শুরুতেই বলি আমার কৌ্তুহল বা জানার ইচ্ছা কোনটাই জার্মান দুষ্টু ব্যাটা ফস্টাস এর মত না। যারা ফস্টাস এর নাম শোনেননি তাদের জন্য অল্প একটু বলি। এই ব্যাটা জ্ঞানের বিনিময়ে শয়তানের কাছে তার আত্মা বিক্রি করে দিয়েছিল। আমি বড় জোর শয়তানের কাছে নিজের দেহটা বিক্রি করতে পারি (শয়তান নাকি সবসময় রূপসী রমনী রূপেই আসে!) এর বেশি কিছু না।কিন্তু তারপরো ছোট থাকতে আমার কৌতুহলের অন্ত ছিল না।আব্বুর দাড়ি কেমনে গজায় থেকে শুরু করে কারেন্ট কি জিনিস বুঝার জন্য টেবিল ফ্যানের শক খাওয়া কোনটাই বাদ দেই নাই।
আর আমার এই প্রবল জ্ঞানপিপাসায় সবচেয়ে বড় সহায়তা দান করেছে আমাদের বাসার টাট্টিখানা মানে টয়লেট।আমার ব্যক্তিগত মতামত ছোটদের সবার ওপর টয়লেটে একটা নির্দিষ্ট সময় কাটানো বাধ্যতামূলক করা উচিত। কারন টয়লেটের মত কোথাও এত মুক্ত চিন্তা করা যায় না। শরীর হাল্কা করার সময় কত ক্রিয়েটীভ চিন্তা ভাবনা যে মাথায় আসত তা বলতে গেলে দুই তিনটা এনসাইক্লোপিডিয়া হয়ে যাবে। এছাড়া আব্বুর মারের হাত থেকে বাচার জন্য টয়লেট ছিল আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু, আমার আম্মুও আমাকে এতবার মারের হাত থেকে বাচাতে পারে নাই যত বার টয়লেট বাচিয়েছে। যখনি আব্বুর কাছে পড়তে বসে কোন কিছু পারতামনা, তখনি বলতাম দাঁড়াও একটু আসতেসি বলেই দে দৌড় টয়লেটে। শুধু তাই না অনেক সময় টয়লেটে বসে অনেক ম্যাথ ইজিলি সল্ভ করে ফেলতাম। স্কুল লাইফে জাফর ইকবাল স্যারের “নিউরনে অনুরনন” আর “নিউরনে আবারো অনুরনন” এর যেই সল্ভ গুলা করেছিলাম তার অনেকগুলাই টয়লেটে বসে করা।ক্লাস নাইনে তো একবার টয়লেটে বসে ভেবেছিলাম আমি ফার্মার লাস্ট থিওরেমটা সল্ভই করে ফেলছি।পরে যখন এক বড় ভাই ভুলটা ধরায় দিল কি দূঃখটাই না পেয়েছিলাম।
তো এই টয়লেটে বসে আমার মাথায় একবার একটা যুগান্তকারী আইডিয়া এসেছিল। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই টয়লেটের বদনাটা খেয়াল করেছেন যে বদনাটার সামনের সরু নলের ছিদ্রটা খুব ছোট এবং বদনার ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলে(যেটা আমি করতাম)সরু নল দিয়ে তীব্র বেগে পানি বেরিয়ে আসে!সেখান থেকে আমার মাথায় ফায়ার সার্ভিসের নতুন একটা আইডিয়া মাথায় আসে। আমি চিন্তা করলাম আমাদের দেশে যেহেতু ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করতে জ্যাম ট্যাম মিলিয়ে অনেক ঝামেলার মধ্যে পড়ে অতএব নতুন একটা ব্যবস্থা নেয়া যায়। সরকার উচু বিল্ডিং গুলোর উপর থেকে এই ভাবে পানি প্রেশার(তখন প্রেশারের যেই চিন্তা করছিলাম ওইটা আর বললাম না।মান-ইজ্জতের সওয়াল!) দিয়ে অনেক দূরে দূরে ছুড়ে মারার একটা ব্যবস্থা রাখবে।তাদের নিজস্ব কন্ট্রোলিং সিস্টেম থাকবে যে কত প্রেশার দিলে কত দূরে গিয়ে পানি পড়বে। এইভাবে পুরা দেশকে ছোট ছোট এলাকায় ভাগ করে ফায়ার এক্সটীংগুইশিং এর কাজটা করা যায়।এই চিন্তা করে আমি তো মনে মনে ইউরেকা বলতে বলতে টয়লেট থেকে বের হয়ে আব্বুর কাছে দৌড় দিয়ে গেলাম আর প্ল্যানিং বিস্তারিত খুলে বললাম। আমার বাপজান বলল,”বদমাইশ পোলা!!তৃতীয় প্রশ্নমালার দুইটা অংক করতে দিলাম সেই সকালে আর এখন আইছছ তুই আগুন নিভাইতে!আজকে তোরে ফায়ার এক্সটিংগুইশিং শিখাইতেসি!” এরপরে ধাই ধাই করে সজোরে চপেটাঘাত। আমার আব্বু চড় মারায় বিখ্যাত ছিল।আমার ধারণা চড় মারা কম্পিটিশন হলে আব্বু পৃথিবীর প্রথম পাচ জনের মধ্যে থাকবে।তো যাই হোক বুঝতেই পারছেন আমাদের দেশে গুনীর কদর নাই।সেই দিন থেকে আমি আমার সমস্ত টয়লেট আবিস্কার শেয়ার করা বাতিল ঘোষনা করলাম।
কিন্তু তাই বলে তো মুক্ত চিন্তা থেমে থাকতে পারে না। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আমি ছেলে মেয়ের মৌলিক পার্থক্যটা জানতাম না। ইন ফ্যাক্ট আসল কাহিনী জেনেছি ক্লাস সিক্সে উঠে। যাই হোক ওইটা অন্য কাহিনী। তো আমার দুই কাজিন ছিল, দুইটাই একেবারে পিচ্চি, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। মেয়েটা ছেলেটার চেয়ে অল্প একটু বড়। যাই হোক আমি একদিন বেশ মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলাম মেয়ে কাজিনটার “ইয়ে” নাই। যাই হোক, আমি ভাবলাম, পিচ্চি মানুষ ধীরে ধীরে গজাবে।কিন্তু হঠাত আমি খেয়াল করলাম, ছেলেটা যেইটা তার চেয়ে বয়সে ছোট তার “ইয়ে” আছে কিন্তু মেয়েটার নাই। আমি তো ব্যাপক চিন্তায় পড়লাম। টাট্টিখানায় বসে অনেক চিন্তা করেও কোন উত্তর মিললনা।কেম্নে কি!! শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে একদিন আমার ফুপুকে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা ফুপু, (ছেলেটারে দেখায়ে) এর এইটা এত তাড়াতাড়ি গজাইল কিন্তু(মেয়েটারে দেখায়ে)ওরটা গজায়না কেন?” ফুপু আমতা আমতা করে বলল, “ছিঃ বাবা! এগুলা বলে না!” যাই হোক এই রহস্য ঠিকই পরে একদিন উদ্ধার করে ফেলেছিলাম।
ছোট থাকতে আব্বু প্রায়ই আমাকে নীলক্ষেতে নিয়ে আসত কমিক্স কিনে দেয়ার জন্য। ওহ তখন কি মজাই না লাগত!!চাচা চৌধুরী, বিল্লু, পিংকি, অগ্নিপুত্র অভয়, ফ্যান্টম, হীম্যান, রমন…কি দিনই ছিল সেগুলো! তো নীলক্ষেতে কমিক্সের বইএর দোকান গুলা দেখতে দেখতেই আমি ঠিক করলাম আমি বড় হয়ে নীলক্ষেতের কমিক্সের বই এর দোকানদার হব।তাই ক্লাসটু থ্রী তে থাকতে একবার এক গেস্ট যখন আমারে প্রশ্ন করছিল তুমি কি হবা আমার উত্তর শুনে ব্যাটা তো হাসতে হাসতে শেষ।
এই হল পিচ্চিকালের কৌতুহল। আর একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে লেখাটা শেষ করি।আমার ছোট ভাই যে আমার চেয়ে দশ পনের গুন বেশি ত্যাদড়(সে যখন মাত্র হাটতে শিখছে তখনি একদিন সে আমার দাদার ফালানো সিগারেট নিয়ে টানার চেষ্টা করছিল)সে একদিন পুরা ঘরময় দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াচ্ছিল। তারপরে কিছুক্ষন পরে দেখা গেল সে একটা টিকটিকি ধরে মুখে দেয়ার চেষ্টা করছে। আম্মু তো চিতকার দিয়ে টিকটিকিটা সরাল। এরপর তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হল এত কিছু থাকতে সে টিকটিকি মুখে দিল কেন, তার মতামত, সে বুঝতে চেয়েছিল জ্যান্ত জিনিস মুখের ভেতর নড়া চড়া করলে কেমন লাগে।
এখন বলুন, ফস্টাসের চেয়ে পিচ্চিরা কম কিসে?
মন্তব্য
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
facebook
ধন্যবাদ। ভাইয়া আপনাকে কিন্তু আমি চরম ঈর্ষা করি! আপনার এক একটা ব্লগ দেখলে কি কষ্ট যে লাগে। খালি মনে হয় কবে যে এভাবে ঘুরতে পারব!
লিখতে গেলে আরব্য রজনী ফেইল মারবে রে ভাই। তাই ক্ষ্যামা দিলাম।
আপনের নাম কো? দারুণ তরতরে ল্যাখেন তো আপনি। নাম দিয়েন, চোখে পড়লে পড়ে ফেলবো সব।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অসংখ্য ধন্যবাদ।এটা আমার প্রথম লেখা।
আরও চাই, আরও চাই ।
আপনার আরো লেখা পড়তে চাই।
ধন্যবাদ।
বাহ!!
জয় হোক কৌতুহলের!!!!
ভাই, এখন কি সব জেনে ফেলেছেন?
;)
পাব্লিক প্লেসে এগুলা কি জিগান ভাই!!লজ্জা লাগেনা বুঝি!!
চমৎকার লেখারে ভাই! ঝরঝরে, আনন্দদায়ক, ও স্মৃতিজাগানিয়া।
সচলে স্বাগতম। হাত-পা খুলে লিখতে থাকেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ!
Econo DX দিয়ে লিখতে থাকেন। লেখায় (গুড়)
ভাই, আপ্নেতো আমার ফ্লিকারের আইডিটাই নাম হিসাবে নিয়া নিলেন। তা যাই হোক, লেখা হইছে জোশ। চালাইতে থাকেন।।
কন কি? বুঝা গেল আমরা একই পথের পাপী। কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
বেশ উপভোগ্য লেখা
লেখা দারুন, আরও এধরনের লেখা চাই
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
নতুন মন্তব্য করুন