চড়ুই পাখি
মুরাদুল ইসলাম
খুব ছোটবেলায় আমি এবং আমার ভাই যখন ক্লাস থ্রি ফোরে পড়ি তখন আমাদের বাসার ভেন্টিলেটরের ফাকেঁ একজোড়া চড়ুই পাখি বাসা বাঁধে।ভেন্টিলেটরের এক ভাঙা অংশ দিয়ে ভিতরে ঢুকে শুকনো খড় পাতা দিয়ে তৈরী করে তাদের বাসস্থান।
দাদী বললেন চড়ুই পাখির বাসা সৌভাগ্যের লক্ষণ।
সৌভাগ্য জিনিসটা কি তখন ভালমত না বুঝলেও বুঝতাম চড়ুই পাখির আসাটা খারাপ কিছু না।ভাল কিছু।
বাবা তখন ছোট ব্যবসা করতেন।তিনিও খুশি হলেন।আমরা যখন স্কুল থেকে ফিরে এসে পাখিগুলো ঘরে ফিরেছে কি না দেখতাম, খেয়েছে কি না আলাপ আলোচনা করতাম তখন তিনিও আমাদের সাথে যোগ দিতেন।
পাখিগুলো যখন বাচ্চা দিল তখন শুরু হল আরো কিচির মিচির শব্দ।আমাদের আনন্দ হল প্রচুর।ধান ছড়িয়ে দিয়ে প্রতিদিন বিকেলে আমরা মা পাখির বাচ্চাদের জন্য খাবার সংগ্রহে সাহায্য করতাম।
মা তখন বকতেন।তিনি কেন জানি পাখিগুলোকে সহ্য করতে পারতেন না প্রথম থেকেই।আমাদের অতি উৎসাহ দেখে বিরক্ত হয়ে বকতেন।একদিন ছোট ভাই দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে বাচ্চা দেখতে চাইলে তাকে মেরেছিলেন খুব।মা র মেজাজ তখন এমনিতেই ভাল থাকত না। প্রতি রাতে পাখিগুলোর কিচির মিচির শব্দ শোনার জন্য দুই ভাই যখন জেগে থাকতাম তখন পাখিদের শব্দের সাথে অস্পষ্ট কিছু কথা কাটাকাটির শব্দ ও আমার কানে আসত বাবা মার ঘর থেকে।তবে ছোট ভাইটার কানে এসব যেত না।সে উৎসাহে চোখ বড় বড় করে বলত, ভাই, বাচ্চাগুলো কি ঘুমাইছে?
একদিন বিকেলে স্কুল থেকে এসে শুনতে পেলাম বাবা জানি কোথায় চলে গেছেন।ফিরে আসবেন শীঘ্রই।আমার জন্য নতুন জ্যামিতি বক্স এবং ছোট ভাইটার জন্য ফুটবল রেখে গেছেন আমাদের রুমে।
নতুন জিনিস পেয়ে আমাদের কয়েকদিন আনন্দেই কাটল।পাখিদের খোঁজখবর নেয়ায় কিছুটা ভাঁটা পড়ল।তবে প্রতিদিনের স্বাভাবিক নিয়মে কয়েকবার তাদের সাথে দেখা হচ্ছিল।
কিন্তু কয়েকদিন পর একদিন স্কুল থেকে এসে দেখলাম বাচ্চাদের ডাক শোনা যাচ্ছে না।মা পাখিগুলোকে ও দেখা যাচ্ছে না কোথাও।মায়ের ভয়ে উপরে উঠে দেখতে না পারলেও আমরা বের হলাম পাখি খোজঁতে।পিছনে রাস্তার পাশে যেখানে পাখিগুলোকে প্রায়ই দেখা যেত সেখানে গিয়েও দেখি নাই।ছোট ভাই পাথরের ছোট টুকরা কুড়িয়ে ছুঁড়ে মারল ডাস্টবিনের কুকুরটার দিকে।কুই কুই করে কুকুরটা সরে যাবার পর হঠাৎ খোলা ডাস্টবিন টার দিকে চোখ যেতেই দেখি খড়কুটো সহ পুরো বাসাটা কেউ এখানে ফেলে রেখেছে।খড়ের বাসার মাঝে মৃত পাখির ছানা দুটির গায়ে কিলবিল করছে অসংখ্য পিঁপড়ে।
সেই থেকে মা-বাবা পাখিদুটি আর কখনো আমাদের বাড়িতে আসে নি।বাবাও আসেন নি।
ওয়েবসাইট- মুরাদুলইসলামডটকম
মন্তব্য
গল্পটা ভালো লেগেছে ভাই, আরো অনেক লিখুন। সচলে স্বাগতম।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
স্বাগতম। সুন্দর লিখেছেন। আরও লিখুন, হাত পা কিবোর্ড সব খুলে!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
facebook
ভালো লেগেছে।
ডাকঘর | ছবিঘর
আগের একটা কথা মনে পড়লো, স্কুল জীবনের শেষের দিকে । মা একটা ঘুঘু পাখি এনে দিলেন, পালবো বলে । কয়েক দিনেই ভালো সখ্য গড়ে ওঠে, শুধু মা আর আমার হাতেই খেতো পাখিটা । এর কিছু দিন পর বারান্দায় রেখে খাঁচা থেকে ছেড়ে দিতাম, পুরো ঘর উড়ে বেড়াতো । আমি হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমার হাতে এসে বসতো কখনো কখনো । এক দিন কলেজ থেকে আপু তার কয়েক জন বান্ধবীকে নিয়ে এলেন । তারা বারান্দায় পাখিটার সাথে খেলা করছিল আমি যখন বিকেলে ঘর থেকে বের হই তখন, সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে দেখি আমার ঘুঘুটা নেই । ...
মা বললেন মেয়েটা নাকি ভীষণ করে ধরেছি কয়েক দিনের জন্য পাখিটা তার কাছে নিয়ে রাখতে চায় ।
এরপর থেকে বারান্দার ঐ জায়গাটায় দাঁড়াতে খুব খারাপ লাগতো, আপুকে বললাম যেন বান্ধবীর বাসা থেকে পাখিটা নিয়ে আসে ।
একদিন দু দিন করে প্রতিদিন এক কথার পর শেষে আপু বললো ওর বান্ধবী পাখিটা বাসায় নিয়েই ছেড়ে দিয়েছে ।
তারপর থেকে আপুকে এই নিয়ে আর জিগ্যেস করিনি তাও সকাল বিকাল বারান্দার ঐ জায়গাটায় দাঁড়িয়ে থাকতাম । মা বলতেন উনি নাকি বিকলে ছাদে উঠলে পাখিটার ডাক শুনে, একদিন আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন ছাদে শুনানোর জন্য, আমি শুনতে পাই নি ।
অনেক বছর কেটে গেলো পোষা প্রাণীর কথা শুনলে ঐ ঘুঘুটাকেই মনে পড়ে । সেদিন মা কয়েক জোড়া কবুতর আনলেন ... তখন আপুও বাসায় এসেছিল শ্বশুর বাড়ি থেকে, কথায় কথায় ঘুঘুটার কথা উঠলো, আমি বললাম ঐ পাখিটা তোমার বান্ধবী ছেড়ে দেয়ার পরও আমাদের ছাদে আসতো ... তখন আমার বোন বললো তোকে তখন আমি মিথ্যে বলেছিলাম পাখিটা ওরা ছাড়েনি বরান্দায় রেখে বেড়াতে গিয়েছিলো, বাড়ি ফিরে দেখে পাখিটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়ে আছে ।
আবার এতো দিন পর ঘুঘুটার জন্য মন খারাপ হলো ... অনেক বেশি, মায়া নয় হয়তো, তাতো অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু ওমন পরিনতির কথা ভাবতে ভাবতে চোখে পাখিটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম ছলছলে ।
আপনার লেখার পাখিদের ঘর ভাঙ্গলো মানুষ, মানুষের সংসারও ভাঙ্গে সেই মানুষ । ভাইদুজনের জন্য খারাপ লাগছে ... ভিতরে গিয়ে স্পর্শ করলো সত্য হয়ে ।
জানি না বয়সে বড় না ছোট তবুও লেখককে নতজানু হয়ে সম্মান করতে ইচ্ছে করছে ...
ভালো থাকুন ভাই
অসাধারণ ভাই ✌✌✌
নতুন মন্তব্য করুন