আগের পর্বে বলেছিলাম আমাদের ঝাকড়াচুলো আইনস্টাইনের রিলেটিভিটির সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সমন্বয় ঘটানোর জন্যে এই 'স্ট্রিং থিওরী' ব্যাটার আবির্ভাব ঘটেছে।
এখন আসুন দেখি জেনারেল রিলেটিভিটি একটি ঘটনাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করে। আপনাদের মনে আছে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের কথা?
নিউটনের মতে- "এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজ দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণ ফলের সমানুপাতিক, এদের মধ্যবর্তী দুরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এবং এই বল বস্তুদ্দ্বয়ের কেন্দ্র সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে"
এই মহাকর্ষ বলকে জেনারেল রিলেটিভিটিতে একটু অন্যরকমভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ধরাযাক একটি রবারের চাদরে মাঝখানে একটা ভারী বস্তু রাখা হলো। ভারী বস্তুটি চাদরের মধ্যখানে অবস্থান করছে। রবারের চাদরটিকে আপনি যত টানটান করেই ধরুন না কেন, ভারী বস্তুটির কারনে সেটি কিছুটা চাদরের মধ্যে একটি বক্রতা সৃষ্টি করবে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে ভারী বস্তুটি না থাকলে চাদরটি সমান থাকতো, আর ভারী বস্তুটি নিয়ে আসায় চাদরটির মধ্যে একটি বক্রতা সৃষ্টি হয়েছে।
ধরাযাক এখন একটি মার্বেলকে চাদরের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হলো, যেহেতু ভারী বস্তুটির কারনে চাদরটির চারদিক ঢালু হয়ে রয়েছে সেহেতু মার্বেলটি গড়িয়ে গড়িয়ে অবশ্যই ওই ঢাল বেয়ে চাদরটির কেন্দ্রে অবস্থিত ভারী বস্তুটির কাছে গিয়ে হাজির হবে, ঠিক?
এবার ভারী বস্তুটির স্থানে একটি গ্রহকে বসান, চাদরটি হলো স্পেস-টাইম । এবার মার্বেলের জায়গায় অন্য গ্রহ বসান। উপরের উদাহরন অনুযায়ী অন্য গ্রহটি স্পেস-টাইমের বক্রতা সৃষ্টিকারী গ্রহটির কাছাকাছি যেতে চাইবে, অন্য কথায় ঐ দুটি গ্রহের মধ্যে আকর্ষন সৃষ্টি হবে । জটিলতা পরিহার করে সাদামাটা ভাষায় জেনারেল রিলেটিভিটিতে এভাবেই মহাকর্ষ বলকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে গ্রহদুটি কেন আকর্ষনের ঠেলায় একে অপরের সাথে ধপাস করে গুঁতো খায়না সেটার ব্যাখ্যা করতে গেলে আরেকটু গভীরে যেতে হবে, আপনারা সেটা জানার জন্য উইকিপিডিয়া থেকে ঘুরে আসতে পারেন। আপাতত সেখানে গেলাম না, আমাদের মূল বিষয় সুতোতত্ত্ব, সেদিকেই আবার যাই।
জেনারেল রিলেটিভিটির এই ব্যাখ্যা হাতে কলমে বৈজ্ঞানিকরা প্রমানও করে দেখলেন, কিন্তু দেখা গেলো নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনগুলির আচরন এই স্পেস-টাইম বক্রতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছেনা।
এদিকে আরেকদল বৈজ্ঞানিক ইলেকট্রনের তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা , মৌলিক-কণাগুলির আচরন ইত্যাদি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাহায্যে বেশ সহজেই ব্যাখ্যা করে ফেললেন। এ পর্যায়ে এসে বৈজ্ঞানিকরা মহা মুশকিলে পরে গেলেন! কারন শুধু কাগজে কলমে নয়, উপরের দুটি তত্ত্বই সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের নির্ভুলতা প্রমান করে বিজ্ঞানের জগতে স্থান করে নিয়েছে। কি করা যায়?
ঠিক এপর্যায়ে ঐ দুটি তত্ত্বকে সমন্বয় করার জন্য হাজির হলো 'স্ট্রিং থিওরী'। এ তত্ত্ব অনুযায়ী একটি পদার্থকে ভাঙলে পাওয়া যাবে পরমানু। পরমানুকে ভাঙলে পাওয়া যাবে নিউক্লিওয়ন (প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রন ইত্যাদি)। প্রোটন বা নিউট্রনকে ভাঙলে পাওয়া যাবে আরও ক্ষুদ্র কণা (বিজ্ঞানিরা তাদেরকে নাম দিলেন কোয়ার্ক)। এভাবে ভাঙতে ভাঙতে একদম গভীরে চলে গেলে দেখা যাবে এরকম একটি তলে উপর ১-ডিমেনশনাল কিছু সুতো নাচানাচি করছে।
ভিন্ন ভিন্ন মৌলতে যেমন নিউট্রন, প্রোটন বা ইলেক্ট্রন এর সংখ্যা ভিন্ন হয়, সেরকমই মৌলের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে এই সুতো বা স্ট্রিং গুলোর নাচানাচির ধরন নির্ভর করে। হাইড্রোজেনের জন্য সুতোগুলি যদি কত্থক নাচে, তেজস্ক্রিয় রেডিয়ামের জন্য তাহলে তারা ব্রেকড্যান্স (!) দিবে।
সবাই ভাবলো,সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো বুঝি। কিন্তু না, এক এক দল বৈজ্ঞানিক এক একভাবে এটিকে উপস্থাপন করার চেস্টা করলেন। এপর্যায়ে এসে স্ট্রিং থিওরী পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। এ পর্ব আপাতত নামগুলি উল্লেখ করছি, পরের পর্ব প্রতিটি ভাগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে -
১।বোসনিক স্ট্রিং থিওরী (Bosonic string theory)
২।ধরন I স্ট্রিং থিওরী (Type-I string theory)
৩।ধরন II-A স্ট্রিং থিওরী (Type-II-A string theory)
৪। ধরন II-B স্ট্রিং থিওরী(Type-II-B string theory)
৫। আলাদা ধরনের স্ট্রিং থিওরী(Heterotic string theory)
পরে অবশ্য প্রমানিত হয়েছে,ঐ পাঁচটি ভাগ আসলে একই থিওরীর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী ছাড়া কিছু নয়। এই পাঁচটি থিওরী আবার একসাথে করে স্ট্রিং থিওরীর নতুন তত্ত্বের অবতারনা করে সেটি ছিলো M-তত্ত্ব বা (M-theory)।
(চলবে)
দায়ীন (frdayeen)
মন্তব্য
আরেকটু বড় বড় টুকরো করে দিন না।
হিমু ভাই, সুতোগুলি ব্যাখ্যার জন্য বেশিরভাগ বই-পত্রে একগাদা অংক কষে দেয়া আছে।
গণিতকে সরিয়ে একটু সহজ সহজ উদাহরন আর ইংরেজি শব্দগুলির ভালো পরিভাষা খুঁজতে গিয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে! নাহলে টুকরো আরেকটু বড় করেই দিতুম।
মাথা নষ্ট ম্যান!
কিসুই বুঝি নাই, কিন্তু অসম্ভব ভালো লাগলো পড়তে। আরো দুইবার পড়বো দেখি বুঝি কিনা!
হাইড্রেরোজেনের কত্থক আর রেডিয়ামের ব্রেকড্যান্সের ব্যাপারটা জটিল!
সহজ ভাষায় লেখা, ভালো লাগলো পড়ে। চলুক।
মাথার উপ্রে একখান নেট লাগায়া পইড়া দেখার ট্রাই দেন। কোন কিছু উপর দিয়ে যাবার চেস্টা করলেই নেটে ধরা পড়বে।
গেছেগা। মাথার উপ্রে দিয়া গেছেগা। ভাইডি এইবার সব বুঝে গেছি এই জিনিষ বোঝা আমার কম্ম নয়
ডাকঘর | ছবিঘর
মাথার উপ্রে একখান নেট লাগায়া পইড়া দেখার ট্রাই দেন। কোন কিছু উপর দিয়ে যাবার চেস্টা করলেই নেটে ধরা পড়বে।
ওহু, হয়না মিয়া, হয়না...
ডাকঘর | ছবিঘর
দারুণ দারুণ! পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় আছি! আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। আরো বড় পর্ব দিলে আরো ভালো। তবে ভাষা কঠিন করা চলবে না
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ভাষা সহজ রাখতে গিয়েই পোস্টের সাইজটা কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে!
দেখি চেস্টা করবো। আপনাকে
চমৎকার লেখা।
স্বাভাবিক মাপের এক-চতুর্থাংশ সাইজের লেখা দিলে চলবে?
সাধু! সাধু!
('লিওনার্ড ম্লোডিনো' মহাকর্ষকে বোঝার জন্য বহুল ব্যবহৃত 'রবারের চাদর এর উপর মার্বেল ছেড়ে দেওয়ার' উপমাটির একটি সীমাবদ্ধতার কথা বলেছিলেন যে এটি চমৎকার একটি উপমা কিন্তু এটির সীমাবদ্ধতা মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করে মহাকর্ষের কারণ হিসাবে! )
love the life you live. live the life you love.
আপনাকে
খুব বুঝে উলটে ফেলেছি বলব না, তবে পড়ছি, ভাল লাগছে। আরেকটু বড় করে দিলে ভাল হত বোধহয়, ভেবে দেখবেন?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
গানিতিক অংশগুলো পরিত্যাগ করে সহজ উদাহরন দিয়ে সাজাতে গিয়ে একটু মুশকিলে পরছি, তাই ছোট ছোট পোস্ট দিচ্ছি। দেখি পরেরগুলিতে আরও কিছু জিনিস একসাথে দেওয়া যায় কিনা।
আরো বড়ো লেখা না ছাড়লে ক্যামনে কী?
_________________
[খোমাখাতা]
হুম্ম , ক্যামনে কী
আর একটু ডিটেইল চাই। খুবই ভাল লাগছে।
ভালো লাগছে পড়তে। কিছু শিখতে পারছি।
পইড় সত্যিই খুব ভাল্ লাগছে। মনে হইতাছে "সেই রকম" কিছু শিখতাছি। (গুড়)
দারুণ। চলুক।
পর্বগুলো পড়ছি। দেখা যাক সূতো ধরে কোথায় গিয়ে পড়ি।
অনেক আগে ডিকে মাল্টিমিডিয়ার একটি বিজ্ঞান বিষয়ক বিশ্বকোষের সিডি পেয়েছিলাম। সেখানে একেবারে এনিমেশন সহ পদার্থের অণু, পরমাণু, নিউক্লিওন এবং তাদের ভাঙলে যে কোয়ার্ক পাওয়া যায় তা জেনেছিলাম। পড়তে ভাল লাগছে। সহজ করে বলতে পারা অনেক বড় গুণ।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
ভাল লাগল। গনিতগুলোকে সোজা করে আরও বড় লেখা লিখুন। বিজ্ঞানের সহজ লেখা পাওয়া যায়না সহসা।। চলতে থাকুক
দারুণ।
এভাবে ভাংতে ভাংতে একদম গভীরে চলে গেলে দেখা যাবে এরকম একটি *তলে
* এই লাইনে তলে এর পর কি র টা থাকার কথা?
পড়ে অনেক ভাল লাগল ,, অনেক সহজ করে লেখা ,, পরবর্তী পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম
পড়া শেষে কেমন জানি 'আরে এর পর কই' ধরনের একটা অনূভুতি হচ্ছে।
অবশ্য এটি আপনার অসাধারণ লেখনির দোষ,পাঠকের না। এরকম জটিল একটা বিষয়কে কত্থক আর ব্রেক ড্যান্স স্টাইলে বুঝানো শুরু করলে তো আমরা পাঠকরা আর একটু বেশী আশা করতেই পারি।
নতুন মন্তব্য করুন