প্রথম দিন একসাথে ছয় জায়গায় ঘুরতে অনেক ভাল লাগছিল কিন্তু ব্যাপারটা ছিল অনেক সুস্বাদু খাবার খেয়ে বদ হজম হওয়ার মতো, পায়ের এতো খারাপ অবস্থা হলো যে মনে হচ্ছিল এখনি অস্ত্রপাচার করতে হবে।যাই হোক পা টা কে অনেক মালিশ টালিশ করে আমরা দ্বিতীয় দিনের সফরে বের হলাম।গন্তব্য Musee de Louvre(লুভর যাদুঘর)।
ল্যুভর এর শুরু হয়েছিল ফিলিপ II এর আমলে ১২ শতাব্দীতে একটি দূর্গ হিসেবে।১৬৮২ সালে লুই XIV দূর্গটিকে রাজকীয় জিনিস প্রর্দশন এর জন্য তৈরি করেন।নেপোলিয়ন যাদুঘর টির সংগ্রহ অনেক বাড়িয়ে তোলেন।বিভিন্ন যুদ্ধে জয়ী হয়ে তিনি স্বর্ণ মুদ্রার পরিবর্তে সে দেশের আর্ট-স্কাল্পচার সংগ্রহ করতেন। যদিও ওয়াটার লুর যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর সব কিছুই নিজ নিজ মালিকের কাছে চলে যায়।আবার ল্যুভর সমৃদ্ধ হতে থাকে লুই XVIII, চার্লস X এবং দ্বিতীয় ফরাসি রাজার রাজত্বকালে।প্রায় একশ বছর পর ফরাসি বিপ্লবের পর যাদুঘর টি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
ল্যুভরে যেতে পারাটা ছিল আরেকটা ভয়াবহ আনন্দের ব্যাপার, এতদিন তো শুধু শুনতাম, গল্পে পড়তাম, আর এখন আমি লুভরে!! সত্যিকারের অনুভূতিটা আসলে লিখে প্রকাশ করতে পারছি না।বলতেও পারবনা। উত্তেজনা কাটিয়ে উঠে শুরু করলাম ল্যুভরের ভেতরে ঘোরাঘুরির পালা।ল্যুভর কে তিন টা অংশে সাজানো হয়েছে-Sully, Demon, Richelieu।
Sully তে আছে মিশরীয় আর রোমান সভ্যতার নিদর্শন, Demon এ আছে সব আর্ট এবং অবশ্যই সেই বিখ্যাত মোনালিসা, আর Richelieu তে আছে সব স্কাল্পচার। Rechileu ফ্রান্সের একজন মন্ত্রী ছিলেন, তিনি তার সংগ্রহের সবকিছু মৃত্যুর আগে লুভরে দান করে যান।
অনেক দূর থেকে ছবিটা তোলা, মোনালিসা পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছিল না।
আমরা সকাল ১১ টায় লুভরে ঢুকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ৭০%Sully,৬০% demon আর ৩০% Richelieu ঘুরে দেখতে পেরেছিলাম।এরপর আস্তে আস্তে পায়ের জোর হারিয়ে ফেলছিলাম।আর স্কাল্পচার এর প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ ও ছিল না। যাই ল্যুভরের ক্যাফে তেই খেয়ে দেয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আমরা রওনা দিলাম Opera de Garnier এর দিকে।পৃথিবী বিখ্যাত অপেরা হাউজ এটি।আমরা যখন যাই তখন ওপেরা হাউজ বন্ধ ছিল, বাইরে থেকে দেখেই চলে আসছি।
Opera de Garnier
এরপর গেলাম Point Neuf- প্যারিস এর সবচেয়ে প্রাচীনতম সেতু।এর নিচ দিয়ে বয়ে গেছে সীন নদী। ১৬০৭ সালে হেনরী IV এর শাসনামলে সেতুটির উদ্বোধন করা হয়।১৮০০ সালের দিকে Point Neuf কে বলা হত প্যারিস এ অপরাধ ও বাণিজ্যের কেন্দ্রভূমি। এখন অবশ্য এসব কিছুই নেই, বরং মানুষজন ব্রিজ এর উপর বসে ঘণ্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয় আর নদী দেখে। এই সীন নদীতে নৌকায় করে ঘুরে দেখা যায় পুরো শহর।আমরা এবার অবশ্য সীন নদীতে ঘুরতে পারি নাই, অনেক আশা পরেরবার নৌকায় ঘুরব।
শেষ বিকেলে আমরা গিয়ে পৌছলাম MontMartre-জায়গাটা প্যারিস এর উত্তরে পাহাড়ের উপর।কয়েকটা কারণে Montmartre বিখ্যাত।এখানে খুব পুরোনো ক্যাথলিক চার্চ আছে এবং এখান থেকেই ক্যাথলিক ধর্মযাজক গণ ধর্মপ্রচার শুরু করেন।তাই একে Basilica of Heart of Jesus বলা হয়।এছাড়া বিখ্যাত বেশ কিছু চিত্রশিল্পী যেমন- Salvador, Pablo Picasso ও Vincent van Gough এর কর্মস্থল ছিল montmartre। আর যেহেতু পাহাড়ের উপর, তাই এখানে এসে দাঁড়ালেও পুরো শহরটা দেখা যায়।
MontMartre
MontMartre এর পর নীড়ে ফিরে যাওয়ার পালা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে হালাল খাবার(একটু হালাল হারাম মেনে চলি আর কি!) এর অনুসন্ধান চলল।শেষে একটা সামুদ্রিক মাছ এর ডিশ পাওয়া যায় এমন একটা রেঁস্তোরা খুঁজে পেলাম।খাবার দাবার খাওয়ার সময় যে মেয়েটা আমাদের টেবিল এ সার্ভ করে গিয়েছিল তার সাথে আই কন্টাক্ট হচ্ছিল। ইশারায় জিজ্ঞেস করছিল কেমন হয়েছে? আমিও ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম, সেইরকম হয়েছে!!
(একটা ছোট টিপস দেই- প্যারিস এ যেই দোকানে ট্যুরিস্ট বেশি দেখা যায়, সেখানে খাবার ভাল হয় না সাধারণত, আর খাবার এর দাম ও বেশি হয়।)
একটা গল্প শুনেছিলাম, বিয়ের পর নব বরবধু হানিমুন করতে একটা দ্বীপে বেড়াতে যায়। দ্বীপ টা তাদের এতই ভাল লেগেছিল যে বাকী জীবন ওরা সেখানেই পার করে দেয়।মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যেতে চিন্তা করছিলাম কেমন হতো থেকে গেলে! অনেক কারণে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।থাকতে পারি আর না পারি, বারবার ফিরে আসতে চাই পারী।
তৃষা
মন্তব্য
পারী যাওয়ার খুব শখ! কোনোদিন যাওয়া হবে কিনা কে জানে!
মাছ দেখে খাওয়ার লোভ জাগলো।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আপাতত ছবিগুলো দেখে গেলাম। সময় হলে পড়ে দেখব। আর প্যারিসে একবার যেতেই হবে, সে যখনই হোক।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আপনার লেখা পড়ে ছবি দেখে খুব ভাল লাগলো, অনেক আনন্দময় মুহুর্তের কথা মনে পড়ে গেল। আর পরের বার রোদেলা দিন দেখে সীন নদীর নৌকাভ্রমন অবশ্যই করবেন। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
আর ভাল কথা, ল্যুভ মিউজিয়ামের ওই উইংটার নাম কিন্তু Denon, Demon নয়।
প্যারিস, লুভর-- এগুলো শুনলেই কেন যেন ভাস্কর নভেরা আহমেদের কথা মনে পড়ে।
লেখা চলুক।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
গৌতম...আশা করি খুব তাড়াতাড়ি যেতে পারবেন।
সজল...ছবিগুলো দেখার জন্য ধন্যবাদ। ছবি তোলাও আমার শখ।
সদানন্দ...ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। Angles n Demons পড়ে মাথার মধ্যে প্রথম থেকেই এই নাম ঘুরছে।
তিথীডোর... আমি অতি আনন্দিত আপনাকে দেখে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
খুব তাড়াতাড়ি আবার যাইতে চাই,
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
খুব ইচ্ছে ছিলো ল্যুভর মিউজিয়ামের ছবি দেখার আর মিউজিয়ামটা সম্পর্কে জানার। আজ সেটা কিছুটা পূরণ হলো। তবে আরো বিস্তারিত বর্ণনা দিলে ভালো হতো।
দীপাবলি।
ফাহিম... ইনশাল্লাহ যাব।
দীপাবলি...আজকাল Wikipedia পড়েই সবাই জানতে পারে, তাই আমি লেখাটা আর দীর্ঘায়িত করিনি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন