সি নাইন্টি নাইন নামের বিশাল উল্কাটি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে আর মিনিট দশেক মাত্র বাকি। উল্কাটির সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটলে বলতে গেলে দশ হাজার মেগাটন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়েকশ আনবিক বোমার বিস্ফোরন ঘটবে। ভয়াবহ স্নায়ুচাপ সহ্য করতে না পেরে এরই মধ্যে কয়েক লক্ষ মানুষ জ্ঞান হারিয়েছে।আত্মহত্যা করেছে অনেকে।
পাশাপাশি বসে আছে দুই বন্ধু। রজন ফিরে তাকায় মহির দিকে।‘তাহলে- জীবনের শেষ দশ মিনিটে কী করবি ভাবছিস?’
‘কিচ্ছু না, চুপচাপ আকাশের দিকে তকিয়ে থাকব। এভাবেই যদি মরণ লেখা থাকে তো তাই ভালো।’
‘উহু, এমন কিছু করতে হবে যা কোন দিন করিনি। করা হবেও না এ জীবনে।’
‘দেখ, আমি একটা কথা বলতে চাই।’ মাথা নাড়ল মহি। ‘ধর একটা স্বীকারোক্তি।’
‘কী বল?’
‘তুই জানিস না, আমাদের ভার্সিটির পরীক্ষায় তুই ফার্স্ট হয়েছিলি, আমি সেকেন্ড। বিরণ স্যার ছিল আমার আত্মীয়। আমাদের অফিস গার্ড আর রেজিষ্টারকে আমি হাত করেছিলাম। তারপর আমি হলাম ফার্স্ট আর তুই সেকেন্ড।’
খানিক্ষণ চুপচাপ তকিয়ে রইল রজন। ‘তিরিনার কথা মনে পড়ে? তোর মেইল হ্যাক করে আমি ওকে এমন একটা মেইল পাঠিয়েছিলাম যে তোদের সম্পর্কটাই ভেঙ্গে যায়।... অবশ্য শেষে আমিও ওকে বিয়ে করতে পারি নি।’
আবারও মাথা নাড়ল মহি, ‘যা হোক জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তো দু’জনে সত্যি কথাটা স্বীকার করলাম। বন্ধুত্বের মধ্যে সততা চিরকালের।’ হাত মেলাল দু’জন।
জাতিসঙ্ঘ সেনাবাহিনীর ছোড়া উনিশটি মিসাইলে মাঝ আকাশেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল সি নাইন্টি নাইন। শেষ পর্যন্ত পৃথিবী টিকে গেল।
বন্ধুত্ব টিকল না।
১৯শে আশ্বিন, ১৩২৮ বাংলা সন।
“গত ভাদ্র মাসের শুরু হইতেই আমাদের গ্রামে অপদেবতার ব্যাপক উৎপাত শুরু হইয়াছিল। সন্ধ্যার কিছুকাল পরেই পশ্চিম আকাশে উজ্জ্বল আলোর গোলক এমন পাগলের ন্যায় ছুটাছুটি আরম্ভ করিত যে লোকজন পালাইতে দিশা পাইত না। সন্ধ্যার পরে সকলে ঘরে ঢুকিয়া খিল আঁটিত। আজ তাহার সকল কিছুর অবসান ঘটিল।
উপেন ভট্টাচাযের বাড়ি হইতে তাঁহার মাতৃশ্রাদ্ধের বাৎসরিক নিমন্ত্রণ রক্ষা করিয়া বাড়ি আসিতেছিলাম। রাত্রি ঘন হইয়াছে। আমি ঈশ্বরের নাম স্মরণ করিতে করিতে পথ চলিতেছি। এমন সময় সেই উজ্জ্বল আলোর গোলক আসিয়া নানা কারবার দেখাইতে লাগিল। আমি সাময়িক জ্ঞানশূন্য হইয়া একখানা পাথর লইয়া মারিলাম ঢিল। পরম করূণাময়ের কৃপায় কী হইতে কী হইল! বিজলীর চমক দিয়া সেই উজ্জ্বল গোলকটি আসিয়া পার্শ্ববর্তী শ্যাওড়া গাছে আঘাত করিল। দেখি কাঁসার থালার ন্যায় চক্রাকার একটি কী বস্তু মাটিতে পড়িয়া বন বন করিয়া ঘুরিতেছে। কয়েক মুহূর্ত পরে তাহার ভিতর হইতে কী সব মাকড়া কিলবিল করিয়া বাহির হইতে লাগিল। আমি নিমেষেই খড়মপেটা করিয়া সবগুলি মাকড়া মারিয়া ফেলিলাম। অর্ধঘন্টার মধ্যেই যদু পাহারাওয়ালার সহযোগিতায় ঐ কাঁসার থালাটাসহ সবগুলি অপজীবকে তিন হাত মাটির নিচে পুঁতিয়া ফেলিতে সমর্থ হইয়াছি। আমার বাহুতে যে রামরক্ষনীয়া কবচটা ছিল তাহা ছিঁড়িয়া ঐ গর্তে সমর্পন করিলাম। আর কোন অপদেবতা গর্ত হইতে বাহির হইতে পারিবে না।
