প্রথম অংশ - http://www.sachalayatan.com/guest_writer/42365
দ্বিতীয় অংশ - http://www.sachalayatan.com/guest_writer/42401
আমার অফুরন্ত আলসেমির বদৌলতে শেষ পর্বটা দিতে দেরি হওয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমাদের আজকের ভ্রমণ ঈশ্বরগঞ্জ থেকে ঢাকা ভায়া কুতুবপুর, রয়েলবাড়ী, নান্দাইল।
সকাল ৭টার ভিতরেই জেলা পরিষদের বাংলো থেকে বের হলাম। নাস্তা শেষে নান্দাইলের চৌরাস্তার উদ্দেশে বাসে চড়ে বসলাম। এবার রাস্তাটা অনেক ভালো। নান্দাইল পার হয়ে চৌরাস্তা। সেখান থেকে রিকশা নিলাম। ওই এলাকার রিকশা আকৃতিতে একটু ছোট, আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমি বা তেহজীব কেউই সাধারন গড়পড়তা বাঙ্গালির ওজনে পড়িনা। তাই রিকশাওলাদের পরামর্শে দুইজন দুটো রিকশা নিলাম; এবং এটাও স্বীকার করতেই হবে যে যদি তা না করতাম তাহলে আমাদের আর সেদিন ফেরত আসা হতোনা।
কিছুদুর পাকা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পরেই শুরু হল ইটের রাস্তা এবং তারপরে মাটির।
যথেচ্ছ ঝাঁকুনি এবং একবার রাস্তা হারানোর পর পৌছুলাম কুতুবপুর আহসান হাবীব ভাইদের বাসায়। প্রতি রিকশা ৬০ টাকা করে আসা ঠিক করা হলেও রাস্তার অবস্থা দেখে তাঁদের বিদায় না করে রেখেই দিলাম যে আমরা আবার ফিরব।
পরিচয় হলো হাবীব ভাইয়ের চাচাতো ভাইয়ের সাথে।
উনি অনেক বললেন সেদিন থেকে আসতে কিন্তু আমরা নিরুপায়। পরেরদিন ৪ তারিখে হরতাল ডেকেছে বিরোধীদল। কাজেই সেদিনের ভিতর ঢাকায় না ঢুকলে আরও একদিন থাকতে হবে।
ফরহাদ ভাইকে অনুরোধ করতেই নিজেই চললেন হুমায়ূন আহমেদের স্কুল দেখাতে। স্কুলটা আসলেও বেশ সুন্দর ছিমছাম।
তবে কিছুটা যত্নের অভাব মনে হল। ক্লাশও চলছিল।
পাঠাগারটা সত্যি বেশ সমৃদ্ধ। তবে যেটা মনে হল যে স্কুল পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা যেমন একটা ব্যপার তেমনি কি বই থাকবে এইটারো একটা নির্দিষ্টতা থাকা উচিৎ। এবং কেন যেন মনে হলো যে বইগুলো সেভাবে পঠিতওনা।
বেশ কিছু অব্যবহৃত ও বন্ধ রুম পাওয়া গেল। যার একটিতে একজন ডাক্তার (যদ্দুর সম্ভব ডঃ এজাজ) মাঝে মাঝে এসে ফ্রিতে রোগী দেখেন। আর আছে আবাসিক ছাত্র থাকার রুম। যদিও রুমের অবস্থা বেশ জরাজীর্ণ মনে হল। সব যায়গাতেই কেমন একটা অবহেলার ছাঁয়া। কম্পিউটার ল্যাবের দেখা পেলাম না। হয়তো তালা মারা কোনও রুমেই রাখা আছে সেসব।
আমার স্কুল জীবন ততটা সুখকর না থাকলেও হটাৎ করেই যেন শুনতে পেলাম সেই মিষ্টি আওয়াজ।
হাবীব ভাইয়ের সাজেশন মতোই এরপর রওনা দিলাম রয়েলবারী। উদ্দেশ্য সেখানের কিছু পুরাকীর্তি দেখা। পথিমধ্যে চোখে পরলো টিনের কিছু আধুনিক বাড়ী। যা দেখে কেন যেন চিনদেশের বাড়ীঘরের কথাই মনে পড়ে। মাঠে মাঠে ধান কাটা হচ্ছে। মাঝে মাঝেই দেখা মিলছে গাঢ় সবুজ বীজতলার।
রয়েলবাড়ী মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে এবং তার পাশেই দুটো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। হালকা কিছু টেরাকোটার কাজ এখনো স্বাক্ষী হয়ে আছে এর অতীত জৌলুসের। স্থানীয় কেউ তেমন কিছুই বলতে পারলনা। শুধু বলল এখানে একটা মসজিদ একা একাই মাটির নিচ থেকে বের হয়ে এসেছিল অনেক আগে। এবং তখন এখানকার অধীবাসিরা কিছু ব্যপার দেখে ভয় পেয়ে আবার মাটি দিয়ে মসজিদটি ঢেকে দেয় এবং এলাকা ত্যাগ করে। কিন্তু ঠিক কি দেখে ভয় পায় বা কত আগের ঘটনা তা কেউ জানেনা। যদিও আমাদের কাছে দেখে মনে হলো খুব যত্ন সহকারেই কেউ একটা নির্দিষ্ট পরিমান অংশ খুঁড়ে বের করেছে। যায়গাটা ঘিরে রাখার জন্য কিছু বাউণ্ডারী পিলারও রাখা আছে সেখানে। এবং বসার জন্য আধুনিক টাইলস (!) এর ছাতা। আমাদের কোনও সরকারী অধিদপ্তর ছাড়া মনে হয়না আর কারও এমন উর্বর মস্তিষ্ক আছে। (শেষ যেবার কেওক্রাডং যাওয়া হয়, দেখেছিলাম পুরো পাহাড়টা কিভাবে ন্যাড়া করে পাহাড়র চুড়ায় বসার জন্য ইট-সিমেন্ট এর বেঞ্চ এবং ছাতা বানিয়ে দিয়েছেন আমাদের পর্যটন করতিপক্ষ। )
তবে, মুস্তাফিজ মামুন এর লেখা থেকে জানতে পারলাম যে এটি ১৪৯৮ পরবর্তী হুসেন শাহের ছেলে নসরত শাহ এর তৈরি দুর্গ।
রয়েলবাড়ী থেকে বের হয়ে আবার নান্দাইলের পথে। বাংলাদেশের অনেক এলাকাতেই গিয়েছি। কিন্তু সীম যে এই ভাবে চাষ হয় জানা ছিল না। যতদূর চোখ যায় শুধু সীম গাছের মাচা। ধানক্ষেতের মতোই তার বিস্তৃতি। মাঝে মাঝেই চোখে পড়ল ছোট ছোট কিছু বেগুনের এবং অন্যান্য সব্জীর ক্ষেত। আমি যদিও কখনই মূলা প্রেমিক ছিলাম না; তারপরেও সদ্য ক্ষেত থেকে আরোহীত তাজা তাজা মূলা দেখে নিজেকে হোজ্জার গাধা ভাবতেও ইচ্ছে হচ্ছিল।
একটুকরো লাল - সবুজকেই যেন বুকে ধরে নান্দাইলের ফিরতি পথ ধরলাম।
নান্দাইল থেকে বাসে ঢাকার পথে। যথারীতি ট্র্যাফিক জ্যাম ঠেলে ৫ ঘন্টার যাত্রা ৮ ঘন্টায় শেষ করে সুইট হোমে প্রত্যাবর্তন করলাম। শেষ হলো আমার সুখের দিন কয়টি, শুরু হলো আবার দৈনন্দিন ঠেলাগুঁতো।
- তদানিন্তন পাঁঠা
মন্তব্য
চমৎকার সব দৃশ্য। গ্রাম বাঙলার ছবি গুলো মন ভরিয়ে দিল
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ। তবে আপনার ছবির কাছে আমারগুলো নেহায়েতই শিশু।
মন্তব্যের পাশাপাশি লিখতে দেখে ভাল লাগছে। নিয়মিত চলুক।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
শখ অনেকদিনের, কিন্তু সাধ্যে হয় না ভাই। চেষ্টা করছি। ধন্যবাদ আপনার উৎসাহের জন্য।
চোখ জুড়ানো, মন জুড়ানো সব ছবি
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
তারপরেও ছবিই। প্রকৃতি আরো অনেক বেশি সুন্দর। ধন্যবাদ আপনাকে।
কতদিন পর আপনার লেখায় আমার গ্রাম দেখলাম ! অনেক অনেক দিন পর। খুব ভাল্লাগ্লো।
দুর্গের ব্যাপারটা জানা ছিল না। কোন পুরনো হিন্দু বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ভাবতাম। কোন প্রত্নতাত্বিক স্থাপনায় সেই জায়গার ইতিহাসটা থাকা উচিত।
রয়েলবারী? বেশ ছিমছাম সুন্দর একটি গ্রাম। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
উত্তম বর্ণন। ছবিগুলোও ভাল লাগলো। গ্রামের ছবিগুলোতে মাটির সোঁদা গন্ধ পেলুম।
চমৎকার উৎসাহদ্দীপক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
একটা খালের মধ্যখানে একটা একাকী দেশি নৌকা মন-প্রাণ কেড়ে নিলো ছায়াময় আবেশে।
শেষ হয়ে গেলো
শেষতো হয় ভাই আবার শুরু হওয়ার জন্যই। কাজেই মন খারাপ নয়। আবারও আমরা সব্বাই কোনও একদিন তারেক অণু হবো। শুধু সেই দিনটির অপেক্ষায়। ধন্যবাদ।
সব্বাই তারেক অণু হলে ঘরে থাকবে কে ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ঘরেও আমরাই থাকব। তারপরেও তো মনে মনে আমরা সবাই একেকজন তারেক অণুই। সব সময়ের জন্য না হলেও না হয় মাঝে মাঝে দু'চারদিনের জন্য হলামই সেরকম। তাতে আশা করি না আমাদের ঘরের জীবনে খুব সমস্যা হবে।
চেনা ছবি, তবু ভালো লাগলো।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
সীম ফুলের ছবি টা যে কী সুন্দর! মনে পড়ে গেলো মফস্বলের সেই শৈশবের কথা। ভুলেই গিয়েছিলাম, সীম ফুল আর পুঁই ফুল ছিল আমার প্রিয় ফুলের তালিকায়। কতদিন ওদের দেখিনা!
অনেক রোদ্দুর এই ছবিগুলাতে। পছন্দ হইছে।
নতুন মন্তব্য করুন