আজকের প্রানীটি দেখতে বাদামী রঙের, তুলনামূলকভাবে ছোট-খাট, নিশাচর এবং স্তন্যপায়ী।১ এই প্রানীটি সবার কাছেই বেশ পরিচিত। প্রানীজগতে এর সুখ্যাতি রয়েছে 'সিভিল ইঞ্জিনিয়ার' হিসাবে। এটি আর কেউ নয়, স্বয়ং বীভার মহাশয়। কানাডা ও উত্তর আমেরিকায় এদের বাস। এক সময় সারা পৃথিবীতেই এদের ইঞ্জিনিয়ারগিরির প্রমান পাওয়া যেত, কিন্তু চামড়ালোভী কিছু মানুষের নিধনযজ্ঞে মারতে মারতে এদেরকে কোনঠাসা করে ফেলেছে।
বীভার Rodentia বর্গের,Castoridae পরিবারের অন্তর্গত। মাটি, পানি, আর গাছের ডালপালা মিশিয়ে নিজেদের বাসা নিজেরাই তৈরি করে (ইঞ্জিনিয়ার বলে কথা!) । বীভারদের বাসাকে 'বীভার লজ' (Beaver lodge) বলে ডাকা হয়। ১ বীভার লজ হাত-পাঁচেক চওড়া এবং উপরের দিকে কিছুটা সুচালো হয়।২ এরা পানিতে আর ডাঙাতে দুই জায়গায়ই বেশ মানিয়ে নিতে পারে।
এদের একটা অনন্য গুন হলো এদের দলবদ্ধতা। যখন কোন বিপদ এসে হাজির হয় একটি বীভার পানিতে ঝুপ করে ঝাপ দিয়ে তার বিশাল লেজ দিয়ে পানির উপর বাড়ি দিতে থাকে । পানির ছপছপ শব্দে অন্য বিভার গুলোও সাবধান হয়ে যায়। বাড়ির কাছাকাছি থাকলে টুপ করে বাসার মধ্যে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে থাকে, আর না হলে লম্বা একটা দম নিয়ে পানির নিচে ডুব মারে। এভাবে একটি বীভার পানির নিচে প্রায় ১৫ মিনিট দম না নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে।১
এক একটি বীভার লজে একজন কর্তা বীভার, দু-তিনটি মাদী বীভার আর একগোছা বীভারছানা থাকে। একটু বড় হলে বাসা থেকে ছানাদের ঝাড়ি দেয়া হয়-"বুড়ো-ধারি ছেলে, এবার নিজের লজ নিজে বানিয়ে নাওগে।" বীভার যুবক তখন বের হয়ে পরে। একই জায়গায় বেশি ভীড় করে থাকলে খাবারের সংকট দেখা দেবে। তাই তারা কাছে পিঠে বাসা তৈরি করে না। নিরুদ্দেশের পথে বেড়িয়ে খুঁজতে খুঁজতে বদ্ধ জলাশয় পেলে সেখানে বাসা বাধে। কোন মাদী বীভার সেটা দেখে বীভার যুবকের প্রেমে পড়ে যায়। তখন তারা সুখে শান্তিতে বাস করা শুরু করে।
কিন্তু যদি বদ্ধ জলাশয় না থাকে? ঠিক তখনই এদের 'ইঞ্জিনিয়ার' খেতাবের মাজেজাটা বোঝা যায়। প্রথমে ওরা একটা ছোটখাট জরিপ চালিয়ে নেয়, যেমন বৃষ্টি হলে পানি কোনদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়, স্রোত কোনদিক থেকে আসে ইত্যাদি। তারপর কুটুর কুটুর করে গাছ কেটে নামায়। এরা দেহে তিন-চারগুন বড় গাছকে অনায়াসে কেটে নামিয়ে নিতে পারে। তারপর ছোট ডালপালা ফেলে গড়িয়ে নিয়ে এসে নদীতে জড়ো করে। এরপর পাথর গড়িয়ে এনে ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। সব শেষে কাদামাটি এনে ছোট ছোট ফাঁক ফোকড় ও বন্ধ করে ফেলে।
বাঁধ নির্মান শেষ করে বর্ষা আসার আগেই। বৃষ্টি এলে ওখানে একটা ছোটখাট জলাশয় তৈরি হয়ে যায়। সাধারনভাবে এসব বাঁধ ১০ থেকে ১০০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বড় বীভার-বাঁধটির দৈর্ঘ্য ২৮০০ ফুট ৪ এবং সেটি এখনও অক্ষত রয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে নতুন বীভারদল এসে বাপ দাদার কাজের উপর কাজ করে যাচ্ছে।
আজকাল যেভাবে চারিদিকে নির্মান ভেঙ্গে পড়েছে, হয়তো এই বীভারগুলিকে প্রশিক্ষন দিয়ে নির্মান করলে সেটা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতো!!!
পুনশ্চঃ পদ্মাসেতুর দায়িত্ব এই বীভার মহাশয়দের দিলে কেমন হয়?
