[আটলান্টিক মহাসাগর এলাকা তথা আমেরিকার আশেপাশে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ যখন ঘন্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশী হয়, তখন জনগণকে এর ভয়াবহতা বোঝাতে হারিকেন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মায়া দেবতা হুরাকান- যাকে বলা হত ঝড়ের দেবতা, তার নাম থেকেই হারিকেন শব্দটি এসেছে।– উইকিপিডিয়া]
আমেরিকার ওয়েস্ট কোস্টে হারিকেন হলে মদের বিক্রিবাট্টা বেড়ে যায়। এটা যেন একটি বিরাট উৎসব। পূর্বাভাস পাওয়ামাত্র পুরুষপুঙ্গবেরা খুশিমনে পাবে যায়। গ্যালন ধরে মদ গাড়ির ব্যাকডালা বোঝাই করে নিয়ে এসে স্টোর করে বাড়ির বেজমেন্টে। হারিকেনের প্রকোপ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় মদ্যপানের উৎসব। বায়ুপ্রবাহের সাথে সাথে বাড়তে থাকে মদের প্রবাহ। হারিকনের চূড়ান্ত মুহূর্তে যখন বাড়িঘর তছনছ হবার যোগাড় উপকূলের মার্কিনীরা তখন নেশায় চূর। তাদের ভাষ্য হল নিজের পেয়ারের বাড়ি ঘর ধ্বংস হবার দৃশ্য তারা দেখতে চায়না। আর যদি মারাই যায়, তবে নেশার ঘোরে মৃত্যুযন্ত্রণাও মুফতে মাফ।
এ অবস্থা দেখে স্টেটের দুর্যোগব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা বেকায়দায়। তাদের শখের হারিকেন শেল্টার খালি পড়ে থাকে। আর প্রাণহানির সংখ্যা বেশি হলে বেচারাদের চাকরি নিয়ে টানাটানি। তাই হারিকনের সময় তারা গণমাধ্যমে প্রচারণা শুরু করতে বাধ্য হয়েছে, ‘হারিকেনের সময় মদ্যপান অসাস্থ্যকর। এতে মৃত্যু ঘটতে পারে। আপনারা এ সময় মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন’ ইত্যাদি।
অনেক সাধ্যসাধনায় হারিকেন প্রবণ এলাকার মানুষদেরকে শেল্টারে আনতে রাজি করা গেলেও বিপত্তি বাঁধল অন্যত্র। আশ্রয়কেন্দ্রের নিয়ম হল সেখানে কেবল মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে; অন্যকোন প্রাণী নয়। এদিকে বিপুল সংখ্যক মার্কিনীর বাসায় রয়েছে পোষা প্রাণী; যেগুলোকে তারা নিজেদের পরিবারের সদস্যের মতোই যত্নআত্মি করে। তাই মানুষ আবার বেঁকে বসল; তাদের পোষা প্রাণীদেরকে সাথে নিতে না দিলে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবেনা। এটা তাদের দৃষ্টিতে অমানবিক, অগ্রহণযোগ্য- এভাবে অবলা প্রাণীদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়াটা মানবতাবাদী মার্কিনীদের পক্ষে কাহাতক হজম করা সম্ভব!
পরের বছর পোষাপ্রাণি যেমন কুকুর ইত্যাদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার অনুমতি দিয়ে আইন পাশ হল। কিন্তু আইন পাশ করে আইনজ্ঞরা, এবং আইনের প্রয়োগকারীরা পড়ে গেল মহা মুসিবতে। এবার যখন হারিকেন ধেয়ে আসল ওয়েস্ট কোস্টের দিকে, মানুষজনকেও দেখা গেল ধেয়ে আসতে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। কারো গলায় প্যাঁচানো পোষা পাইথন, কারো মাথায় টারানটুলা, কাঁধে বসা বিরাট টিয়া পাখি, বৌল এর ভেতর গোল্ডফিশ; আর সাথে নানা বর্ণ-গোত্র-আকৃতির কুকুর, বিড়াল, আলপাকা তো রয়েছেই।
মন্তব্য
নাম লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম: তৌফিক জোয়ার্দার
নাম দিয়া কাম কি? যেই লিখা লিখস; নাম না দিলেও চলত।
মজা লেগেছে, পড়ে।
থ্যাঙ্কস
এতো ছোট কেন লেখাটা? ভালই লাগছিল পড়তে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ। বড় লেখা লিখতে না পারাটা বোধহয় আমারি সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের প্রয়াস থাকবে।
শেষ ?? । কিছু মনে করবেন না প্লীজ, আমার কাছে পোস্টটা একটু খাপছাড়া লাগলো। হ্যারিকেন এর বর্ণনা নিয়ে মজাদার কিছু বলতে চাইছিলেন বুঝলাম, কিন্তু এভাবে শেষ করে দিলেন কেন। গল্পের মতো করে তো কিছু বলতে পারতেন।
ডাকঘর | ছবিঘর
আমারও সেরকমই মত। পড়তে পড়তে মনে হলো হুট করে শেষ হলো লেখাটা।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কাজের feedback. পরবর্তিতে এমনটা হবেনা।
হুম; বড় লেখার ধৈর্য্য রাখতে পারিনা, বেশিরভাগ লেখাই ছোট হয়ে যায়। গল্প-উপন্যাস নয়, simply মজার একটা policy consequence দেখাতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু disaster management নিয়ে তাত্তিক আলোচনা শুরু করলে লেখাটার যে টোনটা চাচ্ছিলাম সেটা নষ্ট হোত। Feedback এর জন্য কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে মাথায় রাখব।
ট্যাগে রম্যরচনা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কী লিখতে চাইলেন বুঝতে পারলাম না!
প্রথম কথা হলো হারিকেন ওয়েস্ট কোস্টে সাধারণত হয় না বললেই চলে। যা হয় ইস্ট কোস্টে এবং সাউথে। হারিকেনের সময় এসব এলাকায় ব্যক্তিগত আয়োজনে কিছু পার্টি হলেও ঢালাওভাবে যেভাবে মার্কিনীদের কথা বলেছেন তা সত্য নয়। বিশেষ করে ক্যাটরিনার পরে এখন আর কারো পার্টি করার মতো বুকের পাটাও নেই। আগেও যা হতো তার উদ্দেশ্যগুলিও নিছক ফুর্তি ছিলো না। বিপদের সময় সবাই মিলে একসাথে থাকাটাই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের পর কিছুদিন বিদ্যুৎ থাকে না বলে পার্টি দিয়ে ফ্রিজ খালি করা, যাদের ঘর-বাড়ি দুর্বল তারা এই উসিলায় একটা শক্তপোক্ত বাড়িতে আশ্রয় নিতে পারা- এগুলোও থাকত এসব পার্টির উদ্দেশ্য। সবার জন্য যেন পর্যাপ্ত ইমার্জেন্সি সাপ্লাই থাকে তা নিশ্চিত করাও থাকে এসব পার্টি হোস্টের দায়িত্ব। তবে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কিছু পার্টিও যে আয়োজন করা হতো না- তাও কিন্তু নয়। আমি একটা ভিডিও দেখেছিলাম যেখানে কোনো এক ঘূর্ণিঝড়ের সময় ফ্লোরিডার এক বিচহাউসে ধনী লোকের স্ত্রীরা পার্টিতে মেতে উঠেছিলেন। তবে সেটা হারিকেন এন্ড্রু (১৯৯২) ফ্লোরিডায় আঘাত হানার আগে। এন্ড্রু ও ক্যাটরিনার পরে এখন সবার প্রথম চিন্তাই থাকে ইভাকুয়েট করা।
ওয়েস্ট কোস্ট- তথ্যগত ভুল; অনবধানবশত হয়েছে। ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
ফ্লোরিডার দিকে বসবাসকারী সিডিসির একজন Senior Science Adviser এর কাছ থেকে শোনা; যিনি নিজে ডিজাস্টার সিচুয়েশনে পাবলিক হেলথ কনসালটেন্সি দিচ্ছেন গত ২০ বছর ধরে। লেখাটিকে policy trivia বলতে পারেন।
পৃথিবীর কোন আচারই জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকেই পালন করেনা; জেনারেলাইজ করার মতো স্ট্যাটিসটিকাল রাইগরও নি:সন্দেহে লেখায় দাবি করা হয়নি। ঢালাওভাবে মার্কিনীদের কথা বলেছি এটা মনে হল কেন বুঝলামনা। সব মার্কিনী ইস্টকোস্ট বা সাউথে থাকেনা, সব মার্কিনী ড্রিঙ্কও করেনা, সব মার্কিনী হারিকেনের সময় পার্টি দেয় এটা দাবি করার তো প্রশ্নই আসেনা; সব মার্কিনীর পেট এনিমেলও নেই। এটা তো কমনসেন্সেই বোঝা যায়। লেখাটির কোন অংশের কারণে ঢালাওভাবে সব মার্কিনীর কথা বলেছি এমন মনে হচ্ছে জানালে বাধিত হবো, এবং পরবর্তিতে কোন লেখায় যেন এমন ভুলবার্তা না যায় সে বিষয়ে সচেতন হবো।
ধন্যবাদ।
এইগুলো কি উপকূলে বসবাসকারী আমেরিকানদের সম্পর্কে ঢালাও মন্তব্য নয়? নাকি আপনি লিখবেন একটা, আমাদের ধরে নিতে হবে আরেকটা?
আমার কমনসেন্স ভাই খারাপ। আপনারটা বেশি সেটা বুঝতে পারলাম।
বুঝতে পারছি আরেকটু সময় নিয়ে, চিন্তা করে লেখা উচিত ছিল। সময় নিয়ে criticize করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন। সচলায়তনে লেখার এটাই শ্রেষ্ঠ দিক; লেখা improve করার সুযোগ পাওয়া যায়। আপনি যে লাইনগুলো তুলে ধরেছেন আমার স্বাভাবিক বিবেচনায় সেগুলোকে নির্দোষই মনে হচ্ছে। পাঠক হিসেবে আপনার যেহেতু তা মনে হচ্ছেনা, সেহেতু আমাকে ভেবে দেখতে হবে এর বিকল্প কি উপায়ে ভুল বার্তা না দিয়ে নিজের মনোভাব প্রকাশ করা যায়। আর আপনার কমনসেন্সের কথা বলিনি; বলেছি আমার কমনসেন্সের কথা। আমার কমনসেন্সে যা বোঝা যায়; আপনার কমনসেন্সে যেহেতু তা বোঝা যাচ্ছেনা- লেখক হিসেব সে দায় আমাকেই বহন করতে হবে। ধন্যবাদ।
"অনেক সাধ্যসাধনায় হারিকেন প্রবণ এলাকার মানুষদেরকে শেল্টারে আনতে রাজি করা গেলেও বিপত্তি বাঁধল অন্যত্র। আশ্রয়কেন্দ্রের নিয়ম হল সেখানে কেবল মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে; অন্যকোন প্রাণী নয়। এদিকে বিপুল সংখ্যক মার্কিনীর বাসায় রয়েছে পোষা প্রাণী; যেগুলোকে তারা নিজেদের পরিবারের সদস্যের মতোই যত্নআত্মি করে। তাই মানুষ আবার বেঁকে বসল; তাদের পোষা প্রাণীদেরকে সাথে নিতে না দিলে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবেনা। এটা তাদের দৃষ্টিতে অমানবিক, অগ্রহণযোগ্য- এভাবে অবলা প্রাণীদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়াটা মানবতাবাদী মার্কিনীদের পক্ষে কাহাতক হজম করা সম্ভব!"....
এটা আপ্নার কাছে ব্যঙ্গ করার ব্যাপার ? জীব জন্তুর প্রতি যাদের অপরিসীম মায়া, আপ্নার এরকম নিরমম রসিকতা তাদেরকে আহত করতে পারে।
আপ্নার আগামী লেখাগুলো সফল হক, শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ব্যাপারটা অবশ্যই ব্যঙ্গ করার মতো নয়। কাউকে ব্যঙ্গ করাই লেখাটার উদ্দেশ্য ছিলনা। এর পরও যদি কাউকে ব্যঙ্গ করা হয়েই থাকে, সেটা আমার মতে করা হয়েছে বিড়ম্বিত ডিজাস্টার পলিসি মেকারদের। কারণ তারা বারবার তাদের প্রণীত নিতিমালা নিয়ে নিজেরাই বিপদে পড়েছে।
তবে আরেকটা বিষয়ও মনে রাখা দরকার; অনেক জায়গাতেই কিন্তু pet animal allow করা হয়না। যেমন হাসপাতাল; উড়োজাহাজ ইত্যাদি। হারিকেনের প্রাণসংহারী ছোবলে যেখানে মানুষের জীবন বাঁচানোই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে আপনাকে প্রায়োরিটাইজ করা লাগতেই পারে- আপনি আপনার টারানটুলার প্রাণ বাঁচাবেন; নাকি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া অন্যান্য মানুষের সুবিধা অসুবিধার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। যদিও আমার লেখার উদ্দেশ্য সে দিকটি তুলে ধরা ছিলনা। উদ্দেশ্য ছিল সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে নীতিনির্ধারকদের face করা মজার একটা সমস্যা (আমার কাছে মজার মনে হয়েছে)।
তারপরও, নির্মম রসিকতা মনে হওয়ায় দু:খিত।
আপনার প্রত্যুত্তর দেবার attitude অত্যন্ত চমতকার।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ধন্যবাদ। এতটা ধৈর্য্য নিয়ে আমি নিজে কারো লেখার ব্যবচ্ছেদ করতাম বলে মনে হয়না। এ কাজটি যাঁরা স্বেচ্ছায় করে দিচ্ছেন তাদের শ্রম/মেধাকে তো acknowledge করতেই হবে। তবে সবার মন পাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। একটা কার্যকর equilibrium খুঁজে পাওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা প্রতিটা লেখকেরই সাধনা হওয়া উচিত।
আমেরিকানদের কান্ড-কীর্তি নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে; লিখেছেনও অনেকে। আমাদের হুমায়ুন আহমেদই তো মজার মজার কাহিনী লিখেছেন নব্বইয়ের দশকে (যেমন: যশোহা বৃক্ষের দেশ, হোটেল গ্রেভার ইন), যা তার সেরা সৃষ্টিগুলোর ভিতর সহজেই ঢুকে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। আপনার লেখায় সেই হিউমারের গন্ধ ও স্বাদ দুটোই পেয়েছি। সর্ববিষয়ে অঘটনপটিয়সি আমেরিকানরা সাইক্লোন নিয়ে যে পার্টি করে, তার ভিতর অনেকে অসীম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উদ্যোগ আবিষ্কার করতে পারেন; আবার পোষা প্রাণীদের সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কেউ কেউ অসীম মানবিকতা খুঁজে পেতে পারেন (যদিও আমেরিকানদের পোষা প্রাণী বাবদ খরচ অনেক আফ্রিকান দেশের দুর্ভিক্ষ দূর করতে পারে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন!); কিন্তু এ সবই হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি-গত ব্যাপার এবং তাতে বিন্দুমাত্র দোষের কিছু নেই। আর তাই আপনি রম্য আদলে আমেরিকানদের আরেকটা অভিনব কান্ড যেভাবে তুলে ধরেছেন, তাতেও আমি কোন সমস্যা দেখি না। আবারো বলছি, আপনার লেখাটা ভাল লেগেছে!
ধন্যবাদ । অনুপ্রাণিত হলাম। তবে লেখাটা মনে হয় আরেকটু বড় হলে ভাল হতো; অনেকেই বলেছেন। আমি নিজে ছোট লেখা পড়তে পছন্দ করি। কবিতা লেখার বহুদিনের অভ্যাস, তাই এখন গদ্য জাতীয় কিছু লিখতে গেলেও দেখছি কবিতার মতো ছোট হয়ে যাচ্ছে (কবিতা বড়ও হয় যদিও)।
ইন্টারেষ্টিং
ধন্যবাদ।
ভাল লাগল পরে।
ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন