২০১০ এর বাংলাদেশ ট্যুরের গল্প গুচ্ছ [এখানে]
টুকরো ঘটনা [এক]
স্থানঃ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর
বিমান বন্দরে নেমেই প্রথম কাজ ডলার ভাঙ্গায়ে দেশি টাকা নেয়া। সোনালী ব্যাংক বিমান বন্দর শাখায় মোট মাট ৩ জন অফিসার তার মাঝে একজন ঘুমাচ্ছেন একজন পেপার পড়ছেন একজন বেশ কর্মঠ। খেয়াল করলাম জিনি ঘুমাচ্ছেন তার গালে বিরাট একটা মশা কামড় দিয়ে বালিশের মতো হয়ে আছে। একটু মায়া লাগল তাই অন্য অফিসারকে বললাম দেখেন উনার গালে মশা কামড় দিয়ে কি ফুলে ফেপে আছে। আরেক অফিসারের ধাক্কায় ঘুমন্ত অফিসারের ঘুম ভাঙ্গার পর নিজের গালে থাবড়া দিয়ে উনি মশাটা মেরে বললেন নাহ আসলে প্রতিদিন স্প্রে মারতে হবে তারপর টিস্যু দিয়ে গাল পরিস্কার করলেন। আমি ডলারের পরিবর্তে বাংলা টাকা পেয়ে গুনে দেখলাম ঠিক আছে। ডলার ভাঙ্গিয়েছি তার রিসিড চাইলাম কর্মঠ অফিসার মহোদয়ের কাছে। উনি বললেন রিসিড লাগবেনা। আমি বললাম ডলার গুলা যে ভাঙাইলাম এইটার তো একটা প্রমান লাগবে না হয় বিমান বন্দর দিয়ে বের হবার সময় পুলিশ যদি বলে এত বাংলা টাকা বিদেশে কোথায় পেলেন আমি কি উত্তর দিব? উনি বললেন আরে দূর এই কথা আইজ পর্যন্ত কেউ জিগাইছে? কেউ জিগাইবনা আপনে জানগা সমইস্যা হবেনা (উনি সম্ববত নোয়াখালীর লোক)। আমি বললাম আচ্ছা বিমান বন্দরে সমস্যা না হলেও ব্যঙ্কে টাকা রাখতে গেলে টাকার সোর্স কি জানতে চাইলে আমি কি উত্তর দিব? উনি বললেন আরে দূর এত কথা কন কেন অইন্নেরা তো কেউ কিছু কয়না টাকা পাইলে সোজা হাটা দেয়। আমিও সোজা হাটা দেয়ার আগে ভাবলাম এই লোককে কিভাবে একটা ঠাণ্ডা শাস্তি দেয়া যায়?
বললাম স্যার আপনার গালেও তো একটা মশা, উনি বিদ্যুৎ গতিতে নিজের গালে একটা থাবড়া দিয়ে বললেন কই মশা ? আমি বললাম আসলে মশা ছিলনা আমি এমনি বলছি। কেন বলছি শুনবেন, আপনি ডলার ভাঙানোর পর আমাকে কোন রিসিড দেন নাই মানে আপনি সরকারি হিসাব খাতায় আমার ডলারের কোন হিসাব রাখতে চাচ্ছেন না, কারন আপনি এই ডলার আবার কোন দালাল কিংবা অন্য কোন ব্যাংকে বেশি দামে বিক্রি করবেন। আপনাকে শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই তাই আপনার নিজ হাতে নিজেকে শাস্তির ব্যাবস্থা করা আর কি।
টুকরো ঘটনা [দুই]
স্থানঃ কুমিলা শহর
মোগলটুলি মোড়ে আরব বাংলাদেশ বাঙ্কে কাজ শেষে রিক্সাঅয়ালাকে বললাম যাবেন বাস স্ট্যান্ড? রিক্সাওয়ালা বলল যাব, তবে ভারা লাগবে ৩০ টাকা! জানতে চাইলাম কি বিষয় ১৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা চাচ্ছেন কেন? সে বলল আপনে তো জানেনই আজকে ভেলেস্তাইন ডে। বললাম মামা এইটা ভেলেস্তাইন ডে না এইটা ভ্যালেন্টাইন ডে যাই হোক আমিতো সিঙ্গেল সাথে কেউ নাই এত ভাড়া চাচ্ছেন কেন? সে বলল একটু পরেই কইবেন জে একজন উঠবে ওমক জায়গা থেকে তাই অগ্রিম ডাবল ভাড়া চাইয়া রাখলাম।আমি বললাম না না বলবনা এই রকম কোন ঝাঁমেলা হবেনা, ২০ টাকায় ঠিক করে রিকশায় উঠলাম। উমেন্স কলেজ আর গার্লস স্কুল গুলার সামনে গার্জিয়ানদের ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়ল। পথে গার্লস স্কুলের সামনে পুরনো বন্ধু মাসুমকে দেখে থামতে হল। আরে দোস্ত আছ কেমন? তাছাড়া এই দিনে তুমি গার্লস স্কুলের সামনে কেন? সে ইতস্তত করে বলল আরে আমার ছোট বোন স্কুলে তাই আম্মা আমাকে স্কুল শেষে সরাসরি বাসায় নিয়ে যেতে বলেছেন জানিসইতো আজ ভ্যালেন্টাইন ডে। আমার সাথে কথা বলার ফাকে ফাকে দেখলাম মাসুম আকারে ইঙ্গিতে অন্য এক ছাত্রির গার্জিয়ানের সাথে কিছু একটা বলতে। তাছাড়া তার ভাবখানা এমন ছিল যে আমাকে বিদায় বলতে পারলেই সে বাঁচে। আমি বিষয়টা আঁচ করতে পেরে মাসুমের মবাইল নাম্বারটা নিয়ে রিক্সায় উঠে গেলাম পরে কথা হবে বলে। রিক্সায় উঠে প্রথম একটা এস এম এস করলাম
“ দোস্ত মাসুম তুমি আর আগের মতো মাসুম নাই । নিজের বোনের পাহারার নাম করে চামে যে আরেক ছাত্রীর গার্জিয়ানের সাথে ইটিস পিটিস করতেছ তা আমার বুঝতে বাকি নাই, সন্ধার পর কি খাওয়াবা কও নাইলে খালাম্মারে তোমাদের দুইজনের যে ফটুটা মোবাইল দিয়া তুলছি ওইটা দেখাইয়া দিব” [আসলে কোন ফটুই তুলি নাই ]
রিক্সাটা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সামনে আসতেই ‘ধর ধর খানকির পুতেরে ধর’ সহ ব্যাপক চিল্লাচিল্লি আর ধর পাকর। একটু সামনে যেতেই ট্র্যাফিক জ্যাম। গণ্ডগোলের কারনে এই অনাকাঙ্ক্ষিত জ্যাম। জানতে চাইলাম কি বিষয়? একজন বলল ছাত্রলিগের দুই গ্রুপের শক্তি প্রদর্শন। সেটা না হয় বুঝলাম কিন্ত কারন কি টেন্ডার বাজী নাকি অন্য কিছু? উত্তরে বলল কুমিলার হার্ট থ্রব “সপ্নাকে” নিয়ে ইলিয়াস গ্রুপ আর সেলিম গ্রুপে দন্দ। সেলিম ছিল তার গত বছরের প্রেমিক গত বছরের শেষের দিকে সে প্রেমিক পরিবর্তন করে ইলিয়াস গ্রুপের ঊর্ধ্বতন একজনের সাথে নতুন ভাবে মন দেয়া নেয়া করছে তাই সেলিম ক্ষিপ্ত হয়ে ঝামেলা বাধিয়ে দিয়েছে!
প্রায় ২০ মিনিট রিক্সায় বসে থেকে বিরক্ত হয়ে হাটা শুরু করলাম, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের অফিসটার একটু পরই চিড়িয়াখানার গেট। মনে হল কুমিল্লা শহরে আসলে চিড়িয়াখানার তেমন কোন দরকার নাই এই শহরের পোলাপান গুলার কাজ কারবার দেখে চিড়িয়া খানার বান্দর গুলাও হাসে।
মাহমুদ
[হয়তো চলবে... প্রকাশিত হলে ]
মন্তব্য
চলুক।
অনেক বছর কুমিল্লায় ছিলাম। কান্দির পাড়ের জ্যাম কি কমছে??
অফিসারকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারটি অসাধারণ লাগল। পোস্ট চলুক।
দীপাবলি।
১নং টা ভালো পাইছি! চলুক
-স্বপ্নাদিষ্ট
=======================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।
প্রথম অংশ দারুন
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
হুম , কান্দির পারের সেই জ্যাম । চলুক ।
চলুক।
লেখা ভালো লাগছে। চলুক।
১ নং টা ভাল লেগেছে।। আমারও সরকারি অফিসে গেলে এরকম কাজ করতে ইচ্ছে করে।
প্রথমটা দারুন ।
চলুক ।
আমি দুই জায়গা থেকে কখোনোই ডলার ভাঙাই না, এক হোটেল (জীবনেও না), এবং দুই, এয়ারপোর্ট। আমার বাসায় খুচরো বৈদেশিক মুদ্রার কিছু স্টক রাখি। আগেরবার কোনও দেশ থেকে ফেরার পর যেগুলো বেঁচে যায়, সেগুলোকে বাসায় রেখে দেই। পরের বার আবার সেগুলো নিয়ে যাই প্রাথমিক খুচরো খরচ চালাতে। এছাড়া সাথে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডগুলো থাকায় ক্যাশ বহন করতে হয়না।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন