উইন্ডস অব ওয়ার উপন্যাসটি ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। লেখক হারমান ওক। এই বইয়ের কাহিনী নিয়ে আশির দশকে বিটিভিতে একটি মিনি সিরিজ প্রচারিত হএছিল--সচলের অনেক সদস্য, পাঠক ও অতিথির মনে থাকলেও থাকতে পারে।
বইয়ের ঘটনা প্রায় হাজার পাতাজুড়ে বিস্তৃত, সংক্ষেপে বলা দুঃসাধ্য; তাই শুধু সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা যাক।
উইন্ডস অব ওয়ারের পটভূমি ২য় বিশ্বযুদ্ধ আর ঘটনার আবর্তন দুই মার্কিন পরিবার হেনরি ও জস্ত্রকে ঘিরে। ভিক্টর ও বায়রন হেনরি এবং এরন ও নাটালি জস্ত্র উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। প্রথমোক্ত দুজন পিতা-পুত্র, আর শেষোক্ত দুজন চাচা-ভাতিজি। দুই পরিবারের ভাগ্যই ঘটনাচক্রে জড়িয়ে যায় ইউরোপে হিটলারি আগ্রাসনের সাথে। মহাযুদ্ধের নায়ক খলনায়করাও এই উপন্যাসের চরিত্র। ১৯৩৮ এর শেষে ভিক্টর হেনরির বার্লিন যাত্রার মধ্য দিয়ে উইন্ডস অব ওয়ারের সূচনা আর সমাপ্তি টানা হয়েছে ১৯৪১ সালে পার্ল-হারবারে জাপানি আক্রমনের মধ্য দিয়ে। মাঝে উঠে এসেছে নানা বিষয় ও ঘটনাঃ অবরুদ্ধ পোল্যান্ড (ওয়ারশ),যুদ্ধকালীন বার্লিন, ফ্রাসের পতন, লন্ডনে জার্মান বিমান হানা, রাশিয়া আক্রমণ, ইহুদী নিধন, মস্কোর যুদ্ধ।
মুচমুচে ইংরেজিতে লেখা উপন্যাসটি এগিয়েছে সাবলীলভাবে, আর ঘটনার নাটকীয়তা ও বাঁক পাঠককে আবিষ্ট করে রাখে। লেখকের মূল কৃতিত্ব এখানে একটি কাল্পনিক কাহিনীকে ২য় মহাযুদ্ধের মতো জটিল ও বিশাল কলেবরের ভেতর রেখে সাফল্যর সাথে বর্ণনা করা।
হারমান ওক নিছক রোমান্স বা পারাবারিক টানাপড়েনের গল্প ফেঁদে বসেননি, বরঞ্চ মহাযুদ্ধের ইতিহাস উপন্যাসে অসম্ভব গুরুত্ব পেয়েছে। বিকৃত বা কোনভাবে ক্ষুণ্ণ না করে লেখক সোজাসুজি এই ইতিহাস তুলে ধরেছেন। স্পষ্টভাবেই ওক বলেছেন যে পশ্চিমা লেখক দ্বারা ব্রিটেনের আকাশে বিমান যুদ্ধকে অহেতুকই এক রোম্যান্টিক ও গুরুত্বের আবহ প্রদান করা হয়েছে; যেখানে সমগ্র যুদ্ধকালীন সময়ে হিটলারি সমরযন্ত্র ও ঘৃণা নিয়োজিত ছিলো সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে। উপন্যাসে হিটলার কোন কমিক বা কার্টুন চরিত্র নয়; বরং সুস্থ-স্বাভাবিক হাসি খুশি এক নেতা যার ভেতর লুকিয়ে আছে এক দানবীয় সত্ত্বা, এবং যাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে অর্ধ-শতাব্দি আগে জার্মান জাতি নিমজ্জিত হয়েছিলো অতল অন্ধকারে। ঠাণ্ডা যুদ্ধের গরম সময়ে লেখা এই বইতে মার্কিন লেখক ওক স্তালিন ও সোভিয়েত নেতৃত্বের সাহসী, অবিচল ও দৃঢ় রূপটি তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে দ্বিধা করেননি চার্চিলকে ক্ষুদ্রমনা ও স্বার্থপর বলতে। লেখক জার্মান দৃষ্টিভঙ্গীও টেনে এনেছেন লেখাতে হিটলারের এক কাল্পনিক জেনারেলের বয়ানিতে।
লেখাটি শেষ করার আগে উপন্যাসের ৬৬৬ নং পৃষ্ঠা হতে একটা প্যারা তুলে ধরার লোভ সম্বরন করতে পারলাম না, যেখানে হারমান ওক ইহুদী হত্যায় নিয়োজিত কুখ্যাত স্পেশাল একশান ইউনিটের সদস্যদের চরিত্র চিত্রণ করেছেন, বোঝার চেষ্টা করেছেন জার্মানদেরও। মূল রস আস্বাদনের জন্য আমি সরাসরি লেখককে কোট করছিঃ
“The Germans in the ranks of the Special Action Units were recruited mainly from the civil services: policemen, detectives, clerks, and the like. There were no lunatics and criminals among them. The officers were mostly lawyers, doctors or businessmen, who through age or disability could not fight in the army. Many had university degrees; one officer had been a theologian. Officers and men alike were good Germans, the sort of men who did not drive past red traffic lights, who liked operas and concerts, who read books, who wore ties and jackets, who had wives and children, who for the most part went to church and sang hymns, and worked in little weekend gardens. Obedience was a German virtue. They had been recruited and ordered to kill these people. They had been told that the Jews were Germany’s enemies, and that the only way to deal with them was to kill every last one of them, down to the babes in arms and their mothers.
A prime German virtue was to accept such words from above, and carry them out.”
কেন জানি এই লাইনগুলোতে আমি পাক হানাদার ও পাকি আমজনতাকে খুঁজে পাই। পাকি জেনারেলরা কাফের আখ্যা দিয়ে পাকি জনতার কাছে বাঙালি হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করেছিলো। ৭১ সালে উর্দিধারী বর্তমানে ভদ্রবেশী এরকম কিছু পশু দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছিলো। আমাদের দেশেও এই বেজন্মাদের কিছু বংশধর ও সাগরেদ রয়েছে। আশা রাখি মরার আগে জানোয়ারগুলোর চূড়ান্ত বিচার দেখে যাবো।
মন্তব্য
অনবদ্য লেখা। ধন্যবাদ। আমিও আশা রাখি, জানোয়ারগুলোর বিচারের রায়ের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারব মরবার আগে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Winds of War এর কথা মনে আছে। এর sequel ছিল Remembarence of war. ওটাও খারাপ ছিলনা।
সিক্যুয়েলের নাম War and Remembrence; ৯২/৯৩ সালে দেখেছিলাম।
এই যে গোবেচারা ভালাভোলা সৎ ধার্মিক দায়িত্ববান নাগরিকরা সরকারি আদেশ মাথা পেতে গণহত্যা পর্যন্ত করে ফেলতে সক্ষম হয় এজন্যই গণহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা, প্রচারণা, আইন কানুন, ইত্যাদির সার্বিক প্রচলন দরকার। আর সবচেয়ে বেশি দরকার বিচার। লোকে ভালোভাবে জেনে রাখুক, স্বয়ং খোদা এসে বললেও গণহত্যা হালাল হবে না। সরকারি আদেশ তো কোন ছার। আর দুষ্টলোকেরা নাকি বলে এতোদিন পরে এইসব করে কী লাভ? তারা যাতে আবার আরেকটা আদেশ পেয়ে গণহত্যা করতে না নামে, সেটা নিশ্চিত করার জন্যে, গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের জাতিগত অবস্থান দৃঢ় করার জন্যেই এগুলো অবিলম্বে করার প্রয়োজন আছে।
গণহত্যা, গণনিধনের কোনো প্রকার সাফাই থাকতে পারে না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ইন্টারেস্টিং! পড়ার ইচ্ছে জাগিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
আগ্রহ সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছি জেনে খুব ভালো লাগলো।
নতুন মন্তব্য করুন