- মাইনুল এইচ সিরাজী
দরজা খুলেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠল রবিন। তার বিছানায় শুয়ে আছে একটা মেয়ে। আসলে পরি দেখার মতো চমকে উঠল রবিন। তার বিছানায় শুয়ে আছে একটা পরি।
কে এই মেয়ে? যে-ই হোক, সে রবিনের বিছানায় কেন- এসব ভাবনা ভাবার আগে রবিন ভাবতে শুরু করল- মেয়েটার গড়ন তো বেশ! ঠিক পরির মতো। শুধু ডানা নেই। ডানা আনতে বোধ হয় সে ভুলে গিয়েছে। মেয়েটা শুয়ে আছে, তবু রবিন বুঝতে পারল মেয়েটার উচ্চতা ভালো, বেশ লম্বা-টম্বা। গড়ন হালকা ছিপছিপে। মেয়েটা শুয়ে আছে ওপাশ ফিরে। তার শোয়ার ভঙ্গিটাও চমৎকার। বাম দিকে কাত হয়ে শুয়েছে সে। ডান হাতটা কোমরে ভাঁজ করে রাখা, চুলগুলো ঘাড়ের নিচ থেকে সরিয়ে নিয়ে বালিশের এপাশে ছড়িয়ে দিয়েছে।
মেয়েটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না রবিন। শুধু তার অনাবৃত ডান হাত দেখে চমকালো রবিন। গায়ের রংটা দারুণ মেয়েটার। ঠিক পরির মতো! এই একটা হাত দেখেই সম্পূর্ণ একটা পরির অবয়ব বুঝে নিল রবিন।
বুকের খুব গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরুতে চাইল। সেটাকে কোনোমতে আটকাল রবিন। কেন এই দীর্ঘশ্বাসের হানা?
এসব ভেবে রবিন উন্মনা বা আনমনা হতে চাইল না। আপাতত তার খাটে শোয়া মেয়েটাকে নিয়েই নিবিষ্ট বা আবিষ্ট থাকতে চায় সে।
মিনিট খানেক দরজায় দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা বিব্রত বোধ তাকে কাবু করল। সে কি তার ঘরে প্রবেশ করবে? মেয়েটাকে জাগাবে? জাগিয়ে মেয়েটার সাথে কথা বলবে? dj কীভাবে জাগানো যায় মেয়েটাকে? দরজায় আঘাত করে? টেবিল চাপড়ে? সিডি প্লেয়ারে গান বাজিয়ে? নাকি রবিন সরাসরি কপালে হাত রাখবে ওর? অথবা বাহুতে? একটা ছেলে একটা মেয়ের কোথায় হাত রাখলে সেটা অশোভন বা অসভ্যতার পর্যায়ভূক্ত হয় না?
রবিন ভাবে। ভাবতে থাকে। কে হতে পারে মেয়েটা? কোনো আত্মীয়? বাবার পক্ষের নাকি মায়ের পক্ষের? নাকি পাশের বাসার কেউ? অথবা কোনো বন্ধুর বোন?
সে যে-ই হোক, মেয়েটা তার ঘরে আসবে কেন? ঘরে না হয় আসবে, তার খাটে শুবে কেন? শুধু শুলোই না, ঘুমালো পর্যন্ত! কী অভদ্রতা!
না না। অভদ্রতা হবে কেন? রবিন মত পাল্টায়। মেয়েটা তার খাটে ঘুমিয়েছে-নিশ্চয় কোনো কারণ আছে এর। কার্যকারণ ছাড়া কোনো মেয়ে এ কাজ করতে পারে না। ভদ্র মেয়ে। সুন্দরি মেয়ে।
রবিন কল্পনায় মেয়েটাকে জাগায়।
গুটিসুটি মেরে এগিয়ে যায় মেয়েটার কাছে। পাশে বসে আলতো করে হাত রাখে মেয়েটার কপালে। যেন সোনার কাঠির ছোঁয়ায় জেগে ওঠে রাজকন্যা। খঞ্জনার মতো চোখ নাচিয়ে বলে, কেমন আছেন?
রবিনের বুকটা ধক করে ওঠে।
অনাবশ্যক ড-বিন্দু যোগ করে মেয়েটা বলে, এটা আপনাড় ঘড়? ওহ সড়ি। আমি আসলে খুব টায়ার্ড ছিলাম তো। আড় আপনাড় বিছানাও কেমন তকতকে আড়ামদায়ক। তাই ঘুমিয়ে পড়েছি। সড়ি ভাইয়া, সড়ি।
না না, ঠিক আছে। এখন ভালো লাগছে আপনার? ক্লান্তি- আছে আর?
না।... হ্যাঁ, একটু মাথাব্যথা আছে।
ড্রয়ার খুলে একটা নাপা-এক্সট্রা বের করে রবিন। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলে, নিন খেয়ে ফেলুন। মাথাব্যথা চলে যাবে।
ধন্যবাদ।
আপনি চাইলে আমি মাথা টিপে দিতে পারি। টাইগার বাম আছে। সৌদি আরবের।
দিন না।
মেয়েটা কি সত্যিই রবিনকে মাথা টিপে দিতে দেবে? অসুবিধা কী, এটা তো কল্পনা। কল্পনায় সে আরও সংলগ্ন হতে চায় মেয়েটার।
দুহাতের আঙুলগুলো দিয়ে রবিন আলতো করে টাইগার বাম মালিশ করে দেয় মেয়েটার কপালে। অতি সতর্ক সে। তার খসখসে-রুক্ষ আঙুলের আঁচড়ে যেন ব্যথা না পায় মেয়েটা।
রবিন মাথা টিপে দিচ্ছে মেয়েটার। রবিনের চোখ দুটো ছুটে বেড়াচ্ছে এ দিক-ও দিক। কোথায় রাখবে বুঝতে পারছে না। এবার মেয়েটার চোখে চোখ পড়ে যায় রবিনের। রবিন ফিরিয়ে নিতে গিয়েও ফেরায় না।
মেয়েটা চোখ বুজে ফেলে। রবিনের আঙুলগুলো নিজের চোখের পাতায় নামিয়ে এনে মেয়েটা বলে, একটু চেপে রাখুন। চোখেও ব্যথা আছে।
রবিনের সাহস বেড়ে যায়। এক হাতে মেয়েটার চোখ দুটো নিয়ে খেলা করে। অন্য হাতের আঙুলকে চিরুনি বানিয়ে আঁচড়ায় মেয়েটার চুল। ফুলের গন্ধে রবিন আবিষ্ট হয়। গোলাপের ঘ্রাণ। কোত্থেকে আসছে এই ঘ্রাণ? মেয়েটার চুল থেকে? নাকি ঠোঁট থেকে? গোলাপি ঠোঁট কি গোলাপের গন্ধ ছড়ায়? রবিন আরেকটু ঝুঁকে আসে মেয়েটার মুখের কাছে। মেয়েটার নিঃশ্বাস রবিনের গায়ে এসে লাগে। আরও ঘনিষ্ঠ হতে ইচ্ছে করে তার। হয়ে যায়। মেয়েটার গালে গাল ঘসে দেয় রবিন। ঘসে দিয়ে রেখে দেয়। মেয়েটা আহ্ করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। এটা কি ভালোলাগার নিঃশ্বাস?
মেয়েটা বলে, খোঁচা লাগছে। দাঁড়ি কামান না কেন?
রবিন এবার মাথাটা নামিয়ে আনে মেয়েটার বুকের ভাঁজে। এক হাত মেয়েটার চোখে। অন্য হাত চুলে। খেলা করে।
মেয়েটার নিঃশ্বাস ঘন হয়। রবিনেরও।
রবিন জড়িয়ে ফেলে মেয়েটাকে। বিছানায়।
হালকা গড়নের ছিপছিপে শরীর। পাতলা কোমর। লম্বা গ্রীবা। জড়িয়ে জড়িয়ে রবিন গড়াগড়ি খায়।
না, এতটা কল্পনা করা ঠিক না।
নামই জানা হয়নি মেয়েটার। মেয়েটা কে-তাও জানা হয়নি। অথচ কতশত কল্পনা!
রবিন বরং জানতে চাইবে-নাম কী আপনার?
কী নাম হতে পারে ওর? রবিন ভাবে। কয়েকটা নাম খুঁজে নেয়। নিজের পছন্দের। মিম, মম মৌমিতা, মিমি...।
আমার নাম মম।
সুন্দর।
কেমন সুন্দর?
আপন আপন।
ধন্যবাদ।
গান শুনবেন?
শুনব।
রবিন গান ছেড়ে দেয়-আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধু পারে...।
রবীন্দ্রসঙ্গীত আপনার পছন্দ বুঝি?
হ্যাঁ।
আমারও।
আমাদের মাঝে অনেক মিল।
কেমন?
এই যে আপনি রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ করেন, আমিও।
হা হা হা। মেয়েটা হেসে বলে, বলেছেন বেশ।djdj এটাও ঠিক, দশ জনকে জিজ্ঞেস করলে নয় জনই বলবে তাদের রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ।
রবিন খানিকটা চুপসে গিয়ে বলে, তা হতে পারে।
মেয়েটা হাসতেই থাকে। হাসতে হাসতে বলে, বরং রবিবাবুর সাথে আপনার অনেক মিল।
মানে?
আপনি রবিন, উনি রবীন্দ্রনাথ।
হা হা হা।
হা হা হা। আচ্ছা ওই গানটা আছে?
কোনটা?
জানালা খুলে দেখি
দাঁড়িয়ে আছ কৃষ্ণচূড়া বনে
তোমাকে ভেবে ভেবে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
নেই কিছু মনে...।
রবিন গানটা খুঁজতে থাকে। হাতড়ে বেড়ায়।
নেই? তাহলে থাক।
না না, আছে। এই তো দিচ্ছি।
গান বাজতে থাকে-জানালা খুলে দেখি, দাঁড়িয়ে আছ কৃষ্ণচূড়া বনে...।
রবিনও গুনগুন করে-জানালা খুলে দেখি...।
রবিন জানালার দিকে তাকায়। জানালা খোলা। জানালাটা কি খোলা ছিল? না। রাতে যখন বৃষ্টি এসেছিল, স্পষ্ট মনে আছে ওর, জানালাটা সে বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপর সকাল থেকে আর খোলা হয়নি। বাইরে ছিল সে বড়জোর আধাঘণ্টা। এ সময়ে মা বা অন্য কেউ তার ঘরে আসেনি-সে নিশ্চিত। তার ঘরে যখন-তখন যে কেউ প্রবেশ করে না। সে সিগারেট-টিগারেট খায়। এটা মা-বাবা জানে। ছোটবোন, কাজের বুয়াও জানে। মা-বাবা আসে না রবিন বিব্রত হবে এ জন্য। ছোটবোন আর কাজের বুয়ার প্রতি রবিনের কড়া নির্দেশ-না বলে কয়ে তার রুমে প্রবেশ করা যাবে না।
জানালাটা খুলল কে?
নিশ্চয়ই মেয়েটা খুলেছে।
জানালা খুললে কি কৃষ্ণচূড়া দেখা যায়?
যায় না তো।
রবিন কি কৃষ্ণচূড়া বনে দাঁড়িয়ে ছিল?
ছিল না তো! এখানে তো কৃষ্ণচূড়াই নেই।
মন্তব্য
এই যা! শেষ হয়ে গেল, এত্তো তাড়াতাড়ি! আমি তো ভাবলাম মাত্র......শুরু
## দারুন, দারুন, নমস্য...
হ্যাঁ, শুরুই। প্রকাশিতব্য উপন্যাস ''পরিকীয়া''র শুরুর অধ্যায় এটি
তাহলে কী হল ব্যাপারটা?
জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে
আরে শেষ হয়ে গেলো যে... ইস...। দারুন একটা লেখা। আরও গল্প লিখুন।
ডাকঘর | ছবিঘর
শেষ হয়নি। শুরু হলো মাত্র। লিখব।
বাহ! ছেলেদের চিন্তার দৌড় তো অসাধারণ! মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে হতো আসলে ছেলেরা ভাবে কি? লেখা প্রাণবন্ত হয়েছে। ড় দিয়ে লেখা অংশটা হাসিয়েছে। শুভকামনা।
আপনার জন্যও শুভকামনা।
বুঝি নাই
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এইটুকুতে না বুঝলে ঠিক আছে।
ফেসবুকে দেখলাম-এটি প্রকাশিতব্য উপন্যাস পরিকীয়া-র শুরুর অংশ।
তাহলে ধারাবাহিকভাবে পুরো উপন্যাস এখানে চাই।
ফেসবুকে দেখলাম-এটি প্রকাশিতব্য উপন্যাস পরিকীয়া-র শুরুর অংশ।
তাহলে ধারাবাহিকভাবে পুরো উপন্যাস এখানে চাই।
ফেসবুকে দেখলাম-এটি প্রকাশিতব্য উপন্যাস পরিকীয়া-র শুরুর অংশ।
তাহলে ধারাবাহিকভাবে পুরো উপন্যাস এখানে চাই।
রহস্য গল্পের যাত্রা শুরু করলেন নাকি সিরাজী ভাই? অনেকদিন পর লিখলেন। উপন্যাসের অনুরোধিকাকে চেনা চেনা লাগছে মনে হয়
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সব প্রশ্নের উত্তর- জি, নীড়দা।
অসাধারন হয়েছে সিরাজী ভাই পরের পর্ব কবে পাব?
পাবেন শীঘ্রই
মাইনুল এইচ সিরাজি'র লেখা অনুসরণ করি অনেকদিন থেকেই। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার, প্রকাশিতব্য উপন্যাস আগে আগে পড়ে ফেলা। জমজমাট গল্পের স্বাদ পাচ্ছি। উপন্যাসের জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ জুয়েল দেব
উফ্। গাছে তুলে এভাবে মই কেড়ে নিলেন??
কি আর করবা? হয় গাছেই বইসা থাক, আর নাইলে ডাল বাইয়া নাইমা যাও যদি বেশিক্ষণ না থাকতে পার।
নতুন মন্তব্য করুন