অনেকগুলো চোখ বারবার পিছু ডেকেছে,
অনেকগুলো শব্দের আহ্বান নির্ঘুম চাদরে ছেয়েছে রাত।
চেসাপীক বে’র ঘুর্ণিজলে ডুবিয়ে দিয়েছি স্মৃতির বরাভয়,
বারবার হয়েছি নিরুদ্দেশ- প্রিয়মুখ
কিম্বা বেপথু অস্তিত্বের মায়াডাক পিছু ফেলে।
কৈশোরের মধ্যযামে ব্রহ্মপুত্রের লাইলাক স্রোতে
দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে দিতে দিতে প্রিয়বন্ধু বলেছিল-
“তুই চলে গেলে জীবনটা এলোমেলো হয়ে যাবে;
কেউ আর ফেরাতে পারবেনা। তখন দোষ দিসনা।”
জীবনের মিহীন স্রোতে পোড় খেতে খেতে
সত্যিই যে একদিন তলিয়ে গেল-
অক্ষম হাতে কখনোই টেনে তুলতে পারিনি।
-“তোর যত দোষই থাক,
আমিই চির বাঁধনছেঁড়া নীলাভ অপরাধী”।
প্রেমিকার আকুতিভরা টলটলে তারকার ঝিকিমিকি
বুকের অচীন গহীনে অজানা শূণ্যতার নিস্পৃহ ঢেউ তোলে-
“তোমাকে আমার এখন অনেক প্রয়োজন, যেওনা প্লিজ।“
চিরচেনা অবিমৃশ্যতায় পায়ে দলেছি অস্ফুট জেরানিয়াম।
অনেক মাংসের বিভ্রান্ত দলনে আক্রান্ত অবস্থিতি এতকাল পরও
আঙ্গুল তোলে আমারি বেদনার্ত মাঝরাতনীল অবয়বে।
বোঝাতে পারিনা: আরিয়াডনিকে ছেড়ে যাওয়াই
থিসিয়াসের অমোঘ নির্বন্ধ।
মধ্যযৌবনের গনগনে সূর্য মাথায় নিয়ে
মতিঝিলের পিতলরঙা দুপুরের রাজপথ মাড়িয়ে
কবিসখা বলেছিল- “রাতজাগা কবিতার উত্তুঙ্গ আড্ডায়
আশাবাদী জলবিম্ব অবলীলায় ভেঙ্গে দিয়ে চলে যাবেন? কেন?
একটি বালক যদি গলুইয়ে দৃপ্ত পা দাবিয়ে নিশান না তুলে ধরে
আমাকে দোষ দেবেন না”। লাল-সাদা-নীল-তারকার আবাহনে
আবারো ফেলে এসেছি সবুজ ধানক্ষেত, লাল রক্তঋদ্ধ। তোমার চোখে
তপ্তগোলাপি রং ধরে এলে, মার্টিনির গবলিট
উষ্কে দিয়ে বন্ধু আমাকেই অপরাধী বোলো-
স্বপ্নের হন্তারক।
ডিপার্চার লাউঞ্জের কাঁচের আবডাল থেকে
মাঝবয়েসী এক নারীর অশ্রুজল মাড়িয়ে ইমিগ্রেশন পেরুনো:
তেজারতি আলিঞ্জরবাহী রেশমপথিক মার্কোপোলো হতে চেয়েছি;
পেছনে ফেলে স্নেহান্ধ বিবাগীনি-
রূপালী এ্যালুমিনিয়ামে টাল সামলে খর্বাঙ্গী মা আমার
ডুকরে কেঁদেছে অপসৃয়মান অস্তিত্বের পরিবেদনায়;
বিবর্ণ চোখে জলের ধারা সামলে মা বলেছিল-
মা কিছুই বলতে পারেনি।
তার কাছেই কেবল চিরনিরপরাধী রয়ে গেলাম।
--তৌফিক জোয়ার্দার
বাল্টিমোর, ম্যারিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য
বাহ! সুন্দর সব উপমা...
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ।
মনের গভীরে ছুঁয়ে যাওয়া ভাললাগা।
অনেক ধন্যবাদ।
প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্যই সুন্দর।
আর সবচেয়ে বেশি শ্বাসত সুন্দর, সত্য এই দুটি লাইনঃ
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ধন্যবাদ উচ্ছলা।
চমৎকার লাগলো আপনার উপলব্ধি এবং বয়ান।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ ভাই।
"মর্মর্ কেঁদে ওঠে ঝরাপাতাভরা ভোররাতের পবন-
আধো আঁধারের দেশে
বারবার আসে ভেসে
কার সুর!-
কোন্ সুদুরের তরে হৃদয়ের প্রেতপুরে ডাকিনীর মতো
মোর কেঁদে মরে মন"
(জীবনানন্দ)
মা কিছুই বলতে পারেনি।
তার কাছেই কেবল চিরনিরপরাধী রয়ে গেলাম।
অসাধারণ সত্য লিখেছেন লাইন দুটো
অনেক ধন্যবাদ। জীবনানন্দের পংক্তিগুলো হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
নতুন মন্তব্য করুন