টিকটিকিটা টিকটিক করে উঠলো।
আজকাল কেমন যেন নির্লিপ্ত হয়ে গেছে অরুণ। চুপচাপ থাকে। আর ভাবে।
কে এই অরুণ ? আমি। অরুণ সেনগুপ্ত, আমার নাম। যদিও আজকাল লোকে পাগল বলেও ডাকে।
শব্দ কাঁধে নিয়ে চলে যাই হেঁটে হেঁটে। যতদূর সম্ভব সীমানা মেলেনা। আদি অন্ত দিগন্ত মিশে যায়।
অরুণের বৃষ্টি ভালো লাগে। সবসময় না। ইস একটু বাতাস এলে ভালো হতো। কি গরম, অসহ্য। আচ্ছা রবীন্দ্রনাথ কেন এতো লিখলো।
আচ্ছা একটু বলতো কি করে ভালো অভিনয় করা যায়? সোহিনিকে বিকেলে জিজ্ঞাসা করেছিল অরুণ।
সোহিনী বলে – সব নষ্ট। কাজেই সব অভিনয়।
কি জানি বুঝিনা কিছুই। খবরের কাগজে তো দেখি দুদিন বাদেই বের হতে দেখি অমুক দিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু আশ্চর্য হয়না। আবার মানুষ পরের ধ্বংসের খবরের জন্য অপেক্ষা করে।
একটু সময়, আবারও আমি চেতনা খুলে বসি। বাইরে একটা পাখি ডাকছে। ভোর হবে বলে। আরও পাঁচ ঘণ্টা আগেই ঘুমিয়ে পরা উচিত ছিলো। ঘুমোই নি। ভালো লাগেনা। একটু পরেই ভোরের আলো ফুটে উঠবে। জানালাটা এখন অন্ধকারে ঢেকে আছে। কি জানি আজকাল আমার কি হয়েছে। ভালো কিছু পড়া হয়নি বহুদিন। আমারই দোষ। আসলে ওষুধ খেতে খেতে আর কিছু গিলবার সময়ই পাইনা।
একটু একটু করে সময় এগিয়ে যায়। অরুণের মাথাটা স্তব্ধ হয়ে আসে। কি যেন নাম ছিল সিনেমাটার। ও হো, কিছুতেই মনে আসছে না। আরে আমি আর বুবুন একসাথে দেখেছিলাম না মালালি থিয়েটারে। ইন্দ্রনীল, মনীষা, শেখর, মনে পড়েছে। সব চরিত্র কাল্পনিক। ঋতুপর্ণ ঘোষ ভালো। আর সব চরিত্র কাল্পনিক। আচ্ছা আমিও কি কাল্পনিক।
এইবার পাগলের ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন। না, থাক। এখন আর পারব না। একটু বেড়াতো যাবো। ভোর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গলাটা এখনো টক হয়ে আছে। ঢোক গিললে কেমন যেন লাগে। আর কতদিন বাঁচব? টিকটিকিটা আবারও টিকটিক টিকটিক করে উঠলো।
রাস্তার নেমে এলাম। ঝিলিকদের বাড়িটা পেরিয়েই বাজারের দিকে রাস্তাটা। সব শুনশান, শ্মশান। ওদিকের রাস্না কিডস স্টোরস এর ঝাঁপের নিচে একটা টুকরো সাইন বোর্ড - কাস্টমার ইজ কিং, কিং নেভার বারগেনস। রাস্তাটাও ঘুমুচ্ছে এখন। আচ্ছা ভাঙা গড়ার ইতিহাস যদি লেখা হয় তাহলে অরুণ সেনগুপ্ত কি একটা ইতিহাস হতে পারেনা? একটা কুকুর রাস্তায় দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ছে। আমি তার সামনে দাঁড়ালাম। চাইলাম ওর চোখে। সে মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল। তারপর ছুটে পালিয়ে গেল। বুঝলাম ও আমাকে বলে গেছে - বেওয়ারিশ কুত্তা শালা।
=====================================
তাপস শর্মা
আমার শহর
নভেম্বর, ১৪, ২০১১
মন্তব্য
_________________
[খোমাখাতা]
ধন্যবাদ নিটোল
এত্ত মন খারাপ করা এই লেখাটা।
খুব ভাল লেগেছে।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ম্যাডামজী আপনি থাকেন কই ? আপনি বলেছিলেন একটু বেশী করে লিখতে; এর মধ্যেই তো গণ্ডা খানেক পোস্ট দিয়ে ফেললাম, আপনার তো দেখি পাত্তাই নাই
এক সপ্তাহের জন্য 'নিরুদ্দেশ' ছিলাম। ঈদের সামাজিকতা আর 'জাগো'-কে নিয়ে হিংসুটে মহলের ডামাডোলে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
এখন সব ঠিকঠাক। আপনার বাকি পোস্টগুলো পড়া শুরু করব শিঘ্রী
ভালো আছেন তো?
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
আইচ্ছা। অবশ্য না পড়লেও কিচ্ছু অইত না । আপনি ফিরা আইছেন তাতেই হাসিখুশি অইলাম।
হ। ভালৈ আছি আপাতত। আপনার খবর তো পাইলাম আপনার পোষ্টে। মন খারাপ করে দিলেন ছবি আর লেখা দিয়ে। তবে ভালো লেগেছে।
দাদা, দারুণ হলো গল্পটা। আপনি কি 'আমি থেকে আমি'-কে আলাদা করতেই আমি ও সে ব্যবহার করেছেন? স্টাইলটা অনেক ভালো। একাকিত্ব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আপনাকে ধন্যবাদ দেবানন্দ ভূমিপুত্র। গল্পের 'আমি' ও 'সে' আলাদা নয়। ওরা পরস্পর সম্পৃক্ত। চরিত্রের দ্বিধা এবং দ্বি সত্তার প্রতিফলনের জন্যই এটা ব্যবহৃত হয়েছে।
আমিও সেটাই বলার চেষ্টা করেছি। ডায়ালেক্টিসিজম একটু পড়েছিলাম তো। আর মানুষ সত্তাহীন হয়ে পড়ে, তখন তো নিজেকে 'আমি'-র বাইরে নিয়ে গিয়ে সে ভাবতে শুরু। এই মানুষটি ভীষণ একা। এটাই বোধহয় থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার কনসেপ্ট।
"থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার কনসেপ্ট" - কিনা তা বলতে পারবো না । কিন্তু উপরে আপনি যা বললেন সেটা ঠিক যে মানুষ যখন নিজস্ব একটা গণ্ডীর মধ্যে থেকে নিজেকে আলাদা করে নেয় এবং ভাবে যে আমি কে ? কী আমার উপলব্ধি ? তখনই সেটা হয়।
হুম
ভালো লাগলো তাপস দা।
ধন্যবাদ ভাইজান। আপনি ভালো পেয়েছেন আমিও খুশি
তাপসদা ছোট গল্প কিন্তু একাকিত্ব বোঝানোর জন্য যথেষ্ঠ। কেমন যেন একটু মন খারাপ হলো।
আপনাকে ধন্যবাদ মেঘা। একাকীত্ব আমার কাছে একটা বোধ মনে হয়।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ
একাকীত্বই যদি মূল পরিমণ্ডল হয়, তবে গল্পটা স্বার্থক বলা চলে.....ভাল লাগলো....আগামী গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম...
মূর্তালা রামাত
অনেক ধন্যবাদ দাদা
ভালো লাগলো অনেক।
এম্নিতে ইদানিং আমার খুব মন খারাপ, প্রায় সময় কান্না পায়; আপনি আরো বেশি করে মন খারাপ করে দিচ্ছেন!
--
বিবর্ন সময়
আসলে আমাদের ভেতরের একটা নৈমিত্তিকতার অভাব থেকেই জন্ম নেয় একাকিত্ব। আর তাতেই আমাদের চেতনা হাহাকার করে একটা হাওয়ার অপেক্ষায়। এর থেকে উত্তরণ এর পথ নিজের হাতেই থাকে।
তাই নো মন খারাপ, ওকে । মন খারাপ করবেন না। ভালো থাকবেন
ওকে, নো মন খারাপ!
ভেরি গুড
মাল্টিপল পারসোনালিটি'র মত ব্যাপার মনে হল।
ঠিক তা নয়। দ্বি-সত্তার ঝলক বলতে পারেন।
এত হতাশা কেন লেখাজুড়ে তাপসদা।
আমার চারিদিকে যে এত হতাশা, কি করব বলেন তাই কলম ধরলেই এইসব বের হয়ে যায়। তবে এখন মন ভালো করা লেখা লেখার চেষ্টাও করব ,
হুম, মন ভালো করা লেখা চাই!
মন ভালো না থাকলে কি কাজে / পড়ায় মন বসানো যায়!
এরকম মন খারাপি লেখা আমার বরাবর খুব প্রিয়। আপনার লেখার হাত এত ভালো, একবার দুম পটাশ করে একটা হাসির লেখা দিন না, একসাথে হাসাহাসি করে আড্ডাই সবাই মিলে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
হুম। আমি বুঝি সব মন খারাপের লেখা লিখি
আচ্ছা এইবার পাক্কা প্রমিস একটা হাসির লেখা লেখার চেষ্টা করবই করব
ভালো থাকুন সবসময়
মন খারাপ করা গল্প পড়লে কখনো কখনো মনটা অজান্তেই ভালো যায় - মনে হয় শুধু আমার মনটাই খারাপ নয় - অসম্ভব ভালো লাগলো লেখাটি-লেখককে ধন্যবাদ
আপনাকে ধন্যবাদ অহনা।
নতুন মন্তব্য করুন