ওরা ভেসে যায়
নৈসর্গিক
প্রকৃতির প্রাণ স্পন্দন ডুম্বুরের হৃদয় জুড়ে
ভুলে থাকার অঙ্গীকার
হঠাত দেখলাম সুকান্ত তার মোবাইল ফোনটা নিয়ে কি সব যেন করছে। অপর বন্ধু বিমল বোটের ভেতরে ব্যাগ খোলায় ব্যাস্ত। সুকান্ত হাতটা উপরে তুলে মোবাইল ফোনটা নাড়ছে। আমি বললাম কি করছিস। উত্তরে সে বলল – নেটওয়ার্ক আনার চেষ্টা করছি। আমি বললাম – এই করে নেটওয়ার্ক আনা যায়? ও বলল – আলবাত যায়। আমি বললাম – গুড। ও বলল – আরে উঁচু জায়গা থেকে মোবাইলে শক্তি সঞ্চয় করাচ্ছি। আমি হাসি সামলে বললাম, ঠিক আছে। তোরটার জন্য শক্তি সঞ্চয় করা হলে আমারটার জন্যও করিস। জবাবে সুকান্ত যেন কি বলতে যাচ্ছিল। এমন সময় দেখি বিমল কি যেন নিয়ে ভেতর থেকে উপরে আসছে। এসেই একটা উৎকট আওয়াজ করল, অনেকটা আশির দশকের হিন্দি সিনামার ভিলেন যখন পর্দায় আসত ঠিক ওই টাইপের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক স্টাইল। হাতে বিয়ার এর ক্যান! আমি কিছু বলার আগেই বলে – দোহাই তোর, বিয়ারে আপত্তি করিস না। আমি বললাম – আপত্তি আছে। আমি এখন কাজ করছি। আর তোরা কিরে। এত পয়সা দেদার উড়াচ্ছিস? বিমল চুপসে গেলো। এইবার এগিয়ে এলো সুকান্ত – দেখ বস, জীবন একটাই, সো একটু খাই দাই মস্তি করি, তুই বাবা তোর ক্রিয়েটিভিটি ফিয়েটিভিটি নিয়ে থাক না। এই বলে সে একটা ক্যান তুলে নিল।
কিছুক্ষণ আমাদের মধ্যে কথা বন্ধ। ওরা দুজন অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বিয়ার টানছে। বুঝলাম এইভাবে ওদের কড়া কথা বলাটা উচিত হয়নি। আসলে ওদের এখানে আসার কোনো দরকারই ছিলনা, অথচ আমার জন্য ওরা এভাবে এসেছে। ভাবলাম না, এভাবে চুপ না থেকে ওদের সাথে ব্যাপারটা হাল্কা ভাবে শেয়ার করি। এমন সময়ই ঘটল সেই অঘটন। হঠাত বিড়ালের আওয়াজে আমরা চমকে উঠলাম। এই ভরা নদীর মাঝখানে বিড়াল এলো কোত্থেকে? আমরা তিন জনেই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছি। এমন সময় ভেতর থেকে আমাদের ড্রাইভার মাথা বের করে বলে – দাদা মোবাইল বাজছে। আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম – বিমল একলাফে বোটের ছাদ টপকে ভেতরে গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে হাজির। কি করে হল? নেটওয়ার্ক কি করে এলো? আবার ফোনটা দেখি আমার! আর আমার মোবাইলে বিড়াল এর রিংটোন কে সেট করল? নির্ঘাত এদের কাজ।
আমার ফোন আমাকে না দিয়ে বিমল রিসিভ করল। রিসিভ করেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফোনটা পেছেনের দিকে নিয়ে চেঁচিয়ে উঠল – মাইয়ার গলা, তোর জন্য, হি হি হি।
আমি তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলাম। কার না কার ফোন কি জানি ভেজাল লাগায়। ফোনটা নিয়েই দেখলাম না , অচেনা নাম্বার। হ্যালো বললাম। ওপ্রান্তে – কি রে। কে রিসিভ করেছিলো? আমি আচমকা বুঝে উঠতে পারলাম না। কে? ফোনের অপর প্রান্তে আবার প্রশ্ন – কি রে কথা বলছিস না কেন? আমি বললাম – আসলে আপনাকে ঠিক? এইবার চমকানোর পালা – আমি তোর মা, গাধা। এইবার বুঝলাম – সঙ্গীতা? এই সময়ে? কোত্থেকে? কিভাবে?
একটু ধাতস্ত হয়ে বললাম – কেমন আছিস। সে বলল – ভালো আছি।
কত বছর পর ওর সাথে কথা হচ্ছে। স্কুলের দিন গুলিতে কত মস্তি। কত ভালো মুহূর্তের সাক্ষী আমরা। তারপর আমার নতুন কলেজ। আর সঙ্গীতার বিয়ে। সেই বিয়েতে আমার যাওয়া হয়নি। কলেজের শেষের দিকে তখন। আমি আলাদা কলেজে পড়লেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বন্ধুদের সাথে। এইভাবেই একদিন জেনেছিলাম, সঙ্গীতা আমাকে ভালোবাসে, আশ্চর্য আমাকে কোনো দিনও বলেনি! আর সত্যি কথা বলতে আমার নিজেরও ওর জন্য এমন কোনো ফিলিংস ছিলোনা। তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছে, ওর বিয়ে হয়ে গেছে, শুনেছি ও নাকি খুব কেঁদেছিল। আমার বিশেষ খারাপ লাগেনি। আসলে জীবনে এত কিছু দেখে নিয়েছিলাম ওই বয়সেই। আমার পরিবারের উত্থান এবং পতন, বাবার ব্যাবসায় ছন্দপতন, কাকাদের সাথে ঝগড়া এবং সব ছেড়ে, সমস্ত কিছু কাকাকে দিয়ে আমার বাবার গৃহ ত্যাগ। সে অনেক কাহিনী। ফলে আমি ভীষণ কাঠ খোট্টা এবং আন রোমাণ্টিক হয়ে গিয়েছিলাম তখন থেকেই। তাই সঙ্গীতার ঘটনা আমাকে বিচলিত করেনি। বরং ওর উপর আমার রাগই হয়েছিলো। কেননা এই ব্যাপারটা ওর বাড়িতে পর্যন্ত জেনেছিলো। অথচ আমাদের মধ্যে কিছুই ছিলো না। কিন্তু সে অনেক কাল কেটে গেছে। সেই বিয়ে হওয়ার চার বছর পর একবার ওর সাথে দেখাও হয়েছিল। কথাও বলেছিলাম। তবে আমাদের মধ্যে তবুও কেন জানি একটা দেওয়াল তৈরী হয়ে গিয়েছিলো। কি ভাবে আমরা এক সাথে স্কুলে আনন্দ করতাম। তারপরতো সব বদলে গেছে। তখন ও আমার ফোন নম্বরটা নিয়েছিলো। ওরটাও দিয়েছিলো। আমি মোবাইল পাল্টেছি বহুবার, তাই ওর নাম্বারটাও হারিয়ে গেছে। এই কয়েক বছরে ও মাত্র দুইবার ফোন করেছিলো। খুব সামান্য কথা। কিন্তু আজ হথাত, এইভাবে, ওর ফোন? তাও নেটওয়ার্কহীন জায়গায়?
ফোনটা লক্ষ্য করে দেখলাম, টাওয়ারের স্থানে মাত্র একটা দাগ শো করছে। যাই হোক অনেক কথা হল ওর সাথে। সে কথা থাক। আর বলব না। একান্ত মনের কোনে সযত্নে রেখে দিয়েছি। মেয়েটা একটুও বদলায়নি। আগের মতোই আছে। আর এখন ও পাক্কা গৃহিণী, দুই সন্তানের মা। আমার শুটিং এক কথা শুনে খুব আগ্রহ দেখাল, বলল ওকে দেখাতে হবে। আমি বললাম দেখাব।
তারপর আমি আবার কাজে ডুবে গেলাম। যদিও বিমলদের হাজারটা প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হয়েছিলো। কিন্তু আমি ভাবছিলাম। সামনে বিপুলা গোমতী। প্রকৃতির সুর। এইভাবেই প্রকৃতি আমাদের ভালোবাসা দেয়, আবার ছিনিয়েও নেয়। এই তো জীবন.........
---------------*----------------
এবং আমিঃ এইতো জীবন। পর্ব – ১
===============================
আমার শহর
নভেম্বর, ১৬, ২০১১
মন্তব্য
facebook
মুগ্ধতা জাগানিয়া সব ছবি আর ভিডিও। তা মশাই আপনার ক্যামেরার একটা ছবি দিন না!
আপনারে নিয়া আর পারলাম না মিয়া। এখন ছবির পর ছবির ধারক এর ছবি দেখত মঞ্চায় আপনার। এই সিরিজের আগের কয়েকটা পোস্টেই আমার ছবি আছে উইথ ক্যামেরা। আমার ফ্লিকার অ্যাকাউণ্ট থেইকা ঘুইরা আসেন। আমারেও পাইবেন আর আমার ক্যামেরারেও পাইবে। হে হে তিনখান আছে। একখান আমার বাবাপ্রদত্ত, একখান বন্ধুপ্রদত্ত আর একখান দাদাপ্রদত্ত। যদিও ওদের ক্যামেরা আমার কাছেই থাকে বেশীরভাগ সময়। দুইটা ‘সোনি’ মামির আর ভিডিওটা আইটিসির।
টেস্ট
মুর্শেদ ভাই এসিডটেস্ট নাকি?
প্রথম ফটোটা চুরি করার অনুমতি চাই। অনুমতি না দিলেও চুরি হবে ওটা...খিক খিক
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
আচ্ছা অনুমতি লাগবে না ম্যাডামজী । অলরেডি নেওয়া হয়ে গেছে নিশ্চয়ই
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ
চলুক!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ আপনাকে
এহসান ভাই অনুমতি লাগবে না, নিয়ে নিন
আমার শুভকামনা নেবেন ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাই তাপস শর্মা, ছবি কিন্ত খুব ভালো পেলাম। প্রথম ছবিটা অনুমতি না নিয়েই সেভ করে নিয়েছি। বিবরে জমে থাকা বিষাদের ঘুণপোকা ফিরে যাক এই উত্তপ্ত সময়ে!
এহসান ভাই অনুমতি লাগবে না, নিয়ে নিন
আমার শুভকামনা নেবেন ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অচাম সব ছবি!
_________________
[খোমাখাতা]
ধন্যবাদ নিটোল। আসলে ছবি গুলি শেষ কথা নয়। আমি মূলত কথাই বলে যেতে চাই।
অসাধারণ
আপনাকে ধন্যবাদ শাব্দিক
সমীরণ দাদা। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সচলায়তনে আপনাকে স্বাগত জানাই। খুব ভালো লাগলো
বা: তাপস, অপরিচিতের কাছে এটি গল্প হলেও, সারাজীবনে আমাদের মাত্র আধঘন্টার ব্যক্তিগত, মুখোমুখী পরিচয়ের নিরিখে আমি নিশ্চিত, এ তোমার জীবন-আলেখ্য যার প্রতিটি বাঁকে-ই প্রতিফলিত লেখকের জীবন-দর্শন।।
খুব ভালো লাগলো।।
খুব ভালৈছে তাপস দা চলুক
নতুন মন্তব্য করুন