পাঞ্জাবির জাতিসত্তা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১৮/০২/২০১২ - ১১:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

‘’আচ্ছা, এ দেশের মানুষ ৭১ এ যুদ্ধ করেছিল কেন?’’ চিন্তাটা গত কয়েকদিন ধরে উদয় হাসানের মাথায় ক্ষণে ক্ষণে ক্ষরিত হচ্ছে!

উদয় হাসান। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পা দিয়েছে। আসল নাম শেখ মোহাম্মদ রিয়াজ উল হাসান। ডাক নাম দুটো। একটা অবধারিতভাবেই হাসান। আর অন্যটি উদয়; কাব্যপ্রেমি মায়ের ব্যাপক সংগ্রামের সাক্ষর হয়ে আছে নামটি। এই দ্বিতীয় ডাক নামটি তাকে একটা বাড়তি সুবিধা করে দিয়েছে। মানুষকে পরিচয় দেয়ার সময় সে পারতপক্ষে দীর্ঘদেহী আসল নামটা বলে না। উদয় হাসান বলেই চালিয়ে দেয়। পরিচিতজনদেরও সুবিধে। পছন্দমাফিক নামে ডাকতে পারে। আর এ ব্যাপারে উদয় হাসানের কোন কার্পণ্য নেই। অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে সবাইকে।

২.

চিন্তাটা মাথায় ঢুকে সপ্তাহ দুয়েক আগে। ঈদে মিলাদুন্নবির দিন। উদয় হাসান প্রাইভেট পড়ে ফিরছিল। পথেই পড়ল নয়ন মনোহর জসনে জুলুস। আয়োজক হাজারিবাগ হুজুরের দরগাহ শরীফ। বাহারি পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন। কত সমবয়সী ছেলে মিছিলে! সবার পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি। কণ্ঠে রাসুলাল্লাহর শ্লোগান। ‘আল্লাহ আকবর’,’আল্লাহ আকবর’ নিনাদে মুখরিত হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস। ইসলামি সুরের ইন্দ্রজাল বেহুঁশ করে রাখে সবাইকে।

উদয় হাসানের রক্ত টগবগ করতে থাকে। ধর্মের বইতে পড়া মুসলিম বীরদের দৃশ্য চোখে ভাসতে থাকে। মুসলিম খলিফারা একে একে প্রবল বিক্রমে বিশ্ব জয় করে নিচ্ছে। উদয় হাসানের খুব মন চায় মিছিলে যোগ দেয়। কিন্তু এখন তো সম্ভব না। বাসায় চিন্তা করবে। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে, রাত অবধি চলবে এই প্রোগ্রাম। তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেয়, বাসায় যেয়ে খেয়ে দেয়ে আবার চলে আসবে এখানে। কিন্তু পাজামা-পাঞ্জাবি কি ধোয়া আছে? এই প্রোগ্রামে ঐ পোশাক ছাড়া যোগ দেয়া চলে না। তাই মাকে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নেয়। হ্যাঁ, শুধু ধোয়া না, ইস্ত্রি করে আলমারিতে তোলা আছে। মায়ের প্রতি খুব কৃতজ্ঞতা অনুভব করে।

গাড়ি, ট্রাক, আর মানুষের মিছিল ভাল রকম জট তৈরি করে রেখেছে। আর এতে সুবিধা হয়েছে উদয় হাসানের। তার রিকশা খুব ধীরে চলছে। ফলে তৃপ্তি সহকারে সবকিছু দেখার ও শোনার সুযোগ পাচ্ছে সে। থেমে থেমে শ্লোগান ও বয়ান হচ্ছে। বয়ান শোনার জন্য ভাল করে কান পাতে সে। আশে-পাশের যানবাহনের শব্দকে ছাপিয়ে বয়ানের মর্মোদ্ধার করার জন্য বিশেষ বেগ পেতে হয়। তবু শুনতে পায়, ‘’বিশ্বনবীর উম্মতদের জন্য কোন মানব রচিত সংবিধান জায়েজ না। কোরান, শুধুমাত্র কোরানই হল তাদের একমাত্র শাসনতন্ত্র। আর সেই সংবিধানের ব্যাখ্যা হল আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীর সুন্নাহ। অথচ আফসোস, আমরা তা থেকে আজ অনেক দূরে সরে গেছি। আমরা কোরআন পড়ি না, সুন্নাহ মানি না....’’

শেষের কথাগুলো উদয় হাসানের কর্নকুহুর থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসে; কারণ সে ততক্ষণে গভীর চিন্তায় মগ্ন। বয়ানের প্রথম বাক্য দুটি তাকে পুনরায় ইতিহাসের পাতায় নিয়ে গেছে; তার চোখের সামনে কে যেন মেলে ধরেছে পাকিস্তান আমলের বই; মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর জ্বালাময়ী ভাষনঃ ‘’উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।‘’ চোখের সামনে আসতে থাকে ১৪৪ ধারা; বরকত, রফিক, জব্বর। কেমন যেন একটি বিস্বাদ অনুভূতি হয় উদয় হাসানের। মাথাটা ঝিম ধরে থাকে অনেকক্ষণ।

এক সময় রিকশা পৌঁছে যায় বাসায়। শরীরটা কোন রকমে বাসার ভিতর গুঁজে দিতেই মায়ের প্রশ্ন: ‘’কি রে, পাঞ্জাবির কথা জিজ্ঞেস করছিলি কেন? কই যাবি?’’ উদয় হাসানের দমে যাওয়া উত্তর, ‘’ভেবেছিলাম, জসনে জুলুসে যাব।‘’ মায়ের প্রশ্ন: ‘’কি বলিস? তুই আবার মোল্লাদের খাতায় নাম লেখালি কবে?’’ উদয় হাসানের আবার বিস্বাদ অনুভূতি হয়। অসুস্থ বোধ করতে থাকে। রুমে ঢুকেই দেখে মা পাঞ্জাবি-পাজামা বের করে রেখেছে। ধোঁয়া আর ইস্ত্রি খুব ভাল হয়েছে। একেবারে নতুনের মত লাগছে। উদয় হাসান এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করে না। পোশাকগুলো আলমারিতে তুলে রাখে তড়িঘড়ি করে।

রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবনাটা তার মাথায় আসে, ‘’৭১ এ এ দেশের মানুষ প্রাণপণ লড়াই করেছিল কেন?’

৩.

মাঝখানে আরও কয়েকদিন যায়। হয়ত চিন্তাটা মিলিয়েই যেতো। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় পহেলা ফাল্গুন। সেদিন ক্লাস সেরে ফিরছিল উদয় হাসান। রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল হলুদ প্রজাপতির দল। বসন্তের বাউল হাওয়া দোল দিয়ে যাচ্ছিল সারা শরীরে। আজ বুঝি ফুলের রানী সাজার দিন। মাথায়, গলায়, হাতে, কানে সর্বত্র ফুলের আদর। কানে ভেসে আসে গানের সুর, ‘’ফুলের গন্ধে মন আনন্দে ভ্রমরা আকুল।‘’ পরম ভালোলাগা ভর করে উদয় হাসানকে। গানের কথাগুলো তার রক্তে দোলা দিতে থাকে। সিদ্ধান্ত নেয় বিকেলে বেরুবে ঘুরতে। তাৎক্ষনিক ফোন করে রবিনকে। রেডি থাকতে বলে।

বাসায় পৌঁছেই খেয়ে দেয়ে সেদিনের তুলে রাখা পাজামা-পাঞ্জাবিটা পড়ে নেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই বড় চাচার গলা শোনা যায়। আসার আর সময় পেলেন না। নিশ্চয়ই এক গাদা দেশের গল্প শুনতে হবে। নাহ, আজ আর বড় চাচাকে সুযোগ দেয়া যাবে না। স্লামালাইকুম দিয়েই বের হয়ে যেতে হবে। কিন্তু বিধি বাম। বড় চাচা জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘’কই চললা?’’
-‘‘এইতো চাচা, একটু ঘুরে আসি।‘’
-‘’রাস্তায় দেখলাম, অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা বেশরমের মত এক লগে ঘুইরা বেড়াইতেছে। মাইয়াগুলি সব হইলদা শাড়ি পরছে! ব্যাপারডা বুঝতে পারলাম না‘’
-‘’চাচা, আজ পয়লা ফাল্গুন তো। বসন্ত ঋতুকে বরন করে নেয়ার জন্য ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান হচ্ছে।‘’
-‘’অস্তাগফিরুল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ! এইসব হিন্দু আচার-পর্ব বাংলাদেশে ঢুকল ক্যামনে?’’

চাচার কথায় প্রবল বিবমিষা ধরে উদয় হাসানের। কথা না বাড়িয়ে মায়ের কাছ থেকে টাকা আনতে যায়। মা তখন পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চ্যানেল খুলে বসেছেন। পূর্ণ মনোযোগ নিবিষ্ট উত্তম-সুচিত্রার একটা বিরহ দৃশ্যে। তবে উদয় হাসান জানে, আজ মার কাছ থেকে রিক্ত হস্তে ফিরতে হবে না। তার বসন্ত উৎসবে যোগদানে তার সংস্কৃতিমনা মা বরং খুশীই হবে। মা যখন টাকা বের করছিল, টিভির কয়েকটি টেলপে চোখ আটকে গেল: ‘’আজ প্রতিবেশী রাজ্য বাংলাদেশে মহা সমারোহে বসন্ত উৎসব পালিত হচ্ছে।‘’, ‘’আজ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গোলাগুলি; কয়েক বাংলাদেশি দুষ্কৃতিকারী আটক।‘’ হঠাৎ উদয় হাসানের চোখে ভেসে উঠে ফেলানির মৃত দেহ, যে কাটা তারে ঝুলে ছিল মরা কাকের মতই। ‘প্রতিবেশী রাজ্য’, ‘বাংলাদেশী দুষ্কৃতিকারী’ শব্দগুলো তার মস্তিষ্কে কশাঘাত করতে থাকে।

উদয় হাসান পাজামা-পাঞ্জাবি খুলে ফেলে। বাইরে যাওয়ার মত মানসিক অবস্থা নেই। ঘুরন্ত সিলিং ফ্যানটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে। প্রায় হারিয়ে যাওয়া প্রশ্নটা আবার ঘুরপাক খায় মাথায়: ‘’৭১ এ দেশের মানুষ কি আশা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল?’’

৪.

কোন উত্তর না পাওয়াতে প্রশ্নটা তার ধারাল আঘাত অক্ষুণ্ণ রাখে আরও বেশ কিছুদিন। তবে নতুন নতুন মোড় এসে তাকে দুর্বল করতে থাকে। যেমন, উদয় হাসানের খুব কৌতূহল হয় জানতে, একজন আরব যখন তার নববর্ষ উদযাপন করে, তখন তাকে কি তার মত বিপাকে পড়তে হয়? একজন ইংরেজ কিশোরকেও কি এত আগুপিছু ভাবতে হয় নিউ ইয়ার ইভে? ‘মোল্লা’, ‘’নাস্তাগফিরুল্লাহ’ এইসব শব্দভারে কুঁজো হয়ে যেতে হয়? তাদেরও কি গিলতে হয় ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’, ‘বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদ’, ‘মুসলিম সংস্কৃতি’ বা ‘হিন্দু সংস্কৃতি’ প্রভৃতি কঠিন কঠিন ট্যাবলেট?

উদয় হাসানের কিছুই ভাল লাগে না। খুব ক্ষোভ হয় নিজের প্রতি। কেন যে জন্মেছিল এই দেশে? পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ছেড়েই দিয়েছে। ইদানীং অস্ট্রেলিয়াকে তার খুব ভাল লাগে; অস্ট্রেলিয়ানরা জাতীয়তা-বোধ নিয়ে মাথা ঘামায় না! ভাবে, পড়াশুনা শেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাবে। চোখে ভাসে, অনিন্দ্যসুন্দর অস্ট্রেলিয়ায় সে গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছে! সিডনি অপেরা হাউস তার চোখে পেখম মেলতে থাকে পাল তোলা নৌকার মতই।

৫.

২০৩৫ সাল। সিডনির একটি সুন্দর প্রভাত। অফিসে যাওয়ার পূর্বে নিয়ম মাফিক স্কাই নিউজ চ্যানেলে চোখ বুলায় উদয় হাসান। হঠাৎ বাংলাদেশ শব্দটি শুনে নড়ে-চড়ে বসে সে। অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক স্টেসি লি বাংলাদেশের উপর একটি রিপোর্ট করছিলেন। রিপোর্টের বিষয়বস্তু বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। উজানে প্রতিবেশ দেশ বাঁধ নির্মাণ করায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এমনিতেই বর্ষা মৌসুমে পানি কম পাচ্ছিল। তাছাড়া পলি জমে জমে নাব্যতাও হারাচ্ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানির গড় প্রবাহের আশংকাজনক সংকোচন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এদিকে মরার উপর খরার ঘা নেমে এসেছে প্রতিবেশী দেশ কর্তৃক নির্বিচারে সেচের পানি অপসারণে। ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কৃত্রিম মরুকরণ ঘটছে। ঐ অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের বেঁচে থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। কয়েকজন সাধারণ সহজ সরল অসহায় মানুষের সাক্ষাৎকার রয়েছে রিপোর্টটিতে। তারা কান্না-বিজড়িত কণ্ঠে তাদের সর্বস্ব হারানোর কাহিনী তুলে ধরছিল।

উদয় হাসান রক্তে অপ্রতিরোধ্য একটা বানের অস্তিত্ব অনুভব করেন। চোখ-মুখ শক্ত হয়ে যায়। না, এই গণহত্যা কিছুতেই মেনে যায় না। কিছু একটা করা দরকার। হঠাৎই সিদ্ধান্ত নেন, ভারতীয় দূতাবাসের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়াবেন। সাথে নেবেন কমিউনিটির সকল বন্ধুকে।

দুদিন পর। জনা পঞ্চাশেক বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় হাইকমিশনার সামনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে উদয় হাসান। তার পরনে পাঞ্জাবি-পায়জামা। বহু বছর বাদে আজ এই পোশাক তিনি গায়ে চাপিয়েছেন। স্কাই, এবিসিসহ দেশী-বিদেশী অনেক চ্যানেল ও মিডিয়াকর্মি ওখানে জড়ো হয়েছে। এক সংবাদকর্মি উদয় হাসানকে প্রশ্ন করছে: ‘’যে দেশটি আপনাদের স্বাধীনতার সময় পাশে দাঁড়িয়েছিল, আজ তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের রাস্তায় নামতে হল কেন? আপনাদের দুটি দেশের সংস্কৃতি, জাতিসত্তা আর রাষ্ট্রীয় আদর্শেও মিল ছিল। তাহলে আপনার পরস্পরে শত্রুতে পরিণত হলেন কেন?’’

উদয় হাসানের মনের গহিন থেকে সময়কে এফোঁড় ওফোঁড় করে উঁকি দিল বহুদিনের জমানো প্রশ্ন: ‘’কেন, বাংলাদেশীরা ১৯৭১ এ অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল?’’ কিন্তু আজ আর অসহায় বোধ করলেন না। এ প্রশ্নের উত্তর এখন তার কাছে জলের মতই পরিষ্কার। সাংবাদিককে বললেন, ‘’দেখুন, ১৯৭১ এ আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছিল, আমাদের অধিকারকে দাবিয়ে রাখা হচ্ছিল; তাই আমরা যুদ্ধে নেমেছিলেন। এখন আবার আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছে; আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে হত্যা করা হচ্ছে। তাই আমরা আবার যুদ্ধে নেমেছি।‘’

উদয় হাসান এক ফাঁকে পাঞ্জাবির হাতাটা ভাল করে গুটিয়ে নেয়। আজকের প্রতিবাদ সমাবেশের সংগে পাঞ্জাবিটা দারুণভাবে মানিয়ে গেছে। যেমনভাবে মানাত ৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনের নায়কদের গায়ে।

কাজি মামুন
১৮.০২.২০১২

ইমেইল আইডি: eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%6d%64%6b%61%7a%69%6d%61%6d%75%6e%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%22%3e%6d%64%6b%61%7a%69%6d%61%6d%75%6e%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b')), eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%6d%6b%61%7a%69%6d%61%6d%75%6e%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%22%3e%6d%6b%61%7a%69%6d%61%6d%75%6e%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b')). (ইমেইল আইডি প্রকাশিত হউক চাই না)

পাদটীকা

  • ১. এই গল্পে একজন সাধারণ বাংলাদেশীর জাতিসত্তার সংকট ও তা উত্তরণের কাহিনী বলা হয়েছে। বাঙ্গালি-ত্ব ও মুসলমানি-ত্বের দ্বন্দ্বে জেরবার হয়ে অনেক বাংলাদেশীর জাতীয়তা-বোধ দুর্বল হতে থাকে। কিন্তু ১৯৭১ এর মতই এই জাতীয়তা-বোধ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জন্ম দেয় যখন টিপাইমুখের কারণে বাংলাদেশীদের জীবন বিপন্ন হয়। যে পাঞ্জাবি জসনে জুলুসে চলে, বসন্ত উৎসবে চলে, তা ৭১ এ চলতে পারে, পারে টিপাইমুখ আন্দোলনে।


মন্তব্য

সাই দ এর ছবি

শেষ পর্যন্ত লেজ বের হয়ে গেল

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

বাঙ্গালিত্ব ও মুসলমানিত্বের দ্বন্দ্বে জেরবার হয়ে অনেক বাংলাদেশীর জাতীয়তাবোধ দুর্বল হতে থাকে।

এই বিষয়টার সাথে একমত হতে পারি না। ’কোনটি ঠিক আর কোনটি মন্দ’ এ বিষয়টি মাথায় রাখলেই চিন্তাগুলো সহজ হয়ে যায়।

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

’কোনটি ঠিক আর কোনটি মন্দ’ এ বিষয়টি মাথায় রাখলেই চিন্তাগুলো সহজ হয়ে যায়।

কিন্তু অনেককে দেখেছি এমন দ্বন্দ্বে ভুগতে; আর এর জন্য সমাজের চরমপন্থিরা দায়ী। টুপি-দাড়ি দেখলেই সমাজের একটা অংশ তাকে মোল্লা/জঙ্গি বানিয়ে ফেলে; আবার বসন্ত উৎসবে যোগদান করলেই সমাজের আরেক চরমপন্থি অংশ তাকে 'হিন্দু' বানিয়ে ফেলে। আমি এমন চরিত্র দেখেছি এবং গল্পে তাদের টানাপড়েন, তা থেকে জাতিয়তাবোধের ক্ষয়করন, আবার সময়ের প্রেক্ষিতে সেই ক্ষয়িষ্ণু জাতীয়তাবাদের স্বতঃস্ফূর্ত পুনরুত্থান দেখাতে চেয়েছি। আমি সমাজের সবার কথা বলিনি। আমার দেখা একাংশকে তুলে এনেছি এবং এটা মনে হয় দেখানো যায়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!

যাযাবর এর ছবি

চলুক

অনিন্দ্য সৈকত এর ছবি

বাঙালিত্ব ও মুসলমানিত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব আপনি কোথায় খুঁজে পেলেন? এটা কি আপনার নিজের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব? যদি তাই হয়ে থাকে, সেটাকে সাধারনীকরণ করছেন কোন উপাত্তের ভিত্তিতে?

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

বাঙালিত্ব ও মুসলমানিত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব আপনি কোথায় খুঁজে পেলেন?

এই দ্বন্দ্ব খুঁজে পেয়েছি আমার চারপাশে। এটা না থাকলে একজন কিশোরকে বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে বাঁধা দেয়া হয় কেন? কেন তাকে 'হিন্দু' সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত বলা হয়? আবার যখন নবীর জন্মদিনের মিছিলে যায়, তখন কেন বলা হয়, সে মোল্লা বা জংগিদের খাতায় নাম লিখিয়েছে কিনা?

এটা কি আপনার নিজের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব?

না, আমার দ্বন্দ্ব নয়। আমার দেখা কিছু কিশোরের দ্বন্দ্ব।

সেটাকে সাধারনীকরণ করছেন কোন উপাত্তের ভিত্তিতে?

ধরুন আমি আমার দেখা একজন মানুষের চরিত্র ফুটিয়ে তুললাম আমার লেখায়, যে কিনা বাংলাদেশে একজনই আছে। তারপরও কি কোথাও নিষেধ আছে, ঐ লোককে নিয়ে কোন গল্প তৈরি করা যাবে না?

মন মাঝি এর ছবি

৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনের

এইটা কি চিজ? কোন দেশে, কোন গ্রহে হইছিল ? অ্যাঁ

শর্মিলা, সাইকিয়া, গুয়াযম-দের "গৃহযুদ্ধ"-তত্ত্বের চেয়েও এটা অনেক খারাপ লাগছে শুনতে!
আমরা স্রেফ অসহযোগ করেছিলাম ? ঘটনাটা কী ?!

****************************************

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

আমরা স্রেফ অসহযোগ করেছিলাম ? ঘটনাটা কী ?!

একাত্তরের মার্চে আমরা অসহযোগ করেছিলাম এবং ২৬শে মার্চ শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করি। আমি কিন্তু অন্যত্র বলেছিঃ

১৯৭১ এ আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছিল, আমাদের অধিকারকে দাবিয়ে রাখা হচ্ছিল; তাই আমরা যুদ্ধে নেমেছিলেন।

সুতরাং, আপনার সন্দেহ দূর হয়েছে? আপনি যে লাইটা কোট করেছেন, সেখানে পাঞ্জাবির কথা বলেছিলাম রূপক হিসাবে। দেখুন পাঞ্জাবি পোশাকটি একটা মুসলমান উৎসবে গায়ে চাপানো যায়, বসন্ত উৎসবে পরা যায়, আবার দেশের জাতীয় আন্দোলনেও নামা যায়।
পাঞ্জাবি পরে আমাদের দেশের নেতারা মার্চে অসহযোগ করেছেন, যুদ্ধ পূর্ববর্তী আন্দোলন করেছেন; মুক্তিযুদ্ধের সময় তো এই পোশাক পরেন নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আসলে পোশাকের দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মত বিশাল ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরির যে রাজনৈতিক আন্দোলন, পাঞ্জাবিকে আমি সেই নাগরিক রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতিকি পোশাক হিসেবে দেখিয়েছি, যেটা এখন গল্পের প্রধান চরিত্র উদয় হাসান পরেছে টিপাইমুখ আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য। যখন তার জাতিয়াতাবোধ দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, তা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠে আবার যখন আমাদের জাতিসত্তা হুমকির মধ্যে পড়ে ১৯৭১ এর মতই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

যুদ্ধের আগে মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছে ঠিক আছে। পাঞ্জাবি হয়তো অনেকে পড়েছেন। কিন্তু আসলেই পড়েছিলেন কি? এটা ঘেঁটে দেখার বিষয়। মার্চ মাসের কয়েকটা ছবি ঘাঁটলাম। সবগুলোতে দেখলাম শার্ট পড়ে আছে।

তা সে যাই হোক। আন্দোলনের জন্যে পোশাকটাকে প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করার ফলাফল সম্পর্কে পরিষ্কার হতে পারছি না। আপনি নিজেও পরিষ্কার কিনা সন্দেহ আছে। তবে সত্যপীরের কথাটা খুব ঠিক মনে করি। প্রতিবাদী হলেই মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া বলতে কী বোঝায় উপলব্ধি করে ওঠা যায় বলে মনে করি না। উদয় হাসান কেনো, মুক্তযুদ্ধ যে দেখে নি, তাদের কারোই ধারণা আছে বলে মনে হয় না যে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়াটা কেমন। খালি সেটার ছায়াটাই আমরা কল্পনা করার চেষ্টা করতে পারি।

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

আপনি নিজেও পরিষ্কার কিনা সন্দেহ আছে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধীরে ধীরে আমাদের জাতিসত্তার বিকাশ ঘটতে থাকে, ৫২, ৬৯ পার হয়ে ৭১ এ যার সর্বোত্তম উথান আমরা দেখতে পাই। কিন্তু ৭১ এর পর আজকের একটা কিশোরের কথা ধরুন, যাকে আমি দেখেছি, দোটানায় থাকতে। কারণ নবীর জন্মদিনের মিছিলে গেলে তাকে শুনতে হয়, সে মোল্লা বা জঙ্গি হয়ে গেছে; আবার বসন্ত উৎসবে গেলে শুনতে হয়, সে 'হিন্দু' হয়ে গেছে। এভাবে ক্রমাগত খোঁচাখুঁচিতে তার জাতিসত্তার চেতনায় দগদগে ঘা তৈরি হয়; সেই ঘা আবার আপনাআপনি সেরে যায় টিপাইমুখের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে; টিপাইমুখের আন্দোলনে সে তার স্বজাতির ৭১ এর বীরত্ব-গাঁথা থেকে অনুপ্রেরণা নেয়। এই ছিল আমার গল্পের মূল কথা।
আমার নিজের পরিষ্কার ধারনা অতটা নেই; কিন্তু ভাইয়া, আপনার যুক্তিগুলো আমার খুব ভাল লাগে। আমি বাঙ্গালিত্ব ও মুসলামানিত্বের দ্বন্বে জেরবার এই সময়ের একজন সাধারণ বাঙ্গালির (আমার দেখা) সমস্যা ও তার একটা টিপাইমুখকেন্দ্রিক সমাধান দেখাতে চেয়েছি। আমি আপনার কাছ থেকে বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চাই। আরও বুঝতে চাই রূপম ভাইয়া। আপনার অভিমত জানতে চাই। আবারও বলছি, জানা-বোঝার জন্যই ব্লগে আসা।

সত্যপীর এর ছবি

১৯৭১ এ আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছিল, আমাদের অধিকারকে দাবিয়ে রাখা হচ্ছিল; তাই আমরা যুদ্ধে নেমেছিলেন। এখন আবার আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছে; আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে হত্যা করা হচ্ছে। তাই আমরা আবার যুদ্ধে নেমেছি।

৭১ এর সাথে আজকের বর্ডার কিলিং তুলনা করার সমস্যা হল এতে দুটোরই ভার কমে যায়। একটি দেশের পলিটিশিয়ান আর মিলিটারি মিলে ঠান্ডা মাথায় দেশের রাস্তায় ট্যাঙ্ক তুলে দেয়ার সাথে দুইটা খুচরা বিপথগামী বর্ডার সোলজারের কর্মকান্ড মিলানো ঠিক না। হাসান হয়তো ৭১ এ যুদ্ধে নেমেছিল, কিন্তু আজকে পাঞ্জাবী গায়ে সে যা করছে তা যুদ্ধ নয় প্রতিবাদ। অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ, কিন্তু যুদ্ধ নয়। কখনোই যুদ্ধ নয়। যুদ্ধ অন্য জিনিষ, নির্যাতিত বোনের রক্তের বদলা নিতে মাইন বেঁধে পাকিস্তান সামরিক ট্যাঙ্কের তলে ঝাঁপিয়ে পড়ার নাম যুদ্ধ।

..................................................................
#Banshibir.

ধ্রুবনীল এর ছবি

যুদ্ধ অন্য জিনিষ, নির্যাতিত বোনের রক্তের বদলা নিতে মাইন বেঁধে পাকিস্তান সামরিক ট্যাঙ্কের তলে ঝাঁপিয়ে পড়ার নাম যুদ্ধ।

চলুক

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

যুদ্ধ অন্য জিনিষ, নির্যাতিত বোনের রক্তের বদলা নিতে মাইন বেঁধে পাকিস্তান সামরিক ট্যাঙ্কের তলে ঝাঁপিয়ে পড়ার নাম যুদ্ধ।

আমিও সে কথাই বলছি; টিপাইমুখের শান্তিপূর্ন সমাধান না হলে, আমার বাবা-মা-ভাই-বোনের আবার যুদ্ধ করতে হতে পারে, যা কোনভাবেই ৭১ এর যুদ্ধকে গুরুত্ব ও মহানত্বের দিক থেকে ছাড়িয়ে যাবে না; কিন্তু টিপাইমুখ নিয়ে ৭১ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে যুদ্ধ করা লাগতে পারে, এমন কথা বললেই তাকে দোষের চোখে দেখা হচ্ছে কেন?

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

হাসান হয়তো ৭১ এ যুদ্ধে নেমেছিল, কিন্তু আজকে পাঞ্জাবী গায়ে সে যা করছে তা যুদ্ধ নয় প্রতিবাদ। অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ, কিন্তু যুদ্ধ নয়। কখনোই যুদ্ধ নয়।

একমত। আসলে উদয় হাসান যা করছে, তা যুদ্ধ পূর্ববর্তী আন্দোলন; সেজন্য দেখুন, শেষ লাইনে কি লিখেছি:

আজকের প্রতিবাদ সমাবেশের সঙ্গে পাঞ্জাবিটা দারুণভাবে মানিয়ে গেছে; যেমনভাবে মানাত ৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনের নায়কদের গায়ে।

তার মানে, উদয় হাসানের আন্দোলন যুদ্ধ নয়, প্রতিবাদ আন্দোলনই। মার্চের অসহযোগ আন্দোলনও কিন্তু যুদ্ধ ছিল না, ছিল যুদ্ধ পূর্ববর্তী আন্দোলন। এখন আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন, উদয় হাসানের আন্দোলন থেকে কি আরেকটা যুদ্ধ শুরু হতে পারে? আমার উত্তর হল, যদি টিপাইমুখ নিয়ে প্রতিবাদে কাজ না হয়, আর আমাদের দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল সত্যি বিপন্ন হয়, তো সাধারণ মানুষ যুদ্ধে নামতেই পারে (সেক্ষেত্রে তারা হয়ত লুঙ্গি পরবে, কারণ পাঞ্জাবিকে আমি দেখিয়েছি যুদ্ধ পূর্ববর্তী রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতীকী পোশাক হিসাবে); যেমনটা নেমেছিল ১৯৭১এ, যখন গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল, মেয়েদের ধর্ষণ করেছিল, বাবা-চাচা-ভাইদের হত্যা করেছিল। আমরা আশা করছি, টিপাইমুখ আন্দোলনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবেই আমরা দাবি পূরণ করতে পারব; কিন্তু এমন যুদ্ধের আশংকাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না; অন্তত গল্পের খাতায় তো এমন একটা যুদ্ধের কল্পনা করাই যায়!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

সত্যপীর এর ছবি

অন্তত গল্পের খাতায় তো এমন একটা যুদ্ধের কল্পনা করাই যায়!

শুনুন কাজি মামুন, ৭১ আপনার গল্পের ফ্যান্টাসি যুদ্ধ নয়। ৭১ একটি কঠিন বাস্তব। সারা বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছে আপনার তৃতীয় শ্রেণীর গল্পের সাথে তুলনীয় হবার জন্যে নয়। আর অসহযোগ অসহযোগ বলে চেঁচাচ্ছেন কেন? মার্চে অসহযোগ হয়নি মার্চে একজন বাংলাদেশী যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়েছিলেন। দয়া করে একে অসহযোগ ডাকবেন না, বুঝতে না পারলে বলুন বুঝিয়ে দিচ্ছি তবু মনগড়া ব্যাখ্যা শোনাতে আসবেননা।

..................................................................
#Banshibir.

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

শুনুন কাজি মামুন, ৭১ আপনার গল্পের ফ্যান্টাসি যুদ্ধ নয়। ৭১ একটি কঠিন বাস্তব।

কোথায় বলেছি, ৭১ গল্পের ফ্যান্টাসি যুদ্ধ? আমি টিপাইমুখের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলাম, এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন একসময় যুদ্ধের রূপ নিতে পারে, তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না; কারন মানুষ সহায় সম্বল হারালে জীবনের প্রয়োজনেই যুদ্ধে নামে। আমি সেই টিপাইমুখ নিয়ে যুদ্ধের কথা আগাম গল্পে তুলে ধরা যায়, সেই কথা বলেছি।

মার্চে অসহযোগ হয়নি মার্চে একজন বাংলাদেশী যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়েছিলেন।

মার্চে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দেয়া হয়েছিল। আর মার্চেই বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে স্বাধীনতা ঘোষনা করে যান।

সারা বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছে আপনার তৃতীয় শ্রেণীর গল্পের সাথে তুলনীয় হবার জন্যে নয়।

গল্প আপনার কাছে তৃতীয় শ্রেণীর মনে হতেই পারে এবং আপনার সেই স্বাধীনতা আছে; কিন্তু আমার গল্পের কোথায় বাংলাদেশের মানুষের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতাকে অপমান করেছি? বরং ৭১ এর যে পরাজিত শক্তি ক্ষনে ক্ষনে অপমান করে উদয় হাসানদের জাতিয়তাবোধ/দেশপ্রেম দুর্বল করে দিচ্ছে, আমি সমাজের তেমন কিছু চরিত্রের কথা এই গল্পে তুলে এনেছি। নাকি আমার দেখা উদয় হাসানের মত একটা চরিত্র তুলে আনাও পাপ?

সত্যপীর এর ছবি

কোথায় বলেছি, ৭১ গল্পের ফ্যান্টাসি যুদ্ধ?

গল্পের ফ্যান্টসি যুদ্ধের সাথে ৭১ তুলনা করেছেন তাই বললাম। এইটেও বুঝিয়ে দিতে বললে তো সমস্যা।

মার্চে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দেয়া হয়েছিল।

আপনি ৭১ ও বোঝেননি অসহযোগ কি তাও জানেন না। দয়া করে গল্প লিখার বদলে পড়াশুনা করুন।

গল্প আপনার কাছে তৃতীয় শ্রেণীর মনে হতেই পারে এবং আপনার সেই স্বাধীনতা আছে; কিন্তু আমার গল্পের কোথায় বাংলাদেশের মানুষের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতাকে অপমান করেছি?

৭১ এর একটি মুক্তিযোদ্ধার অনুভূতির সাথে তৃতীয় শ্রেণীর গর্দভ উদয় হাসানের প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছাগলামী করার সাথে তুলনা দেখানো স্বাধীনতা কে অপমান করাই।

নাকি আমার দেখা উদয় হাসানের মত একটা চরিত্র তুলে আনাও পাপ?

মুক্তিযুদ্ধকে অসহযোগ আন্দোলন বলে চালিয়ে দেয়া পাপ। টিপাইমুখ আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে আদায় না হলে কাগজে যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়া পাপ। বর্ডারে ফালানির লাশের সাথে একাত্তরে একজন ধর্ষিতা নারীর তুলনার মত অশ্লীল কথা মুখে আনা পাপ। একটি বাঁধ কাজে না আসলে যুদ্ধ শুরু করার ধান্দাওয়ালা কমেন্ট করা পাপ। কয়টা পাপ হল?

..................................................................
#Banshibir.

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

আপনি ৭১ ও বোঝেননি অসহযোগ কি তাও জানেন না। দয়া করে গল্প লিখার বদলে পড়াশুনা করুন।

ভাই, আমার পড়াশুনা আপনার মত নয় ( হলে তো আপনার মত ঐতিহাসিক কাহিনীগুলো লিখতে পারতাম); তবু এ পর্যন্ত যতটুকু পড়েছি, তাতে পেয়েছি যে, ১৯৭১ এর মার্চে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিল, তাতে কার্যত দেশে বঙ্গবন্ধুর শাসনই চলছিল। (আমি বারবার বলে যাচ্ছি, অসহযোগ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে সংঘটিত হয়েছিল এবং একে মুক্তিযুদ্ধের অংশও বলা যায়, যা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল।) ভুড়ি ভুড়ি লেখক ৭১ এর অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন; কই আপনি তো তাদের বিরুদ্ধে চড়াও হচ্ছেন না; শুধু আমাকেই মনে হয় পেয়ে বসেছেন!

৭১ এর একটি মুক্তিযোদ্ধার অনুভূতির সাথে তৃতীয় শ্রেণীর গর্দভ উদয় হাসানের প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছাগলামী করার সাথে তুলনা দেখানো স্বাধীনতা কে অপমান করাই।

তুলনা করার প্রসঙ্গ আসছে কেন? কে তুলনা করেছে? মুক্তিযুদ্ধ আর টিপাইমুখ আন্দোলন একই জিনিস, দুইটার ভিতর কোন পার্থক্য নাই- এমন কথা আমি বলেছি? দেখুন, আমার জ্ঞান আপনার চেয়ে অনেক কম; তবু এটুকু বুঝি, ১৯৭১ আমাদের জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায়, গৌরব ও অর্জন। এখন ৭১ পরবর্তী যেকোনো জাতীয় আন্দোলন বা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আমরা যদি ৭১ থেকে অনুপ্রেরণা নেয়ার চেষ্টা করি, তাতে আপনি সমস্যা দেখছেন কোথায়? উদয় হাসান ৭১ থেকে অনুপ্রাণিত হতে চাইলে আমি আপত্তি করবেন কোন যুক্তিতে?

উদয় হাসানের প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছাগলামী করার

টিপাইমুখ বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নিয়ে উদয় হাসান ছাগলামি করেছে?

মুক্তিযুদ্ধকে অসহযোগ আন্দোলন বলে চালিয়ে দেয়া পাপ।

মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে অসহযোগ আন্দোলন, কোথায় বলেছি এ কথা দেখিয়ে দিন দয়া করে! আপনার লেখার একজন পাঠক হিসাবে আপনার কাছে আমি প্রার্থনা করছি যে, দয়া করেন কোট করে বলুন যে কোথায় মুক্তিযুদ্ধকে অসহযোগ আন্দোলন বলে চালিয়ে দিয়েছি? দয়া করে এড়িয়ে যাবেন না! আপনার কাছে আমার আকুল আবেদন!

টিপাইমুখ আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে আদায় না হলে কাগজে যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়া পাপ।

শান্তিপূর্ণভাবে আদায় না হলে, অবশ্যই সর্বশেষ স্টেপ হিসাবে আমাদের যার যা আছে, তাই নিয়ে যুদ্ধ করতে তো হবেই। আপনি একে পাপ বলছেন কোন যুক্তিতে? নাকি ১৯৭১ এ যুদ্ধ করেছি বলে, নিজেদের অধিকার রক্ষায় আর কোন যুদ্ধ করা যাবে না বা হতে পারে না?

বর্ডারে ফালানির লাশের সাথে একাত্তরে একজন ধর্ষিতা নারীর তুলনার মত অশ্লীল কথা মুখে আনা পাপ।

ফেলানি ধর্ষিতা হয়েছে কিনা জানি না; কিন্তু বর্ডারে বিএসএফ মাঝে মাঝেই ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে। আমি এমন একটি ডকুমেন্টারি দেখেছি টিভিতে। তাহলে ৭১ এর অপরাধের সাথে তার তুলনা করা যাবে না কেন? মানুষ তার এক বেদনার ইতিহাস অন্য বেদনার ইতিহাসের সাথে তুলনা করতে পারবে না?

একটি বাঁধ কাজে না আসলে যুদ্ধ শুরু করার ধান্দাওয়ালা কমেন্ট করা পাপ।

আপনি কোন সমাধান দেখছেন? আমাদের সরকার তো প্রেসক্রিপশন মেনে চলছে। খালেদা জিয়া করছে রাজনীতি! তো টিপাইমুখ হয়ে যাবে আর আমরা আমাদের নেতাদের ব্যর্থতা চেয়ে চেয়ে দেখব শুধু? আপনার কাছে কোন আলাদা সমাধান আছে? আমি তো যুদ্ধের কথা সর্বশেষ স্টেপ হিসাবে বলেছি।

সত্যপীর এর ছবি

মার্চে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দেয়া হয়েছিল। আর মার্চেই বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে স্বাধীনতা ঘোষনা করে যান।

আপনি বরং আপনার এই বক্তব্যটার রেফারেন্স দিন। অসহযোগ আন্দোলন কি সেটা ব্যাখ্যা করুন, এবং বঙ্গবন্ধু ঠিক কি ভাষায় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তা সুনির্দিষ্ট প্রমানসহ হাজির করুন। ৭ই মার্চের ভাষন (যদি ঐটে আপনার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক মনে হয়) অনলাইনে পাওয়া যায়, রেফারেন্স পেতে অসুবিধে হবার কথা নয়। অসহযোগ বলতে আপনি কি বুঝেন সেটাও ব্যাখ্যা করুন।

আপনাকে মাত্র তিনটে লাইন কোট করছিঃ
"এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"
"ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়"
"রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। সোনার দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।"
বিশদ বুঝিয়ে বলুন এইটাকেই আপনি অসহযোগ বলে চালাতে চাচ্ছেন কিনা। মার্চে অসহযোগ হয়েছিল এই কথা জীবনে প্রথম শুনলাম।

আপনার কাছে কোন আলাদা সমাধান আছে? আমি তো যুদ্ধের কথা সর্বশেষ স্টেপ হিসাবে বলেছি।

আপনার উপর নাই ভুবনের ভার।

..................................................................
#Banshibir.

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে অসহযোগ আন্দোলন, কোথায় বলেছি এ কথা দেখিয়ে দিন দয়া করে! আপনার লেখার একজন পাঠক হিসাবে আপনার কাছে আমি প্রার্থনা করছি যে, দয়া করেন কোট করে বলুন যে কোথায় মুক্তিযুদ্ধকে অসহযোগ আন্দোলন বলে চালিয়ে দিয়েছি? দয়া করে এড়িয়ে যাবেন না! আপনার কাছে আমার আকুল আবেদন!

এত করে অনুরোধ করলাম, তারপরও আপনি দেখিয়ে দিলেন না, কোথায় বলেছি মুক্তিযুদ্ধ আর অসহযোগ আন্দোলন এক জিনিস! সত্যি দারুণ হতাশ হলাম। যদি না দেখাতে পারেন, তাহলে আমার বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নিন দয়া করে।

মার্চে অসহযোগ হয়েছিল এই কথা জীবনে প্রথম শুনলাম।

আপনি না শুনতে পারেন; কিন্তু আমি ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন নেতা/ বুদ্ধিজীবীদের আলোচনা বা বই থেকে পেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিল। আপনি গুগল করুন না! আমার বাসার সব বই থেকে তো কোট করতে পারব না; শুধু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এম আর আখতার মুকুলের বই থেকে নীচের কোট করছিঃ

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত গণপরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ এবং জঙ্গি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকার করলে পূর্ব বাংলায় শুরু হয় এক সর্বাত্মক আন্দোলন। নানা স্থানে তখন জনতা ও সৈন্যবাহিনীর মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ। এরই মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে, বুদ্ধিজীবীরাও এর সমর্থনে এগিয়ে এলেন। তখন গঠিত হলো ''পূর্ববাংলা বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ'। এরাও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। এরপরের ইতিহাস সবারই জানা। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যার মোকাবেলায় ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহবানে শুরু হলো স্বাধীনতাযুদ্ধ। (পৃষ্ঠা: ১৩, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা, এম আর আখতার মুকুল)

উপরে উল্লিখিত বইয়ের অন্যান্য অনেক বক্তব্যের সাথে একমত না হলেও আমার হাতের কাছে এই বইটিই ছিল; তাই এটি থেকেই রেফারেন্স দিলাম ; তবে আমাকে সময় দিলে আমি অনেক বইয়ের রেফারেন্স দিতে পারব, যেখানে লেখকেরা মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের কথা বলেছেন। কিছুক্ষণ আগে আমি এক মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বললাম; সেও অসহযোগ আন্দোলনের কথা স্বীকার করল এবং বলল যে, এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট তৈরির আন্দোলন। তাছাড়া, রূপম ভাইয়াও তো বলেছেন:

যুদ্ধের আগে মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছে ঠিক আছে।

এখন রূপম ভাইয়াও ভুল বলেছে?

বিশদ বুঝিয়ে বলুন এইটাকেই আপনি অসহযোগ বলে চালাতে চাচ্ছেন কিনা।

দেখুন আমি ইতিহাসবেত্তা না হলেও, এটা বুঝি, বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ আসলে পরোক্ষে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন; কিন্তু তাতেও তো অসহযোগ মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে না; বা এটাকে অস্বীকার করারই দরকার কি? এটা তো মুক্তিযুদ্ধের অংশ। এটাও তো কম গৌরবের নয়।

আপনার উপর নাই ভুবনের ভার।

আমি পুরো বুঝিনি! তবে একজন নাগরিক হিসাবে টিপাইমুখ নিয়ে ভাববার অধিকার অবশ্যই আমার আছে; এর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ব্যর্থ হলে সর্বস্ব হারানো মানুষ যে যুদ্ধে নামতে পারে, সে আগাম ভাবনা ভাবার অধিকার ও কর্তব্য দুটোই বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে আমার আছে। আপনি তা অস্বীকার করলে কোন যুক্তিতে করবেন দেখিয়ে দিন দয়া করে।

সত্যপীর এর ছবি

আপনার সমস্যা হল আপনাকে কিছু বললে একবারে কিছুই না বোঝার ভান ধরে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকেন কই নাতো কই বললাম বুঝিয়ে বুঝিয়ে দিন। ভারি বিরক্তিকর। আচ্ছা বলছি কোথায় আপনি মুক্তিযুদ্ধকে অসহযোগ আন্দোলন বলেছেন। আপনার গল্পের সর্বশেষ লাইনে। ক্ষমার অযোগ্য একটি লাইন। যা বুঝিয়েছেন তা যদি বুঝাতে না চেয়ে থাকেন লিখক হিসেবে সেই দায় আপনারই।

ফুলস্টপ।

..................................................................
#Banshibir.

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

আচ্ছা বলছি কোথায় আপনি মুক্তিযুদ্ধকে অসহযোগ আন্দোলন বলেছেন। আপনার গল্পের সর্বশেষ লাইনে। ক্ষমার অযোগ্য একটি লাইন।

আশ্চর্য, আমি গল্পেরর শেষ লাইনে এ কথা বলেছি?

আজকের প্রতিবাদ সমাবেশের সঙ্গে পাঞ্জাবিটা দারুণভাবে মানিয়ে গেছে। যেমনভাবে মানাত একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের নায়কদের গায়ে।

কই, এখানে কোথায় বলেছি, মুক্তিযুদ্ধ ও অসহযোগ এক? আমি ঐখানে 'মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের গায়ে' লিখতে পারতাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তো পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে হয়নি; হয়েছে লুঙ্গি, কাছা চাপিয়েই মূলত। আর বাঙালি সামরিক বাহিনীর কথা আলাদা। যেহেতু পাঞ্জাবি প্রতিক ( যা মিলাদুন্নবী, বসন্ত উৎসব, ভাষা আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন,টিপাইমুখ সব জায়গায় ব্যবহার করা যায়) হিসাবে ব্যবহার করেছি, তাই ঐখানে অসহযোগ আন্দোলনের কথা বলেছি, যাও ঐতিহাসিক সত্য এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আগে সংঘটিত হয়ে তার প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল, যা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বা বিকল্প নয়, যা মুক্তিযুদ্ধের একটা অংশ, বা গৌরবদিপ্ত মুক্তিযুদ্দের প্রারম্ভে ঘটা আমাদের জাতীয় জাগরনের আরেকটা অহংকারের পালক।
আপনি আমার গল্পের মূল বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই করেননি। আমি একটা টানাপোড়েন দেখাতে চেয়েছি,যা আমি এই সময়ের এক বাংলাদেশী কিশোরের ভিতর দেখছি। এটা কি একেবারেই নেই আমাদের সমাজে?

মরুদ্যান এর ছবি

সত্যপীর, আপনার একটা জিনিস খুবই চোখে লাগে, কেউ আপনার সাথে তর্কে আসলেই আপনি বড় আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। এখানে বারবার তৃতীয় শ্রেণী তৃতীয় শ্রেণী কথাটা ব্যবহারে অনেক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেয়েছে।
অসহযোগ আন্দোলন শব্দটা আমিও পড়েছি যতদূর মনে পড়ছে।

Atahar এর ছবি

চলুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনি বরং আপনার এই বক্তব্যটার রেফারেন্স দিন। অসহযোগ আন্দোলন কি সেটা ব্যাখ্যা করুন, এবং বঙ্গবন্ধু ঠিক কি ভাষায় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তা সুনির্দিষ্ট প্রমানসহ হাজির করুন।

যতোদূর মনে পড়ে নবম দশম শ্রেণীর সমাজ বিজ্ঞান বইতে এটা ছিলো। আমাদের সবার সেভাবে জানারই কথা যে মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিলো, তেমনটা ভেবেছিলাম। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে অনেকেই ব্যাপারটা নিয়ে নিশ্চিত নন বা শোনেনও নি কখনো।

এখানে দুটো ব্যাপার। এক হচ্ছে মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছে এমনটা প্রচলিত থাকা। আরেক হচ্ছে তেমনটা সত্যিই ঘটেছিলো কিনা নিশ্চিত করা। অসহযোগ আন্দোলন সত্যিই ঘটেছিলো কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্যে আমরা আলোচনা করতেই পারি। অসহযোগ আন্দোলনের তথ্য প্রমাণ দেখতে আমিও আগ্রহী। সমাজ বিজ্ঞান বইতে থাকাই যথেষ্ট নয় বটে। কিন্তু কাজি মামুন তো ব্যাপারটা আবিষ্কার করেন নি বা নতুন ঐতিহাসিক বয়ান হিসেবে প্রস্তাব করেন নি যে তাকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হাজির করতে হবে। এটা তো তার অরিজিনাল ক্লেইম না। সরকারের ওয়েবসাইটেও তেমনটা ক্লেইম করছে [সূত্র]। নিজেও কিন্তু একটু গুগল করে দেখতে পারতেন। মেহবুবা জুবায়েরের একটু আগে প্রকাশিত লেখায়ও (১৯৭১) দেখছি অসহযোগ আন্দোলনের উল্লেখ আছে। সেখানে দেখছি আপনি মন্তব্যও করেছেন। কিন্তু সেখানে অসহযোগ আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ আর চাচ্ছেন না।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সত্যপীর, আপনার বক্তব্যের অন্য অংশ ঠিক থাকলেও

দুইটা খুচরা বিপথগামী বর্ডার সোলজারের কর্মকান্ড

— ঠিক নাই। এতো হালকা না ব্যাপারটা যে কেবল দুইটা মাত্র সোলজারের বিপথগামিতায় সীমান্তে বাংলাদেশীরা মারা পড়ছে অহরহ! ভারতের সাথে বাংলাদেশের যতোগুলো সীমান্ত চৌকী আছে, সবগুলোতেই হতাহতের ঘটনা আছে। আর সাম্প্রতিক বিএসএফ প্রধানের উক্তির পরে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা 'দুইটা খুচরা বিপথগামী সোলজার এর কারণে হয়' আর এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

সত্যপীর এর ছবি

সাব্বাস ধূগোদা, একটা খাঁটি কথা ধরসেন। এইজন্যই বলছিলাম ৭১ এর সাথে মিলিয়ে দেখা শুরু করার সমস্যা হল ঘটনাটি তার ন্যায্য গুরুত্ব হারায়। বিএসএফ এর বদমাইসি স্ট্যান্ডঅ্যালোন ইস্যু হিসেবেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কাজি মামুনের মত লোক ৭১ এর সাথে গুলিয়ে ফেলায় আমরা ডিস্ট্র্যাক্টেড হয়ে পড়ি।

..................................................................
#Banshibir.

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সাবাশীর কিছু নাই সত্যপীর। মুক্তিযুদ্ধকে এটা-সেটার সাথে গুলানোর চেষ্টা নতুন কিছু না। কিন্তু এতো সহজে ডিস্ট্র্যাক্টেড হয়ে পড়লে তো সমস্যা।

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

বিএসএফ এর বদমাইসি স্ট্যান্ডঅ্যালোন ইস্যু হিসেবেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কাজি মামুনের মত লোক ৭১ এর সাথে গুলিয়ে ফেলায় আমরা ডিস্ট্র্যাক্টেড হয়ে পড়ি।

৭১ এর সাথে গুলিয়ে ফেলিনি, বরং ৭১ এর চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে চাই; আপনার সমস্যা আছে?

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

চলুক

মন মাঝি এর ছবি

'৭১ ≠ টিপাইমুখ

কারন '৭১ শুধুই "আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছিল, আমাদের অধিকারকে দাবিয়ে রাখা হচ্ছিল"-র বছর নয়, এটা আমাদের দৃঢ় ভাবে নিজেদের খুঁজে পাওয়ার বছর! যাদের '৭১-এর পর ৪০ বছরেরও বেশি পার হয়ে যাওয়ার পর 'টিপাইমুখ' লাগে নিজেদের খুঁজে পেতে, তারা হয় কিছুই খুঁজে পাননি নয়তো ঠিক মনে করে একদম ভুল জিনিষটি পেয়েছেন। এদের আগে বিংশ শতাব্দীর '৭১ খুঁজে পেতে হবে, একবিংশ শতাব্দীর টিপাইমুখ-কে যথার্থ প্রেক্ষিতে পেতে হলে। নয়তো অন্যসব শাখামৃগর মতই বিবর্তনের ক্যল-ডি-স্যাকই (কানাগলি) তাদের একমাত্র পরিণতি।

আজকের প্রতিবাদ সমাবেশের সংগে পাঞ্জাবিটা দারুণভাবে মানিয়ে গেছে

হুম! উদয় হাসানের গায়ে হয়তো মানিয়েছে.... কিন্তু ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের গায়ে 'এই' পাঞ্জাবি মোটেই মানাত না। ইন ফ্যাক্ট, তাঁরা এটা গায়েই দেননি। কারন তারা তখন অসহযোগ আন্দোলনে করেননি - মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, এবং সেটাও 'জসনে জুলুস'-এর জন্য না। যেমন কিনা, 'টিপাইমুখ'-বিরোধিতাও বসন্ত উৎসবের পাঞ্জাবির জন্য না - আক্ষরিক বা মেটাফরিকাল কোন অর্থেই। বসন্ত উৎসবের পাঞ্জাবি (বা সেটা যে পোশাকই হোক) আমরা ৪০ বছর আগেই পেয়েছি ও পরে নিয়েছি, টিপাইমুখের কারনে সেটা হারায়নি বা হারানোর শঙ্কাও নেই। স্রেফ টিপাইমুখ বা বর্ডার কিলিং-এর কারনে যারা এটা পায় ও পরে - মুক্তিযুদ্ধ ও তারপরে ৪০ বছর ধরেও না পেয়ে - তারা আসলে একদম অন্য একটা পাঞ্জাবি পেয়েছে/পরেছে। এই নতুন ধরণের পাঞ্জাবির নাম হচ্ছে - সম্রাটের অদৃশ্য পাঞ্জাবি। এদের কেউ কেউ এটা নিশ্চিত ভাবে জেনেশুনেই পরছে, আবার কেউ হয়তো গল্পের সম্রাটের মত বুঝতেই পারছে না। কিন্তু ব্যাপার সেই একই।

লেখকের প্রতি অনুরোধ, 'উদয় হাসান'-কে দয়া করে জানান - উনি যেন পাব্লিক প্লেসে এই ধরণের পাঞ্জাবি পরা থেকে বিরত থাকেন। আর হ্যাঁ, উনাকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত কোন বিষয়ে আন্দোলন/প্রতিবাদ/কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করার আগে, বাসায় গিয়ে একটা তসবীহ্‌ নিয়ে "মুক্তিযুদ্ধ অসহযোগ আন্দোলন না" - এই দোয়াটা কমসে কম ১ লক্ষ বার জপ করে আসতে।

****************************************

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

কারণ '৭১ শুধুই "আমাদের মেরে ফেলা হচ্ছিল, আমাদের অধিকারকে দাবিয়ে রাখা হচ্ছিল"-র বছর নয়, এটা আমাদের দৃঢ় ভাবে নিজেদের খুঁজে পাওয়ার বছর!

শুধু একাত্তরেই আমরা নিজেদের খুঁজে পেয়েছি? ৫২ তে পাইনি? আসলে পুরো পাকিস্তান আমল জুড়েই আমরা নিজেদের জাতিসত্তা আস্তে আস্তে বিনির্মাণ করেছি, স্বাধিকার, স্বায়ত্তশাসন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই। কিন্তু আমাদের এই জাতিসত্তা যার চূড়ান্ত ফসল উঠে আসে ৭১ এ, তা দুর্বল হতে থাকে, বলা ভাল, দুর্বল করা হয় ৭১ এর পরাজিত গোষ্ঠীর মদদে।

যাদের '৭১-এর পর ৪০ বছরেরও বেশি পার হয়ে যাওয়ার পর 'টিপাইমুখ' লাগে নিজেদের খুঁজে পেতে,

৭১ এ আমদের জাতিয় চেতনার ও জাতিসত্তার সর্বোত্তম বিকাশ ঘটেছিল। কিন্তু তা কি দুর্বল করা হয়নি? দেখুন, এটা সবার ক্ষেত্রে হয়ত সত্য নয়, কিন্তু অনেক বাংলাদেশীকেই তার মুসলামানিত্ব ও বাঙ্গালি-ত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে কাতরাতে দেখেছি; গল্পের উদয় হাসানের মতই সে একটি মুসলিম পর্বে যোগদান করতে গিয়ে 'মোল্লা' উপাধি পেয়ে যায়, আবার বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে পেয়ে যায় 'হিন্দু' উপাধি। এমনভাবে একজন উদয় হাসানের জাতিবোধের বিকাশকে বাঁধাগ্রস্ত করতে দেখেছি; তো এর ফলে উদয় হাসানদের মত অনেকের দেশ বা নিজের জাতি নিয়ে বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে দেখেছি। তো এর সমাধান কি? আমার কাছে সমাধান হল, টিপাইমুখের মত বা পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করার মত বিষয়ে, আমাদের জাতিয়তাবোধ আপনাআপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে জেগে উঠবে। যেমনটা ১৯৭১ এ জেগে উঠেছিল সেই জাতির মধ্যে, যারা কিনা ১৯৪৭ এ পাকিস্তান বানাতে ভূমিকা রেখেছিল। এটাই আমার মূল কথা।

ইন ফ্যাক্ট, তাঁরা এটা গায়েই দেননি। কারণ তারা তখন অসহযোগ আন্দোলনে করেননি - মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন,

মুক্তিযুদ্ধে গায়ে দেয়নি; কিন্তু অসহযোগ আন্দোলন, যা ছিল মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী আন্দোলন, তাতে গায়ে দিয়েছিল। অনেক ভিডিও আছে সেই সময়কার অসহযোগ আন্দোলনের, চাইলে দেখে নিতে পারেন।

এবং সেটাও 'জসনে জুলুস'-এর জন্য না।

জসনে জুলুসের জন্য, এটা আমি কোথাও বলেছি? আমি তো একজন বাংলাদেশি মুসলমানের জাতিসত্তা অনুভবের ক্ষেত্রে তাকে যে দোটানায় ফেলে দেয়া হয় সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে, তার উদাহরণ দিতে জসনে জুলুসের কথা বলেছি। আমি বলতে চেয়েছি, একজন বাংলাদেশি মুসলমান তার মন চাইলে শান্তিপূর্ণ জসনে জুলুস করতে পারে, বসন্ত উৎসবে অংশ নিতে পারে; কিন্তু সমাজের চরমপন্থিরা তাকে পদে পদে খোঁচাতে থেকে; এটা আমার কাছে উদয় হাসানের জাতিয়াততাবোধকেই খোঁচানোর শামিল; যার কারণে দেখুন, সে ঐ অনুষ্ঠানগুলোতে পরার জন্য পাজামা-পাঞ্জাবি খুলে রাখে; নিজের দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা পোষণ করে; এ জন্য সে দায়ী না; স্বার্থান্বেষী মহল দায়ী। কিন্তু একসময় তার ভঙ্গুর জাতিয়তাবোধ কিন্তু শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে যায় টিপাইমুখের প্রেক্ষিতে।

বসন্ত উৎসবের পাঞ্জাবি (বা সেটা যে পোশাকই হোক) আমরা ৪০ বছর আগেই পেয়েছি ও পরে নিয়েছি, টিপাইমুখের কারনে সেটা হারায়নি বা হারানোর শঙ্কাও নেই।

বসন্ত উৎসবের প্রসঙ্গ কেন এনেছি, তা উপরে বলেছি। আমি তা হারানোর আশংকা করিনি কোথাও। শুধু সমাজের একটি চরিত্রের অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি এবং তার সমাধানও দেখাতে চেয়েছি।

স্রেফ টিপাইমুখ বা বর্ডার কিলিং-এর কারণে যারা এটা পায় ও পরে - মুক্তিযুদ্ধ ও তারপরে ৪০ বছর ধরেও না পেয়ে - তারা আসলে একদম অন্য একটা পাঞ্জাবি পেয়েছে/পরেছে।

আবারো বলছি, আমার লেখাটি কোন মতবাদ প্রতিষ্ঠা নয়। আমি একটা দেখা একটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছি; সমাজের প্রতিঘাতে যার জাতীয়তাবাদী চেতনা দুর্বল হয়; কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবেই পুনরুজ্জীবিত হয় টিপাইমুখ নিয়ে।

বাসায় গিয়ে একটা তসবীহ্‌ নিয়ে "মুক্তিযুদ্ধ অসহযোগ আন্দোলন না" - এই দোয়াটা কমসে কম ১ লক্ষ বার জপ করে আসতে।

বারবার তো বলছি, মুক্তিযুদ্ধের আগে অসহযোগ হয়েছিল। কোথায় আছে এই লেখায় যে, মুক্তিযুদ্ধ হয়নি; বরং অসহযোগ হয়েছিল? সুতরাং, যে কথাটা বলে হয়নি, তাকে অন্যের মুখে সেট করে দিচ্ছেন কেন ভাই?

মন মাঝি এর ছবি

আপনার প্রতিমন্তব্যের কোন জবাব দেয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এর মধ্যে আপনার উদয় হাসানের মতই '৭১-এর পাঞ্জাবি' গায়ে দেয়ার ভড়ং করা কিছু অদৃশ্য পাঞ্জাবিওয়ালাদের সাথে সামনাসামনি আলাপ ও বিস্তর তর্ক হয়ে যাওয়ার ফলে এই প্রসঙ্গটাতে ফিরে আসার উৎসাহ বোধ করলাম। সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করব না, কারন এটাই আমার শেষ কমেন্ট এই প্রসঙ্গে। এর পর আর কোন তেনা-পেচানিতে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ নেই।

১।

শুধু একাত্তরেই আমরা নিজেদের খুঁজে পেয়েছি? ৫২ তে পাইনি?

না পাইনি ঠিকমত।

আগের কমেন্টে ভাল করে দেখুন আমি লিখেছি - "দৃঢ় ভাবে নিজেদের খুঁজে পাওয়ার বছর!"

'৫২-তে আমাদের জাতীয়তাবাদ ও বোধের বীজ বপন হয়েছিল মাত্র। '৭১-এ সেটা ফলবান বৃক্ষে পরিণত হয়। নাও হতে পারতো হয়তো। বীজ আর ফলবান বৃক্ষের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। বীজের নিজেকে খুঁজে পেতে হলে বৃক্ষ হওয়া লাগে। দৃঢ় ভাবে বলতে এটিই বুঝিয়েছি। তাছাড়া বীজের পরিণতির কোন গ্যারান্টি নাই - ফলবান বৃক্ষে সে রূপ নিবে কি নিবে না তা ইতিহাসের অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। ৫২-তে আমাদের এথনিসিটির লিঙ্গুইস্টিক মাত্রাটি আমরা এসার্ট করেছি মাত্র (ভারতেও এমন অনেকে করেছে বিভিন্ন ভাবে যা "জাতি"-তে পরিণতি লাভ করেনি), কিন্তু তখনো পর্যন্ত মনে হয় সেসময়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি পাকিস্তানি নেশনহুডের ধারণাটাই সাবস্ক্রাইব করতেন। এটাকে ৭১ বা বর্তমান বা আধুনিক জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষিতে মোটেই "নিজেদের খুঁজে পাওয়া" বলা যায় না! পরবর্তীকালে হয়তো আমরা ধীরে ধীরে সে পথে হেঁটেছি, কিন্তু সেটা পরের কথা। এমনকি '৬৬-তেও আমরা বড়জোর একটা জাতিসত্তা (নেশনালিটি, নেশন নয় - খুব আলাদা জিনিষ)-র বোধ অর্জন করেছি, তার বেশি না। এই জিনিষ ভারতেও আছে - যেমনঃ তামিল, মারাঠি, ইত্যাদি ইত্যাদি - যারা নেশন নয় এবং নেশনহুড তাদের যৌক্তিক, প্রত্যাশিত বা অবধারিত পরিণতি কোনটাই নয়। আর এরকম কিছু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মোটেও "নিজেদের খুঁজে পাওয়া" পাওয়া বলা যায় না! একমাত্র '৭১-এই আমরা পূর্ণ জাতিরাষ্ট্রের (নেশন ও নেশনহুড) আকাঙ্খায় নিজেদের নিজেদের মত করে খুঁজে পেয়েছি। এই সময়ই আমাদের "জাতীয়তা" বা নেশনহুডের পরিপূর্নতা ও প্রকৃত সূচনা - তার অতি নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিত ও জন্মগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে যা বিধৃত হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনায়। সেগুলি কি তা বোধহয় আপনিও অন্তত তত্ত্বগত ভাবে জানেন, তাই আর পুনরুল্লেখ করলাম না। তো, এই খুঁজে পাওয়া ও চেতনা আগের সব পাওয়া থেকেই মৌলিক ও গুণগত ভাবে পৃথক - সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতির প্রাণী এটা। আর চরিত্রগত ভাবে এটা যে কোন সীমান্তসঙ্ঘাত বা টিপাইমুখ জাতীয় দ্বন্দ্ব থেকে আরো হাজারগুন বেশি পৃথক (শেষের গুলির সঠিক প্রেক্ষিতে প্রাপ্য গুরুত্ব লাঘব না করেই)।

এজন্যেই বলছি, যে কোন প্রসঙ্গে কথায় কথায় '৭১ টানা যায় না। তুলনা করা যায় না। এর প্রেক্ষিত, অভিজ্ঞতা, চেতনা, চরিত্র ও জন্মগত বৈশিষ্ট্য - যাই বলুন, তা এতই নিজস্বতাসম্পন্ন যে, যার এর জন্মের ৪০ বছর পরে কোন সীমান্তসংঘাত বা আন্তর্জাতিক ভাগ-বাটোয়ারাগত দ্বন্দ্ব লাগে এটা বুঝতে বা পেতে, সে আসলে হয় কিছুই পায়নি বা ভুল করে অন্যকিছুকে '৭১ মনে করছে

২।

৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনের নায়কদের গায়ে।

এখন আপনি যতই এই বাক্যটাকে ৭ই মার্চ-২৫শে মার্চের মধ্যবর্তী পর্ব বলে বুঝানোর চেষ্টা করুন না কেন, '৭১ কিন্তু একমাত্র এবং দ্ব্যর্থহীণ ভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্যই পরিচিত। অন্যকিছুর জন্য না! আপনি যদি আসলেই ২৫শে মার্চ-পূর্ব ঐ পর্বটাকে বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সেটা কোয়ালিফাই করা উচিত ছিল এভাবে "মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ৭১-এর মার্চের অসহ..."। সেটা আপনি করেননি, বরং পুরো মুক্তিযুদ্ধকেই অসহযোগ বানিয়ে দিয়েছেন।

সবচেয়ে বড় কথা হল, ৭ই মার্চ-২৫শে মার্চের মধ্যবর্তী পর্বটা মোটেই "অসহযোগ" আন্দোলন ছিল না। এই উপমহাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের ধারণা ও নামটা এসেছে গত শতাব্দীর ২০-এর দশকে মহাত্না গান্ধীর নেতৃত্বাধীণ বৃটিশ বিরোধী "অসহযোগ আন্দোলন" থেকে - যার অন্যতম মৌলিক শর্ত ও বৈশিষ্ট্যই ছিল অহিংসা বা নন-ভায়োলেন্সএমনকি শাসকপক্ষের নিদারুন আক্রমণ বা নির্যাতনের মুখেও!! ১৯২২-এ পুলিশ ও প্রতিবাদকারীদের মধ্যে একটি সহিংস ঘটনাতেই গান্ধী এই অসহযোগ আন্দোলন তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন অনেক নেতাদের দ্বিমত সত্বেও, নিজেদের অহিংসার নীতির ব্যাপারে তিনি এতই অনমনীয় ছিলেন। এই অপরিহার্য কনোটেশন নিয়েই অসহযোগ আন্দোলন নাম ও ধারাটা এই উপমহাদেশে খ্যাতি ও পরিচিতি পেয়েছে, এমনকি বিশ্বব্যাপীও!

প্রশ্ন হল, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে (যা আপনার বক্তব্য মতে এর দিকনির্দেশনা) এমন অপরিহার্য অহিংসা নীতির ন্যূনতম ঘোষনা আপনি কোথায় পেলেন ? বরং একদম অন্যরকম কিছু দেখতে পাই আমরা সেখানে - লেটারে এবং স্পিরিটে। আরেকজন মন্তব্যকারী এখানে কিছু উদ্ধৃতি দিয়েছেন এর। তাছাড়া পদ্ধতিগত পার্থক্য ছাড়াও, পার্থক্য রয়েছে তাৎক্ষনিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যতেও। আরেকটা কথা, পরবর্তী ঘটনাবলীতেও অনেক পার্থক্য আছে। আমার জানামতে ২৬-২৭ তারিখে নয় ১৯ তারিখেই জয়দেবপুরে সামরিক বাহিনির বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করেন (পরবর্তীকালের মেঃ জেঃ মইনুল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে)। তাই ৭ই মার্চের ভাষন মোটেই স্রেফ 'অসহযোগের' ডাক দেয়নি। রক্ত দিতেও চেয়েছে। পড়ে দেখবেন।

৩। জসনে জুলুসের ব্যাপারটা আমিও আপনার মতই প্রতীকার্থেই ব্যবহার করেছি। ধর্মীয় পরিচয়ের অন্য সব পরিচয়ের উপর প্রায়োরিটি-বাসনার প্রতীক হিসেবে। এখন আপনি সেটা বুঝতে চাইছেন না কেন বুঝতে পারছি না। মোদ্দা কথা, '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ যেমন ধর্মবিশ্বাসী বাঙালি মুসলমানের ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস ধ্বংস বা বিলুপ্ত করে দেয়ার বা হিন্দু বা নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র ছিল না, তেমনিই ২১শ শতকে সীমান্তসঙ্ঘাত বা টিপাইমুখ বাংলাদেশিদের বসন্ত-উৎসব বা জাতীয় পরিচয়বোধের সাংস্কৃতিক ও এথনিক কম্পোনেন্ট ধ্বংস করে দেয়ার কোন নীল-নকশা নয়। সুতরাং উদয় হাসানরা যদি বর্ডার কিলিং বা টিপাইমুখের বিরুদ্ধে ধর্মরক্ষা আর ৪০ বছর পরে টিপাইমুখের পানিতে পাওয়া নব-আবিষ্কৃত এথনো-কালচারাল আত্নচেতনার কোন কম্পোজিট পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে প্রতিবাদে নামেন এবং '৭১-'৭১ করে আত্নপ্রসাদ পাওয়ার চেষ্টা করেন - তবে আমি বলবো তিনি হয় পুরাই বিভ্রান্ত এবং ভুল জায়গায় ভুল উপলব্ধির প্রয়োগ করছেন, আর নয়তো জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবেই "৭১-৭১" জপতে জপতে সুকৌশলে অন্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন কোন একটা অকথিত উদ্দেশ্যে। যেমনটা কেউ কেউ করে ইদানীং। এই দুইয়ের মধ্যে আপনার উদয় হাসান কোনটা করে সেটা আপনার উপর ছেড়ে দিলাম। তবে এটুকু নিশ্চিত, ৭১-এর পাঞ্জাবি তার গায়ে নেই, আর তার গায়ে যেটা আছে (দৃশ্য বা অদৃশ্য) সেটা '৭১-এর নায়কদের গায়ে ছিল না!

৪। নিজের চোখের সামনে সঠিক সিদ্ধান্তে আসার উপযোগী অজস্র প্রকট তথ্য-প্রমান ও উপলব্ধির উপকরণ ছড়ানো থাকা সত্ত্বেও যারা এমন একটা বিষয়ে টানাপোড়েনে ভুগে, সামান্য খোঁচাখুঁচিতে যাদের চিন্তাশক্তি লোপ পায়, যারা নিজের মনুষ্যত্ব আর চিন্তার স্বাধীনতা অন্যের কাছে বন্ধক দিয়ে দেয় - না, দুঃখিত, তাদের আমি 'ভাঁড়' বৈ 'নায়ক' বলতে পারব না। তাছাড়া কলেজের ২য় বর্ষ যথেষ্ট বয়স এজন্যে। আর ২০৩৫-এ প্রতিবাদে যোগ দেয়ার সময় উদয় হাসানের বয়স কত ছিল?

৫। আপনার উদয় হাসানের কথা আপনিই ভাল বলতে পারবেন, কিন্তু শুরুতে আমি যেসব বাস্তব মানুষের সাথে আলাপের কথা বলেছি - তাদেরকে একটু চিবি দিয়ে ধরতেই আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম কত দ্রুত তাদের '৭১-এর পাঞ্জাবি' সম্রাটের অদৃশ্য পাঞ্জাবিতে পরিণত হল! বেরিয়ে পড়ল নিজের মনুষ্যত্ব আর চিন্তাশক্তির স্বাধীনতা অন্যত্র বন্ধক রাখা চেহারা। আর এই খামতি ঢাকতেই দেখলাম এখন এদের "৭১-এর পাঞ্জাবির" ভেক লাগে। এটা বড়ই মজার ব্যাপার। এদের আগের জেনারেশনের বোধহয় এত ঢাকাঢাকির বালাই ছিল না - এটা মনে হচ্ছে একটা নতুন ফ্যাড - '৭১ দিয়েই '৭১-বিরোধিতা ঢাকার এক নতুন কৌশল (সচেতন এবং অসচেতন ভাবে)।

৬। আমার সমালোচনার অংশটুকু আপনার উদ্দেশ্যে ঠিক নয় - উদয় হাসানদের উদ্দেশ্যে। এখন সে আসলে কে, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব নাহয় আপনার উপরেই ছেড়ে দিলাম।

****************************************

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

সবচেয়ে বড় কথা হল, ৭ই মার্চ-২৫শে মার্চের মধ্যবর্তী পর্বটা মোটেই "অসহযোগ" আন্দোলন ছিল না।

আপনার অসহযোগ আন্দোলন বিষয়ক ক্লেইম নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। উপরে দেখুন, কাজি মামুন কিছু সূত্র দিয়েছেন, আমিও দিয়েছি যে ওই পর্বটা অসহযোগ আন্দোলন নামে অনেক জায়গায় পরিচিত। অর্থাৎ ওই পর্বকে অসহযোগ আন্দোলন বলা কাজি মামুনের নিজের উৎপাদন না। তো উপরে দেয়া সূত্রগুলো কি তাহলে ভুলভাবে ওই পর্বকে অসহযোগ আন্দোলন বলছে? এটা জানা জরুরি। কারণ আমাদের সমাজ বিজ্ঞান বইতে পর্যন্ত এর উল্লেখ রয়েছে। ফলে আমরা শিখছি যে ওই পর্বটা অসহযোগ আন্দোলন। ওই সময় যদি কোনো অসহযোগ আন্দোলন না হয়েই থাকে, তাহলে এ নিয়ে তর্কের অবসান হওয়া এখনি জরুরি।

হিমু এর ছবি

লেখকের কাছ থেকে ওপরের আপত্তিগুলোর সদুত্তর আশা করছি।

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

লেখকের কাছ থেকে ওপরের আপত্তিগুলোর সদুত্তর আশা করছি।

হিমু ভাই, আমি অনেক উত্তর দিয়েছি। আর আমি আমার দেখা একটা চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি; আমি তো কোন মতবাদ প্রতিষ্ঠা করিনি। আমাদের পরিবার ১৯৭১ হৃদয়ে লালন করে। তা না হলে আমি সচলে আসতাম না; আমি যদি পাকিস্তানপন্থিই হতাম, তাহলে তো রাজাকারদের সাইটেই যেতে পারতাম।

হিমু এর ছবি

সঠিক উত্তরে টিক দিন।

১. ১৯৭১ আপনার কাছে মুক্তিযুদ্ধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২. ১৯৭১ আপনার কাছে অসহযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

হিমু ভাই,
জানতাম না পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। নিজেকে বুঝাতে এমনই ব্যর্থ। কোন চরিত্র নিয়ে গল্প লিখলে, লেখক ঐ চরিত্র কিনা, তা নিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়, শুনিনি আগে।
যাহোক, আমি আপনার বর্নিত ১ নম্বরে টিক দিলাম। এবং আমার মন্তব্যগুলো পড়লে দেখতে পেতেন, একথা অনেকবার ইতিমধ্যে বলে ফেলেছি, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবদিপ্ত ঘটনা। মার্চের অসহযোগ আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী একটা আন্দোলন, যাকে প্রাক মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের অংশও বলা যায়। ঐ অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ একে অপরের প্রতিপক্ষ নয়, বরং সম্পূরক।
আশা করি, বোঝাতে পেরেছি। তবে আমি গল্পে একটা দ্বন্দ্ব দেখাতে চেয়েছি, একজন সাধারণ বাংলাদেশীর মনে যা উদয় হয়। আমার দেখা এই টানাপোড়েন নিয়ে কাউকে কোন আলোচনা করতে দেখলাম না। এমন দ্বন্দ্ব থাকা উচিত কিনা, সমাজ খোচালেই দ্বন্দ্ব হবে কেন, এই দ্বন্দ্ব থাকা ছাগলামি কিনা- এই সব প্রশ্নের আগেও সত্য এমন দ্বন্দ্ব কারও কারও ভিতর দেখা যায়। এই দ্বন্দ্ব কি কারও ভিতর দেখা যায় না, হিমু ভাই? আমি এটা নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম।

হিমু এর ছবি

লেখক = চরিত্র, এই অভিযোগ কেউ করছে না। সবাই বলছে, লেখক চরিত্র আঁকতে গিয়ে বেসামাল হয়ে শেষে এটা কী লিখলো?

৭১এর অসহযোগ স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা পর্ব মাত্র। যেমন প্রবাসী সরকার গঠন একটা পর্ব। সশস্ত্রবাহিনীকে সেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা একটা পর্ব। এরকম বহু পর্ব আছে। এমনকি, অসহযোগ আন্দোলনের নায়করা বাকি পর্বের নায়ক থেকে পৃথক না। আপনি গাড়ি চুরির পর থানায় গিয়ে টায়ার চুরির জিডি করেছেন। পাঠক প্রশ্ন তুলেছে। উত্তর দেয়াকে পরীক্ষা মনে করলে, পরীক্ষা দিন। না-ও দিতে পারেন।

আপনার গল্পে দ্বন্দ্বটা ভালোমতো ফোটেওনি। বরং আপনার পর পর তিনটি গল্প পড়ে পাঠকের চোখে আরেকটা দ্বন্দ্ব ধরা পড়ে গেছে। সেই দ্বন্দ্ব যে গল্পে, তাতে আপনি চরিত্র।

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

''আজকের প্রতিবাদ সমাবেশের সঙ্গে পাঞ্জাবিটা দারুণভাবে মানিয়ে গেছে। যেমনভাবে মানাত একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের নায়কদের গায়ে।''
হিমু ভাই, আমি উপরের লাইনে ''একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের গায়ে'' দিতে চেয়েছিলাম (বিশ্বাস করুন); কিন্তু পরক্ষনে মনে হল, আমার প্রতিকি পোশাক পাঞ্জাবি ( যা মিলাদুন্নবী, বসন্ত উৎসব, ভাষা আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন,টিপাইমুখ সব জায়গায় ব্যবহার করা যায়) তো মুক্তিযুদ্ধে পরা হয়নি! বরং তখন সাধারন মানুষ লুঙ্গি, গামছার উপর নির্ভর করেছে। আর সামরিক বাহিনী তাদের পোশাক পরেছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী 'অসহযোগ আন্দোলনের নায়কদের' কথা লিখলাম। কিন্তু এটা লিখলেই সমস্যা কেন? এটাও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অংশ, ১৯৭১ এর গৌরবদিপ্ত আরেকটা পালক! এটা বললে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার বা অবমাননা করা হয়ে যায়? একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি অন্যান্য মহান পর্বও আছে, যা আপনি উল্লেখ করেছেন এবং এগুলোও সামগ্রিক অর্থে মুক্তিযুদ্ধের অংশ।
''আপনার গল্পে দ্বন্দ্বটা ভালোমতো ফোটেওনি।''
আমি স্বীকার করি, হিমু ভাই, আমার লেখা দুর্বল; আপনাদের সমালোচনা বা সাজেশন পেলে আরও ভাল লিখতে পারব। এই জন্যই আপনাদের সমালোচনা চাই।
''উত্তর দেয়াকে পরীক্ষা মনে করলে, পরীক্ষা দিন। না-ও দিতে পারেন।''
পরীক্ষা তো দিয়েছি। পরীক্ষা দেয়াতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু পাস করেছি কি?
ভাল থাকবেন, হিমু ভাই।

হিমু এর ছবি

আপনি আপনার গল্পটা নিজেই আবার পড়ুন। তারপর আপনার ওপরের মন্তব্যটা পড়ুন। তারপর আমার এই মন্তব্যটা পড়ুন।

আপনি গল্পের মাপে একাত্তরকে না ছেঁটে, একাত্তরের মাপে গল্প লিখতে পারতেন। দরকার হলে পাঞ্জাবির জাতিসত্ত্বার বদলে লুঙ্গিগামছার জাতিসত্ত্বা লিখে উদয় হাসানকে লুঙ্গি পরিয়ে মাঠে নামাতেন, সমস্যা হতো হাসি ? পাঞ্জাবি ঠিক রেখে একাত্তর পাল্টে দেয়া কেমন কেমন দেখায় না?

আর যে ব্যাপারটা পাঠকেরা বারবার বলছেন, সীমান্ত সমস্যা বা টিপাইমুখ সমস‌্যাকে একাত্তরের সমান বানিয়ে গল্পের চরিত্রকে সেসবের মোকাবেলা করানোর দরকার নাই। মায়ানমারের সাথেও আমাদের শরণার্থী বিষয়ক সমস্যা আছে। দুয়েক বছর আগে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী মায়ানমার সীমান্তে যুদ্ধের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যেও তৈরি হয়ে ছিলো। এরকম পরিস্থিতি আবার দেখা দিলে আপনি কি মায়ানমারকে নিয়ে লুঙ্গির জাতিসত্ত্বা লিখবেন একাত্তর টেনে এনে? দরকার নাই তো?

গল্প লেখকের অনেক জ্বালা। সবচেয়ে বড় জ্বালা দেখা দেয় যদি যে বিষয় নিয়ে সে গল্প লিখতে চায়, সেটা নিজে পরিষ্কার না বোঝে। তখন অনেক কথা বলতে হয়।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

গল্প লেখকের অনেক জ্বালা। সবচেয়ে বড় জ্বালা দেখা দেয় যদি যে বিষয় নিয়ে সে গল্প লিখতে চায়, সেটা নিজে পরিষ্কার না বোঝে।

কাজি মামুন ভাই। আপনি যেহেতু গল্পে গল্পে মেসেজ তৈরির চেষ্টা করেন, হিমু ভাইয়ের পরামর্শগুলো আমার মনে হয় আপনার বিবেচনা করা চলে। গল্পের ব্যর্থতা ঘটে পাঠকের মনজয় করতে না পারলে। মেসেজের ব্যর্থতা ঘটে স্পষ্টতা না থাকলে। গাল্পনিক মেসেজের বিপর্যয় ঘটে যখন মনজয় করতে পারে না এমন গল্পে অস্পষ্ট মেসেজ থাকে। আপনি একটি নব্য জাতিসত্তার বয়ান বিনির্মাণ করছেন, মানবেন। সেটার বিপদ, সেটার অস্পষ্টতার বিপদ সম্পর্কে অবগত থাকাটা দরকার। গল্পে মেসেজ দিতে চাইলে আগে মেসেজটাকে স্পষ্ট করে নিজের মাঝে দাঁড় করান। এর ত্রুটি সমস্যাগুলো নির্ধারণ করুন। পাকাপোক্ত করুন। অন্যকে উপস্থাপন যেহেতু করতে চাচ্ছেন, নিশ্চিত করুন যে পাঠক যখন মেসেজটা পাবেন, থ মেরে কিছুক্ষণ বসে থাকবেন, এর স্পষ্টতা, অভিনবত্ব ও গ্রহণযোগ্যতার গুণে। আপনি হয়তো ভাবছেন, পাঠককে একটা অর্ধেক মেসেজওয়ালা গল্প ধরিয়ে দিলে সে বাকিটা কল্পনায় কল্পনায় নিজের মতো গেঁথে নিবে। কিন্তু সে কিন্তু অতৃপ্তিতে বিরক্ত হয়ে আপনার এহেন পীড়াপ্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান হয়ে আপনার মাথাখানিই ভাঙতে আসবে! খাইছে

হাম্মাদ আলি এর ছবি

গল্পের খাতিরে ইতিহাস কে পরিমার্জন করা কেমন যেন জামা ছোট বলে গায়ের মাংস কাটার মত মনে হলো!

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

আমার গল্প ব্যর্থ হয়েছে মানি; আমার গল্প দুর্বলতায় পরিপূর্ণ, তাও স্বীকার করে নিচ্ছি; কিন্তু আমি ইতিহাসকে পরিমার্জনা করেছি, সেটা কিছুতেই মানতে পারছি না। ইতিহাস পরিমার্জনের জন্য অনেক বড় দক্ষতা লাগে; কর্নেল ওলি বা মীর শওকতেরা যেভাবে ড্রামতত্ত্ব হাজির করেন স্বাধীনতার ঘোষনার ব্যাপারে, অত জ্ঞান বা দক্ষতা আমার নেই।
ভাইয়া, আমি কোথায় ইতিহাস পরিমার্জনা করেছি, তার একটা সিঙ্গেল উদাহরণ শুধু চাইছি আপনার কাছে! দেখিয়ে দিলে, করজোরে ক্ষমা ভিক্ষা করব সবার কাছে! একুশের রাতে এত বড় অপবাদ সত্যি অসহনীয় ঠেকছে! মন খারাপ মন খারাপ মন খারাপ

চরম উদাস এর ছবি

ভালো লাগেনি লেখাটা মামুন ভাই। ৭১ এর সাথে টিপাইমুখ !

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

৭১ এর সাথে টিপাইমুখ !

৭১ এর সাথে টিপাইমুখ কি কোনভাবে তুলনীয় হতে পারে? ৭১ এ বাঙালি হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছে, যদিও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সুদূর পরাহত এখন পর্যন্ত। কিন্তু ৭১ পরবর্তী নতুন প্রজন্মের এই সময়ের একটি কিশোর ছেলের জাতিয়াতাবোধ ও দেশাত্মবোধকে যখন ক্রমাগত খুঁচিয়ে দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে, তখন টিপাইমুখের মত জাতিয় ইস্যু তার ভিতর স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জাতিয়তাবয়াদের পূর্ণবিকাশ ঘটাতে পারে, সেই কথাটিই তুলে এনেছি এই লেখায়।
৭১ আর টিপাইমুখ এক, তাদের গুরুত্ব এক, সে কথা কোথাও বলিনি; কিন্তু ভাইয়া এটা কি অস্বীকার করতে পারবেন, আমাদের যেকোন জাতিয় আন্দোলনে আমরা ৭১ এর কথা টানি; ৯০ এর গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে আমরা ৭১ এর কথা বলিনি? এখন যদি টিপাইমুখ আন্দোলনের ক্ষেত্রেও ৭১ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে চাই, তাকে দোষের চোখে দেখবেন?

অনিন্দ্য সৈকত এর ছবি

"৯০ এর গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে আমরা ৭১ এর কথা বলিনি? " না, বলিনি। আপনার উত্তর পড়ে মনে হল ৯০ এর গণআন্দোলন নিয়েও আপনার জ্ঞান বিশেষ গভীর না। আপনি বেশ স্পষ্ট করেই ৭১ এর সাথে টিপাইমুখের তুলনা করেছেন এবং এখন পিছলাচ্ছেন। আপনার লেখা আগেও পড়েছি। যথেষ্ট বিশেষ শ্রেণীর গন্ধ পাওয়া যায় এবং গন্ধটা মোটেও সুখকর নয়। তো কাজী সাহেব, আগে ৭১ এর মুক্তিযু্দ্ধ নিয়ে পড়াশুনা করুন। সেটার স্পিরিট ও কার্যকারণ বুঝুন। তারপর নাহয় গল্প লেখার চেষ্টা করবেন।

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

"৯০ এর গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে আমরা ৭১ এর কথা বলিনি? " না, বলিনি।

আপনার পর্যবেক্ষণ ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু আমি বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনের মিটিংয়ে শরীক হয়ে দেখেছি আমাদের নেতারা (স্বাধীনতার স্বপক্ষের) ৭১ এর চেতনায় সবাইকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছে।

আপনার লেখা আগেও পড়েছি। যথেষ্ট বিশেষ শ্রেণীর গন্ধ পাওয়া যায় এবং গন্ধটা মোটেও সুখকর নয়।

কিসের গন্ধ? জামাতি? পড়ুন আমার সচলে প্রকাশিত আমার এই গল্পটি, যেখানে জঙ্গিবাদী মোল্লাদের স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা করেছি। তো আপনি কি গন্ধ পেলেন, জানাবেন দয়া করে? আরেকটি গল্পে আমি কথায় ভারতীয় জুজুর ভয় যারা দেখায়, তাদের তুলে ধরেছি।
দেখুন আমি আমার দেখা এক কিশোরের টানাপড়েন বা দ্বন্দ্বের ছবি আঁকতে চেয়েছি, যাকে সমাজ ক্রমাগত খোঁচায় বাঙ্গালি পরিচয় বা মুসলমানি পরিচয়ের সূত্র ধরে। এখানে আমি তো কোন মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে আসিনি; সমাজের দেখা একটি চরিত্র তুলে ধরেছি কেবল। কোন লেখক যদি সন্ত্রাসীদের জীবন নিয়ে লেখে বা তাদের চরিত্র তুলে ধরে, আপনি তাদের সন্ত্রাসী বলবেন।

কালো কাক এর ছবি

আপনি বারবার পুরনো লেখার লিঙ্ক ধরিয়ে দিচ্ছেন কেন? আপনার পুরনো লেখাগুলো আগেই পড়েছে বারবার বলছে সবাই। জঙ্গীবাদ আর জামাতিবাদ এক জিনিস না। আপনি সবকিছু নিয়েই কনফিউজড মনে হচ্ছে। না বুঝতে পারছেন '৭১ , না '৫২ , না '৯০ , না জঙ্গীবাদ , না সীমান্তসমস্যা; কোনটা সম্পর্কেই আপনার কন্সেপ্ট পরিষ্কার না। আপনার লেখার সমীকরণগুলো ছাগু ও ছাগুমনাদের মধ্যেই দেখা যায়। নিজে যদি এসব না হয়ে থাকেন তাহলে ভালমত জেনেবুঝে গল্প লিখুন। ধন্যবাদ।

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

জঙ্গিবাদ আর জামাতিবাদ এক জিনিস না।

জামাত নিয়ে আপনার এই বিশ্বাসের উৎস কি? ৭১, ৫২, ৯০, জঙ্গিবাদ, সীমান্ত-সমস্যা নিয়ে আপনার আকাশ-ছোঁয়া জ্ঞান? একটু পড়াশুনা করুন; শুধু জামাত নয়, অন্য আরও অনেক ইসলামি দলের সাথে জঙ্গিবাদের নিবিঢ় সম্পর্ক খুঁজে বের করতে বেশী সময় লাগবে না। কেন ভুলে গেছেন, জামাতের মন্ত্রীরা বাংলা ভাইয়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিল? জামাত ও অন্য অনেক ইসলামী দল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জঙ্গিবাদকে মদদ দিয়ে থাকে । আব্দুল গাফফার চৌধুরীসহ আরও অনেকে লিখেছেন এ নিয়ে। আপনি যেভাবে জামাতের হয়ে সাফাই গাইলেন, তাতে আপনাকে নিয়েই বরং আমার সন্দেহ হচ্ছে!

কালো কাক এর ছবি

পড়া শুরু করেই বুঝে গেলাম লেখক কে। তারপর ঝুপ করে নিচে নেমে লেখকের নাম মিলিয়ে নিলাম। ঘটনা হলো এই স্টাইলটা বেশ পরিচিত। " আমাদের পরিবার ১৯৭১ হৃদয়ে লালন করে। " এই লাইনটা আরো বেশি পরিচিত।

সাই দ এর ছবি

"ল্যাঞ্জা ইজ আ টাফ থিঙ টু হাইড"

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

"ল্যাঞ্জা ইজ আ টাফ থিঙ টু হাইড"

সমালোচনার কারন না দেখিয়ে দিয়ে এক লাইনে মন্তব্য করে আপনিই বরং নিজেকে হাইড করছেন! এই গল্পে আমার নিজের চোখে দেখা জাতীয়তাবোধের টানাপোড়েনে ভোগা এক বাংলাদেশি কিশোরের অনুভূতি তুলে ধরা হয়েছে। অনেকে আপত্তি করেছেন অনেক বিষয়ে এবং আমি আমার ব্যাখ্যা দিয়েছি; আপনার আপত্তির কারন না বলে যা তা মন্তব্য করেই বাহাদুর হওয়া যায় না। আমি জামাতপন্থি না; সচলে প্রকাশিত আমার ''ইয়াতিম-মিসকিন'' গল্পটি পড়ুন। ওখানে মোল্লাদের/জংগিদের স্বরূপ উন্মোচন করেছি। তো ঐ গল্পের উপর একটা কমেন্ট দিন না!

সাই দ এর ছবি

আমি লুকাবো কেন। আমার নাম তো দেয়া আছে সাইদ। সাইদ নামে একজন সচল থাকাতে আমি সাই দ লেখি।
আপনার লিখাটি ভালভাবেই পড়েছি। আপনার লেখা পড়ে মনে হল আপনি নিজেই এই জাতীয়তাবোধের টানাপোড়েনে ভুগছেন। আর এটা ঢাকতেই আপনি উদয় হাসানের আবির্ভাব ঘটিয়েছেন।
উপরে কালো কাক, মন মাঝি এবং অনিন্দ্য সৈকত আমার মনে উদয় হওয়া প্রশ্নগুলি করেছেন। আমি যদি সেগুলি আবার লিখি বা বলি তা চর্বিত চর্বণ হবে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

আপনার লেখা পড়ছি কিছুদিন ধরে। আমি বিশ্বাস করি না, আপ্নি লেঞ্জাওয়ালা। বরং আমার মনে হয়েছে আপনি ব্যাপক কনফিউজড।

সহজ ভাষায় বলি, ৭১ মানে ৭১। এর সাথে কোনকিছুর তুলনা চলে না। এখন আম্রিকা এসে বোমা মেরে ৩০ লাখ লোক মেরে ফেল্লেও সেটা একাত্তর হবে না। দুইটা ভিন্ন ব্যাপার। যারা বলছেন বা ডাক দিচ্ছেন- এইবার ভারতের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ, তারা পিওর পিওর পাকিস্তানি প্রোডাক্ট। এটা কনফিউশনের কিছু নেই। পিরিয়ড। মুক্তিযুদ্ধ আমার কাছে কোরআন শরীফ-বেদ-বাইবেল। এর উপর কিছু নাই!

ভারতের সাথে আমাদের যেটা চলছে সেটা একটা রাষ্ট্রের নাগরিকদের সাথে অন্য একটা রাষ্ট্রের অন্যায়-অবিচার। এটা অন্য আঙ্গিকে দেখতে হবে। এর প্রতিবাদ হবে- প্রতিরোধের চেষ্টা করতে হবে। এটাকে যেভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে। সেটা সীমান্তে গিয়ে ভারতীয় নিরপরাধ নাগরিক হত্যা করে করা যাবে না। এটার গুরুত্ব ভিন্ন, অন্যকিছুর সাথে তুলনা করে একে ছোট করার মানে নাই-

এই কনফিউশন দূর করুন। নাহলে কনফিউশন থেকে লেজ গজাবে। এবং সেই লেজ ও লেজের অধিকারীর জন্য সচল হাবিয়া দোজখ-মহা রৌরব নরক।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

তাপস শর্মা এর ছবি

সহমত।

মামুন ভাইকে আমারও তেমন লোক মনে হয়নি। আসলে উনি বলতে চান একটা হয়ে যায় আরেকটা। এবং তা হয় কিছু কনফিউশনের দরুন। আশা করি তিনি তা কাটিয়ে উঠবেন।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

চলুক

কুমার [অতিথি] এর ছবি

গল্প ভাল লাগেনি। গল্পের উদয় হাসান সময় বড় বেশী নিয়ে ফেলেছে।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনি গল্পটায় একটা মেসেজ দিতে চেয়েছিলেন। মেসেজের সারমর্ম হলো ৭১ এর চেতনায় বর্তমান ভারতীয় বর্বরতার প্রতিবাদ করা। এই ছোট্ট মেসেজ দিতে গল্পটা অনেক বড় করে ফেলেছেন। আর মেসেজের সবচেয়ে বড় ভুল হলো একাত্তরের বর্বরতার সাথে অন্য বর্বরতার তুলনা করা। আপনি যদি একাত্তরের সঠিক চেতনা ধারণ করতে পারতেন এই তুলনাটা আসতো না।

এই রকম সুক্ষ্ণ সমীকরণে ব্লগের ছাগুরা সিদ্ধহস্ত। আশা করবো আপনি সেই দলের কেউ না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

আশা করবো আপনি সেই দলের কেউ না।

সেই দলের হলে সচল বা মুক্তমনায় আসতাম না। আমাকে আমার পরিচিতজনেরা চেনে প্রবল মোল্লাবিরোধী হিসাবেই।
তারপরও সচলে প্রকাশিত আমার 'ইয়াতিম-মিসকিন' গল্পটি দেখতে পারেন, যেখানে মোল্লা/জঙ্গিদের স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা করেছি। এছাড়া দেখতে পারেন সচলে প্রকাশিত আমার 'ষড়যন্ত্র! ষড়যন্ত্র!' গল্পটি, যেখানে কথায় কথায় ভারতীয় জুজু দেখানোর প্রবনতা তুলে ধরেছি।
আশা করি, লিংকপ্রদত্ত লেখা দুটির দিকে তাকালে, আমাকে চিনতে আর অসুবিধা হবে না, ভাইয়া।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের মানুষ। ৭১ এর মার্চে আমি ঢাকায় ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমি রমনা রেসকোর্সে উপস্থিত থেকে স্বকর্ণে শুনেছি। যাহোক, যে বিষয়টি বলতে চাইছি, সে সময়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অল্প কিছুদিন তদানিন্তন সরকারের প্রতি অসহযোগিতা করা হয়েছিল বটে তবে সেটা গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের মত নয়। বঙ্গবন্ধু সরকারি চাকুরেদের অফিস-আদালত বর্জনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, মাস শেষে বেতন নিয়ে আসতে বলেছিলেন। তাঁর নির্দেশ সঠিকভাবে পালিতও হয়েছিলো। সেটাকে আপনারা 'অসহযোগ আন্দোলন' হিসাবে আখ্যায়িত করবেন কীনা সেটা আপনারা ভেবে দেখবেন। তবে কাজি মামুনের জানাটা একেবারে মিথ্যা নয়।
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, এ জাতির অনেক সংকল্পের, অনেক ত্যাগের, অনেক প্রাপ্তির ইতিহাস। তার সাথে একটি অনাগত কল্পিত আন্দোলনকে এক করে দেখার কোন সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের সাথে আমাদের অনেক ত্যাগ, অনেক আবেগ, অনেক গর্ব মিশে আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু লিখতে হলে, সেই চেতনাকে তার আবেগকে হৃদয়ে ধারন করা চাই।

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, এ জাতির অনেক সংকল্পের, অনেক ত্যাগের, অনেক প্রাপ্তির ইতিহাস। তার সাথে একটি অনাগত কল্পিত আন্দোলনকে এক করে দেখার কোন সুযোগ নেই।

ভাইয়া, আমি এক করে দেখিনি। আমি এখানে অনেকবার বলেছি, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায়, আমাদের সবচেয়ে বড় অহংকার; এর সাথে কোন কিছুর তুলনা হতে পারে না। তবে যেকোন অধিকার আদায়ের জাতীয় আন্দোলনে (হোক তা দেশের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বা ধ্বংসাত্মক বাঁধ দেয়ার প্রতিবাদে বাইরের দেশের বিরুদ্ধে) আমরা একাত্তরের শৌর্য-বিরত্ব-সাহস থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারি; আমার গল্পের উদয় হাসান একটা কিশোর ছিল; যার জাতীয়তাবাদের চেতনা দুর্বল হতে ইন্ধন জুগিয়েছিল সমাজের চরমপন্থীরা (জসনে জুলুসের মিছিলে যেতে চাইলে তাকে বলা হয় 'মোল্লা' এবং বসন্ত উৎসবে যেতে চাইলে তাকে বলা হয় ''হিন্দু''); তো এই উদয় হাসানের অন্তরে জাতীয়তাবোধ প্রবলভাবে জেগে উঠে যখন বাঁধের কারণে তার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল মরুভূমিতে পরিনত হয় ও কোটি কোটি মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে (কল্পিত)। সে ১৯৭১ এর বীরদের মত অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নামে।
ভাইয়া, আমাদের জাতীয়তাবোধ কিন্তু এভাবেই সময়ে সময়ে শক্তিশালী হয়ে উঠে। জিন্নাহর বাংলা-ভাষা বিরোধী অবস্থান আমাদের ভিতর থেকে পাকিস্তানের ভুত তাড়িয়ে দিতে শুরু করে এবং ধর্মের মোহ ছেড়ে আমরা বাঙালি জাতীয়তাবোধে ক্রমাগত উদ্দ্বুদ্ধ হতে থাকি, যার চুড়ান্ত ফসল ঘরে তুলি ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে।
আমি ধর্মব্যবসায়ীদের ঘৃণা করি। আমি মোল্লা/জঙ্গিদের মুখোশ উন্মোচন করার চেষ্টা করেছি সচলে প্রকাশিত আমার ''ইয়াতিম-মিসকিন'' গল্পে। আশা করি, আমাকে ভুল বুঝবেন না।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

না, ভুল আমি আপনাকে বুঝিনি। যতটুকু বুঝেছি, আপনি এই লেখাটিতে বর্তমান প্রজন্মের মনোজগতের একটি দ্বন্দ্বকে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। হাঁ, যে যাই বলুক এটা বর্তমান সময়ের একটা বাস্তবতাও বটে। বিগত বছরগুলোতে রাজনীতিকেরা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। আর আমি এটাও বিশ্বাস করি আপনি হৃদয়ে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেন। ভুল হয়েছে, লেখাটিতে মুক্তিযুদ্ধকে উপমা হিসাবে ব্যবহার করাতে।
ভাল থাকুন। লিখতে থাকুন।

সজল এর ছবি

যে কোন জাতীয় ইস্যুর সাথে একাত্তরের অবলীলায় তুলনাটা কিন্তু শুধু এই গল্পলেখকের সমস্যা না। বরং এটা উদ্বেগজনকভাবে অনেকের মাঝে দেখতে পাই। বিডিয়ার বিদ্রোহ/হত্যাকান্ডের তীব্রতা নাকি ৭১এর চেয়ে অনেক বেশী এমন কথা বলতে শুনেছি আমার এক সাবেক বন্ধুকে। বর্ডারের হত্যা, টিপাইমুখ, সরকারের রাজনৈতিক নিপীড়ন এমন কোন ইস্যু নেই যাকে ৭১ এর সমতুল্য করে তুলা হয় না।
এর কারণ কী? মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপারটাই কয়েক প্রজন্মের মাঝে ঠিকমত ছড়ায়নি নাকি রাজাকারদের প্রপাগান্ডার ক্রমাগত শিকার হয়ে মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপারটাই নতুনদের মাঝে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে!

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ফাহিম হাসান এর ছবি
  • মুক্তিযুদ্ধ ≠ টিপাইমুখ আন্দোলন
  • মুক্তিযুদ্ধ ≠ সীমান্তের সংঘাত
  • মুক্তিযুদ্ধ ≠ অসহযোগ আন্দোলন

কথা এখানেই শেষ।
গল্পের ছলে, কবিতার ছন্দে, প্রেরণার ডিসকোর্সে এই সমীকরণের নড়চড় হবে না।

কাজি মামুন এর ছবি

ফাহিম ভাই,
আমি আপনার দেয়া সমীকরণগুলোর একটাও অস্বীকার করিনা; বরং মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আপনার আগের এক মন্তব্যে আপনাকে সহানুভূতিশীল হিসাবে পেয়েছিলাম; সেই সহানুভূতির দাবী নিয়েই বলছি, অনেক 'কান নিয়েছে চিল' এর মত আমার লেখা না পড়ে অন্যদের মন্তব্যে প্রভাবিত হয়ে আমাকে ভুল বুঝছে। মুক্তিযুদ্ধ কখনই অসহযোগ আন্দোলন নয়; অসহযোগ আন্দোলন বরং মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে সংঘটিত হয়, যা আমাদের গৌরবের আরেকটি পালক এবং ব্রড সেন্সে মুক্তিযুদ্ধের একটা অংশ। সব ইতিহাস বইতেই অসহযোগের কথা লেখা আছে। আর টিপাইমুখের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যদি মুক্তিযুদ্ধের হার না মানা বা আপোষহীনতা থেকে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা বলি, তা হলে কি এটা বলা হল যে, আমি মুক্তিযুদ্ধ ও টিপাইমুখ সমান? একুশের একটা ব্যানার দেখলাম যেখানে বলা হয়েছে, একুশ মানে মাথা নত না করা। পাঠ্যবইতে ছেলেবেলায় বীরশ্রেষ্ঠদের কাহিনীর শেষে বলা হত যে, আমাদের আত্মত্যাগের শিক্ষা নিতে হবে। এখন এ কথার অর্থ কি, বীরশ্রেষ্ঠদের অপমান করা হয়েছে?
আমার লেখার অনেক ত্রুটি থাকতে পারে; সেজন্য যেকোনো কড়া সমালোচনা মাথা পেতে নিতে আপত্তি নেই। কিন্তু আমাকে যদি মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়, তাহলে খুব কষ্ট হয়।
উদয় হাসানের মত বাঙ্গালিত্ব ও মুসলমানিত্বের দ্বন্দ্বে ভোগা কিশোর কি নেই বাংলাদেশে, যাদের চরমপন্থিরা ক্রমাগত খুঁচাতে থাকে। দেখুন, উদয় হাসান তো খারাপ ছিল না। সে বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তার বড় চাচা তাকে কি শোনাল? সে নবীর জন্মদিনের মিছিলে শরীক হতে চাইলে, তার মা তাকে বলল মোল্লা। আমি আমার লেখায় এই দ্বন্দ্ব তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। সমাজের দ্বন্দ্বই তো লেখায় তুলে ধরা হয়; ভুল বললাম ভাইয়া?

সুদীপ এর ছবি

ভালো লাগল লেখাটি।

কাজি মামুন এর ছবি

গল্পের গাঁথুনি দুর্বল ছিল; যে দ্বন্দ্ব তুলে ধরতে চেয়েছিলাম, তা ভালমত ফুটে উঠেনি। কিন্তু ভাল লাগছে এই ভেবে যে, আপনি অন্তত আমাকে স্বাধীনতা বিরোধীচক্র ঠাওরাননি। সারা জীবন আমি আমার বন্ধুবান্ধবদের সাথে তুমুল বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি স্বাধীনতা বিরোধীদের বিভিন্ন হাস্যকর জবাব দিতে গিয়ে।সচলেও একটি লিস্ট করা হয়েছিল, যেখানে ধর্মান্ধ/মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিভিন্ন হাস্যকর যুক্তির বর্ণনা করা হয়েছিল; আমিও ওখানে মন্তব্য করেছিলাম। কিন্তু এই লেখায় চেনাজানা এক কিশোরের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের ছবি আঁকতে যেয়ে নিজেই ছাগল বনে গেছি। আমাকে মোল্লাদের কৌশলী এজেন্ট বানিয়ে ফেলা হয়েছে প্রকারান্তরে। আমি বারবার বলেছি, আমি মৌলবাদী নই। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। কারো সন্দেহ দূর হয়নি। সবাই ধরে নিয়েছে আমি ঘাপটি মারা মৌলবাদী/ভারত বিদ্বেষী যে কিনা কৌশলে সচলের প্রগতিশীল পাঠকদের ভুল বার্তা দিয়ে প্রভাবিত করতে চাইছে। অথচ আমি নিতান্তই সাধারণ একজন মানুষ। কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংস্রব নেই। প্রগতিশীল লেখা ভাল লাগে বলেই মুক্তমনা, সচলে ঢুকি। জানতে-বুঝতে। মনে প্রশ্ন এলে করে ফেলি। আর দ্বন্দ্ব দেখতে পেলে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করি। এই লেখার উদ্দেশ্য ছিল, দ্বন্দ্বগুলো নিয়ে সচলের পাঠকদের আলোচনা/অনুভূতি/মতামত থেকে শিক্ষা নেয়া। যাহোক, ভাল থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।