টিভি নাটক

কুমার এর ছবি
লিখেছেন কুমার [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১৭/০২/২০১২ - ৯:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের বাড়ীতে একটা রঙিন টিভি ছিল, সেটাতে শুধুমাত্র বিটিভি চলত। তখনো আমাদের মফস্বল শহরে ডিশ এন্টেনা আসেনি। আমাদের শহরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডিশ আসে সম্ভবত ৯৪-৯৫ সালের দিকে। কিন্তু তার আগে অনেকের বাড়ির ছাদে এরিয়েল টিভি এন্টেনা দেখা যেতো। আমাদের ছাদেও একটা ছিল। মাসিক বিল দেওয়ার ঝামেলা না থাকাতে আমার বাবা মনে হয় এন্টেনা বসাতে কার্পণ্য করেননি। আমাদের ভাইবোনদের কোন দাবী ছিল না যে এন্টেনা বসাতে হবে। সীমান্তবর্তী শহর হওয়ার পরেও এন্টেনা বসিয়ে তেমন কোন লাভ হত না। সবসময় বিটিভিই চলতো, মাঝে মাঝে অনেক রাত্রে দূ্রদর্শন সম্ভবত ডিডি-১ বা ডিডি-২ ঝির ঝির করে আসতো। শব্দ স্পষ্ট হলেও ছবি স্পষ্ট ছিল না। আমরা বলতাম ইন্ডিয়ান মশা। বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ থাকলে যে ঝির ঝিরা পর্দা দেখা যেত ঐটাও ছিল ইন্ডিয়ান মশা। বিটিভির স্বর্ণযুগ ছিল সেইসময়। বিটিভির নিয়মিত দর্শক ছিলাম ধারাবাহিক নাটকের, সাপ্তাহিক নাটকের, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের, শুক্রবার সকালের অনুষ্ঠানের, বাংলা সিনেমার, আরও অনেক কিছুর। ক্রিড়াজগৎ থেকে হুক শট, পুল শট, কাভার ড্রাইভও শেখার চেষ্টা করেছি। সেইসময় মাঝে মধ্যে টিভিতে শুদুর পারস্যের সিনেমা (পরিবারের সব্বাইকে নিয়ে দেখার মত) ডাবিং করে দেখানো হতো। আমরা বন্ধুরা বলতাম আরব দেশে নাচ-গান-প্রেম মানা, তাই খালি বাচ্চা-কাচ্চাদের নিয়ে সিনেমা বানায়। মুভি অব দি উইকে ফাইটিং সিনেমা হলেও বসে যেতাম।

বিটিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো যেটার কথা মনে করতে পারছি সেটা হল সংশপ্তক। শহিদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে রচিত এই নাটকটির চিত্রনাট্য নির্মাণ ও নির্দেশনায় ছিলেন সম্ভবত আবদুল্লাহ আল মামুন। এই নাটকের প্রায় প্রতিটি চরিত্র এবং তাদের বাচনভঙ্গী দর্শক আজও মনে রেখেছে। এরপর আর যে নাটকগুলোর কথা মনে করতে পারছি তার সিংহভাগই হুমায়ুন আহমেদের। অয়োময়, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, কি একেকটা নাটক ছিল। সপ্তাহজুড়ে অপেক্ষা করতাম পরের পর্বের জন্য। নাটকের একটা চরিত্রের ফাঁসী বন্ধের দাবীতে আন্দোলন মনে হয় বাংলাদেশে আর কোনদিনও হবে না, যেমনটা হয়েছিল বাকের ভাই এর ক্ষেত্রে। আমরাও চলতে ফিরতে বাকের ভাইএর ডায়ালগ আওড়াতাম। হাতে একটা বাকের ভাই স্টাইলে চেইন ঘুরাতে দেখতাম অনেককে। চায়ের দোকানে গিয়ে বলতাম কাপ গরম পানিতে ওয়াশিং কইরা দিও। কাউকে পিটুনি দিয়ে বলতাম মারলাম কই, একটু টিপে দিয়েছি। ইমদাদুল হক মিলনের বারো রকম মানুষ, রূপনগর নাটকও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। থামলে ভাল লাগে বা চল ছাইম্যা হালারে সাইজ কইরালাই ও বহুল ব্যবহৃত ডায়ালগ ছিল আমাদের শহরে। কইতর, আমারে ধর-একটা ডায়ালগ ছিল অমল বোসের, কোন নাটক মনে পড়ছে না। এরপর কি হইতে কি হইয়া গেল। স্মৃতি হাতড়ে এর পরের আর কিছু তেমন মনে করতে পারি না। নুরুল হুদা একদা ভাল বেসেছিল নামের একটি নাটকের কথা কিছুটা মনে পড়ে, নাটকটির সূচনা সংগীতের কারনে। এই নাটকটিই সম্ভবত বর্তমান সময়ের ব্যস্ত অভিনেতা মোশাররফ করিমের প্রথম নাটক। ফারুকীর সিক্সটি নাইন এবং একান্নবর্তী ভাল লেগেছিল। শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনের দৈনন্দিন গল্পের মাঝে হালকা কমেডি গুজে দিয়ে নাটকের একটা নতুন ধারা তৈরীর চেষ্টা মনে হয়েছিল। কিন্তু তারপর ফারুকী পচাইছে, এখনতো রীতিমত গন্ধ বের হইতাছে। গ্রামীন পটভূমিতে নির্মিত সালাউদ্দিন লাভলুর রঙের মানুষও বেশ ভালই চলেছিল মনে হয়। এপর্যন্ত মনে করতে পারা সবনাটকই ধারাবাহিক নাটক। এরপর ধারাবাহিক নাটকের আর তেমন কোন স্মৃতি নেই।

এক খন্ডের নাটক বা এক পর্বের নাটকেরও তেমন কোন স্মৃতি নেই। স্মৃতি বড়ই বেয়াদ্দব। দুয়েকটা যা মনে পড়ে তার মধ্যে একদিন হঠাৎ, ঐজা বোর্ড, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, মিসির আলী, হিমু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। হুমায়ূন আহমেদের ব্যাপক ফ্যান ছিলাম স্কুল জীবনে, তার বেশীরভাগ উপন্যাস পড়া থাকার কারনে উপন্যাসের নাট্যরূপও হয়তো মনে দাগ কেটেছিল। এরপর শুরু হয় তার নুহাশ পল্লী ভিত্তিক নাটক গুলো। ইউনিভার্সিটিতে থাকাকালীন সময়ে টিভির সাথে সংযোগ যদিও পুরোপুরি বিচ্ছিন্য ছিল, কিন্তু তার সমকালীন কিছু নাটকের ভিসিডি/ডিভিডি দেখার সুযোগ হয়েছিল। সবগুলো নাটকের থিম একই রকমের মনে হয়েছিল। কোন একটা আয়োজন চলবে, নাটকের কলাকুশলীদের ভাষায় “বিরাট আয়োজন”। বিরাট খাদক/বিরাট গাতক/বিরাট নায়ক/বিরাট কবি/বিরাট পিশাচ/বিরাট লেখক/বিরাট কবিরাজ এই টাইপের কিছু একটা নিয়ে লুটোপুটি চলবে, একটু পর পর থাকবে “বাদ্য বাজনা বাজাও”। পিকনিক স্পট হিসাবে নুহাশ পল্লীর একটা প্রমোশনও নাটকের মধ্যে ছিল। তবে হ্যাঁ, নুহাশ পল্লী আসলেই সুন্দর।

এরপর ভাগ্যের ফেরে আয়া পড়লাম বিদেশে। পরদেশে বসেই মানুষ বোধহয় নিজের দেশকে সবচেয়ে বেশী অনুভব করে। নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি, দেশীয় ঐতিহ্য, দেশীয় খাবার, দেশী মানুষ নিয়ে বুকে উচ্চ ধারনা পোষণ করে (ব্যতিক্রমও আছে, যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে . . . .তারা তাই)। যাইহোক, এখানে আসার পর গত কয়েক বছরে টিভির অনেক নাটক দেখেছি বা শুনেছি কাজের ফাঁকে ফাঁকে। অনেকে বাংলা নাটক দেখি শুনলে একটা ব্যঁকা চাহুনি দেয়, দেয় দিক, আমি কি ডরাই সখী ভিখারী রাঘবে। নিজের ভাল লেগেছে এমন নাটকের সংখ্যা নেহায়েত কম না। এক পর্বের নাটকের ব্যাপ্তিকাল গড়পড়তায় ৩০-৪০ মিনিটের মত। এই কম সময়ে চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলা এবং একিসাথে দর্শককে বিনোদন দেয়া দুরূহ কাজ। যেখানে ধারাবাহিক নাটকের চরিত্রগুলো অনেকটা সময় পায় দর্শকের কাছে পৌঁছানোর, এক পর্বের নাটক তা পায় না। কিছু নাটক দেখলে মনে হয় কমার্শিয়ালের ফাঁকে ফাঁকে পাঞ্চ করার জন্যই সল্পবাজেটে বানানো। অনিমেষ আইচ, অমিতাভ রেজা, নুরুল আলম আতিক, মাতিয়া বানু শুকু, সালাউদ্দিন লাভলু, মাসুম রেজা, গিয়াস উদ্দিন সেলিমদের কিছু কিছু নাটক ভালই লেগেছে। তবে এত এত আকাশ, বিদেশ, পার্শ্ববর্তীদেশের সংস্কৃতির ভিড়ে এক পর্বের নাটক দর্শক এখন আর দেখতে চাইবে না। দর্শক বিনোদনের ক্ষেত্রে কোন রিস্ক নিতে রাজী নয়, রিমোট ঘুরিয়ে হয়ত পরিচিত/পরীক্ষিত কোন অনুষ্ঠানে চলে যায়। এক পর্বের নাটকের রিস্ক ফ্যাক্টর অনেক বেশী। এক পর্বের নাটকের দিন মুলত শেষ হয়ে আসছে মনে হয়। ধারাবাহিক নাটক সেই তুলনায় অধিক মনোযোগ দাবি করে। অন্য কোন দেশে এইরকম এক পর্বের নাটক বানানো হয় কিনা আমার জানা নেই? সি.বি.এস/এন.বি.সি/ফক্স/এ.বি.সির সবই তো ড্রামাসিরিয়াল (ড্রামা/পুলিশ প্রসিডুরাল) অথবা সিটকম। চ্যানেলগুলো টি.আর.পির উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে কন্ট্রাক্ট রিনিউ করে। আমাদের দেশে টি.আর.পির ব্যাপার-সাপ্যার আছে কিনা জানা নেই, তবে প্রচুর মেধাবী লেখক, নির্মাতা, পরিচালক আছে যারা হয়ত ভাল অনুষ্ঠান তৈরীর মাধ্যমে দর্শককে আবার বাংলাদেশী চ্যানেলে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।

[তথ্যগত ও তত্বগত ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিতে হইবেক]

কুমার


মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

নস্টালজিক হয়ে গেলাম ভায়া।

হুমায়ুন আহমেদের কোথাও কেউ নেই, ইমদাদুল হক মিলনের রূপনগর এই নাটকগুলোর কথা এখনো জ্বল জ্বল করে সৃত্মিতে ভাসে।

নুরুল হুদা একদা ভালোবেসেছিল নাটকটি মনে হয় মাহফুজ-এর অভিনীত।

কুমার এর ছবি

নুরুল হুদা একদা ভালোবেসেছিল মাহফুজের। পড়ার জন‌্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

শিশিরকণা এর ছবি

সেদিন ইউটিউবে আবার দেখলাম হুমায়ূন আহমেদের নাটক, "নিমফুল", নাটকের নামটা ভুলে গেছিলাম, কাহিনী মনে ছিল, আসাদুজ্জামান নূর, নাটকে মনা ডাকাত, ধরা পড়েছে, তাকে কি শাস্তি দেয়া হবে এই নিয়েগ্রামের গন্যমান্য ব্যাক্তিরা পরামর্শ করছেন, শেষ মেশ ঠিক হলো চোখ উপড়ে ফেলা হবে। সেই আনন্দে খানা পিনা নানান আয়োজন। বিটিভির কাঠখোট্টা সেটের মধ্যেও যে শুধু অভিনয় আর সংলাপ গুনে কোন নাটক কলিজা কাপায় দিতে পারে, তার অন্যতম উদাহারণ। প্রায় ১৭ বছর পরে দেখেও কোন চরিত্রের জন্য প্রান হু হু করলো, কোন চরিত্রর জন্য ঘৃণার গা রি রি করে উঠলো। অসাধারণ।

আহীর আলমের "প্রেত" আরেকটা অসাধারন কাজ। আরেকটা সিরিজ হয়েছিল, "চিঠি", ঠিক ধারাবাহিক নয়, একটা কমন থিম নিয়ে আলাদা আলাদা গল্প। "নাল পিরান" ও মনে রাখার মত নাটক।

এখনকার নির্মাতা একটা নাটক হিট হলে, সেই একই টাইপের নাটকই বানাতে থাকেন, ফলে সেগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এজন্যই হাউজফুল, রঙের মানুষ কি ৫১বর্তী জনপ্রিয় হয়, কিন্তু তার হুজুগে তৈরি বাকিগুলো বিরক্তি জাগায়। প্রায় ২ বছর হলো নতুন নাটক দেখি না।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

তাসনীম এর ছবি

আহির আলম আমার বন্ধু ছিল। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর ১১ তারিখে এক সড়ক দুর্ঘটনায় সে মারা যায়। পত্রিকায় তার পরদিন এবং কয়েকদিন জুড়ে ছিল টুইন টাওয়ারের খবর। পত্রিকাতে ওর মৃত্যু সংবাদ নজরে পড়েনি। নানান ব্যক্তিগত কারণে আমি তখন গুহাবাসী ছিলাম, বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের একটা কলাম "প্রিয় আহির আলম" পড়ে ওর মৃত্যু সংবাদ পাই আমি। জানতাম খুব ভালো কাজ করছে ও, কিন্তু ওর কাজ দেখার সৌভাগ্য হয় নি। দেশে গিয়ে অনেক খুঁজেছি, পাইনি। কারো কাছে "প্রেত" বা আহিরের অন্যকোন কাজ থাকলে আমি সেটা দেখার জন্য আগ্রহী।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

চরম উদাস এর ছবি

প্রেত আমিও খুঁজেতেছি অনেকদিন ধরে মন খারাপ

কুমার. এর ছবি

উদাস ভাই, প্রেত খুজে পেলে লিঙ্ক দিয়েন, আমিও খুজছি।

কুমার. এর ছবি

আহির আলমকে নিয়ে একটা স্মৃতিচারণ পড়েছিলাম কোথাও। প্রেতের কথা শুনেছি, দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাসনীম ভাই, আমার শহর নিয়ে একটা স্মৃতিচারণ লিখতে চেয়েছিলাম, আপনার স্মৃতির শহর পড়ার পর বুকে আর বল পাই না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মন মাঝি এর ছবি

নিমফুলের শেষে যে গানটা ছিল সেটার কোন নেটসোর্স (অডিও) জানেন ? গানটা খুব ভাল লেগেছিল মনে আছে, কিন্তু কথাগুলি ভুলে গেছি। প্রথম দুয়েক লাইন কি বলতে পারবেন ?

****************************************

kumar এর ছবি

টেসট

কুমার [অতিথি] এর ছবি

বাউল কালু মিয়ার গান জানতে পারলাম। অরিজিনালটা পেলাম না, সেলিম চৌধুরীর একটা পেলাম, কিন্তু লিঙ্ক দিয়ে পোস্ট করতে পারছি না। ধন্যবাদ।

কুমার

কুমার. এর ছবি

ইউটিউবে নিমফুল, শেকড় দেখলাম। এককথায় অসাধারন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার টিভি কাহিনী। হাসি

কুমার [অতিথি] এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

আমার দেখা শেষ নাটক 'হাউসফুল'
ভালো কাজ যে একেবারে হয় না তা নয়। আপনি যাদের কথা বললেন অনিমেষ আইচ, অমিতাভ রেজা, নুরুল আলম আতিক, মাতিয়া বানু শুকু, সালাউদ্দিন লাভলু, মাসুম রেজা, গিয়াস উদ্দিন সেলিম---এদের কিছু কিছু কাজ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু আউলফাউল কাজের ভীড়ে এদের খুঁজে পাওয়া মুশকিল

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

কুমার. এর ছবি

আরো কয়েকজনের নাম যোগ করতে চাই, তাদের মধ্যে দিপঙ্কর দীপন, সুমন আনোয়ার, সাইদুল আনাম টুটুল, মেসবাউর রহমান সুমনের নাম উল্লেখযোগ্য। আপনার সাথে সহমত, ফাউল কাজের ভীড়ে এদের খুঁজে পাওয়া সত্যিই মুশকিল।

তানিম এহসান এর ছবি

টিভি দেখা হয়না বলে নাটকও দেখিনা, আর সব চ্যানেল জুড়েই যেসব নাটক হয় তা না দেখে বিছানায় শুয়ে থাকাও ভালো। তবে একটা কথা বলতে পারি, নুরুল আলম আতিক, অনিমেষ আইচ - ইনারা সত্যিকারের প্যাশন নিয়ে নাটক বানান, পরিশ্রম করেন, এদের নাটক দেখে ঠকতে হবেনা। সালাউদ্দিন লাভলু ভালো লাগতো, শেষ পর্যায়ে এসে কেমন যেন একটু সুড়সুড়ি নির্ভর হয়ে গেছেন।

নাম যোগ করে যেতে চাই মেজবাউর রহমান সুমন এর, অনবদ্য। পাশাপাশি মামুনুর রশীদ এর যে কয়টা নাটক হয়, কিংবা অনন্ত হীরা’র নাটকে চোখ বুজে মনোনিবেশ করা যায়, একইরকম সম্ভব মান্নান হীরা’র লেখা নাটক। এরা সত্যিকারের নাটক এর মানুষ, নাটক এদের রক্তে মিশে আছে। আর হ্যাঁ, ওহিদুজ্জামান ডায়মন্ড এর যে নাটকগুলো দেখেছি সবকয়টিই ভালো ছিলো, একদমই অন্যরকম।

মানুষের প্যাশন জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, প্যাশন আর প্রফেশন একাংকিত হয়ে গেলে অসাধারণ সব কাজ হয়। আমাদের নাটকে শুধুমাত্র ’ফ্যাশন’ করে এসে কিংবা দুইটা তিনটা স্পট এ কাজ করে, বিজ্ঞাপনে কাজ করে অনেক মানুষ সিন্ডিকেশন বানিয়ে নিয়েছে। মানুষ যা পায় তাই খায়, বিকল্প নেই বলেই খেতে হয় - মানুষের ভেতর ছ্যাঁচড়ামি বেড়ে গেছে কারণ ছ্যাঁচড়ামো দেখে তারা, তারা দেখে যে দুইবার ফোনে কথা বললেই একটা মেয়ে প্রেমে পড়ে যেতে পারে, যত বেশি মিথ্যে কথা বলা যায় ততবেশি মেয়েদের পটানো যায়, স্মার্ট হতে হলে পাছার নিচে প্যান্ট পড়তে হয়, হতে হয় অভব্য, ইতর -- এরা নাটককে শিল্পমাধ্যম হিসেবে নেয়নি, েস্রফ লোক ঠকাতে আর পয়সা চুরি করতে এসেছে। ইতিহাস এদেরকে আরো কঠোরভাবে মূল্যায়ন করুক।

বাংলাদেশের মিডিয়া ছেড়ে মানুষ ভিনদেশি মিডিয়া নির্ভর হয়েছে এদের কারণে, এটাই সবচাইতে বড় কারণ। মানুষ আসলে বাধ্য হয়েছে বিকল্প খুঁজতে।

আরো শ্রদ্ধা জানাতে চাই আতিকুল হক চৌধুরীকে, মমতাজউদ্দীন আহমেদ, নওয়াজিশ আলি খান, আব্দুল্লাহ আল মামুন - এদের হাত ধরে আমরা শিখেছি নাটক মানে কি, নাটক কতটুকু দিতে পারে।

এবং সবশেষে হুমায়ূন ফরীদি, ফরীদি ভাইয়ের আত্মার প্রশান্তি কামনা করছি। সত্যিকারের প্রতিভার কদর, মূল্যায়ন আমরা মানুষের জীবদ্দশায় করতে পারিনা বলেই আজকাল এই অবস্থা।

অনেক বেশি কথা বলে ফেললাম, নাটক নিয়ে মেজাজ খারাপ থাকে। মঞ্চ নাটকও দেখতে যায়না লোকে, আসন খালি পড়ে থাকে, কোথায় যাচ্ছি আমরা!!!

আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।

কুমার. এর ছবি

গুরু গুরু

মানুষের প্যাশন জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, প্যাশন আর প্রফেশন একাংকিত হয়ে গেলে অসাধারণ সব কাজ হয়

তানিম ভাই, আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।