দড়াম্ ॥
দ্বিতীয় বার দরজায় লাথি পড়ার পর না খুলে উপায় ছিল না সুতপার। এটা ফ্লাট বাড়ি। ভদ্রলোকদের থাকার যায়গা। মাঝরাতে করিডোরে দাড়িয়ে মাতলামি করার যায়গা নয়। পাশের ফ্লাটের মহিলা তক্কে তক্কে আছে। সুযোগ পেলেই ওনার্স এসোসিয়েশনে অভিযোগ ঠুকে দেবে। বাসাটা ছাড়তে হবে সুতপাদের। আলুথালু সুতপা অন্ধকারেই হাতরে দরজা মেলে ধরে। অমনি হুরমুড় করে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ে বাশার। দরজা আটকে ধীরেসুস্থে আলোটা জ্বালায় সে। মেঝেতে পড়ে আছে লোকটা। টাইয়ের নটটা একটু আলগা। পোষাকে কেতাদুরস্ত ফিটফাট ঠিকই আছে। হুসই নেই কেবল। হাহ্ হুস ॥ বিকেলে বলে গেল জহিরের কাছে কিছু টাকা পাবে। জহির থাকে যাত্রাবাড়ির শেষ মাথায়। ফিরতে যে দেরী হবে তা বলেই গিয়েছিল। কিন্তু সে দেরী যে রাত দেড়টা - তা বুঝতে সময় লেগেছে।
এই... ...ওঠো... কাপড় ছেড়ে শোবে চলো। নিজের কণ্ঠকে খুব করুণ মনে হয় সুতপার।
দুবার ধাক্কা খেয়ে বাশার কেবল উহ্ বলতে পারে। অগত্যা সুতপা লোকটার বগলের নিচে হাত দিয়ে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। এবার কিছুটা হুস আসে বাশারের। পৌরূষ চাগিয়ে ওঠে তার।
-এই .. কি করছিস।
-ওঠো। ওপাশের ঘরে চলো। কাপড় ছেড়ে শোবে।
-না। আমি এখানেই থাকবো। কোত্থাও যাবো না। টেনে টেনে বলে সে।
ধৈর্যের বাধঁ ভেঙ্গে যায় সুতপার। - তুমি পারলে আবার ছাইপাশ খেয়ে আসতে?
- কি? আমি কি খাই না খাই সে জবাব তোকে দিতে হবে? খেকিয়ে ওঠে বাশার।
সুতপা আর কিছু বলার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। আর কিছু বললে হয়তো গায়েই হাত তুলবে। এইতো সেদিন। মদ খেয়ে মাঝরাতে ফিরে কোমরের বেল্ট খুলে পেটালো তাকে। কানের নিচে ঘাড় আর গালের কিয়দংশ জুড়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে গেল। অফিসে সবাই জানতে চায় কি করে হলো। সুতপা অবশ্য বানিয়ে বলেছিল রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে অমন হয়েছে। বারবার তো আর রিকশা থেকে পড়ার গল্প বলা যাবে না। সুতপা হাটু মুড়ে বসে থাকে এলিয়ে পড়ে থাকা লোকটার পাশে। লোকটা হঠাৎ পানি চাইলো বুঝি! সুতপা দৌড়ে পানি আনে। লোকটাকে উচু করে ধরে পানি খাওয়ায়। এবং অকস্মাৎ দিগ্বিদিক ভাসিয়ে হরহর করে বমি করে লোকটা। সেই পূতিগন্ধময় নাগরিক অনুষঙ্গ ছুয়ে সুতপা যেন অর্বূদ বছর ধরে বসে থাকে।
২.
এই- শুনছো? আমার মোজা পাচ্ছি না। বসার ঘরে কি যেন টেনে ফেলল বাশার।
আলনার বামদিকে পিছনে। ওমলেটটা ওল্টাতে ওল্টাতে সুতপা জবাব দেয়। এবং বুয়াকে বলে-
যাও সাহেবের মোজাগুলো দিয়ে এসো। ও জানে, বাশার মোজাগুলো কখনোই পায় না।
যাই খালাম্মা।
বুয়া বেগুন কোটা রেখে উঠে দাড়ায়। তখনি সুতপা দাগটা দেখতে পায়। বুয়ার পিঠে মেরুদণ্ড বরাবর ব্লাউজের কাটা অংশের ঠিক উপরে। অনেকটা যায়গা ছড়ে গেছে।
কি হয়েছে ওখানে? সুতপা আতকে ওঠে। আংগুল তুলে ইশারায় দেখায় বুয়াকে।
ও--ওইডা? সোয়ামী থাকনের নজীর।
মানে? সুতপা ভুরু কোচকায়।
বুঝলাইন না খালাম্মা? আমরা গরীব মাইনষেরা কাজ কামে নানান দ্যাশে থাকি। সোয়ামীগো লগে লইয়া তো ঘুরবার পারি না। মাঝে মইধ্যে হেরা লাঠি চলা দিয়া গুতা দিয়া গতরে ছাপ মাইরা দেয়। হেই ছাপ্পর দেইখা মাইনষে বুঝে এই বেডির সোয়ামী আছে। বুয়া চুপ করে থাকে একটু । কাইল রাইতে চুলা থিকা একটা খড়ি তুইলা মারছে। দাগটা কি খুব বেশি দেহা যায় খালা?
সুতপার মুখে কিছু আসেনা। খানিক পর চুলোর ওমলেট পোড়ার গন্ধ নাকে ঢুকলে হাত থেকে ভাজাকাটাটি খসে পড়ে কেবল।
----------------------------
পথিক পরাণ
pavel352 এট yahoo.com
মন্তব্য
মনে রাখার মত একটা গল্প! অবিশ্বাস্য মনে হয়, তবুও- কে না জানে- এমনও হয়!
আরো লিখুন! শুভেচ্ছা!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
সত্যিই। কত অদ্ভুত ঘটনাই না ঘটে মানুষের জীবনে! Life is stranger than fiction.
অনেক কৃতজ্ঞতা সুন্দর পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য।
------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
সেই পুতিগন্ধময় নাগরিক অনুষঙ্গ ছুয়ে সূতপা যেন অর্বূদ বছর ধরে বসে থাকে।লাইনটি ভালো লাগলো
অনেক ধন্যবাদ ভালোলাগা জানানোর জন্য।
------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
দারুণ লিখেছেন। পরবর্তিতে আরও ধারালো লেখা আশা করছি।
facebook
এরপর শার্পনার দিয়ে পেন্সিল আরও চোখা (ধারালো) করে লিখব।
অনেক ধন্যবাদ।
------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
আরো লিখুন।
শাফি।
------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
কমন প্লট। কিন্তু আপনি খুব ভালো বর্ণনা দিয়েছেন...
লিখুন, আরও লিখুন......
ডাকঘর | ছবিঘর
তাপস দা
ভালো লেগেছে জেনে অনেক ভালো লাগছে। সাথেই আছি আপনাদের।
অনেক ভালো থাকুন।
------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
খুব ভাল লেগেছে
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ধন্যবাদ আপু।
আপনার লেখা পাইনা অনেকদিন হল। জলদি লিখুন...
------------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
সুন্দর গল্প। পড়ে ভাল লাগলো
নতুন মন্তব্য করুন