অনেক দিন হল এভাবেই আছি। বসে বসে খাচ্ছি, বিছানায় শুয়ে আছি, অনেক রাতে বিছানায় ঘুমহীনতায় কাটাই। আবার খুব দেরিতে ঘুম থেকে উঠি। চলে যাচ্ছে। কি জানি ওষুধ এবং অসুখ আমার জীবনে পালা করে আসছে আর যাচ্ছে। আমার ঘরটা একটু আবছায়া থাকে দিনের বেলাতেও। জানলা গুলোও বিশেষ একটা খোলা হয়না। ইচ্ছে করে যে খুলিনা তা নয়, প্রখর আলো আমার সহ্য হয়না। যদিও ঘরের মধ্যে সাইনাসের প্রবলেম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তবুও আমি আলোহীনতাকেই আজকাল পছন্দ করি।
বিকেলের রঙ ধরেছে। ছোট ছোট উল্কির মতো গাছের পাতায় স্বপ্ন বোনার হতাশা দেখা যায়।। বাড়ির পাশেই বিরাট মাঠ। এই মাঠেই ধুলোর সাথে কথা বলতে বলতে বড় হয়েছি। এখন আকারে অনেক বড় হয়ে গেছি তাই সে ধূলা আর আমার সত্তাকে চেনেনা। বিকেলটা প্রায় শেষের পথে। শিতের বিকেল তাই। একটু একটু করে চলে যাচ্ছি। কত বছর আগে ভালো করে ধান খেত দেখেছিলাম সেটা ভুলে গেছি। আজ আবার সবুজ ধান খেত দেখব। আজ মনটা বড় চঞ্চল। কিন্তু সামনে গিয়ে দেখলাম এখানেও রুক্ষতা। যেখানে এক সময় ধানের খেত ছিল এখানে এখন ইট ভাট্টা। ধানের আবাদির জমিতে ইট ভাট্টা!
আজকাল সন্ধ্যেবেলা টা আমি কাল্লুর ঠেকে কাটাই। কালিবাবুর বোতলে মহোৎসব। কথা ছুঁড়ে দেই মেসবাড়ি থেকে মরশুমি কার্জনপার্কে ।ঝাপসা চোখে কালিপুজোর রাত, কাগজ চাপা দীর্ঘশ্বাস। লাঙলের ফালে কাঁপে ! মনে হয় সব খবরের কাগজ গুলো শালা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
- আচ্ছা আমি মরলে একটা খবর হবে কী?
- ধুর শালা। তুই তো একটা ডিফেক্টভ পিস। কাকিবাবু বলে।
- মুখ সামালকে কালিবাবু।
- তোর চড়ে গেছে।
- আরে মদ আমার উপর কখনো চড়েনা। ছারখার...
- মর শালা।
- তুমি আমার আগে মরবা। শূয়রের বাচ্চা...
কালিবাবু আর কথা বলেনা।বুকের জিরজিরে হাড় নিয়ে বোতলের মধ্যে ডুবিয়ে দেয় নিজেকে। কাল্লুটাও আজকাল বেতালা চালু হয়েছে শালা। মালের মধ্যে দুনম্বরি করে।কি জানি টেবলেট কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলি মেশায়। মালটা কেমন জানি টক টক লাগে। খাওয়ার পর ঘুম পায়।
রোজ এ সময় কটা ছেলে সামনের রাস্তায় ডাংগুলি খেলে। এদের মধ্যে একজন বেশ নজর কাড়া চেহারা , আগাছা নয় । শক্ত পোক্ত ঘোড়ার খুর, কাঠখোট্টা। ছেঁড়া গেঞ্জি তে জিঘাংসা , কোটি বছর ।কাস্তের মুখে ফুলে ফেঁপে উঠেছে ঘৃণা ।কি ভয়ানক হুল্লোড় কোঁকড়ানো চুলে। আমি কেঁপে উঠি নিশিডাকে তিনবার ! জানিনা কে ঝাপটা মারে শরীরে । তবু মনে হয় এরা তো আবর্জনা, সমাজের ময়লা। এরাই বড় হয়ে কেউ কেউ আগামি দিনের বস্তির সাহেনশা হবে।
আমার মতো মাল খেতে খেতে জীবনের একটা সময় ঝুলে যাবে আমি নিশ্চিত। একদিন ওরা উপড়ে নেবেই পৃথিবীর উরুসন্ধি । গ্যালন গ্যালন মেচেতা তরল। বনস্থলী মুছে যাবে , পুড়বে আকাশ আমাদের। রাষ্ট্রের হ্যালোজেন - সুখটানে করুনা থাকবে না কোনো ! এবার হয়তো রাত নামার কথা।
তরলে চুমুক দিতে দিতে আমি দেখতে পাই ভিক্ষার রুটি দোমড়ানো দৃশ্য। বুড়ি গঙ্গায় ভাসছে লাশ তানপুরা হয়ে। ঠাম্মা ভালো বাজাতেন। দাদু নাকি রোজ সকালে ঠাম্মাকে নিয়ে গঙ্গার পাড়ে বেড়াতে আসতেন। শালা সেই গঙ্গা আজকাল শুদ্ধতা নয়, কারিকারি লাশ বয়ে বেরায়... এখানেই একদিন আমার লাশও ভাসবে, বেওয়ারিশ। অবশ্য কাল্লু মুখাগ্নি করবে। ধুর বেওরা শালা।
ওদিকে গঙ্গার পাড়ে হরিবোল ধ্বনি উঠেছে। কালরাতে একবার ওপারে গিয়েছিলাম। শালা সারিসারি লাশ দেখতে ভালো লাগেনা। কালিবাবু টাল হয়ে গেছে। আজ রাতে এখানেই চিৎ। দাঁতে দাঁত খিচে ভেংচি মেরে পড়ে আছে। তামাটে চুলে জং ধরে গেছে। দাঁত কটা আছে? গুনে দেখিনি। এভাবেই গত পঞ্চান্ন বছর কেটে গেছে। মরেনি শালা। রাস্তায় নেমে এলাম। রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ নিয়ন আলো নিরবতা পালন করছে।
গন্ধর্বলোকে হরিধ্বনি উঠে বারবার। স্পষ্ট ভাবে শুনতে পাই আমি। আর একটা ডোরাকাটা উগ্রপন্থী। এর রঙটা একসময় লাল ছিল এখন ধীরে ধীরে সবুজ হচ্ছে। পৃথিবীর গোল বল দিয়ে এখন রাস্তায় ডাংগুলি খেলছে। একটু পরেই আমায় হতাশ করে দিয়ে নতুন প্রত্যয় ছাড়া রাত আরও ঘন হয়ে যাবে। আর সমগ্র শহর জুড়ে ঘুমিয়ে পড়বে সারিসারি লাশ। আমি জেগে থাকব। বাঁচার জন্য নয়, মৃত্যুর পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে।
তুমি ও সে - অনুগল্প গুচ্ছের অন্যান্য গল্প গুলি...
==============================================================
তাপস শর্মা
আমার শহর
ডিসেম্বর ১৪। ২০১১।
মন্তব্য
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
অনেক ধন্যবাদ।
ডাকঘর | ছবিঘর
সুন্দর কিনা জানিনা। তবে রুক্ষতার মধ্যেও বোধ হয় কিছু সুন্দরতা থাকে......
ধন্যবাদ পড়ার জন্য...
ডাকঘর | ছবিঘর
সুন্দর।
_________________
[খোমাখাতা]
সুন্দর কিনা জানিনা। তবে রুক্ষতার মধ্যেও বোধ হয় কিছু সুন্দরতা থাকে......
ধন্যবাদ পড়ার জন্য...নিটোল
ডাকঘর | ছবিঘর
আপনাকে ধন্যবাদ মর্ত্যমানবী।
ডাকঘর | ছবিঘর
নতুন মন্তব্য করুন