গ্রামখানাকে যে কী দুযোগ হইতে রক্ষা করিলাম তাহা আমিই জানি। বৃটিশরাজ জানিলে আমাকে রায়বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করিতেন। শুধু প্রচার বিমুখ থাকিলাম বলিয়া কেহ জানিতে পারিল না।আগামী প্রজন্ম এই খবর জানিতে পারিলে যে জোড়হস্তে আমাকে প্রণাম করিবে ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।”
নিলয় নন্দী
মন্তব্য
হরি পণ্ডিতের দিনলিপি'র জন্য ৫ তারা দিলাম। অসাধারণ!
আরো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহীনি চাই আপনার কাছ থেকে। সচলায়তনে স্বাগতম।
পুনশ্চ: গল্প দুটি আপনার লেখার জন্যেই দারুণ। ছবি দিয়ে তাকে 'ঠেকা' দেয়ার দরকার নেই। বিশেষত যদি সেগুলো নিজস্ব বা কপিরাইট মুক্ত ছবি না হয়!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কিছু কাকের ঠ্যাঙ আমিও আঁকতে পারি। তবে সময় বাঁচাতে অন্য পথ ধরেছি। পরবর্তী অণুতে আর ভুল হবে না।
আপনাকেও ৫ তারাখচিত ধন্যবাদ।
দুটোই চমৎকার! সাধুভাষায় রচিত প্রথম কোন সায়েন্স ফিকশন পড়লাম মনে হয়
সাধুভাষায় স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু সায়েন্স ফিকশন লিখ্ছেন।
-মেফিস্টো
ভালো লাগলো।
হরি পন্ডিতের দিনলিপি এর অংশটা কোটেশান এর ভেতর দেখলাম? লাইনগুলি মৌলিক কী ?
ছবির ব্যাপারে আমিও অনার্যদার সাথে একমত। ছবিগুলির কোন দরকার ছিলনা।
সচলে স্বাগতম।
ডাকঘর | ছবিঘর
লাইনগুলো মৌলিক। শুধু পুরোটা কোনো খাতা থেকে তুলে আনা হয়েছে বোঝাতে কোটেশন মার্ক ব্যবহার করা হয়েছে।
"গল্প দুটি আপনার লেখার জন্যেই দারুণ। ছবি দিয়ে তাকে 'ঠেকা' দেয়ার দরকার নেই।" আগে সেই আত্মবিশ্বাস থাকলে কি আর ছবি দিয়ে ঠেকা দেই?
অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
সচলে এটা কি আপনার প্রথম লেখা
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/43244
সচলে এটা দ্বিতীয় লেখা। প্রথমটা ছিল নিঝুম কুয়ো। লিংক দেয়াটা দৃষ্টিকটু কি না বুঝতে পারছি না।
ভাই রিসালাত বারী, আপনার প্রশ্নটা যে উত্তরের মোড়ক তা বুঝতে পারি নি। আসলে লিংক দেয়ার কায়দাটায় আমি খুব একটা পটু নই।
ঠিকাছে
চমৎকার ।
বাহ, দারুণ লাগলো তো গুটুলি আকারের সাইন্স ফিকশন দুটি। দুটোই কি মৌলিক লেখা নাকি অনুবাদ বা কিছুর ছায়া অবলম্বনে? আপনার লেখা আরও পড়তে চাই।
একদম মৌলিক লেখা, লিখেছিলাম গত নভেম্বরে। হাতে আরো ৮/১০ টি জমা আছে। স্বীকারোক্তি গল্পটির সাথে গতকাল থেকে প্রচারিত বাংলালিংকের টিভিসির থিমগত মিল দেখে ঝিম মেরে ছিলাম কিছুক্ষণ। পরে বুঝলাম এখনই প্রচার করতে না পারলে শখের গল্পের অণু ক্রেডিট হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই সচলে প্রকাশ। এই ভাবে রেসপন্স পাব ভাবতেই পারি নি। বাংলালিংককে ধন্যবাদ। এবং আপনাকেও।
আমার আগের গল্প নিঝুম কুয়ো একটু কষ্ট করে খুঁজে নিন সচলের গল্প সেকশনের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়।
স্বীকারোক্তি, কিছু কথা কখনো না জানাই ভালো।
ফক্স মোল্ডার হরি পন্ডিত কে পাইলে মারিয়া হাতের সুখ করিত, নিশ্চিত।
ফক্স মোল্ডাররে মিস করি ভীষণ
চমৎকার!
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
প্রথমটা বুঝে গিয়েছিলাম কী হতে যাচ্ছে , তবুও ভাল লেগেছে। দ্বিতীয়টা দারুণ
হরি পন্ডিত ভালো কাজ করিয়াছেন। মাকড়া চেহারার এলিয়েন দেখলে আমিও ঝাটাপেটা করতাম। তারপর ফক্স মোল্ডাররে খবর দিতাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
পড়ে ফেললাম এক নিমেষে। আর তারপর লগ ইন না করে থাকতে পারলাম না। স্রেফ মুগ্ধ হয়ে গেছি। এমন আরও আসুক!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আসবে, কথা দিলাম।
দারুণ!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
নাইস
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
পুরাই উল্কাপাত ঘটাইয়া ফালাইসেন। মচতকার--
-------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ--
সাধারণ গল্পের বর্ণনার ভঙ্গীটা দারুণ ছিলো।
প্রথম গল্পের শেষ লাইনটা অনেকটা বনফুলের কথা মনে করায়
আরো আসুক। (ছবি ছাড়াই আসুক !)
কথা সত্য। হরি পন্ডিতকে মাকড় মারার জন্য প্রণাম করিলাম।
আপনিও প্রণাম লউন। হরি পন্ডিতের দিনলিপির মত গল্প লিখা অত্যন্ত শক্তিশালী লিখকের লক্ষণ। অনেক বছর পরে যখন বিরাট গল্পকার হিসেবে সবাই দাম দিবে তখন আমার কথা স্মরণ কইরেন।
..................................................................
#Banshibir.
আমার প্রণাম গ্রহণ করুন।
প্রতি দিন কলম হস্তে লইবার পূর্বে পীরবাবার কথা স্মরণ করিব।
আরে না পাগল নাকি। আপনার হাতে অলরেডি যথেষ্ট শক্তিশালি কলম, পীরবাবাজির কথা বাদ দেন। লিখতে থাকেন প্রাণ খুলে।
..................................................................
#Banshibir.
চমৎকার দুটো গল্প!
যেহেতু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি তাই আনবিক/পারমানবিক বোমার বদলে নিউক্লিয়ার বোমা লেখা উচিত।
ঠিক !
অসাধারণ লাগলো...................
প্রথম গল্পটায় সায়েন্স ফিকশন ট্যাগ না লাগালেও মন্দ হতো না...................
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
অসাধারণ
দ্বিতীয় গল্পটা মারাত্মক!
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
কিছুটা আশংকায় আছি। হাতে যে সব গল্প জমা আছে তা কোনটাই হরি পণ্ডিতের উচ্চতাকে স্পর্শ করতে পারবে না। হঠাৎ expectation বেড়ে গেলে পরবর্তীতে আপনারা হতাশ হতে পারেন। তবু বাকি লেখাগুলোও আসছে কয়েক ধাপে।
শুভেচ্ছা রইল।
দ্বিতীয়টা দারুণ হয়েছে। চলুক!
মারাত্মক হইছে রে ভাই। খড়ম-পেটা কইরাও যে এলিয়েন মারা যায়, জানলাম। নাসা আইডিয়াটা পাইলে লুফে নিবে। তখন দেখবেন এদেশ থেকে আমরাও খড়ম রপ্তানি করতে পারতেছি।
লেখায় পাঁচতারা।
চলুক।
নাসা এলিয়েন খুঁজছে এটা জানতাম, মারার জন্য খুঁজছে এটা জানতাম না তো !
এলিয়েন ভাজা কি টেস্টফুল হবে?
হইতেও পারে।
ভাইরে ভাই! কী পড়লাম!! মারাত্মক!
বিবর্ন সময়
নতুন মন্তব্য করুন