জীবনে আমার চাওয়া পাওয়া বলতে বিশেষ কিছু নেই। হয়তো মহান কথা বলে ফেললাম। কিন্তু সত্যি করে বলছি আজ অবধি যত টুকু দরকার তার চেয়ে বেশী চাইনি, চাইনি জীবন থেকে। হয়তো তাই বারবার প্রতারণার শিকার হতে হয়।
ডুম্বুরভ্যালীতে আমার দ্বিতীয় দিন খুবই ব্যাস্ততার মধ্যে কেটেছে। সারাদিন শুটিং সেরে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। মন্দিরঘাট থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার জলপথে নারিকেলকুঞ্জের(আইল্যান্ড) সফরে আমি যা খুঁজে পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করা দুর্লভ। প্রকৃতির ভাষা যে এত সজীব হয়ে কথা বলে তা আমার জানা ছিলানা। প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটা ছোট বড় আইল্যান্ড আছে নারিকেলকুঞ্জ জুড়ে। প্রকৃতির হেঁয়ালির শিকার হয়েছি বারবার। কখনো রোদ তো আবার কখনো বৃষ্টি। সব মিলিয়ে একটা অনাবিল আনন্দ। আর আনন্দের অন্যতম কারণ অবশ্যই ছিল আমার ডকুমেন্টারির নির্মাণ পর্ব। অনেক আশা বুকে বেধে নিয়েছিলাম। অসফল হয়নি। মোট ৬০০ এর উপর শট নিয়েছিলাম। প্রকৃতির রংবেদনা, মানুষের হাহাকার, মনের শান্ত পরশ সব নিয়ে আমি ফিরে এসেছি পরের দিন। তিন দিনের সফর শেষে। এই সফরে আমি অনেকের সহযোগিতা পেয়েছি। বিশেষ করে ওখানকার স্থানীয় জেলেদের। এবং অবশ্যই গোমতী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কিছু কর্মীর। যাদের সহযোগিতা ছাড়া আমি আমার কাজ করতে পারতাম না।
স্পন্দন ডুম্বুরভ্যালীর হৃদয় জুড়ে
সফর গোমতীর পথে
মন্দাক্রান্তা বৃষ্টি নামায় নিশানা উড়িয়ে দেয় দহনে...
যাযাবর তরুলতায় অস্থির বিসর্জনের গীত রচে যায় বাউল ফকির
ললাট বেয়ে একটা পরিপূর্ণতা নেমে আসে
আগরতলায় ফিরে এসে অন্য কাজ নিয়ে ডুবে গেলাম। ডিপার্টমেন্টের প্রোজেক্ট সাবমিশন সংক্রান্ত অনেক ঝামেলা সামলাতে সামলাতে জুন মাসটাও কেটে গেলো। কিন্তু ডকুমেন্টারির পোস্ট প্রোডাকশানের কাজ কিছুই করা হয়নি। তারপরেই জুলাই মাসের প্রথম দিকে এমন একটা ঘটনা ঘটল যার জেরে আমার জীবনটাই পাল্টে গেলো। যার কিছু কথা আমি এই সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে কিছুটা বলেছি। অনেক সময় লেগেছে এই সময়টা কাটিয়ে উঠতে। যদিও এখনও ভালো ভাবে সামলে উঠতে পারিনি। তবে সুমনের গানের মতো এখনো দিবা স্বপ্ন দেখি। কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে বাউন্ডুলে জীবন কাটাতে আর কারই বা ভালো লাগে। তাই আবারও উঠে দাঁড়াতে চাই। একটা নতুন কিছুর আশায়। কিছুদিন আগেও স্তিভ জোবস এর মৃত্যুর পর ওনার একটা স্পিচ দেখছিলাম, যতবার দেখি ততবারই মুগ্ধ হয়ে যাই। জীবনে সব কিছু – ভালো খারাপ, সব কিছুর মধ্যেই লোকটা কি করে একটা দিশার সন্ধান খুঁজতেন। তাই তাঁর ভাষায় – ততদিন খুঁজতে থাকো, যতদিন না সন্ধান সম্পূর্ণ হয়। এই সফর বোধ হয় জারি থাকবে জীবন জুড়ে। তাই এইমাসের প্রথম দিকে আবারও শুরু করেছি ফিল্মটার এডিটিং এর কাজ। জানিনা কত সময় লাগবে। কেননা উন্নত প্রযুক্তির কোনো ল্যাবে আমার পক্ষে খরচ করে কাজটা করা সম্ভব নয়। তাই নিজেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সফল – অসফল, কি পাবো – কি হারাবো, জানিনা। জানিনা এর পরিণতি কোথায় লুকিয়ে আছে। কিংবা আমার পরিণতি কোন জায়গায়। জানিনা জীবন কি দেখাবে আবার নতুন করে। শুধু এতটুকু জানি লাইফ এগিয়ে যাবে। তাই আমার খোঁজও অব্যাহত থাকবে। ‘স্টে হাংরি স্টে ফুলিশ’।
আমার ডকুমেন্টারির নাম দিয়েছি – সফর গোমতীর পথে। যে সফর আমার জীবনের একটা মাইল স্টোন হয়ে থাকবে। হয়তো কিছুই থাকবে না। কিন্তু থাকবে কিছু ধূসর স্মৃতি।
ডুম্বুরভ্যালীতে বসেই লিখেছিলাম দু’টো লাইন। আজ অনেকদিন পর খাতা থেকে তুলে দিলাম : তোমার ইতিহাসে আমি পরাবাস্তব হয়ে পারি। কিন্তু ইতিহাসের খাতায় আমরা ব্রাত্য হয়েই থেকে গেলাম। কেননা যুগ যুগ ধরে আমাদের মতো হতচ্ছাড়ারাই বয়ে চলছে পৃথিবীর মৃতদেহের স্তূপ।
---------------*----------------
এবং আমিঃ এইতো জীবন। পর্ব – ১
===============================
আমার শহর
নভেম্বর. ২১. ২০১১.
মন্তব্য
অসাধারণ। আপনার সাথে সফর আসলেই অসাধারণ। জীবন মাঝে মাঝে সামান্য চাওয়াকেও আমল দেয়না আবার মাঝে মাঝে দুইকূল ছাপিয়ে উজাড় করে সব দেয় যা হয়তো নেবার সামর্থ্য থাকেনা মানুষের। (আজ ইমো দিতে পারছিনা )
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার সফর সঙ্গী হবার জন্য। আশা করি ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন...
দারুন
ইস্কান্দর ভাই আপনাকে ধন্যবাদ।
চালিয়ে যাও, তাপস ০০০০ বহমানতাই জীবন, থমকে থাকা নয় ০০০ You have Your Right in Discharging Your Duties only.....মা ফলেষু কদাচনম্।। আরেক টি কথা মনে রেখ ০০০ ''সব পেলে...... নষ্ট জীবন'' ।।
''THERE IS PLEASURE IN THE PURSUIT ০০০০০০০০ THAN IN THE ATTAINMENT...''
NOW, JUST GO AHEAD.....because You Are DESTINED TO SUCCEED.....
ধন্যবাদ সমীরণ দা পাশে থাকার জন্য।
মাথা নষ্ট করা ছবি।
অনেক ধন্যবাদ শাব্দিক ,
facebook
চরৈবেতি, চরৈবেতি। চলার নামই জীবন, থেমে থাকা মৃত্যুসম।
খুব ভাল লাগলো, ছবি এবং আপনার অনুভূতি।
পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ অণু
ধন্যবাদ প্রৌঢ় ভাবনা। জীবন থেমে থাকবেনা, হয়তো আমিই একদিন থেমে যাবো। তবে সফর জারী থাকবে যতদিন শেষের কাব্য রচিত না হয়। ভালো থাকুন।
( শর্মাজী খালি চামে চামে চেহারা দেখায়)
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ধন্যবাদ ম্যাডামজী
কিন্তু চামে চামে চেহারার অর্থ বুঝি নাই
ধন্যবাদ কল্যাণ ভাই
ভালো লেগেছে তাপস, লেখা আর ছবি দুই ই।
আর আপনার করতে চাওয়া কাজটির জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ তুলিরেখা। প্রতি শুভেচ্ছা নিয়েন
২০০৮ সালে গিয়েছিলাম আগরতলায়, উদয়পুরে, মেলাঘরে, সিপাহীজলায়, আরো কত কত জায়গায় এবং গোমতীর পাড়েও। ইচ্ছা ছিল জাম্পুই হিলস যাওয়ার, কিন্তু স্থানীয় বন্ধুদের পরামর্শে যাওয়া হলো না! আগামীবার আবার যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
ত্রিপুরার যে জিনিসটা বেশি টানে, সেটা হলো সেখানকার প্রকৃতি। প্রচুর গাছ। বিশেষ করে আগরতলা থেকে যখন উদয়পুরে যাই (উদয়পুরই তো!) তখন মাঝখানে পাহাড়-পর্বতের মাঝখান দিয়ে আর্মি কনভয় করে নিয়ে গিয়েছিল বেশ খানিকটা জায়গা। ওই অপরূপ এলাকাটা আজো মিস করি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
চলে আসুন যেকোনো সময় আরেকবার। জম্পুই হিলস প্রকৃতির অন্যতম মেলবন্দন। অসম্ভব সুন্দর। আরও অনেক কিছু......... আসার আগে একটা আওয়াজ দিয়েন। বান্দা হাজির হয়ে যাবে। ভালো থাকুন
দারুণ! চেষ্টা চালিয়ে যান এক দিন ঠিকই সাফল্য ধরা দেবে। প্রত্যেকের জীবনকাহিনি কিন্তু কম বেশি এক রকমই। সংগ্রাম, নিরন্তর সংগ্রাম, দুঃখ, হতাশা, ব্যর্থতা তবু থেমে না যাওয়া।
অটঃ গোয়েন্দাগিরির কী হলো???
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন জহিরুল ভাই
অটঃ গোয়েন্দাগিরির উত্তর আপনার পোষ্টে দিয়েছি।
আপনার দেয়া ছবিগুলো দেখতে বেশ লাগে। প্রকৃতিকে অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করেন, সেটা দেখতে ভালো লাগে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
। ধন্যবাদ আশালতা। প্রকৃতির একটা আলাদা আবেশ আছে, আর সেটাই মনে সবসময় ভালো লাগে।
নিজের দেশ দেখে নিন ভাই, পরে সময় পাবেননা। নিরন্তর শুভকামনা আপনার জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন