গ্রামের একটি ভোর
গতকাল রাত থেকেই ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ এত সাদা, মনে হচ্ছে সব মেঘ পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়েছে, তবু বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ নেই। বৃষ্টিধোয়া গাছের পাতাগুলো এমন ঝলমলে সবুজ রং ধরেছে যেন ক্যানভাসে আঁকা ছবি। দিনের কাজে বের হওয়া মানুষগুলো এদিক-ওদিক জমে থাকা পানি বাঁচিয়ে হেটে চলেছে। একটা বড় গাছের নিচে একটা কুকুর গুটিসুটি মেরে পড়ে আছে। অদুরেই একটা বাড়ির জানালা দিয়ে একটি কিশোর একদৃষ্টে বাইরে চেয়ে আছে। হুহু বাতাসে চুল এলোমেলো, থেকে থেকে বৃষ্টির ছিটে মুখে এসে পড়ছে, কিন্তু তাতে এই কিশোরের চেহারায় বিরক্তির লেশমাত্র নেই। তার বরং আফসোস, এমন বৃষ্টির মধ্যে একটু মাঠে ছুটোছুটি করতে পারলে বেশ হতো! কিন্তু সেই আশা করে বিশেষ লাভ নেই। এই বর্ষায় বের হতে দিবেন না বলে মা আজ স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত মাফ করে দিয়েছেন, কাজেই মাঠে নামার তো প্রশ্নই ওঠেনা। ছেলেটি আস্তে করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। একবার খালি বড় হতে পারলেই হলো, বাইরে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে এতো নিয়ম-কানুন আর মানতে হবেনা!
শেষ দুপুরের ঢাকা শহর
নীলক্ষেতের রাস্তা ধরে অলস পায়ে হেঁটে চলেছে এক যুবক। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, ছেলেটির শার্ট ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে, কিন্তু ছেলেটি এইসব কিছুই গা করছেনা। তবে ডানহাতে ধরা পলিথিনের ব্যাগে বইটা যেনো ভিজে না যায় সেইদিকে তার নজর ঠিকই আছে। মনটা একটু খচখচ করছে। অনেক পড়া বাকি, তাড়াতাড়ি হলে ফিরে পড়তে বসা উচিত। কিন্তু কেন যেনো কিছুতেই মন চাইছেনা একটা রিকশা ডাকতে। জীবনের সবকিছুই তো এই শহর নামের যন্ত্রের হাতে সঁপে দেওয়া। শৈশবের গ্রামের টুকরো কিছু স্মৃতি ছাড়া আর তো কিছুই আজ বাকি নেই। এই বৃষ্টিটা সে ছাড়তে রাজি নয়। এই বৃষ্টিটা এই শহরের না। এই তুমুল বর্ষা তার গ্রাম থেকে পাঠানো। এ তার গ্রামের মেঘের পাঠানো চিঠি, তাকে মনে করিয়ে দিতে যে যত দুরেই যাক, যত দিনই লাগুক, সে যেনো একদিন নিজের ছোট্ট গ্রামে ফিরে যায়। সেই গ্রামে আছে তার ছোট্ট ঘর, জানালার ধারে তার বিছানা, পুকুরপাড়ে বসে কাটানো অনেকগুলি বিকাল। ধ্যাত, চোখদুটো এতো ভিজলো কি করে? আকাশের সব মেঘ কি ছাই তার চোখে এসে জমলো নাকি?
সুদুর প্রবাসে একটি সন্ধ্যা
ফুটপাথ ধরে একদল যুবক নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে হেঁটে চলেছে। প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ে চলেছে। ঢাউস জ্যাকেট, কানঢাকা টুপি, দস্তানা সব মিলিয়েও শীত যেনো বাঁধ মানছেনা।
"এই শালার বৃষ্টি কি আর থামবেনা?" একজন মুখ ফুটে কথাটা বলতে না বলতেই আর সবাই হইহই করে সায় দিয়ে উঠলো। "বিচ্ছিরি একটা অবস্থা!" "এই ঠান্ডায় বাসের জন্য দাঁড়াতে অসহ্য লাগেনা?" "দশদিন তো হইলো, আর কত?" এমন একরাশ কথার মাঝে কারোটাই আর আলাদা করে শোনার উপায় থাকেনা। কেবল একজন একটাও কথা না বলে সবার সাথে পা মিলিয়ে হেঁটে চললো। শরীর সবার সাথে একতালে চললেও তার মন এখানে নয়, দূর অতীতে, কলেজ জীবনের সেই অলিগলিতে। কতবারই না সেইসব রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হেঁটে গেছে। অবাকই লাগে, তখন বৃষ্টি কি ভালই না লাগতো! আহারে, কবে যে বাড়ি ফিরতে পারবে! কবে যে ফিরবে সেই গলিপথগুলিতে! কেউ কি বুঝবে সেই কাদামাখা পথগুলোর জন্য ওর কতো মায়া? বুঝবে যে সেই গলিগুলির প্রতিটা মোড়ে ও যেনো নিজের মাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে?
বর্তমান ঢাকা শহরের একটি এলাকা
মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক ব্যালকনিতে বসে বাইরে রাস্তার দিকে চেয়ে আছেন। রাস্তাঘাট খালি বললেই চলে, যেমনটা থাকে ঈদের ছুটি বা হরতালের দিনগুলোতে। পত্রিকার ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় "দুইদিনের টানা বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত"। বেশিরভাগ রাস্তা ময়লা পানিতে ডুবে আছে। জীবিকার জন্য নিতান্ত প্রয়োজন না হলে এমন দিনে কেউ বের হতে চায়না। আজকালকার বাচ্চারাও মনে হয় বৃষ্টিতে হইচই করতে তেমন পছন্দ করেনা। কেউ রাস্তায় পানি ছিটাচ্ছে না, কাদায় গড়াগড়ি করছেনা। কিছু বাচ্চা হয়তো ঘরে বসে হোমওয়ার্ক করছে, আর অন্যরা টেলিভিশন বা ভিডিও গেম নিয়ে ব্যস্ত।
ভদ্রলোক আলতো করে চেয়ারে হেলান দিতেই দমকা হাওয়ায় সামনের টেবিল থেকে পত্রিকাটা উড়ে গিয়ে এক কোণে পড়লো। জলাবদ্ধ রাস্তা, দুর্ভোগগ্রস্ত পথচারী, পানিতে ভেসে চলা আবর্জনা সবকিছু উপেক্ষা করে তিনি চোখ বুজলেন। বাতাসে বৃষ্টির ছাঁট মুখে এসে পড়ছে, সেই ছেলেবেলার মতো। ভদ্রলোক শৈশবের গ্রামের সেই দিনগুলোর কথা মনে করার চেষ্টা করতে লাগলেন। সেই কতদিন আগের কথা! তখন বৃষ্টি দেখতে কি অদ্ভূত এক আনন্দ লাগতো! কোথায় চলে গেল সেই দিনগুলো? কোথায় গেছে তার সেই ছোট্ট ঘরের জানালা?
হাম্মাদ আলি
eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%68%61%6d%6d%61%64%32%30%39%39%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%22%3e%68%61%6d%6d%61%64%32%30%39%39%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))
মন্তব্য
এখানে আপনার প্রথম লেখা?
মন্দ না
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
প্রথম বললেই চলে। এর আগে ছাড়াছাড়া ভাবে দুই একটা লেখা লিখেছি
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
অনেক ধন্যবাদ!
খুব ভালো লাগল হাম্মাদ। প্রতিটা দৃশ্যকল্প মনে হলো একদম চোখের সামনে দেখতে পেলাম এবং সেই দৃশ্যগুলোতে একজন হাম্মাদ বা রাজিবকে খুঁজে পেতেও কোনো সমস্যা হলো না!
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
খুব ভালো লাগলো রাজিব ভাই। নিজের লেখা ভালো হয়েছে শুনতে এমনিতেই ভালো লাগে, তার উপর যদি অগ্রজপ্রতিম একজন বলেন তখন সেই অনুভূতিটাই আলাদা
সুন্দরররররররর!!!!!!
অতীত
সুন্দরররররররর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধনবাদ!
সচলে স্বাগতম। কোমর বেঁধে লিখতে থাকুন। গল্প ভাল লাগল।
ধন্যবাদ!
স্বাগতম।
চমৎকার। আরো লিখুন।
..................................................................
#Banshibir.
ধন্যবাদ! চেস্টা করে যাব
ভালো লাগল।
ধন্যবাদ
রিটার্ন টু দ্য ইনোসেন্স!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ
গল্পের প্লটটি অতি চমৎকার।
নিজে আমি বৃষ্টি পাগল মানুষ। এই কারনেই লেখার প্রতিটি বর্ণনা যেন ক্যানভাসে ভেসে আসলো মনের। সুন্দর লেখা
নতুন মন্তব্য করুন