কনফুসিয়াস ও তাঁর ধর্ম

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৩/১১/২০১১ - ৯:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ধর্মপ্রচার নয়, বিভিন্ন ধর্মমত সম্পর্কে যৎসামান্য জানার প্রচেষ্টা মাত্র।

ধর্মসার- (১) লাও-ৎসু ও 'তাও'
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/42052

ধর্মসার- (১) লাও-ৎসু ও 'তাও' এর বাকি অংশ
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/42111

কনফুসিয়াস ও তাঁর ধর্ম

৫৫১ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে চীনদেশের লু রাজ্যের কুফু নগরীতে কনফুসিয়াস জন্মগ্রহন করেছিলেন। খুঙ-ফু-ৎসে হল তাঁর চীনা নাম। লাতিনে এই নাম কনফুসিয়াস হয়েছে।

কনফুসিয়াসের পিতার নাম 'কং-হি' এবং মাতার নাম 'হান-ঝেঙ'।

শিশুকালেই কনফুসিয়াস পিতৃহারা হন এবং চরম দারিদ্রের ভিতর তাঁর ছেলেবেলা কাটে। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি কখনও মেষপালক কখনও কেরানীগিরি কখনওবা লাইব্রেরিয়ানের চাকুরি করেছেন। ১৯ বৎসর বয়সে কনফুসিয়াস বিয়ে করেন এবং পরের বছরই তিনি পিতা হন।

কনফুসিয়াসের যখন ২৩ বৎসর বয়স তখন তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। তিনি প্রচলিত চৈনিক রীতি অনুযায়ী তিন বৎসরকাল শোক পালন করেন।

এই তিন বৎসরকাল শোক পালনের রীতি নির্ণয় করা হয়েছে এই ভাবনায় যে, পিতামাতা তাঁদের সন্তানের জন্মের পর থেকে কমপক্ষে তিন বৎসরকাল সতস্ফুর্ত ভাবেই অপত্য স্নেহে শিশুটিকে লালন পালন করে থাকেন।

সেই সময়ে চৈনিক সমাজে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এই শোক পালনকালে চট দিয়ে তৈরি শোকবস্ত্র পরিধান করা, কেশবিন্যাস না করা, নিয়ন্ত্রিত পানাহার করা ইত্যাদির বিধান ছিল। তাছাড়া শোক পালনার্থে মূল বাড়ির পাশে কুড়েঘর নির্মান করে দিনের মধ্যে কয়েকবার সেখানে অবস্থান করে পিতামাতার জন্য বিলাপ করার রেওয়াজ প্রচলিত ছিল।

কনফুসিয়াস, জনক-জননী ও পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।
"যে পিতামাতাকে ভালবাসে সে কখনই অপরের অনিষ্ট করবার চিন্তা করবেনা; যে পিতামাতাকে সম্মান করে সে কখনই অপরের সাথে উদ্ধত আচরন করবেনা।"

কনফুসিয়াসের সময় চৈনিক সমাজ ব্যবস্থায় যে শ্রেণীবিন্যাস ছিল সেটা এরকম, রাজ পরিবার ও রাজ আমাত্যবর্গ ছিলেন সর্বোচ্চ সম্মানিত শ্রণী। তাঁদের অবস্থান ছিল এই শ্রেণীবিন্যাসের উর্দ্ধে।
(১) ভদ্র মধ্যবিত্ত বিদ্বান শ্রেণী (shi) : মধ্যবিত্ত পন্ডিত, বিদ্বান ব্যক্তিবর্গ ছিলেন এই শ্রেণীভুক্ত। শ্রেণী পরিচিতির জন্য এঁরা লম্বা, ঢিলাঢালা রেশমী পোশাক পরতেন। এঁরা রাজকর্মচারী এবং অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় নিয়োজিত থাকতেন।

(২) ক্ষুদ্র গ্রাম্য কৃষক শ্রেণী (nong) : 'শী' শ্রেণীর পরেই সমাজে এই শ্রণীর অবস্থান ছিল। এঁরা সম্মানিত হতেন, খাদ্যশস্য উৎপাদনের কারনে। এঁদের একাংশ ছিলেন একাধারে ভুমিমালিক ও খাদ্য উৎপাদক। এঁরা উচ্চ হারে করও প্রদান করতেন। খাদ্যশস্য উৎপাদন করে খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করতেন বলেই সমাজে এর উপযোগিতাকে সম্মানের চোখে দেখা হতো।

(৩) কারিকর, শিল্পি (gong) : এই শ্রেণীটির সামাজিক অবস্থান ছিল, 'নঙ' শ্রেণীর নিচে। এরাও এক ধরনের উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বটে তবে সমাজে এর উপযোগিতা আহামরি কিছু ছিলনা।

(৪) ব্যবসায়ী ও বণিক শ্রেণী (shang) : এই শ্রেণীটি সমাজে এই চার শ্রণীর মধ্যে সর্বনিম্ন সম্মানের অধিকারী ছিলেন। একজন বণিক বা ব্যবসায়ী যেহেতু কোনভাবেই উৎপাদনের সাথে জড়িত ছিলেন না বরং অপরের উৎপাদিত দ্রব্যাদি আদান প্রদানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতেন। তাছাড়া এদেরকে লোভী এবং সুবিধাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করা হতো।

এ চার শ্রেণীর বাইরে যে সকল জনগণ যেমন, সৈনিক শ্রেণী, বিদগ্ধজনেরা মনে করতেন এই পেশার লোকেরা সমাজে উৎপীড়ন ও জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে যা কিনা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রতিকূল। তাই এদেরকে এই শ্রেণীবিন্যাসের বাইরে রাখা হয়েছিলো।
চিত্তবিনোদনকারী ও রাজসভাসদদের বিষয়েও দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক ছিলনা। এদের কর্মকান্ডকে নীতিহীন তোষামোদী ও এক ধরনের স্থুল কামুকতা বিষয়ক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধনীক শ্রেণীর মনোরঞ্জনের প্রক্রিয়া হিসাবে গণ্য করা হতো।
ধরমীয় নেতাদেরকেও তেমন গুরুত্ব দেওয়া হতোনা, যেন তাঁরা সমাজে প্রতিপত্তিশালী হয়ে উঠতে না পারেন।

কনফুসিয়াসের সামাজীক অবস্থান ও জ্ঞানের কারনে তিনি ছিলেন 'শী' শ্রণীভুক্ত। এই অবস্থান তাঁকে সম্ভ্রান্ত ও শাসক শ্রেণীর সাথে মেলামেশার একটি সুযোগ তৈরি করেছিলো। তিনি তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দ্বারা শাসক শ্রণীর দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হন এবং তিপ্পান্ন বৎসর বয়সে রাজ আমাত্যের পদ লাভ করেন।

সেই সময় চীন অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং সেখানে চলছিল মাৎস্যন্যায়। অর্থাৎ বড় রাজ্যগুলো ছোট ছোট রাজ্যগুলোকে গ্রাস করে নিচ্ছিল।

যুদ্ধ-বিগ্রহের কারনে সাধারণ জনগণের জীবন-জীবিকা অত্যন্ত হুমকির মধ্যে ছিল। তাদের দুঃখ-দুর্দশার সীমা পরিসীমা ছিলনা।

এ বিষয়গুলো কনফুসিয়াসকে অত্যন্ত ভাবিত করে তোলে। সেই সময়ে রাজার বিশেষ আচরনের কারনে তিনি লু রাজ্যের আমাত্যের পদ পরিত্যাগ করে বহু রাজ্য পরিভ্রমন করেছিলেন এবং তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করেছিলেন।

তিনি বুঝেছিলেন যে, মানুষের সমস্ত দুঃখের মূলে আছে দেশ শাসনের ব্যর্থতা। যুদ্ধ-বিগ্রহের অবসান ঘটিয়ে সমাজ ব্যাবস্থার পরিবর্তনই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।

তিনি ঈশ্বরের চিন্তা করেননি, তপস্বা করে আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের চেষ্টাও তিনি করেননি। জীবনের অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝেছিলেন যে, জনসাধারণের দুঃখ দুর করতে হলে অনাবশ্যক যুদ্ধ-বিগ্রহ পরিত্যাগ করতে হবে। যুদ্ধব্যয় কমিয়ে প্রজাদের গুরু করভার থেকে মুক্তি দিতে হবে। দেশে প্রচলিত নিষ্ঠুর শাস্তিব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

তিনি বুঝেছিলেন যে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে হলে তাদের নৈতিক চরিত্র গঠনই হবে প্রথম কাজ। এর জন্য তিনি বললেন, সবার প্রতি কর্তব্য পালন ও সবাইকে ভালবাসা, এই দুটি গুণের উপরই সমাজের উন্নতি নির্ভর করে। এই দুটি গুণকে তিনি আবার পাঁচ ভাগে ভাগ করলেন। (১) রাজা ও প্রজার কর্তব্য, (২) স্বামী ও স্ত্রীর কর্তব্য, (৩) জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠের কর্তব্য, (৪) পিতা, মাতা ও সন্তানের কর্তব্য এবং (৫) বন্ধুর প্রতি বন্ধুর কর্তব্য।

কনফুসিয়াসের ধর্মচিন্তায় আমরা ঈশ্বরকে পাইনা। কোন অতিপ্রাকৃতের স্থান নেই তাঁর চিন্তাধারায়। তিনি শুধু মানুষের সম্বন্ধেই ভেবেছিলেন এবং শিক্ষাকে সমাজ সংস্কারের কাজে লাগাবার চেষ্টা করেছিলেন।

তাঁর মতে নীতিজ্ঞান না জন্মালে কেউ পূর্ণাঙ্গ মানুষ হবার যোগ্য হয়না। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝেছিলেন যে, মানুষই সব। মানুষকে জানাই জ্ঞান, মানুষকে ভালবাসলেই পুণ্য। মানুষের দুঃখ দূর করাই ধর্ম। এছাড়া অন্য কোন তত্বে তাঁর বিশ্বাস ছিলনা। তিনি একান্তভাবেই মানুষকে নিয়েই একটি বাস্তববাদী নীতিশাস্ত্র রচনা করেছিলেন। আর রাষ্ট্রনীতিকে এর প্রয়োগক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন।

বিশ্বের সব মানুষকে এক পরিবারভুক্ত ভাবতে হবে এবং যখন তা পারবে তখনই সুখী হবে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ। তাঁর মতে জীবনের পরম প্রাপ্তি এই পৃথিবীতেই পাওয়া যাবে। আর তা পাওয়া যাবে এই মানুষের মধ্যেই। এর জন্য স্বর্গ বা অন্য কোন কল্পনার আশ্রয় নেবার প্রয়োজন নেই।

তিঁনি তাঁর এসব ভাবনা 'ইয়ু-কিং', 'শু-কিং', 'শি-কিং' 'লি-কি', 'হিও-কিং' প্রভৃতি পাঁচখানি গ্রন্থে সংকলন করে গেছেন। তাঁর কথামৃত আছে 'টা-হাসিও' নামে একখানি গ্রন্থে।

কনফুসিয়াস, অগ্রজ 'তাও' দার্শনিক 'লাও-ৎসু' এর সাথে বৈঠক করেছিলেন।

ধারনা করা হয়, কনফুসিয়াস ৭১ অথবা ৭২ বৎসর বয়সে কুফু নগরীতে দেহত্যাগ করেছিলেন। কুফু নগরীর কং-লী সে'মেটারিতে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। সিসহুই নদীর তীরে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে মূল স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়।

চলবে

ঝাঁপি খুলে বহু পুরাতন একটি নোটবই পেলুম। তখনকারদিনে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের সুবিধা ছিলনা। বই-পুস্তক ঘেঁটেই যা কিছু পাওয়া। কখন, কোথায়, কিভাবে এগুলো পেয়েছিলাম, তা আর এখন মনে করতে পারিনা তাই সূত্র জানাতে পারবোনা। ক্ষমা করবেন।

প্রৌঢ়ভাবনা


মন্তব্য

নিটোল এর ছবি

ভালো লাগল আপনার সিরিজ। চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

তারেক অণু এর ছবি

আরও বিস্তারিত জানতে চাই তার দর্শনের ব্যাপারে আপনার লেখনীর মাধ্যমে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ পড়বার জন্য।

দ্যা রিডার এর ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে "এথিকস অ্যান্ড কালচার" নামক একটি কোর্সে তাওইজম এবং কনফুসিয়াস এর দর্শন সম্পর্কে পড়েছিলাম কিছুটা ... চালিয়ে যান সিরিজ ... পড়ছি হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

পড়ছেন জেনে উৎসাহিত হলাম।
ধন্যবাদ।

কাঠের সেনাপতি এর ছবি

"ধর্মসার- (২) কমফুসিয়াস ও তাঁর ধর্ম" - টাইপো আছে সম্ভবত, কনফুসিয়াস হবে ।

আগ্রহ নিয়ে পড়ছি আপনার এই সিরিজ ।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ক্ষমাপ্রার্থী। অসাবধনাবশত এমনটি হয়েছে।
পড়বার জন্য ধন্যবাদ।

তানিম এহসান এর ছবি

সিরিজ চলুক, জানছি।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, উৎসাহ যোগাবার জন্য।

স্বাধীন এর ছবি

সিরিজ ভালো হচ্ছে, কিন্তু পর্বগুলো আরো বড় হলে ভালো লাগতো। চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

তাপস শর্মা এর ছবি

পড়লাম, দুটো পর্ব। ভালো। চলুক চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

পড়েছেন জেনে ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ।

স্বাধীন এর ছবি

শিশুকালেই কনফুসিয়াস পিতৃহারা হন এবং চরম দারিদ্রের ভিতর তাঁর ছেলেবেলা কাটে।

একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই এই বিষয়টি কমন ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক, মুহাম্মদ, কিংবা চেঙ্গিস খান।

সেই সময় চীন অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং সেখানে চলছিল মাৎস্যন্যায়। অর্থাৎ বড় রাজ্যগুলো ছোট ছোট রাজ্যগুলোকে গ্রাস করে নিচ্ছিল।
যুদ্ধ-বিগ্রহের কারনে সাধারণ জনগণের জীবন-জীবিকা অত্যন্ত হুমকির মধ্যে ছিল। তাদের দুঃখ-দুর্দশার সীমা পরিসীমা ছিলনা।
এ বিষয়গুলো কনফুসিয়াসকে অত্যন্ত ভাবিত করে তোলে।

কি সুন্দর মিল কনফুসিয়াস আর ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদের মধ্যে। তখনকার আরবদের অবস্থাও একই রকম ছিল এবং মুহাম্মদও বাল্যকাল থেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতেন।

তিনি ঈশ্বরের চিন্তা করেননি, তপস্বা করে আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের চেষ্টাও তিনি করেননি। জীবনের অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝেছিলেন যে, জনসাধারণের দুঃখ দুর করতে হলে অনাবশ্যক যুদ্ধ-বিগ্রহ পরিত্যাগ করতে হবে। যুদ্ধব্যয় কমিয়ে প্রজাদের গুরু করভার থেকে মুক্তি দিতে হবে। দেশে প্রচলিত নিষ্ঠুর শাস্তিব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

এইখানেই মুহাম্মদ আর কনফুসিয়াস আলাদা হয়ে যান। মুহাম্মদ সকল সমাধানের জন্যে আশ্রয় নেন আব্রাহাম ধর্মের। ইহুদী আর খ্রীষ্টান ধর্মের বেশিরভাগ ঘটনাকে সত্যায়িত করে নিজেকেই দাবী করে বসলেন তাদের নবী হিসেবে। কিন্তু কনফুসিয়াস কোন ঈশ্বরের কাছে যাননি।

কনফুসিয়াসের ইতিহাসটিই প্রকৃত দর্শনের ইতিহাস। এভাবেই একেক সময়ে একেক দার্শনিক জন্ম নিয়েছে। তারা চেষ্টা করেছেন মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা প্রদান করতে। খেয়াল করে দেখবেন যে এই সব দার্শনিকেরা সৎ ছিলেন নিজেদের কাছে। তারা নিজেদের কথাগুলোকে ঈশ্বরের কথা বলে চালানোর চেষ্টা করেননি। কিন্তু আব্রাহাম ধর্মের প্রবর্তকেরা নিজদের কথাগুলো ঈশ্বরের নামে চালিয়ে গিয়েছেন। এ কারণেই তাদেরকে আমি দার্শনিকের কাতারে ফেলি না। তারা শুধুই ধর্ম প্রচারক।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ, মনযোগ দিয়ে পড়বার জন্য এবং মুল্যবান ও উৎসাহব্যাঞ্জক বিশ্লেষণের জন্য।
পৃথিবীতে প্রচলিত প্রায় সব ধর্ম মতাবলম্বীদের মাঝে একধরনের সহনসীলতা তৈরি হয়েছে, যেটা মুহাম্মদের অনুসারীদের মাঝে অনুপস্থিত। ইসলাম ধর্মের প্রাসঙ্গিক কোন সমালোচনাও প্রচন্ডভাবেই প্রতিহত করা হয়। আমার মত নিরিহ ব্যক্তির তাই বিশ্লেষণে না গিয়ে শুধু ধর্মসারগুলোই তুলে ধরা শ্রেয়। যৌবনে অনেক সাহসী ছিলাম, তখনই এইগুলো খুঁজে খুঁজে পড়েছিলাম, বলা হত যে আমার ধর্মই শ্রেষ্ঠ, এগুলো থেকে রেফারেন্স দিতাম। তুলনামূলক আলোচনা করতাম, কিন্তু সেটাতো 'ইসলাম' অনুমতি দেয়না।
ভাল থাকবেন। আর প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়ে উপকৃত করবেন।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ঘন্টা দুয়েক আগে দেখে ফিরলাম প্রাচীন শহর পিং ইয়াও গু চেং। সেখানে নির্যাতন ও শাস্তিপ্রদানের নমুনাগুলিও সংরক্ষিত আছে। মধ্যযুগীয় বর্বরতা বুঝি একেই বলে!

লেখা চলুক। অনেক কিছুই শিখছি এবং জানছি!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যগুলো চৈনিক দার্শনিকদের উপর আমার লেখাগুলোকে সার্থকতা দিয়েছে।

উৎসাহ যোগাবার জন্য আবারও ধন্যবাদ। প্রবাসে ভাল থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।