পাঠদান কর্মসূচী : বইমেলা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০২/২০১২ - ১০:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মামাতো ভাই মফস্বল থেকে ঢাকা শহরে এসে কিছুদিন উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেরালো, তারপরই আমার অবৈতনিক পাঠশালাতে ভর্তি হয়ে গেলো। আসুন মনে করি ভাইয়ের নাম, পরিষ্কার। অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার হলো নামের সঙ্গে তার কাজের, অকাজের কোন মিল নেই। নিজের একমাত্র ছাত্রের এরকম লেজেগোবরে অবস্থা দেখে আমি আর দেরি না করে বইমেলার উদ্দেশে রওনা দিলাম।
উদ্দেশ্যঃ পাঠদান কর্মসূচীর জমজমাট উদ্বোধন।

অধ্যায় ১: সম্মতিপত্র আদায়
আমি এবং পরিষ্কার – দুজনেই বাসার অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক শ্রেণীভুক্ত (যদিও সরকারি হিসেবে দুইজনের ই বিয়ের বয়স হয়ে গেছে)। যেকোনো জায়গাতে যাওয়ার আগে প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো গেজেটেড নাগরিকের অনুমতি দরকার হয়। কোন এক বিচিত্র কারনে বেচারা পরিষ্কারকে বাথরুম এ গেলেও অনুমতি নিতে হয়। তাই আমি প্রথমেই শিখালাম “অনুমতি নেয়ার ৩ টি সহজ উপায়”

o দাদী বড়ো ভাল মানুষ। তাই, দাদীকে দেখিয়ে ২ দিন নামায পড়ে ফেলবি। অনুমতি এমনিতেই মিলবে।
o ভালুবাসার বিশেষ দিনে বাড়িতে বন্দী হয়ে থাকবি। পরবর্তী বহুদিন পর্যন্ত বাসার গেজেটেড নাগরিকরা (দাদী, বাবা, মা, বড়দা, ছোট খালা) তোকে নেকনজরে দেখবে
o ভুলেও গেজেটেড নাগরিকদের সামনে মোবাইলে কথা বলবি না। তাঁদের সামনে মোবাইল চাপাচাপি করাও নিষেধ

প্রথম সূত্র পালন করে আমরা দুইজন বইমেলাতে যাওয়ার অনুমতি পেয়ে গেলাম। তাও আবার ২১ ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি।

শিক্ষামূলক সতর্কীকরণঃ বাপধন, অনুমতি চাইতে গিয়ে টাকাপয়সা চেয়ে ফেলনা। তাইলে কোনটাই পাবা না।

অধ্যায় ২: সিএনজি মামা
কমসময়ে, নিরাপদ এবং নিশ্চিত উপায়ে বইমেলা পৌঁছানোর জন্য সিএনজি মামা
ছাড়া গতি নাই। মামাকে রাজি করানোর সহজ উপায় – যে ভাড়া চায়, সেই ভাড়াতে রাজি হয়ে যাওয়া। এটা অবশ্য সুলভ উপায় নয়, কিন্তু সেইটা আমি কেন শিখাব? অবৈতনিক পাঠশালাতে সুলভ উপায়গুলো শেখানো হয় না। আমারো শিখতে বহু বছর আর বহু টাকা খরচ করতে হয়েছিলো।

শিক্ষামূলক সতর্কীকরণঃ মামার কাছে মামী সংক্রান্ত কোন আলাপ শুরু করোনা।

অধ্যায় ৩: প্রেম
শাহবাগ থেকে হাঁটা শুরু করলে বইমেলা পৌঁছানোর আগপর্যন্ত নানারকম সুন্দরীদের দেখা যায়। প্রেমে পরার আগে সুন্দরীর বাম-ডান, সাম্নে-পিছনে একটু খেয়াল করে নিও। বইমেলাতে সুন্দরীরা সাধারনত একজন সুন্দর/বান্দর নিয়ে আসে। সাবধানের মাইর নাই।
২১ ফেব্রুয়ারীর চেতনাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশিরভাগ সুন্দরীই সাদাকালো পোশাক পড়ে এসেছে। তাদের দেখে পরিষ্কার বিমর্ষ কণ্ঠে বলল – এরা সবাই কি বিবাহিত বিধবা? আমি মুচকি হেসে বললাম – শালা, পাঠশালার পাঠ তোমাকে দিয়েই হবে। এরকম অকাট মূর্খ ছাড়াতো পাঠদানে মজা নাই। তুমি দেখি পোশাকসংকেত বিষয়েও জানো না। পরিষ্কার আমার হাসি আমাকেই ফেরত দিয়ে বলল – ড্রেসকোড শব্দটা জানি তো। আশেপাশে সুন্দর, বান্দর কাওরেই না দেইখা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসটা জানবার চাইলাম। এইসব ড্রেসকোড মাইন্না না চললেও আমি বাঙালী।

শিক্ষামূলক সতর্কীকরণঃ সবজায়গাতে প্রেম বিষয়ক চিন্তাভাবনা করা ঠিক না। জগতে আরো অনেক ভাবনার বিষয় আছে।

অধ্যায় ৪: রং
বইমেলাতে রংতুলি নিয়ে অনেক ভাইয়া-আপু ঘুরে, তাদেরকে কাটায়-কুটায় মেলাতে ঢুকতে চাইলে অন্ধ-কালা হতে হবে। উনাদের ডাক শুনবে না, মুখের দিকে তাকাবে না, ভদ্রভাবে জোর কদমে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে – এইসব বলতে বলতে মেলার দিকে এগিয়ে চলেছি, হঠাৎ রং ভাইয়ার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম। আমি চোখকান বন্ধ করে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছি, আচমকা শুনি পরিষ্কার কাকে যেন হুমকি দিচ্ছে। পিছনে ফিরে দেখি রংবাজ ভাইয়াকে পরিষ্কার একদম পরিষ্কার গলায় বলছে – মামা আমার লগে টাল্টুবাজি কইরো না, আমি কোন হালার রং মাখি না। সুজা রাস্তা মাপ।

শিক্ষামূলক সতর্কীকরণঃ মাঝে মাঝে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা উচিত। একটু বুঝে-শুনে।

অধ্যায় ৫: বই
বইমেলাতে আর আশেপাশে অনেক কিছু পাওয়া যায়। বই পছন্দ না হলেও কোন ক্ষতি নেই। জুতা আছে, পাখা আছে, দাজ্জাল আছে – এইসব ও কেনা যায়। আর যেসব দোকানের সামনে ভিড় দেখবে, সেখানে ঢুঁ মারতে পারো। আহা, বলতে বলতে দেখি একেবারে মাছের বাজার এর সামনে চলে এসেছি। পরিষ্কার নাক একটু কুঁচকে বলল – কিয়ের কি, এইডা সেই অইন্নপ্রকাশ। তুমি গিয়া চিপার মইদ্ধে চাপা খাও, আমি বিশ্বসাহিত্য কেইন্দ্র টা চাইক্ষা আসি।

শিক্ষামূলক সতর্কীকরণঃ ভিড় দেখলেই মাছের বাজার ভেবে ভুল করা একটা চরম ভুল।

অধ্যায় ৬: ছবি
ছবি না তুললে বইমেলাতে আসার আসলে কোন প্রয়োজন নেই। এতো কষ্ট করে, একটা প্রোফাইল পিকচার যদি পাওয়া না যায় তাহলেতো সময়টাই নষ্ট। আমি কত সাহিত্য অনুরাগী এটাতো সবার জানতে হবে। আমি সবকিছুই বুঝাচ্ছি, কিন্তু আমার ছাত্র কিছুই বুঝতে চায় না। বললাম বইমেলার সামনের গেইট এ দাঁড়িয়ে একটু হাসো, কীসের কি। পরিষ্কার নিজের মুখটাকে আরও কালো করে শুধু সামনে যেতে চায়। খালি বই কিনতে চায়। কি আর করা। এই অধ্যায়ের পুরো পাঠদান মাঠে মারা গেলো।

শিক্ষামূলক সতর্কীকরণঃ ত্যাঁদড় ছোঁড়া পরিষ্কারকে নিয়ে কোন আশা নেই। আমার পাঠশালাটা মনে হয় তুলে দিতে হবে।

- বান্ধবী


মন্তব্য

আশফাক আহমেদ এর ছবি

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টলটা কোন দিকে? আমি খুঁজে পেলাম না মন খারাপ

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

guest_writer এর ছবি

ত্যাঁদড় ছোঁড়াদের আড্ডাতে আমাকে নিয়ে যায় না মন খারাপ
- বান্ধবী

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
guest_writer এর ছবি

দেঁতো হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

মজা হইসে হাসি

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

অন্যকেউ এর ছবি

শেষে আইসা খুবই মজা পাইলাম। হাসি

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

guest_writer এর ছবি

আপনিও পরিষ্কার এর মতো ত্যাঁদড় ছোঁড়া নাতো চিন্তিত
- বান্ধবী

ফাহিম হাসান এর ছবি

মজার

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি
- বান্ধবী

তারেক অণু এর ছবি
guest_writer এর ছবি

লইজ্জা লাগে
- বান্ধবী

তাপস শর্মা এর ছবি

ভালো লাগল। দেঁতো হাসি

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ দেঁতো হাসি
- বান্ধবী

তাপস শর্মা এর ছবি

আপনার নিক বান্ধবী !! গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

বান্ধবী এর ছবি

বান্ধবীদের আমি বড্ড ভালোবাসি লইজ্জা লাগে

পরিবর্তনশীল এর ছবি

মজা পাইলাম। হাসি

guest_writer এর ছবি

আমার পাঠশালা প্রায় উঠে যাচ্ছে, আর আপনি মজা পাচ্ছেন ইয়ে, মানে...
পড়ার জন্য ধন্যবাদ হাসি
- বান্ধবী

crys-tal এর ছবি

Good Job. Carry on.
লেখা ব্ন্ধ করবেন না।

বান্ধবী এর ছবি

ধন্যবাদ। অবশ্যই আরও লিখতে চেষ্টা করবো।
- বান্ধবী

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বেশ মজা লাগলো। হাসি

বান্ধবী এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।