আগের পর্বগুলি-
আজব সব জীবগুলি-১
আজব সব জীবগুলি-২
আজব সব জীবগুলি-৩
frdayeen(দায়ীন)
মন্তব্য
শেষবাক্যে এসে ফিক করে হেসে দিলাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লেখা ভালো লাগল।![চলুক চলুক](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/yes.gif)
_________________
[খোমাখাতা]
২০০২ সাল, তখন চতুর্থ বর্ষে পড়ি। হাইড্রোলিক মডেলিং নিয়ে কাজ করছিলাম, সেখানেই প্রথম বিভার ড্যামের কথা জানতে পারি। প্রথমে বুঝিনাই এইটা কি। পরে ইউএসএ তে পড়াশুনা করে এসেছে এরকম একজনের ( সালেকিন ভাই, এখন বুয়েটের IWFM এর সহযোগী অধ্যাপক) সাথে আড্ডা দেবার সময় বিস্তারিত জেনেছিলাম। আর এখন কানাডাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিভার ড্যাম আছে। এখানে ছোটদের টিভি প্রোগ্রামে বিভার ড্যাম নিয়ে কার্টুন বাচ্চাদের খুব প্রিয়। আমার চার বছরের ছেলে নির্ঝর মোটামুটি বিভার ড্যাম নিয়ে লেকচার দিয়ে দিতে পারে।
তবে এই ভাইজানরে পদ্মা ব্রিজের দ্বায়িত্ত্ব না নিয়ে বরং গঙ্গা ব্যারাজের দ্বায়িত্ত্ব দেয়া যেতে পারে
, বস্তুত সেইটাই তার কাজ।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
বিভার নিয়ে বাংলায় সেরা লেখাটা সুকুমার রায়ের। তাঁর মতো কেউ লেখে না। এখন তো আরো অনেক নতুন তথ্য পাওয়ার কথা। এদের নিয়ে গবেষণা কেমন হয়েছে জানেন?
লেখা চলুক।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হুম, তা ঠিক আজকাল বীভারদের সম্পর্কে অবশ্য আরও নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার হচ্ছে।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
দারুন![চলুক চলুক](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/yes.gif)
একটা বীভার পুষতে ইচ্ছা করছে![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
জাস্টিন বীভারকে গোদ নিয়ে পুষতে পারেন![চিন্তিত চিন্তিত](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/39.gif)
_________________
[খোমাখাতা]
চমৎকার।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ভালো লাগলো। কিন্তু এবারো কেমন যেন অতৃপ্তি থেকে গেলো। আরও কিছু তথ্য যোগ করতে পারতেন, যেমন ওরা কী খায়, মানুষের কল্যাণে তাদের জেবনের উপর কোন বিরূপ প্রভাব পড়ছে কিনা, এইসব আর কি।
ধন্যবাদ।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
বিভার নিয়ে সেই ছোটোকালে সুকুমার রায়ের লেখা পড়েছিলাম। পরে বড় হয়ে জেনেছি বিভার কথাটার একটা দুষ্টু অর্থও আছে। মুমিনের মন বড় বিচিত্র জিনিস, কোত্থেকে যে কী ভেবে বের করে ...
বীভারের লেজটা সমন্ধে কৌতুহল ছিল। অমন চেপ্টা কি না? ওটা কি শক্ত টেবিল টেনিসের র্যাকেটের মতো নাকি নরম, ইত্যাদি আর কি...
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এ ব্যাপারে ব্লগার তারেক অণুকে জিজ্ঞাস করে দেখতে পারেন, উনার অভিজ্ঞতা থাকলেও থাকতে পারে!![খাইছে খাইছে](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/10.gif)
যাদের সুযোগ আছে, দেখতে পারেন এই ছোট্টো ভিডিওটি
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
চমৎকার একটি ভিডিও । শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
হে হে, আমি আগেই বলেছিলাম আপনার প্রশ্নের উত্তরে বীভার !
বীভার কিন্তু ইউরোপেও থাকে, কিন্তু আলাদা প্রজাতি। মানুষ নামে কিছু গর্দভেরা সেটা না বুঝে আমেরিকান বীভার এনে ছেড়েছিল এইখানে, ফলশ্রুতিতে আকৃতিতে ছোট খাট ইউরোপিরান বীভারেরা এখন নিজ ভূমে পরবাসী, বিলুপ্তির মুখে বলা যায়। বার কয়েক ওদের বাড়ীর পাশে ঘাপটি মেরে বসেছি বীভার ছানার ছবি তোলার জন্য, শিকে ছিঁড়ে নি এখনো।
একটা কথা, বীভারেরা কিন্তু তাদের বাড়ি ভাড়া দেয়, মানে জলজ ইদুরদের থাকতে দেয়, বিনিময়ে পায় রসালো লতা-পাতা, এই জিনিসটাও দারুণ।
facebook
বীভারদের বাড়িতে চলাচলের জন্য একাধিক পথ থাকে! আপনাকে দেখে সম্ভবত ওরা দল বেঁধে ঘাপটি মেরেছিলো!![খাইছে খাইছে](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/10.gif)
অসাধারণ লাগলো,সত্যিই পদ্মাসেতুর দায়িত্ব বিভারদের দেওয়া যায়!!![দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/4.gif)
অণু ভাই,ধন্যবাদ আরও নতুন কিছু জানানোর জন্য,আপনার মন্তব্য লেখাটা আরও সমৃদ্ধ করল!স্পর্শের ভিডিওটা আগেই দেখা,তবুও প্রাসঙ্গিক!!চলতে থাকুক আজব সব জীবগুলি!
দারুণ।
খাসা![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আপনি লুক খ্রাপ, কি যে পাইছেন, একটা কিছু পাইলেই সবাই মিল্যা টাইন্যা মাইন্যা আবুল পর্যন্ত লয়া যান। হেয় বেচারা একা একা যে এত বড় একটা সেতু কাইত কইরালাইলো তার কোন স্বীকৃতিই নাই!!!
নতুন মন্তব্য করুন