...........................
ভারতে ফরাসী উপনিবেশ নিয়ে ১৮৯৩ সালে জর্জ ব্রুস মালেসন লিখিত "History of the French in India, from the founding of Pondichery in 1674 to the capture of that place in 1761" প্রকাশিত হয়। ইংরেজ সরকারী অফিসারের লিখা ফরাসী উপনিবেশের গল্প কতখানি সত্যি সে বিতর্কে যাচ্ছি না, দেখি পড়ে ভদ্রলোক কি বলতে চায়। নিচের লেখাটি বইয়ের একাদশ পরিচ্ছেদের ভাবানুবাদ।
...........................
১৭৪১ সালে দ্যুপ্লে১ চান্দেরনগর (বর্তমান পশ্চিম বাংলার চন্দননগর, ফরাসী ভারতের অন্যতম ঘাঁটি) ছেড়ে গভর্নর জেনারেল হয়ে চলে যাবার পর শহরটির গুরুত্ব কমতে থাকে। এর কারন হিসেবে অনেকে বলে তাঁর উত্তরসূরীদের ক্ষমতা কমে যাওয়া, অথবা তাদের অকর্মণ্যতা, অথবা পণ্যের উপর আকাশছোঁয়া ট্যাক্স বসানো, কিংবা কেন্দ্র সরকারের অবহেলা...যে কারনেই হোক একদিনের রমরমা বাণিজ্যের শহর দেনার দায়ে কোনঠাসা হয়ে পড়লো। দিনে দিনে লোকসান বেড়েই চলছিলো। ১৭৫৬ সালে শহরের প্রধান ছিলেন রেনে দ্য সঁ জার্মে, কাসিমবাজার২ ছিল ল সাহেবের অধীনে। গ্যারিসনে ছিল ১৪৬ ইয়োরপীয় আর শতিনেক নেটিভ সৈন্য। ল এর সাথে ছিল আরো কিছু ইয়োরোপীয় ও ষাটজন নেটিভ সৈন্য।
১৭৫৬ সালে কোলকাতায় যখন গোলমাল যাচ্ছিলো (পলাশী যুদ্ধের ঠিক আগে) তখন চান্দেরনগর মোটামুটি নিরুপদ্রব। সিরাজুদ্দউলা কোলকাতা আক্রমনের হুমকী দিলে পরে ইংরেজ চিনসুরার৩ ওলন্দাজ আর চান্দেরনগরের ফরাসীদের কাছে ভেদাভেদ ভুলে একই শত্রুকে আঘাত হানার আহবান জানায়। ওলন্দাজ সোজা না করে দেয়, ফরাসীরা অতটা না করে চান্দেরনগরের সীমার ভেতরে ইংরেজদের রক্ষা করার অঙ্গীকার করে। এই "রক্ষা করার" ব্যাপারটা যদিও ভাল মনেই করা, ইংরেজরা এতে ব্যাপক অপমানিত বোধ করে প্রত্যাখ্যান করে। আবার পরে নবাব যখন ইংরেজদের বিপক্ষে না লড়লে ফরাসীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়, তারা নবাবকেও সাহায্য না করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও তারা জানত এটা করার মানে নবাবের সেকেন্ডারী টার্গেটে পরিনত হওয়া। কিন্তু পরে হলকি, ইংরেজদের কোলকাতা থেকে লাথি দিয়ে ফুলতা৪ পাঠিয়ে দেওয়ার পরে নবাব দেখলেন ইংরেজ তো গেছেই সাথে পালিয়েছে সব ব্যবসাবাণিজ্য আর ধনী লোকের দল, কোলকাতা দখল করার আগেই বরং এর থেকে নবাবের বেশি টাকা আসত। সুতরাং নবাব রাগ হজম করে চান্দেরনগর বা হুগলীর তীরে অন্য কোন ইয়োরোপীয় কলোনী আক্রমন না করার সিদ্ধান্ত নিলেন, অযথা পয়সা নষ্ট।
১৭৫৭ সালের দুসরা জানুয়ারী কোলকাতার পতন হয়, তার আটদিন পর হুগলী শহর ম্যাসাকার করে ইংরেজ। এই কোলকাতা থেকে হুগলী আসার পথে ক্লাইভ তার সারা-জীবনের-স্বপ্ন মার্কা চিঠি পেলেন ওপর মহল থেকে, "ফ্রান্স ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে"। এতদিনে ব্যাটাদের হালাল পিটুনি দেওয়া যাবে, আর কত ভাই ভাই খেলা রে বাবা। ভারতের ফরাসী কলোনী তখনও সংবাদটা পায়নি, সুতরাং স্ট্র্যাটেজিক্যালি সময়টাও দূর্দান্ত! ক্লাইভ আর ওয়াটসন৫ ভাবতে লাগলেন কিভাবে ব্যাপারটা কাজে লাগানো যায়। নবাব অলরেডী প্রতিশোধ নেবার জন্য তৈরী, এদিকে তাকে সামলানোর আগে ফরাসীদের চটিয়ে দিলে ওরা আবার নবাবের সাথে একত্র হয়ে তাদের উপর না হামলা চালিয়ে বসে সেইটাও চিন্তার বিষয়। সাতপাঁচ ভেবে ক্লাইভ তখনি দুই শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়া সমীচীন মনে করলেননা।
এদিকে নবাব কোলকাতা হারিয়ে ফুঁসছেন, চটজলদি দশহাজার সৈন্য আর পনেরহাজার ঘোড়াসহ কোলকাতা দখল করতে ছুটলেন। পাশাপাশি তিনি ফরাসী গ্যারীসন প্রধান রেনের কাছে সাহায্য চেয়ে দূত পাঠালেন।
রেনে পড়লেন মহা মুসিবতে, সৈন্য নিয়ে বসে থাকাও দেখি বিপদ লোকের চোখ টাটায়। নবাব আর ইংরেজ মারামারি করে মরুক, নবাব মরলে ভালো না মরলে আরো ভালো...সাপোর্ট দেওয়াটা রেনের মোটেই পছন্দ হচ্ছিলো না। যে জিতবে সে-ই চান্দেরনগর আক্রমন করবে এখন সাহায্য না করলে, কে যে জিতবে এটাই এখন ভেবে বের করতে হবে। সাতপাঁচ ভেবে রেনে কোলকাতা কাউন্সিলে ইয়োরোপে ইঙ্গ-ফরাসী যুদ্ধে নিরপেক্ষ হস্তক্ষেপের প্রস্তাব রাখলেন।
একথা ক্লাইভের কানে যাওয়ার পরে খুশীতে তার সব হলদে দাঁত বেরিয়ে গেলো, তার ভালোমতই জানা ছিল যে চান্দেরনগরে ৩০০ আর কাশিমবাজারে ল এর অধীনে আরও ১০০ ইয়োরোপীয় সৈন্য আছে। কোলকাতা আক্রমনের সময় নবাবের সৈন্যরা তাদের কি বেধড়ক মার মেরেছিল তা এখনো ক্লাইভ চোখ বুঁজলে দেখতে পান। তার উপর এই প্রস্তাবে অযথা ইংরেজ সৈন্যক্ষয় হবেনা মাহমুদ আলী আর চন্দ সাহিবের যুদ্ধে ৬। নবাব তার দলবল নিয়ে পূর্ণ শক্তি নিয়ে আসছে, তার সাথে যদি ৩০০ ফরাসী সৈন্য যোগ দিত তাহলে ইংরেজের হালুয়া টাইট হয়ে যেত নিঃসন্দেহে। রেনের প্রস্তাবে ক্লাইভ তাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।
(চলবে)
সত্যপীর
eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%6d%69%72%31%37%38%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%22%3e%6d%69%72%31%37%38%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))
মন্তব্য
চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
##এত্তো এত্তো খবর কোথায় পান প্রিয় "সত্যপীর"
##অনেক অনেক ভাল লিখছেন, হিমকুঁয়াশার ভালবাসা রইলো...
##ভাল থাকুন সবসময়, এ কামনায়
অনেক অনেক ধন্যবাদ, আপনিও অনেক অনেক ভালো থাকুন।
দাক্ষিনাত্য > দাক্ষিণাত্য।
লেখা চলুক।
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
দুঃখিত, সামনের পর্বগুলোয় শুধরে দেব। অনেক ধন্যবাদ।
চা খাওয়া শেষ হয়েছে, জনাব? ৬ বছর হয়ে গেল কিন্তু, "গুলো" কেন - "টি"-ও আসেনি!
****************************************
"টি" একবার এসেছিল নীরবে।
..................................................................
#Banshibir.
থ্যাঙ্কু!
****************************************
চলুক চলুক... ভালো লাগছে, ইতিহাসের এই রঙ পড়তে ভালোই লাগছে।
ডাকঘর | ছবিঘর
চলুক---
facebook
চলুক।
শাফি।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন