কিছু টিনএজার পোলাপাইন মনের আনন্দে একটা ফাউন্ডেশনের ভলান্টারিতে নেমে গিয়েছিলো জিনস্ আর টি শার্ট পড়ে। মাথামোটা মহলে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেলো। ব্যপারটা এতো শত আলোচনার দাবী রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিনা সে তর্কে না যাই, কিন্তু শেষপর্যন্ত যেটা হলো, সমস্ত নিন্দা আর গালিগালাজের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো মেয়ে ভলান্টিয়ারগুলো। দেশাত্মবোধ, মহৎ উদ্দেশ্য, জাগ্রত চেতনা এতসব ব্যপারের গভীরতার সাথে খাপ খাইয়ে নিজেদের পোশাক আর অ্যাটিচুড ঠিক করে নেয়ার মতো যথেষ্ট জটিল একটা বিষয়কে(বিশেষ করে ঐ বয়সে)পাশ কাটিয়ে ওরা ওদের নিজেদের কাজটুক করে যাচ্ছিলো। সঙ্গে ছিলো ক্যামেরা, হাসিমুখ, খুনসুটি আর কিছু একটা করার আনন্দ। তো যথারীতি গেলো, গেলো বলে রব উঠলো... কিছুক্ষণ পরই তা নির্দিষ্ট এবং অবধারিত ভাবে এসে ঠেকলো মেয়েদের পোশাকে... তারপর সেখানে যেসব কমেন্ট পড়লো, তা ভদ্রসমাজে ব্যবহারযোগ্য নয়। একটা সময় রাস্তার কুকুরের অশালিন ঘেউঘেউ ঘটনাস্থলের বাতাসেই মিলিয়ে যেতো। এখন অবশ্য ডিজিটাল যুগ, কদর্য মানসিকতার এক একটি কমেন্ট নোটে, ব্লগে দাত কেলিয়ে হাসতে থাকে...!
ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল নাকি বলেছেন তরুণীদের জন্য জিনস্- ফতুয়াই উপুযুক্ত পোশাক!! তা ছাগুরা ভাল ইস্যুই পেয়েছে। সেটাকে মসলাপাতি দিয়ে ভালই খিচুড়ি পাকানো হচ্ছে। ভদ্রলোকের মেয়েটিকেও টেনে আনা হয়েছে সেই খিচুড়িতে। বেচারি...কিছুই করলোনা, অথচ ওর ব্যক্তিগত ছবি ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে অন্তর্জালে,পর্দায়, পর্দায়। ইকবালপুত্র নাবিলও দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে। ওরও নিশ্চয়ই বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন পোজ দেয়া ছবি আছে। কিন্তু ও বেটাকে কেউ টার্গেট করেনি... যুগে যুগে নারীরাই তো সবচেয়ে সেন্সিটিভ ইস্যু, আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু, মৌলবাদীদের পুরুষত্ব ঝালিয়ে নেয়ার জীবন্ত মাংস, সমাজের ভারসাম্য রক্ষার একমাত্র যাদুর কাঠি!!! জাফর স্যার তো আর এমনি এমনি বোরকা প্রসংগ টেনে আনেনি। শালীনতার অস্পষ্ট সীমারেখা নিয়ে মাথা ঘামাতে ঘামাতে আর কতদিন আমাদের মেয়েরা সময় আর মেধা অপচয় করবে, আর কতদিন এই ইস্যুগুলো তাদের সাহসকে দুমড়ে মুচড়ে দেবে...? তো সে যাই হোক... প্রতিক্রিয়াশীলদের কাজ ই হলো গেল গেল বলে চ্যাঁচানো, সে আর নতুন কি?! ইন্টারনেটই না যত ঝামেলার মূল...! নোংরা জিনিসগুলোকে খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে দেয়। আর বাংলা ভাষারও বলিহারি... মেয়েদের জন্যই বিশেষভাবে এমন কিছু শব্দ বানিয়ে রেখেছে যা আর কহতব্য নয়! জগৎ সংসারের প্রতি এধরনের বিজাতীয় ক্রোধ হতে হতে শেষপর্যন্ত হেসে ফেলি... মানবজন্মই বটে!!!
