ঠিক দুপুর দুটো সতেরো মিনিটে অফিস জুতোর ভেতরে পায়ের আঙ্গুল গুলো আচমকা নেচে উঠলো। মাথা ঘুরিয়ে চারপাশ পরীক্ষা করতে করতে আবার কন্ট্রোল+এফ৫ চেপে কম্পাইল করতে দিলাম। বড় বস দেখি খুব মন দিয়ে অবিশ্বাস্য গতিতে একটার পর একটা কলা খেয়ে যাচ্ছে। ছোটবস খুবই আন্তরিকতার সাথে আরেক টিমমেট কে রিটেইল বিজনেস লজিক বুঝাচ্ছে। পৃথিবীতে একমাত্র সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারদেরই মনে হয় আদার বেপারী হয়েও জাহাজের খবর রাখতে হয়। ওয়ালমার্ট তাদের গুদামে জিনিস বস্তায় করে রাখে না কোলে করে রাখে সেইটা না জানলে নাকি ঠিক মত কোডিং করা সম্ভব না। তিমি সাইজের এই ভিসুয়াল স্টুডিও প্রজেক্ট (কোম্পানির ওয়েবসাইটে লেখে বিজনেস ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম)কম্পাইল হতেও কমসে কম পাঁচ সেকেন্ড লাগে। সেই অবসরে আমি গলায় মিউট চেপে গান গাইতে গাইতে আঙ্গুল নেচে ওঠার রহস্য ভাবতে থাকি। ঝকঝকে আকাশের কারনে নাকি? এ এক আজব জিনিস। পৃথিবীর যেইখানেই যাও আকাশের রঙ এক। আকাশের রাজকীয় নীলের পাশে রামপুরার আধাখেচরা রঙ করা বাড়ি আর টরোন্টোর চকচকে স্কাইক্রেপার সমান বর্নহীন লাগে। নাহ, রঙ দেখার সময় নাই। আজ নতুন ভার্সন রিলিজের দিন। নিঃশব্দে শীস দিতে দিতে কোডিং এ ফিরে যাই আবার। ছোটবসের কন্ঠও মিলিয়ে যায় একসময়। শুধু খটাখট টাইপিং এর আওয়াজ দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়।
আরো অনেক অনেক ক্ষণ পরে টাইপিং এর শব্দ বন্ধ হয়। অফিস জুতো পা্ল্টে তুষার জুতো পরি। একে একে ওভারকোট, মাফলার, আর গ্লাভস। এরপর খাবারের ব্যাগ, পার্স হাতে নিয়ে সবাইকে গুড নাইট আর হ্যাভ আ নাইস উইকএন্ড বলতে বলতে অফিস থেকে বের হই।
বাস থেকে নেমে বাসা চার মিনিটের হাঁটা পথ। চালক কে অনেক শুভরাত্রি আর সপ্তাহান্তের শুভেচ্ছা জানিয়ে নেমে পরি। সরু অফিসজুতোর ভিতরে যে আঙ্গুলগুলো অকারনে নেচে যাচ্ছিল, তুষার জূতোয় বড় পরিসরে সেগুলো আর নড়ছেই না। পা টিপে টিপে হাঁটা ধরি। আঙ্গুল গুলো আরো অসার হয়ে যাচ্ছে। যেন জুতো চুঁইয়ে বরফগলা পানি ঢুকছে। আকশের দেখতে দেখতে হাঁটবো নাকি? এইদেশে শীতের রাতের আকাশ পুরো অন্ধকার হয় না; ফ্যাকাশে সাদা হয়ে থাকে। আজ অবশ্য কেমন যেন কালচে নীল বেনারসীর মত লাগছে। তারা গুলো রূপোর চুমকি হয়ে জ্বলছে। তবু কেন রিকশার হুড খুলে বখাটেদের ছুঁড়ে দেওয়া মন্তব্য উপেক্ষা করে তাকিয়ে থাকা আকাশের মত না?
কতদিন থাকলে একে নিজের শহর মনে হবে? এই শহরের আমি কেউ না, কিছু না। যেই শহরের আমি ছিলাম, আমার ছিল যে শহর তাকে আমি স্বেচ্ছায় ছেড়ে এসেছি বছর তিনেক আগে। সেই গতিময় শহর আমাকে ছাড়িয়ে চলে গেছে বহুদুর এ কয়দিনে। আমার কোন শহর নাই আর। আমি শুধু আটকে আছি শূন্যতায়। ব্যাগের মধ্যে ঘরের চাবি খুঁজতে খুঁজতে অসহ্য লাগে সব কিছু। দুই লক্ষ বছর আগে প্রথম যে মানুষ টা আফ্রিকার বাইরে পা রাখছিলো তাকে কি নিয়ত এই যন্ত্রনা সহ্য করতে হচ্ছিল? দু হাজার বছর পর যে মানুষ আরেক ছায়াপথে যাবে, তাকেও? মানুষের ইতিহাসে সব যাযাবরদের যন্ত্রনা যেন আমার উপর চেপে বসে…
অবশেষে চাবিটা পাওয়া গেল। হাতলে মোচড় দিয়ে দরজাটা খুলতে খুলতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলিঃ দাঁত চেপে আজ রাতটা কাটিয়ে দেবো। কাল তো সূর্য উঠবেই।
রিক্তা
-------------
মন্তব্য
ধন্যবাড রিসালাত বারী
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
ভালো
আবেগ টুকু ছুঁয়ে গেল।
ভালো থাকবেন আনন্দ বেদনায় ভালবাসায়।
ধন্যবাদ । আমি সবসময়ই ভালো থাকি। শুধু সারাদিন কাজ করার পর রাতের দিকে মন মেজাজ একটু বিলা হয় আর কি
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
ধন্যবাদ যাযাবর।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
, ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ কুমার।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
আরেকখানা মন্তব্য করেছিলাম। ওইটা দেখতেছিনা।
লিখা ভাল লাগল।
নস্টালজিকের গন্ধ পাইলাম।
লিখতে থাকেন।
পোস্টে +
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
বিশ্বাস করেন আমি মন্তব্য লুকাই নাই
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
সে তো জানি।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ভলইতো লাগলো।
ধন্যবাদ প্রৌঢ় ভাবনা।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
জোর করে ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোথাও থাকতে বা কিছু করতে হচ্ছে, লেখায় সেটাই বড় করে চোখে পড়লো। নিশ্চয় বাধ্যবাধকতা আছে কোনো। সেটি কাটিয়ে উঠে যেখানে ফিরে যেতে (বা যা করতে) ইচ্ছে হয়, সেখানেই ফিরে যেতে (বা করতে) পারবেন আশা করি। "দাঁত চেপে" দিন পার করা যায়, নতুন দিন আনা যায় না।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে না ঠিক। নিজের ইচ্ছায় পড়াশোনা করতে এসেছিলাম। শেষ করে চাকরিতে ঢুকে গেছি। সারাদিন খুব ভাল থাকি। শুধু সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় মনে হয় খুব কনফিউসড লাগে। আমার বাড়ি কোথায় আসলে?
আমার বিরাট একটা সুবিধা হচ্ছে দশ মিনিটের বেশি মন খারাপ রাখতে পারি না। দাঁত চেপে ঘরের ঢুকে বরের সাথে কিছুক্ষণ ঠিকমত ঘ্যানঘ্যান করতে পারলেই আবার মন মেজাজ ঠিক হয়ে যায় …
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
ক্ষণিকের ভাবনা তবে! ঠিক আছে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে কিছু করতে দেখলে কিংবা কেউ মন খারাপ করে আছে দেখলে ভালো লাগে না। কোথায় পড়েছেন? ইউওবটি?
রোজ সন্ধ্যায় মন খারাপ হলে ক্ষণিকেরই বা বলি কিভাবে? দেশ ছাড়ার আগে আমি ঢাকা ছেড়ে কখনো ৭ দিনও থাকি নাই। বোকা মস্তিষ্ক এখনো সেটাকেই ঘর মনে করে। সব প্রবাসীদেরই মনে হয় এই যন্ত্রনা নিয়ে বাঁচতে হয়।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করছি না অবশ্য। কিন্তু অনেক অবাস্তব ইচ্ছাও তো পূরণ হওয়ার না। যেমন টেলিপোর্টেশন
আপনার আন্তরিকতাটুকু খুব ভালো লাগলো।নাহ, আমার মাস্টার্স কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে, কিংস্টোনে।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
সম্ভব নয় বলেই তো "অবাস্তব" লাগাচ্ছেন ইচ্ছের সামনে। "টেলিপোর্টেশন" শুনে স্টার ট্রেক ফ্যানদের একটা পুরানো তর্কের কথা মনে পড়ে গেলো। কাউকে টেলিপোর্ট করলে কি আসলে তাকেই স্থানান্তর করা হচ্ছে নাকি অন্য জায়গায় তার আরেকটা কপি বানানো হচ্ছে। আচ্ছা, ভালো থাকবেন।
নস্টালজিক!
ভালো লাগলো পড়তে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ শিমুল। এই সুযোগে জানিয়ে রাখি, আপনার লেখা বিশেষ করে পিতাজী পুরাণ আমার একটু বেশি জোস লাগে।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
সব যাযাবরদের একই কাহিনী ।
কি আর করা।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
ভারি চমৎকার। পাঁচতারা পোস্ট।
চেনা চেনা ঠেকল কি?
..................................................................
#Banshibir.
বুঝলাম মিসিসাগার অই রেস্টুরেন্টটাতে আবার সিল দেওয়ার টাইম হইসে।
আপনাদের বন্ধু জানতে চায় আপনি টরন্টোর সব মেয়েকেই যে চেনেন তা আপু জানে?
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
সে আমার বন্ধু হইল কবে থেকে? জাতি ঝান্তে ছায়।
আইসা পড় যাবনে রেস্টুরেন্টে।
..................................................................
#Banshibir.
পৃথিবীর যেইখানেই যাও আকাশের রঙ এক। আকাশের রাজকীয় নীলের পাশে রামপুরার আধাখেচরা রঙ করা বাড়ি আর টরোন্টোর চকচকে স্কাইক্রেপার সমান বর্নহীন লাগে। -- ঠিক তাই! ভাল লাগল।
সুন্দর পোস্ট।
_________________
[খোমাখাতা]
নতুন মন্তব্য করুন