বাংলায় নবান্ন এসেছে। ঘরে ঘরে উঠবে সোনালি ফসল।
" বাউরস ধানের চিড়ে দিমু
বিরনী ধানের খৈ
ডিংগা মানিক কলা দিমু
গামছা ভরা দই..."
"মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা "
আসলে মন খারাপের জন্য কোন কোন সময় খুব বড় রিজন কিন্তু লাগেনা। কোন কোন সময় এমনিতেই মন খারাপ হয়ে থাকে।
আর তাই আজ জীবনের কিছু টুকরো Expression শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে।
- গানওয়ালা কথা বলে... এবং আমার বন্ধু রাজীব -
আজ অনেক দিন পর এত গান শুনার ইচ্ছে হয়েছিল, তাই বন্ধু রাজীবের বাড়িতে গেলাম। ভালো গিটার প্লে করে ও। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার সেও আমার মতো সুমন পাগল। সুমন মানে কবীর সুমন। সুমনের গানের প্রতি যে কবে থেকে আমার মনে একটা বিশেষ ভালো লাগা ঢুকে গিয়েছিল তা জানিনা। তবে সেও আরেক লম্বা কাহিনী। সুমনের গান আমাকে প্রথম শুনতে দেয় রাজীবই। তখন মোবাইল টোবাইল তো ছিলনা। অডিও ক্যাসেট। ক্যাসেটের A-সাইড এবং B সাইড। বেশ মজা লাগতো শুনতে ওই সময় গান গুলি। আমার এখনও মনে আছে সুমনের যে গানটা আমি প্রথম শুনেছিলাম - ‘জাতিস্মর’। অসাধারণ একটা গান। তারপর থেকে আমার মনে হয়না কোন গান আজ অবধি আমি শুনিনি সুমনের। সুমনের ২১টা গানের অ্যালবাম আমার কাছে আছে। ৯২ এর ‘তোমাকে চাই’ থেকে শুরু করে ২০১০ অবধি ‘ছত্রধরের গান’। লাইভ কনসার্ট শোনার সুযোগ হয়েছিল মাত্র একবার। গত বছর। প্রোগ্রাম শুরুর একঘন্টা আগে আমি উপস্থিত ছিলাম। যদিও রাজীব সে অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি। অসুস্থ ছিল। এ নিয়ে ওর আক্ষেপ আজ অবধি গেলনা। ঐ দিন মনের গানওয়ালাকে মনের মতো দেখলাম। আর গানওয়ালাও আমার মনের সমস্ত আকাঙ্খা মিটিয়েছিল। দেখেছিলাম দুচোখ ভরে কি করে একটা মানুষ সুরের মাঝে তুলতে পারে জীবনমুখীর ছুঁয়ে যাওয়া কথকতা। ঐ দিন শুনেছিলাম কবিতা। কবি শ্রীজাত এর কন্ঠে। সব মিলিয়ে এত ভালোলাগার একটা সময় কেটেছিল তা বলে বোঝাতে পারবো না। কবি, সুরকার, গায়ক, গিটারিষ্ট, সাংবাদিক, অভিনেতা এবং সর্বোপরি একজন বাঙ্গালি।
আজ রাজীব আবার আমাকে সেদিনের স্মৃতি মেদুরতায় নিয়ে গেলো। খুব ভালো গানের গলা ওর। আজ অনেক গানের সাথে গাইল -
“ আমি চাই সাঁওতাল তার ভাষায় বলবে রাষ্ট্রপুঞ্জে, আমি চাই মহুল ফুটবে সৌখিনতার গোলাপকুঞ্জে। আমি চাই নেপালি ছেলেটা গিটার হাতে, আমি চাই তার ভাষাতেই গাইতে আসবে কলকাতাতে... আমি চাই ঝাড়খণ্ডের তীর-ধনুকে, আমি চাই ঝুমুর বাজবে তোমার বুকে। আমি চাই কাশ্মীরে আর শুনবেনা কেউ গুলির শব্দ। আমি চাই মানুষের হাতে রাজনীতি হবে ভীষণ জব্দ। আমি চাই হিন্দু নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ। আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু......... আমি চাই গাছ কাটা হলে শোক সভা হবে বিধানসভায়। আমি চাই প্রতিবাদ হবে রক্ত পলাশে রক্তজবায়। আমি চাই পুকুর বুজালে আকাশ ভাসবে চোখের জলে। আমি চাই সব্বাই যেন দিন বদলের পদ্য বলে। আমি চাই মন্ত্রীরা প্রেম করুন সকলে নিয়ম করে, আমি চাই বক্তৃতা নয় কবিতা বলুন কণ্ঠপুরে... যদি বল চাইছি নেহাত স্বর্গ রাজ্য, আমি চাই একদিন হবে এটাই গ্রাহ্য.........”
হয়তোবা তাই হবে। হয়তো এটাই জীবন। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে কোন কোন সময় সমঝোতা হয়ে উঠেনা...
... প্রকৃতির ছুঁয়ে যাওয়া বেদনা সব সময়ই ভালো লাগে। আজ সেই Expression বুকে নিয়ে...... কিছু ছুঁয়ে দেখা...
- একটা স্বাধীনতার খোঁজে -
“Time waits for none. Lost time is never found again.” অনেক আগের কথা। তখন স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ি। একটা ইংরেজী রচনা বুঝাতে গিয়ে মাস্টারমশাই বলেছিলেন এই কথা। কেন জানিনা এই কথাটা ভুলিনি কোনদিন।
কোন কোন সময় মনে হয় পলাশীর পর সত্যিই কি আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল ? আর তাই স্বাধীনতার Expression আমার কাছে ঘোলাটে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান প্রতিটি রাষ্ট্রের হালচিত্র প্রায় একই রকম।
ভারত - এখানে কে সুস্থ ভাবে বাঁচছে আর কে মরছে তার খোঁজ কেউ রাখেনা। যে পারছে যেদিকে পারছে লুটতরাজ চালাচ্ছে। খেয়োখেয়ির ভিড়ে সব স্বপ্নরা হারিয়ে যায়।
বাংলাদেশের - আর্থিক বুনিয়াদ স্বাধীনতার পর থেকে এখনও সুস্থির হয়নি। দেশ যন্ত্রণা দগ্ধ। স্বাধীনতা প্রাপ্তির ক্ষত এখনও মুছে যায়নি।
আর পাকিস্তান- এরা তো নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করে দিচ্ছে প্রতিদিন একটু একটু করে, খাবার জন্য রুটি নেই কিন্তু বন্দুক এসে যায় ঘরে ঘরে।
তিনটি রাষ্ট্রের কমন বিশিষ্ট এখানে নেতারা এবং তাদের চারপাশের কুত্তারা না হাতে মরে না ভাতে। আর তাই আমরা কেউ ভালো নেই। সত্যিই ভালো নেই। একটা মেঘ এসে কানে কানে বলে যায় - ভালো থাকতে গেলেও আজকাল দিশার সন্ধানে কম্পাস লাগাতে হয়। তারপর শুরু হয় মানচিত্রের খোঁজ। কিন্তু অবাক লাগে সব খুঁজে পেলেও 'ভালো থাকা'কে খুঁজে পাওয়া যায়না।
আমি একটা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। যেখানে সবাই মরার আগেও একবার অন্তত বাঁচতে চায়। আমার স্বাধীনতা তা কেড়ে নিয়েছে অনায়াসে,নির্দ্বিধায়। তাই আবার আমি পরাধীনতার মুক্তির জন্য স্বাধীনতা চাইনা, বাঁচার জন্য স্বাধীনতার সফর সঙ্গী হতে চাই।
- বাউলের সাথে-
এই মানুষটিকে কেউ চেনার কথা নয়। উনি সুমনের মতো বিখ্যাতও নয়। কিন্তু উনিও গান করেন ওনার গানে মিশে আছে আউল বাউলের সুর... রেবতীমোহন সরকার, ডাক নাম দরাজ ফকির। ঘুরে বেড়ান এখান থেকে ওখানে। আমার সাথে দেখা ২০০৫ এ রাজ্যের সীমান্তবর্তী শহর বিলোনীয়ায়...
সামবেদের গানে পাখির কুজনে ভোরের আলো ফুটত প্রাচীন ভারতবর্ষের তপোবনে। তানসেন, তুলসি দাস, মীরাবাঈ, লালন ফকিরের দ্যাশে যুগে যুগে গান মাইনসের পরানের সঙ্গে মিশে যেতো।
- আপনি এত কথা জানেন, আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললাম।
- হাল্কা একটা হাসি ফুটে উঠল দরাজ ফকিরের ঠোঁটে।
- এই আর বড় কি অইল। আমার গুরুরেতো দেখো নাই। উনি ছিলেন ওস্তাদের ওস্তাদ। এসব উনার কাছ থেকেই শুনছি। দ্যাশের কথা মনে পড়লে প্রয়াণটা কান্দে।
- সত্তর বছর বয়সের এই ভবঘুরে মানুষটি হারিয়ে গেলো সিলেটের সেই স্মৃতি মুখর দিনগুলোতে।
- কেন চলে এলেন?
- নারে বাপ, অনেক চেষ্টা করছিলাম, থাকতে, পারিনি। ৭১ এর পর চুপ মাইরা আছিলাম বহু দিন। এরপরে ৭৫ সালের পর আর পারলাম না।
তারপর গেয়ে উঠলেন - রক্তের দাগ মুছে
এক নরম প্রলেপ লাগাতে চাস মানুষের বুকে...
তবুও আমরা সবাই ভালো থাকার জন্য কত চেষ্টা করে যাই। ভালো লাগাকে কিংবা ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য হাজারো মেহনত, কষ্ট। এইতো জীবন। বাঁচতে চাই। তবু সুমনের মতোই মনে হয় “একটুর জন্য কত কিছু হয় নি, ক্ষয়ে যাওয়া আশা তবু পুরুটা ফুরায় নি।’’
------------------------------*------------------------------
পেছনে ফিরে দেখাঃ এইতো জীবন। পর্ব – ১, এইতো জীবন। পর্ব – ২, এইতো জীবন। পর্ব – ৩ , এইতো জীবন। পর্ব – ৪ , এইতো জীবন। পর্ব – ৫, এইতো জীবন। পর্ব – ৬, এইতো জীবন। পর্ব – ৭ , এইতো জীবন। পর্ব – ৮এইতো জীবন। পর্ব – ৯
============================================
তাপস শর্মা
আমার শহর
ডিসেম্বর ১২ । ২০১১।
মন্তব্য
শুরুর ছবিটাই চমৎকার! বাকিগুলোও ভালো। লেখা পড়া হয়নি
আচ্ছা। সময় করে পড়ে নিও।
ধন্যবাদ কল্যাণ ভাই।
'মিশে থাকা রং'...কি সুন্দর !
ধন্যবাদ ম্যাডামজী
facebook
চমৎকার
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
অনেক ধন্যবাদ ফাহিম ভাই...
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ কবি...
চমৎকার
এই জীবন
ইস্কান্দর ভাই আপনি কিন্তু এখনও আমাকে কান-ফিউজ করে রেখেছেন, এই তাজ্জব করা জিনিষ গুলি কোত্থেকে কিনতে পাওয়া যায় তা কিন্তু জানাননি এখনও...
ফিউজ না হয়ে ইউজ করেন
আমার এখানে সেটআপ এরর দেখায় । এই জন্মে বোধ হয় আর এই জিনিষ গুলান কিনতে পারলাম না
দেখুন এবার
Your submission has triggered the spam filter and will not be accepted. - এইটা দেখায়। সাবমিট করে কিভাবে ? ক্যাম্নে কি ?
অসাধারন, সাবলীল উপস্থাপনায় অনেক জানা তথ্যই অজানার মতো করে পরিবেশন করে মন কেড়েনিলেন তপস্বী কবি তাপস শর্মা।।
কথকঠাকুরের বাচনভঙ্গিতে পাঠক সম্মোহিত করার বীজমন্ত্রটি লেখকের আয়ত্বাধীন।।
মুগ্ধ হলাম।।
সমীরণ দাদা এভাবে বললে লজ্জায় সরমে মরে যাবো তো... । রণদা হলে আরও ভালো করে বলতেন
আর আমি কবি নইগো দাদা। আর তপস্বী হতে পারলাম কই; আমার আলুর দোষ আছে তো। মানে নারীতে আসক্তি
"কথকঠাকুরের" - দাদা গো আমি আবার ঠাকুর দেবতায় চ্রম বিশ্বাসী । তাই ঈশ্বর আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে অনেক আগেই। বলে - যা হারামজাদা, তুই একখান ম্লেচ্ছ , বজ্জাত
- আপনার ভালো লাগাতেই আমার ভালোলাগা। সচলে আপনার নিয়মিত উপস্থিতি কামনা করি। ভালো থাকুন
আমার ভাল লেগেছে মিশে থাকা রঙ, অঙ্কুর,আজ সকালে ছবিগুলো, আর কুয়াশার আদরে আমাকে মোনালিসার ব্যাকগ্রাউন্ড এর কথা মনে করিয়ে দিলো। তোমার গায়ক বন্ধুর গানখানি অসাধারন। লেখাটি শুধু কাব্যিক না হয়ে রাজনীতি বিশ্লেষনের এক প্রতিফলক হয়ে উঠেছে। আর এতে লেখার পরিধি ও গুরুত্ব বেড়ে গেছে অনেকখানি। সুচিন্তিত লেখা, ভাল লাগলো।
তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। এত্ত সুইট একটা মন্তব্যের জন্য...
'মিশে থাকা রং' অদ্ভুত সুন্দর!
ধন্যবাদ মেঘরং_
নবান্নের ফসল এখন আর কৃষকের ঘরে ওঠেকি ? বাংলাদেশেতো ওঠে আড়তদারের ঘরে। কৃষকের যে আগেই দাদন নেয়া আছে। আর কৃষক তার ঘামঝরানো শ্রমলব্ধ ফসলের মাঠের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে এবার পাবেতো সে ফসলের ন্যায্যমূল্য ? আমার ছোটবেলায় তখনও সেচযন্ত্রের ব্যাবহার শুরু হয়নি, নবান্যের উৎসব সল্প পরিসরে হলেও হতো বৈকি! এখন সেটি আড়তদার আর ফড়িয়াদের লোলঝরা দৃষ্টির জ্বালায় পলায়নপর।
যাহোক, ভাল লাগলো আপনার লেখা আর ছবিগুলো। দরাজ ফকিরের কষ্টটিও মন ছুঁয়ে গেল।
নতুন মন্তব্য করুন