পুরাণকথা, পর্ব-৬ (ভারতকথাও বটে)
প্রাচীনকালে সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রকার সন্তানোৎপাদন প্রথা প্রচলিত থাকার কারনে অদ্ভুত ধরনের সব সম্পর্কের দেখা পাওয়া যায়। যেমন, পিতা এবং মাতা উভয়ই পৃথক পৃথক হওয়া স্বত্বেও ভীষ্ম ও বেদব্যাস পরস্পর ভাই।
মহাভারত রচয়ীতাকে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বলা হয়েছে। তিনি যে সত্যবতীর গর্ভে পরাশরের ঔরসজাত কানীনপুত্র তারও উল্লেখ আছে। পরে শান্তনু সত্যবতীকে বিয়ে করেন।
সত্যবতীর এক পুত্র ছিল বিচিত্রবীর্য। এই বিচিত্রবীর্যের মৃত্যুর পরে সত্যবতী তাঁর কন্যকাবস্থাজাত পুত্র বেদব্যাসকে, বিচিত্রবীর্যের দুই বিধবা পত্নী অম্বা ও অম্বালিকার গর্ভে পুত্রোৎপাদনের আদেশ করেন। বেদব্যাসের ঔরসেই বিধবাদের গর্ভে ধৃতরাষ্ট্র ও পান্ডুর জন্ম।
পরাশর মুনির ঔরসে কন্যা সত্যবতীর গর্ভে বেদব্যাসের জন্ম আর শান্তনুর ঔরসে গঙ্গার গর্ভে ভীষ্মের জন্ম।
পরে যেহেতু শান্তনু সত্যবতীকে বিয়ে করলেন তখন স্বভাবতই বেদব্যাস ও ভীষ্ম পরস্পর ভাই হলেন।
প্রাচীন সমাজের ঘটনা আরও দেখুন, ঋষি দুর্বাশা কন্যকাবস্থায় কুন্তিকে একটি 'বর' দিয়েছিলেন, এই 'বর' এর বলে কুন্তি যে কোন পুরুষকে পুত্রোৎপাদনের আকাঙ্খায় আহ্বান করতে পারতেন।
ঋষি কিন্দমের শাপের কারনে পান্ডু সহবাসে বিরত থাকতেন। পুত্র লাভার্থে তিনি স্ত্রী কুন্তিকে অনুরোধ করেন 'বর' এর সুবিধা প্রয়োগ করতে। কুন্তি স্বামীর আদেশে তাঁর গর্ভে ধর্মের ঔরসে যুধিষ্ঠির, মরুৎ এর ঔরসে ভীম এবং ইন্দ্রের ঔরসে অর্জুনকে জন্ম দেন। আর মাদ্রীর গর্ভে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের ঔরষে নকুল ও সহদেবের জন্ম হয়। আর কুন্তির কন্যকাবস্থায় সূর্যের ঔরসে তাঁর গর্ভে মহাবীর কর্নের জন্ম।
আবার দেখুন, দৌপদীর গর্ভে পঞ্চপান্ডবের ঔরসজাত সন্তানেরা, যুধিষ্ঠিরের পুত্র প্রতিবিন্ধ্য, ভীমের পুত্র সুতসম, অর্জুনের পুত্র শ্রুতকীর্তি, নকুলের পুত্র শতনিক এবং সহদেবের পুত্র শ্রুতসেন।
একই রমনীর গর্ভে বিভিন্ন পুরুষের ঔরসে বৈধ সন্তানদের জন্ম।
কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে স্ত্রী মাদ্রীর অনুরোধে পান্ডু মাদ্রীর সাথে সহবাসে প্রবৃত্ত হলে ঋষি কিন্দমের শাপের কারনে তাঁর মৃত্যু ঘটে। মাদ্রী অপরাধবোধের কারনে পান্ডুর সাথে সহমরণে গিয়েছিলেন।
এক দেবতার কান্ড দেখুন, 'চন্দ্র' ছিলেন স্বর্গের একটি রাজ্যের অধিপতি। তিনি একদিন রথে চড়ে যাবার সময় সুন্দরী 'তারা'কে দেখে তাঁকে রথে তুলে নিয়ে বলপূর্বক রমণ করতে লাগলেন। 'তারা' ছিলেন দেবতাদের গুরু বৃহস্পতির স্ত্রী। বলাৎকারের এক পর্যায়ে, 'তারা'র অভিশাপের কথায় পাওয়া যায়, "ওরে মূর্খ! তুই রাজসূয় যজ্ঞ করিয়া আপনাকে বলবান বিবেচনা করিতেছিস" ইত্যাদি। এদিকে দেবগুরু বৃহস্পতি বারংবার স্ত্রীকে প্রার্থনা করা স্বত্বেও মদমোহিত 'চন্দ্র' 'তারা'কে পরিত্যাগ করলেননা। এই কারনে দেবতারা 'চন্দ্র' এর উপর রুষ্ঠ হলে দেবতা আর অসুরদের মধ্যে বেধে গেল প্রচন্ড বিবাদ। কারন, অসুরদের গুরু শুক্রাচার্য, দেবগুরু বৃহস্পতির উপর কোন কালেই খুশী ছিলেননা। ফলে অসুরগণ চন্দ্রের পক্ষ নিয়েছিলেন।
গর্ভিনী তারা সুন্দর একটি পুত্র জন্ম দিয়ে সত্য প্রকাশ করেছিলেন, চন্দ্রের ওরসেই তিনি গর্ভধারন করেছিলেন।
একটি পুত্রের জন্ম পরিচয় যে তিনি সকল মূল্যবোধের উপরে স্থান দিয়েছিলেন সেই কারনেই তৎকালে তাঁকে সকলে ধন্য ধন্য করেছিলেন।
চলবে
পুরাণকথা, পর্ব-১
পুরাণকথা, পর্ব-২
পুরাণকথা, পর্ব-৩
পুরাণকথা, পর্ব-৪
পুরাণকথা, পর্ব-৫
"ঝাপি খুলে বহু পুরাতন একটি নোটবই পেলুম। তখনকার দিনে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের সুবিধা ছিলনা। বই-পুস্তক ঘেঁটেই যা কিছু পাওয়া। কখন, কোথায়, কিভাবে এগুলো পেয়েছিলাম তা আজ আর স্মরন করতে পারিনা তাই সূত্র জানাতে পারবোনা। ক্ষমা করবেন।"
প্রৌঢ়ভাবনা
মন্তব্য
মাস্ত মাস্ত কাহিনী। পড়ে বহুত মজা পাই
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
তখন ছিল মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। বিবাহিত রমনীরা তখনও পুরুষের জঙ্গম সম্পত্তি হয়ে ওঠেনি।
ধন্যবাদ, সব পরিস্থিতিতে সহযোগিতার জন্য।
আরো বিস্তারিত আকারে লিখুন !
facebook
ধন্যবাদ।
মিলনে, মিথুনে ছিলনাকো কোন বাধা। আহা, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, মোরা!
সে সময়ে সমাজব্যবস্থা এমনটাই ছিল।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
নিয়মিত।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ।
পুরানের হিরোদের দোষগুন প্রকাশ করার একটি উপায় তাকে কোন দেবতার 'বর' সৃষ্ট হিসাবে পরিচয় করানো। মানব ঔরসে কোন দেবীর সন্তাত বা দেবতার ঔরসে কোন মানবীর জন্ম সচরাচর হয়না।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য। আশা করছি আগামীতে আরও কিছু বিষয় উন্মুক্ত করবো।
# ওরে বাপ্পস! কঠিন কঠিন শব্দে ভরপুর....তবে সেই সব শব্দগুলো মনে দোলা দিয়ে গেল। আরেকটু বেশী খুঁজাখুজি করেছিলাম, হতাশ হলাম। হয়তো সামনের পর্বে....
#অনেক সুন্দর লেখা, দোলা জাগানিয়া..
ধন্যবাদ, উৎসাহ জাগানিয়া মন্তব্যের জন্য।
হ্যাঁ, আগামী পর্বে...
নতুন মন্তব্য করুন