অনেক দিন যাবতই ভাবছি এই যান্ত্রিক জীবনটা ছুড়ে ফেলে কদিন একটু সুতো ছেড়া ঘুড়ির মতো হারিয়ে যাবো। দুই বন্ধুকে ফোন দিয়ে প্রস্তাব দিলাম। এক চাচাশশুরকে ধরে বিনা পয়সায় সরকারি বিশ্রামাগারের ব্যবস্থাও করে ফেল্লাম।।অনেক দিন ঝিকঝিক রেলগাড়ি চড়া হয়না, তাই যুদ্ধ করে টিকিট কাটলাম কমলাপুর থেকে। যাত্রার আগের দিন বন্ধু মিনমিন করে বলে দোস্ত বউ ছাড়া যইতে পারুমনা!! আমি ধমক দেই, ‘‘দুইদিন বউ ছাড়া থাকতে পারো না বেটা অপদার্থের দল”। সে তার বউ বা আমার ভয়েই হোক যাত্রায় ইস্তফা দিল। কি আর করা, আমিও অপদার্থের মত বউ বগলদাবা করে রওনা দিলাম সবুজ নগরি সিলেটের উদ্দেশ্যে।
12-11-2011 সকাল 6 ঘটিকায় উঠে তাড়াহুড়ো করে রওনা দিলাম কমলাপুরের উদ্দেশ্যে। ট্রেন হলো 6.45 এ। এতো সকালে কোন যানবাহন পা্ওয়াই মুশকিল। কোনমতে একটা রিক্সা ধরে উৎকন্ঠা নিয়ে স্টেসনে পৌছে দেখি পরাবত পত পত করে সবুজ পতাকা নাড়ছে আর হুইসেল দিচ্ছে । দুজনে পড়িমড়ি করে দিলাম ছুট ট্রেন ধরার জন্য। ঢ সিরিয়ালের প্রথম শ্রেনীর বগি খুজে সিড়িতে পা রাখা মাত্রই ট্রেন ছেড়ে দিল। অনেকদিন পর ট্রেনে চড়ে আসলেই মনটা ভাল হয়ে গেল। সময় বেশী লাগলেও এর ঝিকঝিক গানে সময়টা নিজের অজান্তেই পার হয়ে যায়।
সাত ঘন্টা ট্রেন ভ্রমন শেষে পৌছুলাম রায়নগর রাজবাড়ি। দুটো খেয়েই ছুট দিলাম মাজার দ র্শনে কারন হাতে সময় কম। শাহজালালের গেট দিয়ে ঢুকেই চোখে পরবে অসংখ্য কবুটর যা আমরা জালালী কবুতর নামে চিনি। তারা দেখলাম বেশ আয়েশ করে দল বেধে গম খাচ্ছে।
একটু এগিয়েই চোখে পরলো ছোট্ট পুকুর ভরা শত শত গজার মাছ
এরপরকটেজে ফিরে গেলাম কারন অন্ধকার হয়ে গেছে। নিশী রজনির কাহিনি বিবির চোখ রাঙানি দেখে লেখার সাহস পাইলুমনা।
সকাল সকাল রওনা দিলাম মাধব কুন্ডের উদ্দেশ্যে। রিকসায় বন্দর বাসস্ট্যান্ড, তারপর বাসে ৬৫ টাকা ভাড়ায় বিয়ানীবাজার বরলেখা আড়াই ঘন্টা ।তারপর অটোতে ২০০ টাকায় আধা ঘন্টায় সোজা মাধবকুন্ড। অবশ্য মুলামুলি করে ১৮০ টাকায় রফা হলো। দশ টাকায় পার্কে ঢুকেই পাহাড় আর সবুজের মাঝে হারিয়ে গেলাম। একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরে পড়া ঝরনা। ছবি-সিনেমায় অনেক দেখেছি, দেখেছি বিশাল নায়াগ্রার অনেক ডকুমেন্টারী। কিন্তু চোখের সামনে সবুজে ভরা ছোট্ট ঝরনাটি দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
বিবি জানের নিষেধ, নৈশো কালীন হরতালের হুমকী অগ্রাহ্য করে ছুটলাম ঝরনার বিপদজনক মাথায় উঠার জন্য। অর্ধেক পথ আরোহন করে হারে হারে টের পেলাম কেন এযাবত বাইশ জন এখান থেকে পড়ে মৃত্যু বরন করেছে।অর্ধেক পথ ঢালু, পিচ্ছিল, সরূ আর ভাঙ্গাচোরা ।তারপর একেবারেই খাড়া বেয়ে উঠতে হবে। পা ফসকালে সরাসরি নীচের পাথরে আছড়ে পড়ে অক্বা পেতে হবে । একে তো একা আবার বউ বাচ্চার কথা মনে করে অর্ধেক উঠে বিরস বদনে ফেরত আসলাম । মাঝ পথ থেকে নীচের ছবি।
পরদিন সকাল সকাল বের হলাম জাফলঙ এর পথে। সবাই বলেছিল জাফলঙে নাকি এখন দেখার তেমন কিছু আর নেই! আরে ভাই আমরা যারা ঢাকার যানজটে ভরা বদ্ধ খাচায় থাকি তারা সামান্য খোলা মাঠ দেখলেই হাপ ছেড়ে আবার বাচার স্বপ্ন দেখি। কলাতলির একটু আগ থেকে ছোট মিনিবাস জাফলঙের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। চড়ে বসলাম সেই বাসে। ২ ঘন্টায় পৌছে গেলাম রাস্তার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে। তামাবিল থেকে ১৫ মিনিট উচু টিলা ঘেরা পথ পার হয়ে বাসস্টান্ড। সেখান থেকে রিক্সায় নদীর ঘাটে চলে আসলাম। ঘাটে আসতেই ছেকে ধরলো বেশ কজন মাঝি ৪০০ টাকায় সব ঘুরিয়ে দেখানোর প্রস্তাব নিয়ে। তাদের নিরাশ করে হেটেই রওনা দিলাম যাতে সব ভালোমত দেখতে পারি। আপনাদের জন্যও উপদেশ রইল হেটে যাবার কারণ এতে অযথা টাকা খরচও বাচবে আর মাঝে নদী মাত্র ৫ টাকায় পার হওয়া যায়। হেটে পৌছুলাম পাথরে ভরা নদীর পারে।
ডান দিকে ভারতের সীমান্ত আর মাঝে বাধা একটি মাত্র সইনবোর্ড+দুইজন ভারতের+একজন আমাদের সীমান্ত রক্ষী। কয়েক ফুট দুরেই ভাবতের লোকজন দেখা যাচ্ছে গোছল করছে। ওপারে দুটি পাহড়কে যুক্ত করেছে একটি সেতু। পাহাড়ের মাঝে ঘরবাড়ী আর পাহাড় কাটা পথে চলছে গাড়ী। সত্যি খুবই দৃস্টিনন্দন জায়গা। ছোট সরু পাথরে ভরা একটি নদী দুটি দেশকে আলাদা করে রেখেছে।
রেখেছে। ইচ্ছা করলেই সইনবোর্ডের ওপারে ভারতের মাটিতে পা রাখা জায়। মানুয়ের ভির আর সবাইকে সামাল দিতে বিডিআর জওয়ানটি দেখলাম হিমসীম খাচ্ছে। কে্উ সইনবোর্ডের কাছে আসলেই বা পানিতে নেমে ছবি তুলতে গেলেই সে বাশি ফু আর ধমক দিয়ে সবাইকে সরিয়ে দিচ্ছে।
নদীর ওপারে নাকি চা আর কমলা বাগান আছে। তাই নদী পার হতে চরে বসলাম সরু এক নৌকায়।কলেজ পড়ুয়া ৭ জনের একটি দলও ভিড়ে গেল আমাদের সাথে। একেতো সাতারের কও জানিনা আর নদী ছোট সরু হলেও বেশ গভীর।
আরও সুসংবাদ পেলাম যে সাথের যে ৭ জনের দল তারাও আমার মত ভারি পাথর। ছেড়ে দিলেই টুপ করে ডুবে যাবে।নদী পার করে মরুভুমির মতো বালিয়াড়ী পার হয়ে পৌছুলাম খাসিয়াদের গ্রামে। সেখানকার বাহন হলো ট্রাকটরের এক আজীব বাহন। ভট ভট করে চললাম চা+কমলা বাগানের উদ্দেশ্যে।
বাগানে পৌছে দেখা মিলল হাতি মেরা সাথির সাথে। সে যে সে হাতি না, একেবারে স্যালুট দেয়া হাতি। কাছে গেলেই শুড় উচু করে স্যালুট করে আর ঈদ সলামী চায়। তার কাছে ৩৬৫ দিনই ঈদদিন। দশ টাকা বাড়িয়ে ধরার সাথে সাথে সে শুড় বাড়িয়ে নিয়ে তার মাথায় মাহুতের কাছে চালান করে দিল। তারপর বসে গেল আমাকে পিঠে নেবার জন্য। মাহুত জানিয়ে দিলেন যে আরও ৫০ টাকা বকশিস লাগবে। ডিসকাভারির When Animals Gone Wild দেখান সুবাদে আমিও আর সাহস পেলাম না। কমলা বাগানে ঢোকা গেল না কাটাতারের বেড়ার কারনে। তাই ডজন খানেক কমলা কিনেই ফিরতে হলো।
সবশেষে হালকা কেনাকাটা করে বিদায় জানালাম সিলেটকে আবার ফিরে আসার প্রত্বাসা নিয়ে।
আমি
শিপলু
মন্তব্য
প্রথম ফটোটা উলটা করে দিলেন কেন?! ওইটা ঘাড় ব্যাকা করে দেখতে হইল যে! আমার ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে !
বাকি ফটোস খুব সুন্দর
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ছবিটা সোজাই আছে। ঘাড় আসলে ব্যাকা ছিল, সোজা করে দেখলেন । পড়ার জন্য ধন্যবাদ
কিছুদিন আগে ঘুরে এসেছি।
লেখা+ছবি, দুটোই ভাল্লাগলো।
_________________
[খোমাখাতা]
ছবিগুলো অসাধারন লেগেছে
তাই। জেনে আমারো ভালো লাগলো।
আহারে ! কতদিন হল জাফলং/মাধবকুন্ড যাই না শেষবারের মত গেসিলাম -তাও প্রায় ২ বছর হয়ে গেল ! স্ম্রিতিজাগানিয়া ছবি দেখে মনডা উদাস অইয়া গেল । এনওয়ে, ক্যামেরাডা কোন মডেলের বস ?
ক্যামেরডা হইল “ক্যানন পাউয়ার সট এ-৪৯০”
নতুন মন্তব্য করুন