ ভারতের মত ঘনবসতি দেশে প্রতিটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের গল্প মনে হয় একই। একই ভাবে পার্বত্য চট্ট্রগ্রামে আমরা ধ্বংস করেছি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঐতিহ্য, তাদের কৃষ্টি, তাদের গর্ব। ঐ অঞ্চলের রাজাদের বাড়িঘর আর সেই সাথে তাদের নৃতাত্বিক নিদর্শনের শলিল সমাধি ঘটেছে কাপ্তাই হ্রদের বিপুল জলরাশির নিচে।
লেখাতে
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
পার্বত্য চট্ট্রগ্রামের কথা আমিও শুনেছি জাহিদ ভাই। এখানেও একই অবস্থা। আসলে আপনি ঠিকই বলেছেন সব জায়গার গল্পগুলি একই রকম। আমরা সভ্যতা গড়ার জন্য উন্নত হতে চাই। কিন্তু সেই উন্নতির জন্য কিছু মানুষকে কিন্তু বিরাট মূল্য দিতে হয়।
হুমম, দাঁড়ান আসিতেছি !
facebook
জলদি আহেন
আম্মো আসব তারেক অণুর পিছু পিছু। আমার গ্রামের নাম গোমনাতী। আহা, সেটি যদি গোমতীর তীরে হত!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
। চইলা আসেন শিগগির
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
যথারীতি দারুণ।
_____________________
Give Her Freedom!
ধন্যবাদ অলি
শেষের ছবিটা অসাধারণ!
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ধন্যবাদ ম্যাডামজী
বাহ ছবিগুলা বেশ নেচারাল লাগলো তাপসদা। আর আপনি ও কি তারেক অনুর মত শুরু করলেন নাকি, আপ্নেগো যন্ত্রনায় ল্যাবে থাকা দায় হয়ে গেসে
ধন্যবাদ। বন্দনা
২
আরে করছেন কি অনু তো পরমাণু। আমি অইলাম মশা
৩
আর আপনার যন্ত্রণার দায় আমি মাথা পেতে নিলাম
দারুন লাগলো আঁকা আর লেখা।
ছবিগুলো অসম্ভব জীবন্ত লাগলো। চলুক...
বন্দনা কবীর আপনাদের ভালো লাগাই আমার প্রাপ্তি। ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন