বঙ্গভাষা/বাঙ্গালাভাষা/বাংলা ভাষা — আমার প্রাণের ভাষা, মুখের ভাষা, মনের ভাষা, বন্ধুর সহিৎ কথা কইবার ভাষা, শত্রুকের গালাগাল করিবার ভাষা, লিখিবার ভাষা, গান গাহিবার ভাষা, আনন্দ বেদনার অশ্রুর ভাষা । হৃদয় নিঙরানো অভিব্যক্তির প্রকাশ যেমন বাংলা ভাষায় করি তেমনি মনে মনে অবিরল ভাবি এই বাংলাভাষাতেই । এইরূপে বাংলা ভাষা আমাদিগের জীবনের অংশ হইয়া গিয়াছে । তথাপি, বাংলাদেশে কেহ কেহ বাংলা ভাষা লইয়া ঠিক গর্ব করিতে পারে নাই; যাহারা পারে নাই, তাহাদের বিষয়ে কবি লিখিয়াছেন, “যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী ।\\ সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি ॥”
আজিকে বাংলায় চারিদিকে অজানা অচেনা কতিপয় ভাষা শুনিতে পাই, বাঙালির মুখে বোল তোলা এ ভাষা বাংলা নহে; তবে তাহা হিন্দি বা ইংরেজিও নহে — এসকল এক জারজ শংকর ভাষার ন্যায়ই প্রতিভাত হয় । ভাষার নানান রূপ থাকিবে, ঠিক যেমনই এক মায়ের অনেক সন্তান থাকে । বাঙলা ভাষার রহিয়াছে তিনটি মান রূপঃ (১) বলিবার মান্য চলিত কথ্য ভাষা (২) লিখিবার মান্য চলিত লেখ্য ভাষা (৩) পূর্বে ব্যবহৃত লিখিবার সাধু ভাষা । লিখিবার ও বলিবার মান চলিত ভাষা আদতে ও প্রথমে একইরূপ ছিল, কিন্তু বলিবার ভাষা হইতে লিখিবার ভাষা অধিক পরিশিলীত ও লিখিবার চাইতে বলিবার ভাষা অধিক সাবলীল বিধায় প্রয়োগ ক্ষেত্রে মান্য চলিত ভাষা লিখিতে ও বলিতে কিছুটা ভিন্নরূপ শ্রুত ও পঠিত হয় বটে । আর লিখিবার জন্য সাধু ভাষা, যা কিনা বড়ই সুমধুর ও সুমিষ্ট কিন্তু ঠিক ততোটা সাবলীল নহে তাহার ক্রিয়ারূপ ও ব্যবহারের আমেজ কিছু ভিন্ন । আজো দলিলে নথিতে সাধু ভাষা লিখিত হইলেও মূলত ইহার প্রয়োগ নাই বলিলেও চলে, বিগত দশকে ইত্তেফাক পত্রিকা সাধুভাষার পরিবর্তে চলিত ভাষায় লেখা প্রকাশ করিতে শুরু করিলে সাধুভাষা প্রায় হারাইয়া যায় । এই তিন মান ভাষা ছাড়াও রহিয়াছে প্রতিটি অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা, যেমন ময়মনসিংহ জেলা ভাষা, কুষ্টিয়া জেলা হইতে অনেক আলাদা – এইসব আঞ্চলিক ভাষা বহুকাল ধরিয়া গড়িয়া উঠে বিধায় এসকল বাংলা ভাষার সম্পদ । এছাড়াও, ঢাকা শহরের নতুন অধিবাসীগণ – যাহারা বিভিন্ন অঞ্চল হইতে আসিয়াছে তাহারা সকলে একটি বিশেষ রূপে কথা কহেন । একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বা পাঠতীর্থেও ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী থাকে বিধায় সেখানে কথায় বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় ।
এইসকল ঠিক ছিল, উপরন্তু বাংলার এই নানারূপ ব্যবহার ভাষাকে সমৃদ্ধ করিয়াই চলিতেছিল; কিন্তু গোল বাঁধিল তখনি যখন কতিপয় পেশার লোক কৃত্রিম কিছু বাংলা ভাষার রূপ আমদানি করিতে থাকিলেন । নতুন কিছু বেসরকারী বেতার মাধ্যমে আরজে বা রেডিও জকি নামে পরিচিত পেশাজীবি নবশিক্ষিত যুবক উত্তরাধুনিক বাংলা ভাষার যে রূপ লইয়া আসে তাহাতে শোনা যায়, আজগুবি উচ্চারণে ইংরেজি উর্দু শব্দে ঠাসা বাংলা ভাষা, যা শুনিলে আমাদিগের মনে হইতে থাকে, কেহ কথকের গলা চাপিয়া ধরিয়াছে ও পশ্চাৎদেশে প্রবল বেগে আঘাত করিতেছে – সেই আঘাতের তালে তাল করিয়া কথক দ্রুত ইংরেজের ন্যায় উচ্চারণে কহিতে থাকে । কোন এক অদ্ভুদ কারণে, বাংলা অভিধানের সুন্দর সুন্দর শব্দ বাদ দিয়া তাহারা ইংরেজি শব্দ ভুলভাবে ব্যবহার করিতে থাকে; কখনো কতিপয় ইংরেজি শব্দ তাহারা এমনেতর অর্থে ব্যবহার করে যাহা খাস ইংরেজেরও অজানা ছিল, আর সেসকল শব্দের উচ্চারণ না হয় ইংরেজের ন্যয় না বাঙালির ন্যায় । একইরূপ উচ্চারণ ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত হয়, নব্য আধুনিক অনেক পেশাজীবি, যাহারা কিছুটা চিবিয়ে বাংলা না বলিলে ঠিক স্মার্ট হওয়া যায় না বলিয়া মনে করে ।
বিশেষ দুঃখের কারণ হইয়া দাঁড়ায় যখন দেখা যায়, বিভিন্ন উচ্চশিক্ষিত লোকজন বাংলায় কথা বলিবার সময় প্রচুর পরিমাণ ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করিতেছে, তাহাদের বাংলা উচ্চারণ উত্তম ও সুন্দর হইলেও বিভিন্ন কথা বলিবার সময় কোন এক কারণে তাঁহারা বাংলা শব্দ খুঁজে পাইবার আগেই ইংরেজি শব্দ ঠোঁটের আগায় চলিয়া আসে; এই শ্রেণীর ব্যক্তিসকল পূর্বে উল্লেখিত শ্রেণীদ্বয়ের ন্যয় ইচ্ছাকৃত ইংরেজি শব্দের বাহার লইয়া বসে না, বরং বাংলা সেসকল শব্দের নিয়মিত ব্যবহার না করিবার কারণেই বাংলা ব্যবহার করিতে ভুলিয়া যায় । এর কারন হিসেবে বলা চলে, বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক, পত্রিকা, নথি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ সকলই ইংরেজিতে পঠিত হয়; হয়তোবা দেশে বিদেশে সেমিনার সকলে লিখন ও পঠণ সকল রচনাই হয় ইংরেজিতে; তাই মস্তিষ্কে ইংরেজি শব্দগুলোই এসকল ধারণার সাথে সরাসরি গাঁথিয়া যায় – মাতৃভাষা বাংলার শব্দই উল্টো যেন অনুবাদ করিয়া স্মরণে আনিতে হয় । এই অসুবিধা ও অনভ্যাস দূর করিতে আসলে আমাদিগের উচিৎ হইবে, বাংলায় পাঠ্যাভ্যাস বৃদ্ধি করা, বিভিন্ন পাঠ্য ও গুরুত্বপূর্ণ মননশীল বই ও জ্ঞানগ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করিয়া বাংলায় পাঠের ব্যবস্থা করা । আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পত্রিকাদির দেশীয় সংস্করণ করিলে তাহা ঠাঁট বজায় রাখিবার তালে ইংরেজিতেই না করিয়া বাংলায় প্রকাশ করা ।
শিশুসকল, কিশোরেরা, ভবিষ্যতের যে প্রজন্ম তার এক বড় অংশ ভাষা শিখিতেছে আজব উপায়ে; কেহ কেহ ঠাঁট ও ভাব বজাইতে গিয়া ইংরেজি মাধ্যমে পড়িতেছে, কেহবা দেশীয় পাঠ নিচ্ছে ইংরেজি ভাষায়, আর যাহারা বাংলাতেই দেশীয় পাঠ নিচ্ছে, তাহারাও নিত্য দেখছে হিন্দি টিভি অনুষ্ঠান – চলচ্চিত্র , শুনিতেছেও হিন্দি গান । তাহারা বাংলায় কথা না বলিয়া তাই হিন্দিতে পারদর্শী হইয়া উঠিতেছে । আরও মজা হইতেছে, যখন আমরা কোন পাকি বা ইন্ডির সাথে সাক্ষাৎ পাই, তখন বাংলা ছাড়িয়া হিন্দি-উর্দু মিশাইয়া কথা কহি; ইংরেজি ব্যবহার করিলেও নাহয় হইতো — আসলে আমাদিগের ভাষাকে মর্যাদাই দিতে চাহি নাই আমরা!
এই যে বাংলা ভাষার নানারূপ লইয়া আর ইহার দূষণ লইয়া এত কথা লিখিলাম, তাহার কারণ মূলত আজিকে প্রাতে পঠিত সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের রচিত এক নিবন্ধ যাহা দৈনিক প্রথম আলোর উপসম্পাদকীয়তে ‘ভাষা দূষণ নদীদূষণের মতোই বিধ্বংসী’ শিরোনামে প্রকাশ হয় । এরই রেশ ধরিয়া উচ্চ আদালত বেতার টিভিতে ভুল উচ্চারণে বাংলা কহিতে নিষেধ করিয়া এক নির্দেশ দেন । এই নির্দেশেই বাংলা ভাষার ভুল ব্যবহার বন্ধ হইয়া যাইবে না; তবে ইহাতে জোড় আলোচানা হইবে কিছুকাল, যা কিছুটা হইলেও আমাদিগের সকলের চেতনা কিছুকালের জন্য হইলেও জাগ্রত করিবে – আমরা অনেকেই ভুল বুঝিতে পারিয়া সঠিকভাবে আমাদের এই প্রিয় বাংলা ভাষা ব্যবহারে উদ্যত হইবো ।
আর শুধু ফেব্রুয়ারিকে ভাষার মাস, এসময়ই কেবল “ভাষা ভাষা” করিতে হইবে এমন ধারণা হইতে বাহির হইয়া, বাংলা ভাষাকে সত্যই প্রাণে ধারণ করিলে বৎসরের প্রতিদিনই সুন্দরভাবে সঠিক বাংলা বলিতে ও লিখিতে সচেষ্ট হইতে হইবে ।
— প্রকৃষ্ঠপুত্র সাধ (প্রবন্ধটি একই শিরোনামে লেখকের ব্যক্তিগত ব্লগ সাধুবচন-এও সংরক্ষিত)
মন্তব্য
সকল ভুল বানানের জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, প্রুফ নিজে পড়ে ভুল ধরতে পারি না, ইংরেজির মতো কোন টুলও নাই । তাও চেষ্টা করে গেছি যথাসম্ভব টাইপো এড়াতে, তবু ভুল রয়েই গেছে :'(
চরম।
ডাকঘর | ছবিঘর
শুধু অশুদ্ধ উচ্চারণ নয়, ভুল শব্দ চয়নেও আদালতের আপত্তি আছে।
অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলা কি বেআইনি? আইনিভাবে গর্হিত না হলে আদালত কি আইনোর্দ্ধভাবে এই ভাষানৈতিকতা আর শিক্ষকসুলভ জ্ঞান প্রদান করতে পারে? একটা আইনোর্দ্ধ অদৃশ্য শ্রেণীপ্রথা তৈরি করা হচ্ছে কি? যেমন, আমার মুখের ভাষা 'অশুদ্ধ' বলে সেটা বলাটা বেআইনি না হলেও আদালত যেহেতু এটা নিয়ে নাখোশ, তাই নিচুভাষাজাত হিসেবেই এখন থেকে আমাকে সরকারিভাবে গণ্য করা হবে? নাগরিক আইন লঙ্ঘন না করলে তাকে হেয় বা হীন হিসেবে বিবেচনা করার এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই। শিশুকিশোরদের ভাষাশিক্ষার দায়িত্ব শিক্ষক ও অভিভাবকদের হাতেই ন্যস্ত থাকুক। প্রাপ্তবয়স্ক তার মুখের ভাষা ব্যবহারে স্বাধীন। আদালত ব্যাপারটা পুনর্বিবেচনা করবেন আশা করছি। নতুবা, ভাষাদূষণ বেআইনি ধার্য করে অশুদ্ধ উচ্চারণ আর ভুল শব্দ চয়নের জন্য শব্দ প্রতি মাশুল আদায় করা হোক। জেলজরিমানা করারও সুপারিশ করছি। কিন্তু বিচারালয়ের মুখে আইনোর্দ্ধ ভাষানৈতিকতা নয় প্লিজ।
আসলে আদালত কি বলছে সেটা নয়, বরং আমরা কি ভাবছি । আদালতের এই দিকনির্দেশনা আমাদের জন্য কেবলমাত্র এককটি সতর্কবার্তা । আমাদের বাংলা ভাষা পঁচে যাচ্ছে, তাকে বাঁচাতে হবে এই জিনিসটা সর্বস্তরের ভাষাভাষীর মনে জাগিয়ে তোলাটাই আদালতের এই কাজের সার্থকতা । রায় বা দিকনির্দেশনার মূলপাঠ আমি পড়িনি, তবে যেটুকু বুঝতে পারছি, ভাষানৈতিকতা-কে বিচারালয়ের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না । আদালতের এই দিকনির্দেশনায় আমরা কতটুকু সচেতন হতে পারি সেটাই দেখার বিষয় ।
আমিও আদালতের নির্দেশ নিয়ে লিখছি না, লিখেছি আমাদের আজকের দশা নিয়ে - আমরা কি আসলেই কিছু করবো?
আজ আমার এক সহকর্মী দুঃখ করে বলছিলেন, "আমাদের বেশিরভাগই বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে না" । আসলে এটাই আমাদের মূল সমস্যা । আমার মনের কোণে বারবার একই প্রশ্ন জেগে উঠে, "আমরা কবে বাঙালি হতে পারবো?"
আমার নিজের মুখের ভাষাও হয়তো আদালত কিংবা আপনার মানদণ্ডে দূষিতই। আপনি সেইটারে ভর্ৎসনা করতেই পারেন। কিন্তু আপনার নিজে বলা আর আদালতরে সাথে নিয়া আপনার বলার মধ্যে তো পার্থক্য আছে। আদালত সতর্কবার্তা দেয়ায় আমাকে কি নিজের বাচনভঙ্গি নিয়া এখন লজ্জিতভাবে সতর্ক হইয়া চলতে হবে?
আপনার সহকর্মীর দুঃখবোধ একশভাগ বৈধ। কিন্তু তার জন্যে আদালত যদি এখন একটা নির্দেশনা দিয়া বসে যে সবাইরে শুদ্ধ বাঙালি হইয়া যাইতে হইবে, তাইলে কেমন? ওইটাও একটা দরকারি সতর্ক হইতে পারে হয়তো।
আমি আসলে আদালতের ভূমিকা নিয়ে কথা বলছি না । আদালতের আসলে সব বিষয়ে কথা বলা ঠিক না, বা সব আইনের আওতায় আসে না; তবে এই সতর্কবার্তায় সবাই যেন "চেতিত" হই সেটাই কাম্য ।
সাধারণ্যের কহতব্য মুখের ভাষার বিষয়ে আমি মূল লেখায় আলোকপাত করেছি, অনেক ভাষাবিদও বারবার এসব নিয়ে লিখেছেন । তবে খবরপাঠে বা গণমাধ্যমে মান্য ভাষায় কথা বলাটাই কাম্য (নাটকের সংলাপ ভিন্ন আলোচনায় থাকুক) । ভাষা বদলায়, বদলাচ্ছে, বদলাবে । কিন্তু পরিবর্তন আর নষ্ট হওয়া জিনিসটা আলাদা
চিকিৎসকেরাও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার জন্যে অনেক আগে থেকে বলে আসছেন। খাদ্যরুচি পরিবর্তন হওয়া আর শরীর নষ্ট করে এমন খাবার খাওয়া আলাদা কথা। আমি অস্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার বিপক্ষে। আপনি আদালতের ভূমিকার কথা বলছেন না। কিন্তু সেইটার খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। ফলে আপনার টেক্সটে আপনার উদ্দিষ্ট আলোচ্যের বাইরেও অন্য আলোচ্য স্বাভাবিকভাবেই উঁকি দিচ্ছে। আদালত যদি এখন অস্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়ার নির্দেশ দেয়, তাহলে তার উপর ভিত্তি করে আমি যদি সবাইকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাও হে বঙ্গজন নসিহত করি, তাহলে তো সেটা নিয়ে কথা থাকেই!
যতদূর বুঝছি আদালত ব্যক্তিবিশেষের ভাষা নিয়ে চিন্তিত না, আদেশটা গণমাধ্যমে ব্যবহৃত ভাষাবিষয়ক।
আমিও,
গণমাধ্যম কি ব্যক্তিঊর্দ্ধ? ওখানে যখন কথা বলতে যাবো, তখন নিজেকে ছাড়ায়ে যেতে হবে নাকি আমাকে? এইসব দিকনির্দেশনার ইম্প্লিকেশান আছে। এই বক্তব্য থেকে অন্যান্য বক্তব্য উৎপাদন হয়, যেমন অমুকের ভাষা অশুদ্ধ, বিধায় সরকারি চোখে হীন। আর বই ছাপানো, ইন্টারনেটে লেখালেখি, এইসব কি গণমাধ্যমের আওতায় পড়ে না? এখন পড়ে না বা আদালতের নির্দেশনায় এগুলো এখন অন্তর্ভুক্ত না, কিন্তু রেডিও টেলিভিশন নিয়ে উদ্বেগ থাকলে বই নিয়ে বা ইন্টারনেটের পোস্ট নিয়ে না কেনো? আদালত বলছে রেডিও টেলিভিশনে ভাষাদূষণ ঠিক নাই, বইতে ব্লগে ঠিক আছে? না। আদালতের বক্তব্যে এই বক্তব্যও উৎপাদিত হচ্ছে যে বইতে ব্লগে অশুদ্ধ ভাষাও ঠিক নাই, সেটা হেয়তর ও হীন। তবে তোমাদেরকে এখন ধরা হবে না। লাইনে আছো। পড়ে যদি ব্লগেও অশুদ্ধ ভাষা, ভুুল শব্দ চয়ন করতে নিষেধ করে দেয়া হয়, তখন কোন যুক্তি প্রয়োগ করে তা ঠেকাবেন? আদালতের পক্ষে সেটা করাতো তখন সঙ্গতিপূর্ণই হবে, এখনেরটা যদি মেনে নেন। আর সেটা করা অসম্ভবও না। খালিদী ভাইয়া যখন সব ব্লগকে একটা ওয়েবসাইটে নিয়ে আসবেন, তখন আদালত আদেশ দিয়ে দিবে যে ওই ব্লগে এখন থেকে আর অশুদ্ধ ভাষা ব্যবহার, ভুল শব্দ চয়ন করা চলবে না। ব্যস। ল্যাঠা চুকে গেলো।
হমমম
আদালতের কপিটা দেন দেখি পড়ে! দিকনির্দেশনা যদিও আইন নয়...
আইন নয়, দিকনির্দেশনা। কিন্তু আদেশ করে বসে আছে। মানে আইনের একটা ভূত ঠিকই বিরাজ করছে। তার ভয়ে আদেশ মানতে হবে। যদিও না মানা বেআইনি না।
আমার তো মনে হয়, কিছু ক্ষেত্রে, হ্যা, ছাড়িয়ে যেতে হবে। আপনি যখন টিভিতে ইংরেজী খবর পড়তে যাবেন, তখন যেমন আপনাকে ইংরেজী বলতে জানতে হবে, বাংলা খবর পড়তে গেলেও আপনাকে প্রমিত বাংলা উচ্চারণ জানতে হবে। এখন আপনার অনুষ্ঠান যদি হয় "সিলেটী ভাষায় সংবাদ" সেক্ষেত্রে আদালত নিশ্চই আপনাকে হীনভাষাভাষী বলবে না।
ইংরেজিটাও কি একদম ঠিক ঠিক প্রমিতটাই জানতে হবে? বাচনভঙ্গির কী হবে? সেটাতে তো মানুষের নিজস্বতা থাকে। ইংরেজিভাষী দেশগুলোতে কি গণমাধ্যমে শুদ্ধ বাচনভঙ্গি বা উচ্চারণের উপরও বিধিনিষেধ থাকে নাকি? নাকি সেটা কমনসেন্সের ব্যাপার?
ভাষার অশুদ্ধতা আর আঞ্চলিকতাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। ইংরেজি ভাষার কথাই যদি ধরেন, তার একটা প্রমিত রূপ আছে, যেটা আমরা সিনেমা টিভি, খবরে শুনে অভ্যস্ত, কিন্তু আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া বা খোদ ব্রিটিশ রাজ্যের আনাচে কানাচে তার নানারকম ধারা বিদ্যমান।
ধরেন, একজন বলল, " দোস্ত, পানি পুনি কিছু হাইবা নি?" এইটা আঞ্চলিকতা। কিন্তু কেউ যদি বলে, " ফ্রেন্ডস! আপনি কি পানি বা সাম্থিং ড্রিঙ্ক করতে চান?" তাহলে এটা অপ্রয়োজনীয় বিদেশি শব্দের মিশেলে দুষ্ট, সোজা ভাষায় অশুদ্ধ। খিচুড়ি পাকিয়ে আপনি দু'টো ভাষাকেই অপমান করছেন। অন্য ভাষা থেকে শব্দ সময়ই যোগ হবে, সে মশলার মত ভাশাকে সমৃদ্ধ করে। তবে খিচুড়িতে মশলার পরিমাণ চাল ডালের সমপরিমাণ অথবা বেশি হয়ে গেলে সেটা আর সুস্বাদু থাকে না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
তার মানে এই নয় যে অপ্রমিত ইংরেজিতে টিভি চ্যানেল করতে ব্রিটিশ রাজ্যে বাধা আছে। কেউ সেরকম একটা চ্যানেল করার আইনি বা আদালতি বাধা আছে কি? একটা জিনিস ঘটে না আর সেটা না ঘটার আইনি সুযোগ না থাকা, দুইটা এক কথা নয়।
মুখের ভাষার মধ্যেও মান অপমান বের করে ফেললেন? তা আপনার কাছে অপমানজনক লাগতেই পারে। আপনার কথাটাও আমার কাছে অপমানজনক লেগেছে। যদি ওই ভাষায় আমি কথা বলিই, তাহলে সেটাই তো আমার মুখেরই ভাষা। নিজের মুখের ভাষায় কথা বললে কীভাবে ভাষার অপমান হয়? কার ভাষার অপমান হয়? নাকি ভাষা নিজেই একটা বুজুর্গ মানুষ? ভাষাকে মানুষের মুখের বাইরে অস্তিত্ববান করছেন? ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়?
অপমান লাগার অধিকার তো আছেই আমার আপনার। যেটা ভালো লাগে না, সেটা এড়ানোরও সুযোগ আছে। সেই সুযোগ থাকতে আইন করে অন্যের মুখ বন্ধ করার কেনো প্রয়োজন পড়ছে? আমার মুখের ভাষায় কার ক্ষতি হচ্ছে বা কার আইনি অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে?
আপনি নিজেই বললেন যে এটা আইন নয়, দিকনির্দেশনা এবং এটা না মানা বেআইনী হবে না, তারপরও "আইন করে অন্যের মুখ বন্ধ করা" কোথায় পাচ্ছেন?
শিশিরকণার সাথে তো হাইপোথেটিক্যাল আলাপ করছি। উনি যে বলছেন একটা সাধারণ মানুষের মুখের কথাতেও ভাষার "অপমান" হয়, তাতে ওনার এই অপমানের বিরুদ্ধে অবস্থানটা পরিষ্কার করতে চাচ্ছি। আর ভাষাদূষণ বেআইনি না হওয়া সত্ত্বেও আদালত যে সেটাতে আইনি আদেশের শরীর যুক্ত করছে, সেটাও বলেছি।
ভাষা রক্ষা করতে যদি সরকারি নিয়ন্ত্রণ লাগে, তাহলে সেই ভাষার ব্যাপারে আশা ছেড়ে দিতে পারেন। সেই ভাষা তাহলে মিউজিয়ামে রাখার সময় হয়ে গেছে। বা সেটা করারই পাঁয়তারা চলছে। কিন্তু এসব আদেশের মধ্য দিয়ে যে আসলে প্রথমালো সুশীল গোষ্ঠি মিডিয়াতে "উচ্চভাষাশ্রেণী" হিসেবে দাপট ফলানোর সুযোগ পাচ্ছে, সেটা লক্ষণীয়।
আপনি যদি সেই গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাহলে হ্যাঁ, ছাড়িয়ে যেতে হবে। যেমন, বিবিসি বাংলার খবরপাঠকেরা বাসায় গিয়ে ঐ পোশাকি ভাষায় কথা বলেন না বলেই আমার ধারণা। বিবিসির প্রতিনিধি হবার জন্যে তাদের ঐ ভাষা আয়ত্ত্ব করতে হয়েছে। অন্যদিকে, তারা যখন কারো সাক্ষাতকার নিচ্ছেন, তাকে কিন্তু বাধ্য করছেন না পোশাকি ভাষায় কথা বলতে।
রেডিও-টিভির ব্যাপারটা বই/ব্লগের চেয়ে আলাদা, কারণ প্রতিষ্ঠানের হয়ে যিনি কথা বলছেন তার বাচনভঙ্গিটি ঐ প্রতিষ্ঠানেরই ঠিক(বা আরোপ) করে দেয়া। ওদিকে আপনার নিজস্ব বাচনভঙ্গিতে লেখা ব্লগের দায়ভার কিন্তু সচলায়তন নিচ্ছে না। নিচে পরিষ্কার লেখা আছেঃ
"প্রকাশিত লেখা ও মন্তব্যের দায় একান্তই সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারীর, সচলায়তন কর্তৃপক্ষ এজন্য কোনভাবেই দায়ী নন"
আদালতের আদেশটা বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রধানদের প্রতিই; আরজে অমুক, আরজে তমুক, টিভির সঙ্গীতানুষ্ঠানে বাংরেজিতে কথা বলা 'শিল্পী'দের প্রতি নয় কিন্তু।
বিবিসির খবর পাঠক কি সেটা আইনি চাপের কারণে করে? নাকি বলতে চাচ্ছেন যে বিবিসিতে এমন করা হয় দেখে আমি একটা চ্যানেল খুললে আমাকেও ওভাবেই করতে হবে? ঘটনীয়কে করণীয় বললে কি হয়?
প্রশ্ন রেখেছিলেন যে গণমাধ্যম ব্যক্তিঊর্দ্ধ কিনা; আমার মত, 'হ্যাঁ, যখন আপনি সেটার প্রতিনিধি' এবং সেটার উদাহরণ হিসেবে বিবিসিকে টেনেছি। দেশের এফেম রেডিওগুলোকেও টানতে পারতামঃ একটি এফেম চ্যানেলের সব আরজে একই বাংরেজি ভাষায় একই বাচনভঙ্গিতে কথা বলছে/ বলতে বাধ্য হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠানটির দিকনির্দেশনার কারণেই, কার নিজস্ব বাচনভঙ্গি আসলে কেমন অবিবেচ্য। ঠিক এইখানটিতেই আমি আদালতের অবস্থানকে সমর্থন জানাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে ব্যক্তির বাচনভঙ্গির উপর আস্থা রাখতে পারছে না, আদালত কেন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষাবিষয়ক বিচার বিবেচনার ওপর অনাস্থা পোষণ করতে পারবে না? তবে আমি মানছি, এই ধরণের আইন করতে বাধ্য হওয়াটা বাংলা ভাষার জন্যে সুসংবাদ নয়।
তাহলে "গণমাধ্যম ব্যক্তিঊর্দ্ধ" হওয়া না হওয়া সম্পর্কে আপনার আর আমার ধারণার পার্থক্য আছে। যখন ব্যক্তিঊর্দ্ধ হয়ে ওঠা ছাড়া অন্য কোনো উপায় আইনত থাকে না, তখন আমি সেটাকে ব্যক্তিঊর্দ্ধ গণমাধ্যম ভাবছি। একটা প্রতিষ্ঠান তার নিয়মনীতি চাপিয়ে দিলে পুরো গণমাধ্যম আমার কাছে ব্যক্তিঊর্দ্ধ হচ্ছে না। কারণটা খুব সাধারণ। বিবিসি বা রেডিও চ্যানেলগুলোর বাইরে আমার নিজের চ্যানেল বা রেডিও করার সুযোগ রয়েছে যেখানে আমার সুযোগ রয়েছে আমার নিজের মুখের ভাষায় সংবাদ প্রদানের। আইনত সেটা বাঁধা নয়। অর্থাৎ যেহেতু আমার নিজের মতো করে উপস্থাপিত হবার সকল সুযোগ আইনত বন্ধ না, ফলে আমার কাছে গণমাধ্যম ব্যক্তিঊর্দ্ধ না। কিন্তু এই আদেশের ফলে ব্যক্তিঊর্দ্ধই হচ্ছে। ব্যক্তিঊর্দ্ধ না হয়ে ওঠার সুযোগ থাকছে না।
দায়ের এই পার্থক্য থেকে কীভাবে দেখাচ্ছেন যে টেলিভিশনে ভাষাদূষণকে আদালত ঠিক না মনে করলেও ব্লগে ভাষাদূষণকে ঠিক না মনে করছেন না, সেটা স্পষ্ট হলো কি? সচলায়তন যদি বলে যে এখন থেকে লেখকদের লেখার ও মন্তব্যের দায়ভার সচলায়তন নেবে, তাহলে আবার সচলায়তন আদালতের ভাষানজরদারির আওতায় পড়ে যাবে? নাকি বলতে চাচ্ছেন যে আদালত শুধু সচলায়তন কর্তৃপক্ষকে ভাষা নিয়ে নসিহত করলে সেটা ঠিক আছে? আশা করছি যে আপনি যুক্তি দিবেন কেনো আদালত মনে করছে যে টেলিভিশনে অপ্রমিত ভাষা ব্যবহার করলে, ভুল শব্দ চয়ন করলে ভাষার পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে কিন্তু ব্লগে আমি অপ্রমিত ভাষা ব্যবহার করলে, ভুল শব্দ চয়ন করলে সেটা ভাষার পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে না। উপরে দেখুন শিশিরকণা বলছেন মুখে অপ্রমিত ভাষা বললেও মানুষ আসলে ভাষাকে অপমানই করছে। উনি এতে অন্তত ওনার দাবিতে সঙ্গতি রাখছেন। আমি মনে করি, আদালতের এই সিদ্ধান্ত মানলে এটাও মানতে হয় যে ব্লগে অপ্রমিত ভাষা ব্যবহার করাও আদালতের কাছে অপবিত্রতার শামিল। ফলে এটা মানলে পরে আদালত যখন সচলায়তন বরাবরও একটা আদেশ প্রদান করবে মন্তব্যের বাচনভঙ্গির দায়ভার বহন করতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে, তখন সেটা না মানার স্ট্যান্ড থাকে না।
মনে হয়, না! কারণ তাহলে আমাদের মাননীয় সংসদের কোন সেশনই গনমাধ্যমে প্রচারযোগ্য হবে না। স্পীকার থেকে শুরু করে অধিকাংশ এমপিই শুদ্ধউচ্চারণ দূরে থাক, শুদ্ধবাক্যও বলতে পারেম না অনেক সময়, স্ক্রিপ্টেড ভাষ্যগুলো ছাড়া।
প্রিয় টেকি সাফি, আপনি নিয়মিত সচলায়তনে মন্তব্য করছেন, আপনার আরো অংশগ্রহণ কামনা করি। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, সচলায়তনে "সাফি" নিকটি একজন পূর্ণ সচল ব্যবহার করেন। আপনি যদি অনুগ্রহ করে আরেকটি নিক ব্যবহার করতেন, তাহলে ভবিষ্যতে মন্তব্যসংক্রান্ত কনফিউশন এড়ানো পাঠকের জন্যে সহজ হবে। ধন্যবাদ।
কথাটা হবে আজগুবি উচ্চারণে ইংরেজি হিন্দি শব্দে ঠাসা বাংলা ভাষা
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ঘঘ
আমি ইচ্ছা করেই লিখেছি; আসলে হিন্দি উর্দু দুটোই হিন্দুস্তানি ভাষার রূপভেদ । ভাষা আন্দোলনে হিন্দুস্তানি ভাষার আরবী বর্ণমালায় লেখা রূপ উর্দুর বিরুদ্ধে লড়েছিলাম, আর আজ আমরা সেই ভাষার (ব্রাহ্মীলিপিতে লিখিত) আরেক রূপে কথা বলছি - এই দুর্দৈবটা প্রকটিত করতেই উর্দু লিখেছি।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
???
দুসকিতোদুঃখিত, টাইপো, শিফটে চাপ পড়ে গেছিলো, আর নিজ চোখে ধরতে পারি নাই । ক্ষমাপ্রার্থী - সম্পাদনার সুযোগ নাই, থাকলে ভালো হইতো ।ভাষা পরিবর্তনশীল, কিন্তু ভাষা ব্যাবহারের গাইডলাইন তৈরি করার ব্যপারে হাইকোর্টের উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। যতদূর বুঝতে পারছি হাইকোর্ট ব্যক্তির ভাষা ব্যবহারের উপর হস্তক্ষেপ করছে না, তবে অনর্থক ভাষা দূষণকে নিরুৎসাহিত করছে। গণমাধ্যমে ভাষার ব্যাবহারে কিছু নিয়ম বা প্রচলিত ধারা বজায় রাখা উচিত বলেই মনে করি। ইংরেজি চ্যানেলে যেমন অনাকাংখিত শব্দের ব্যবহার হলে "ব্লিপ" বা সেন্সর করে প্রচার করা হয়। নাটকে চরিত্রের প্রয়োজনে আঞ্চলিক ভাষা আসতেই পারে, তবে সেটাকেই স্ট্যান্ডার্ড বানানো ঠিক নয়। শুদ্ধ ভাষার চর্চায় গণমাধ্যমের প্রভাব সবচে বেশি। এখানে অশুদ্ধ ভাষার চর্চা হলে জনগনের মুখে তার হাল আরও খারাপ হবে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আসলে গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনা দেয়ার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির ছিলো! কিন্তু আদালতের কিছু ক্ষমতা আছে, যা বাংলা একাডেমি পায় নাই ।
বাংলা একাডেমি প্রয়োগ করতে না পারুক, ভাষার একটা প্রমিত চলতি রূপ তো নির্ধারণ করে দিতে পারত, যেটাকে প্রমাণ ধরে অশুদ্ধ বা আঞ্চলিকতা নির্ণয় করা যেত। তবে কোর্ট যেসব ব্যাক্তির নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে, সেলিনা হোসেন, নির্মলেন্দু গুন তাতে কিঞ্চিৎ ভরসা পাচ্ছি যোগ্য লোকে ভাষার প্রমিত ধারা তৈরি করবে, হুমায়ূন আজাদের অভাব আরও বেশি অনুভুত হচ্ছে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বাংলা একাডেমি নির্ধারণ কিন্তু করেছেই, আমরা মানছি না :'(
ফেব্রুয়ারিতে লেখা ভাষাবিষয়ক প্রায় সব প্রবন্ধেই এইরকম কথা থাকে।
আমি কিন্তু সবমাসেই ভাষা ভাষা করি!
বানানটা মনে হয় প্রকৃষ্ট হবে।
সচলে নিয়মিত লিখুন আরো।
প্রকৃষ্ট+শ্রেষ্ঠ = প্রকৃষ্ঠ
বাঙ্গালা জবান মধ্যে আনিলেক ছারা।
কোফরী শেরেকী বাত ভরিল তাহারা।।
তা দেখি মোজেজ লোকেরা এছলামের।
ছাড়িল সে ভাষা ভাই ঈমান খাতের।।
এছলামে ঈশ্বর বলা কোফরীর জড়।।
এসব কারণে মোরা ছাড়িনু সে ভাষা।।
এলাহী দর্বারে আছে মাফির ভরসা।।
****************************************
সাব্বাশ। দুর্দান্ত জবাব।
..................................................................
#Banshibir.
মন্তব্যটা এমনিতে ভুল জাগায় চলে গেছে। এটা তার আগের মন্তব্যের জবাব না - বরং মূল লেখার প্রেক্ষিতে মন্তব্য।
****************************************
সময়োপযোগী একটি প্রবন্ধ। একটি ভাষার আঞ্চলিকরূপগুলো এর সহোদরার মত। তবে সবার বোধগম্য একটি ভাষা হিসেবেই চলিতভাষা আমাদের প্রয়োজন। তাতে নির্দিষ্ট ভাষাটির নিজস্ব চরিত্র অক্ষুণ্ণ থাকবে। শুধু লিখিত রূপে নয়, মৌখিকরূপেও তার পরিবর্তন হবে না। বাংরেজি বলে যে ব্যাপারটা ইদানিং চালু হয়েছে, বাংলাভাষার উৎস পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এরকম ভাষার অস্তিত্ব অতীতে কখনো ছিল না। মাত্র বছর কয়েক ধরে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর মধ্যে এর প্রচলন শুরু হয়েছে। ভাষার মৌখিকরূপের ক্ষেত্রে জনগণের মুখের ভাষা আর বর্তমানে বিশেষ একটি গোষ্ঠীর ব্যবহৃত বাংরেজির পার্থক্য বুঝতে হবে।
চলিত ভাষাই আমাদের মান ভাষা; তবে ভাষা পরিবর্তনীয়, নদীর মত ভাষা সতত পরিবর্তনের দাবীদার - সকল ভাষাবিদই একই কথা বলেন ও মানেন । মুখের ভাষা কখনো এক থাকে না, কালে কালে তা নিজ গতিতে বদলায়, একসময় সে পরিবর্তন লেখায় চলে আসে; একমাত্র মৃত ভাষারই কোন পরিবর্তন হয় না - যেদিন দেখবো বাংলা ভাষা মুখে মুখে বদলে যাচ্ছে না, সেদিন বুঝবো সংস্কৃতের মত বাংলাও একটি মৃত ভাষায় পর্যবসিত হয়েছে । হ্যাঁ, ভাষার পরিবর্তন হবে সাবলীল ভাবে, জোর করে এর পরিবর্তন করা যাবে না - জোরপূর্বক ভাষার যে পরিবর্তন বা ভাষার সচেতন পরিবর্তন হলেই ভাষা দূষিত হয় । ভাষার পরবিবর্তন হবেই, কিন্তু যাদের মুখে মুখে তা বদলে যাবে তারা সেটা বুঝতে পারবে না - বা ভাষাভাষীর কোন অংশই সচেতন ভাবে সে পরিবর্তন ঘটাবে না ।
আমার এখনো মনে পরে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলাম তখন ক্লাসে আমাদের সম্মানিত শিক্ষক মহোদয় কিংবা বন্ধু-মহলে আড্ডার সময় ইংরেজি ভিন্ন শুধু বাংলা শব্দ ব্যবহারে সচেষ্ট থাকতাম তখন বিষয়টা উপস্থিত মানুষজনের কাছে যেন কৌতুকয় মনে হত এবং খানিকটা হাসির খোরাক দিত বিশেষত ক্লাসে শিক্ষক মহোদয় কে খাঁটি বাংলায় প্রশ্ন করলে একরকম হাসির কলরব পরে যেত যাই হোক সাধারণ কথাবার্তায় ভাষার ব্যবহার শতভাগ পরিশীলিত হবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই এবং তা অনেক ক্ষেত্রেই আশা করাও হয়না; কেননা ভাষার মূল উদ্দেশ্য যোগাযোগ এবং পরিশীলিত ব্যাকরণ এবং শব্দ ব্যবহার করা কারো বাক্য যদি যার উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে সে যদি বুঝতে না পারে তাহলে তার ভাষার কোন মূল্য থাকবেনা।
তবে আনুষ্ঠানিক ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই ভাষা ব্যবহারে সাবধানতার অবলম্বন করতে হবে। সভা-সমাবেশ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিংবা লেখা লেখির কাজে অবশ্যই মান্য ভাষা ব্যবহার করতে হবে এবং করা উচিত।
উচ্চ আদালত একটা যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন তবে সবচাইতে মজার ব্যাপার হল রায়টি তারা মান্য ইংরেজিতে দিয়েছে। রায়টি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা এবং গ্রহণযোগ্যতা পাবে তখনই যখন উচ্চ আদালত নিজেরা বাংলা ব্যবহার করবে। উচ্চ আদালতে বাংলা ব্যবহার এখন সময়ের দাবি......................
কে কিভাবে কথা বলবে এই নিয়ে হাইকোর্টের রুল সত্যিই আপত্তিকর, হোক তা ব্যাক্তিবিশেষ কিংবা গোষ্ঠী। কোন বিদেশী শব্দের প্রয়োগ প্রয়োজনীয় আর কোনটা অপ্রয়োজনীয় কিংবা কোনটা বিবর্তন আর কোনটা দূষণ সেটা বক্তা এবং শ্রোতার উপর ছেড়ে দেয়াই ভাল। কিভাবে কে কথা বলবে এই নিয়ে কারো খবরদারি মানতে আমি রাজি না
আদালতের এই অবস্থান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরোপিত ভাষার বিরুদ্ধেই নয় কি? ধরুন, সচলায়তনে এখন নিয়ম জারি হলো যে আমরা ব্লগ 'বাংলা'য় লিখব ঠিকই, কিন্তু ক্রিয়াপদগুলো ইংরেজি হতে হবে, না হলে লেখা প্রকাশ হবে না; আদালতের কথা ছেড়ে দিলাম, আপনি মানবেন? চাকরির খাতিরে এই কাজটাই তো হচ্ছে রেডিওতে।
লেখার ভাষা মুখের ভাষাকে প্রভাবিত করে, নাকি উল্টোটা? বাস্তবতাটা এই, রেডিও/টিভির কৃত্রিম খিচুড়ি ভাষাটি তরুণদের মুখের ভাষা পালটে দিচ্ছে। ইত্তেফাক পড়নেওয়ালারা কিন্তু সাধু ভাষায় কথা বলা শুরু করেনি। 'অপ্রমিত' শব্দটাও একটু বিভ্রান্তিকর, একই সাথে আঞ্চলিক আর আরোপিত, দুই জাতের ভাষাকেই এই শব্দের মধ্যে ফেলা যায়। আদালত কি আঞ্চলিকতার বিরুদ্ধেও কিছু বলছে?
আদালতের যদি কেবল ভাষার উপর প্রাতিষ্ঠানিক আরোপের ব্যাপারেই সমস্যা থাকতো, তাহলে বলতে পারতো যে উপস্থাপকের উপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক আরোপ নয়। আপনিও যদি সেটাই চান, সেটাই তাহলে বলুন। কিন্তু আরোপের ব্যাপারে তো আপনি অবস্থান ঠিক নিচ্ছেন না। আরোপ করাটা আপনার কাছে সমস্যা কি? আপনার পছন্দের ভাষারীতি বাচনভঙ্গিটা আরোপ করার ব্যাপারে আপনার তো সমস্যা নেই, অপছন্দেরটা করলে সমস্যা আছে। ফলে প্রতিষ্ঠান যে আরোপ করে দেয়, আদালতের অবস্থানটা আসলে সেটার বিরুদ্ধে নয়। 'প্রমিত', 'শুদ্ধ', 'সঠিক'টা সংশোধন করে চাপিয়ে দিলে সেটা নিয়ে আদালতের কোনো সমস্যা নেই। আদালত বরং সেটাই চায়। তা সেটাও তো প্রাতিষ্ঠানিক আরোপই হবে। ফলে আদালতের অবস্থান এখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরোপিত ভাষার বিরুদ্ধে মোটেও নয়। পক্ষে। কিন্তু আরোপটা হতে হবে আনিসুজ্জামান সাহেবদের নির্ণীত, সুশীল নাগরিক সমাজবান্ধব ভাষা।
এটা একটা অনেক পুরনো সাধারণ ভুল ধারণা। রাষ্ট্র আর সংগঠনের মধ্যে গুলিয়ে ফেলা। সচলায়তনে কিন্তু অনেক নিষেধাজ্ঞাই আছে, যেটা 'রাষ্ট্রে' একটা নাগরিকের করার অধিকার আছে। যেমন বাকস্বাধীনতা। এটা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। কিন্তু সচলায়তনে যা খুশি বলার স্বাধীনতা নিশ্চয়ই নেই। এটা মডারেটেড ব্লগ। আবার ধরুন মেটাব্লগিং। এটাও কিন্তু আইনত দণ্ডনীয় বা অবৈধ নয়। আপনি মেটাব্লগিং করতেই পারেন। কিন্তু সচলায়তনে না। তা ব্যাপারটা কি? একটা রাষ্ট্রীয় অধিকার কেনো সচলায়তনে নেই? এটা কি সাংঘর্ষিক? মোটেও না। বরং এটা সংগঠন হিসেবে সচলায়তনের সম্পূর্ণ বৈধ অধিকার আছে এই নীতিগুলো করার। ব্যক্তি বা সংগঠন তার গণ্ডির মধ্যে নিজের নিয়ম জারি করতে পারে যতক্ষণ না সেটা অন্যের শারীরিক বা সম্পত্তিগত ক্ষতি করছে। সচলায়তনে একটা কথা বলতে না পারলে কিন্তু আমার বাকস্বাধীনতার অধিকার হরণ হচ্ছে না। আমার অধিকার আছে অন্য কোথাও সেই কথাটা বলার। কিন্তু রাষ্ট্র যখন বলে দিবে যে অমুক কথাটা আমি বলতে পারবো না, তখন আমার আর কোনো জায়গা থাকে না কথাটা বলার। বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘন হয় তখন। একইভাবে মেটাব্লগিং সচলায়তনে করা না গেেলই মেটাব্লগিং করার অধিকার আমার লঙ্ঘিত হয় না। কিন্তু রাষ্ট্র যদি আদেশ জারি করে দেয় যে এখন থেকে কোথাও মেটাব্লগিং করা যাবে না, তখন বলা যায় যে মেটাব্লগিং করার আমার অধিকার নেই।
ফলে সচলায়তন ভাষা নিয়ে এই নিয়ম করে দিলে আমি ক্ষেপে যেতে পারি। কিন্তু আমার ব্লগ করার অন্য জায়গা তখনও খোলা আছে। কিন্তু রাষ্ট্র যদি এসে সচলায়তনসহ সকল ব্লগকে, সাধারণ মানুষের ইন্টারনেটে লেখালেখি করার জায়গাগুলোকে বলে দেয় যে এখানে লেখার রীতি-ধরনের মধ্যে বিকৃতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার, তখন আমার আর কোনো স্থান থাকে না ইন্টারনেটে নিজের ভাষায় বলার।
এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম আছে কি বা থাকার কথা আছে কি? তবে তর্ক তো সেটা নিয়ে না। তর্ক হচ্ছে আইন আদালত দিয়ে সেই নিয়ম করা যায় কিনা।
এতে আপনার আমার খারাপ লাগছে। তো যা কিছু খারাপ 'লাগে' তা-ই আইন আদালত করে বন্ধ করে দিতে হবে? রেডিও শুনতে তো আমরা বাধ্য হচ্ছি না। ওই ভাষায় কারো ভৌত, শারীরিক সম্পত্তিগত ক্ষতিও হচ্ছে না। বাচনভঙ্গি পছন্দ না হলে ওই রেডিও বর্জন করার সুযোগ আছে আমাদের। পছন্দের বাচনভঙ্গির একটা রেডিও খুলে বসতে পারেন। বা সরকারকে বলতে পারেন আপনার পছন্দের বাচনভঙ্গির একটা চ্যানেল খুলতে, যেখানে বিষয়বস্তুগুলো হবে জনপ্রিয়গুলোর মতোই চমকপ্রদ। কিন্তু অন্যে কী শুনতে পারবে না, সেটা আমরা আইন করে ঠিক করে দিতে পারি কি? নাকি ভাবছেন পারি? যদি তাই ভাবেন, তাহলে দুরাশা করছেন। কারণ রেডিওগুলো যদি সত্যিই আর ওই বাচনভঙ্গিতে প্রচার করতে না পারে, তারপরেও যারা ওই বাচনভঙ্গি শুনতে চায়, তাদের জন্যে ইন্টারনেটের অবারিত দ্বার খোলা আছে। তারা ঠিকই ওখানে গিয়ে শুনে নিতে পারবে আগামিতে। তখন হয়তো চাইবেন ইন্টারনেটেও অশুদ্ধ বাচনভঙ্গির বিরুদ্ধে আইন আদেশ নেমে আসুক, যেহেতু "তরুণদের মুখের ভাষা পালটে" যাওয়াটাই আপনার মূল উদ্বেগ ও আইন আদেশ নেমে আসার পক্ষের মূল নৈতিক খুঁটি। তবে সেটাতে সফল হবার সম্ভাবনা তেমন দেখছি না। যদি না মহাজন ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মতো কোনো খাঁটি নেতা উঠে আসেন হঠাৎ করে।
সমাজের অভৌত বিষয়ে উদ্বেগ ভালো। কিন্তু সমাজের অভৌত বিষয়ের 'ভালোর' জন্য আইন আদেশ চাপানো উদ্বেগজনক।
নতুন মন্তব্য করুন