মন্তব্য
আসলে টার্গেটটা মূল কথা নয়। মূল কথাটা হল আমরা কতটা সচেতন? মেয়েরা কতটা সচেতন। আমি মানি যে মেয়েদের অনেক প্রবলেম আছে, ওরা সামাজিক বিধি কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনা। কিন্তু তারপরও কিছু কথা থেকে যাচ্ছে । যে কথাটার মূল কথা জাফর স্যার বলতে চেয়েছেন এই কথাটা বলে যে আজ থেকে ৫০ বছর আগেও যেখানে মেয়েদের হিজাব পড়তে হতোনা, তো এখন কেন হচ্ছে? সমাজ বদলে গেছে নাকি আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, নাকি মেয়েরাই ধর্মের জলাঞ্জলি হচ্ছে, নাকি ওরাই ধর্মের প্রতি ঝুঁকছে। ছাগলের দল তো চিরকাল উৎ পেতে থাকে। কিন্তু একটা কথাও কিন্তু উঠে আসছে , মেয়েরাও কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়েছে, হার মানতে শিখে গেছে। কিন্তু এটাই হচ্ছে বিপদ। ওদের সবার আগে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই বদলানো সম্ভব হবে। কিন্তু সেই প্রতিবাদের ভাষা কিন্তু মেয়েদের ক্ষীণ হচ্ছে দিন কে দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেয়ে যদি এটা মেনে নেয় যে , আমার আব্বার আব্বা বলেছে হিজাব করতে হবে, তাই আমি করব কিংবা যদি মেনে বসে যে আমি ধর্মের প্রতি আস্থা রেখে হিজাব করব কিংবা আমার কিই বা করার আছে মেনে নেওয়া ছাড়া - সবই আল্লার রেহেম। তাহলে কি করে উরররণ ঘটবে ? বদলে দিতে গেলে তো আগে মেয়েদের বদলাতে হবে । কেমন হবে রাস্তায় কয়েক হাজার মেয়ে নেমে পড়েছে আর রাস্তার মাঝখানে সব জড় করে হিজাব পোড়াচ্ছে। আর কেউ কিছু বলতে এলেই তাদের ধরে ঠ্যাঙ্গাচ্ছে। আমি শিওর কিছু কুত্তার বাচ্চা ছাড়া আর কেউই ওদের বাধা দিতে এগিয়ে আসবেনা। আর তখন কিন্তু মেয়েরাও একা থাকবেনা, আমি শিওর গড়পড়তা মানুষ যারা আমি আছি থাক বাবা, সব ভাল আছে বলে চুপ থাকে ওরাও সামনের সারিতে এগিয়ে আসবে। স্বপ্ন বলে কিছু একটা আছে, আর তাই বোধ হয় ইকবাল স্যার দেখাতে চেয়েছেন, সে স্বপ্নের দ্বার কিন্তু আপনাদের হাতে। একবার ভেবে দেখেন, হাতটা বারিয়ে এগিয়ে আসেন, ঠিক দেখবেন স্বপ্ন আপনার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। যে স্বপ্ন আপনার পাশের বাড়ির মেয়েটাও দেখে কিন্তু সাহস পায়না............
হ্যাঁ, নিজেদের যুদ্ধটা নিজেদেরই লড়তে হবে। আর যারা স্বেচ্ছায়, একধরনের যুক্তি খুঁজে পেয়ে বোরকা পড়ছে পড়ুক... ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা কোনও কাজের কথা নয়( যতক্ষণ না সেটা অন্যের ক্ষতির কারণ হচ্ছে), আমি অনেক পর্দা করা মেয়েকেও স্বীয় ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফল হতে দেখেছি... কিন্তু কথা হচ্ছে তাদের নিয়ে যাদের ওপর ব্যাপারটা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে- এদের সংখ্যাটাই বেশী। আর একটা চাপিয়ে দেয়া জিনিষ বহন করে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া কখনই সম্ভব না... একটা রক্ষণশীল সমাজ মেয়েদের ওপর অনেক কিছুই চাপিয়ে দেয়, সেসবের সাথে অহর্নিশ যুঝতে যুঝতেই মেয়েরা এগিয়ে যায় ... নিজেদের যোগ্যতাতেই... কিন্তু সমাজের এধরনের প্রবণতার মধ্য দিয়ে যখন ধর্ম-ব্যবসায়ীরা হাত ঢোকায়... আস্তে আস্তে একটা লিঙ্গের মানুষদের আটকে ফেলে সমাজের স্বাভাবিক উন্নতির গতিটাকে শ্লথ করে দেয়, শুভ-ত্বের দোহাই দিয়ে একটা অন্ধ, উন্মত্ত ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যায়, সেটা খুব ভয়ের কথা... তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে, কাঁধে কাঁধ রেখেই।
আমার তো মনে হয় বাইরের ধর্ম ব্যাবসায়ীটির চেয়ে ঘরের অতি ধার্মিক মানুষটি যে উঠতে বসতে ধর্ম নাম কপচায়, পরিবারের উপর চাপিয়ে দেয় ছড়ি ঘোরায় - সে ঐ ধর্ম ব্যাবসায়ীর চেয়েও বেশী ভয়ংকর। আগে সে অংশটাতে আঘাত করা প্রয়োজন। উৎসটা কিন্তু ওখানেই।
আর একটা জিনিষ বোরকা পড়া কোনো মেয়ে কোথাও সফল কিংবা অসফল হয়েছে সেটা প্রশ্ন হয়, আসল কথাটা হচ্ছে, মেয়েরা কেন পর্দার আড়ালে থাকবে? এর কারণটা কী? দিস ইজ টোয়েণ্টি ফাস্ট সেঞ্চুরি ইয়ার, এই সময়ে এসে যদি কেউ বলে যে , মধ্যযুগীয় বন্য কালচারের মতো মেয়েকে বস্তায় থাকতে হবে, জাস্ট লাইক সুলতানের পর্দার পেছনের বিবি কিংবা পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য হবে, তাহলে কি আর বলার থাকে ?
আর যে এই কথা বলে তাকে গালি দেবার মতো ভাষা আপাতত আমার কালেকশানে নেই। আর যে ধর্ম ব্যাবসায়ীদের কথা বলছেন ওরা আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই আমাদের অলিন্দে ঢুকে, তারপর...। - সেই ইতিহাস সবার জানা। ...
শঙ্খ এটা কিন্তু আমি আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলিনি। আমার শেষের দিকের কথায় একটু ভ্রান্তি আছে। তাই শুধরে দিলাম ।
" আর একটা জিনিষ বোরকা পড়া কোনো মেয়ে কোথাও সফল কিংবা অসফল হয়েছে সেটা প্রশ্ন হয়,"
হয় টা 'নয়' হবে।
হ্যাঁ, তা বুঝতে পেরেছি...
সহমত, বাইরের ধর্ম ব্যবসায়ীটির চেয়ে ঘরের অতি ধার্মিক মানুষটি বেশি বিপদজনক। কারণ আপন মানুষটির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা সহজ নয়। আর প্রতিবাদটা উৎস থেকেই শুরু করা উচিত। 'মেয়েদের পর্দার আড়ালেই থাকতে হবে' এই অবস্থাটা কোনওমতেই কাম্য নয়। এবং এই অবস্থাটা এড়াতেই এতো কথা হচ্ছে... আর যে যাই করুক না কেন, একজন নিরীহ ধার্মিক মানুষেরও জানা উচিত যে ধর্মটাকে প্রগতির অন্তরায় হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়...
এসব নিয়ে আরো বেশি কথা বলতে হবে, নাহয় ঐ বলদগুলো ভাববে আমরা তাদের কথা মেনে নিয়েছি। সবচেয়ে মজা পেয়েছি একটা ব্যাপার দেখে। কেও যদি তাদের কথাগুলো প্রতিবাদ করে তাহলে সে হয়ে যায় নাস্তিক! হ্যাঁ, এ ব্যাপারটা আলাদা যে অনেক নিধার্মিকই ( আমিও) ব্যাপারটির প্রতিবাদ জানিয়েছে, কিন্তু এর সাথে অনেক ধার্মিকও এই নষ্টামীর প্রতিবাদ করেছে, তারাও নাস্তিক উপাধি পেয়েছে। এদের খুব ভাল (!) একটা ক্ষমতা আছে যেটা হলো, যেকোনো বিতর্কিত বিষয়কে আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচালে রূপান্তরিত করতে পারে। এই ইস্যুগুলোতেও একই ব্যাপার ঘটেছে।
_________________
[খোমাখাতা]
আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচালে রূপান্তরিত করবেই... যাদের আঁতে ঘা লাগছে তারা এ কাজটাই দিনের পর দিন ঠাণ্ডা মাথায় করে এসছে... আলোচনাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা খাতে নিয়ে গিয়ে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে বাড়ি দিয়ে, খেপিয়ে তোলা ... তাদের উদ্দেশ্য সাধিত হলেই হলো, যে দু একজন আছে এদের বিরুদ্ধে কথা বলার, তাদের থামিয়ে দিতে পারলেই মুস্কিল আসান...! সেটা যেভাবেই হোক, পরম শ্রদ্ধাস্পদ মাতৃ জাতির কারও ছবি চুরি করে হলেও! আহা... এদের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ভঙ্গী দেখে চোখে পানি চলে আসতে চায়...!!! এরা নিজেদের সাথে সাথে বাকি সবাইকে ছাগল ভাবা শুরু করেছে...!
প্রথম প্যারাটি চমৎকার লিখেছেন
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
।।
ধন্যবাদ
@ উচ্ছলা ও বন্দনা আপু
ছোট হলেও লেখাটা আপনার লেখার ধার বোঝায়। আরও লিখুন।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ধন্যবাদ। ইচ্ছে করেই ছোটো লিখেছি... বেশি লম্বা জিনিষ পড়তে আমার নিজেরই ভালো লাগেনা। আমারও বোধহয় পাঠক সত্তা টা ঝিমিয়ে পরছে... ভাবলে ভালো লাগেনা
যুগে যুগে নারীরাই তো সবচেয়ে সেন্সিটিভ ইস্যু, আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু, মৌলবাদীদের পুরুষত্ব ঝালিয়ে নেয়ার জীবন্ত মাংস, সমাজের ভারসাম্য রক্ষার একমাত্র যাদুর কাঠি!!!!
সেই...
নতুন মন্তব্য করুন