মেডিকেলের মর্গে সামনে ভীড় লেগে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মর্গ মানেই প্রতিদিন দু'-চারটা অ্যাকসিডেন্ট, দুটা খুন, একটা আত্মহত্যার হ্যাপা সামলান। তাও এটা মফস্বলের মর্গ, ঢাকা শহর হলে যে কি হত, খোদাই মালুম। প্রতিদিনই এখানে লাশ আসে, প্রতিদিনই চলে যায়। মানুষের আর্তনাদের শব্দ আর কাকের কর্কশ ডাকে হাসপাতালের এই দিকটা মাতিয়ে রাখে।
আজকের রগড় মনে হয় অন্যরকম। সকালে এসেছি, শুনলাম কোন এক যুবনেতা ক্রসফায়ারে মারা গেছে। সকাল বেলাই তাই রাফি ভাই আমাকে পাঠিয়ে দিল, রিপোর্ট করতে। কি ছাতার রিপোর্ট লিখব তাই ভাবছিলাম।
মর্গের সামনে পুলিশের গাড়ি তখনো আসে নাই। আমি একটু আরাম করে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুকছি। হঠাৎ দেখি, মর্গের সামনে জটলা বেধেছে।
একটা মানুষ মর্গের সামনে বসে কাদছে। কে ওখানে?
সামনে এগিয়ে যেতে দেখি মর্গের বুড়ো ডোম হরিনাথ। উঠোনে বসে কাঁদছে। বেশ জোরে জোরেই কাঁদছে। কেউ কেউ সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু সে তার কানে যাচ্ছে বলে মনে হয় না। বুড়ো হরিনাথ আপন মনে চোখের জল ফেলছে আর আপনমনে কি যেন বিড়বিড় করে বলছে। মাঝে মাঝে গাল দিয়ে উঠছে, 'সব কটা মরবি বাঞ্চোতের গুষ্ঠি...ভগবান তোদেরকে ছাড়বে? ছাড়বে না...'
এখন জিজ্ঞেস করার যো নেই কি হয়েছে।আশেপাশে জিজ্ঞেস করব না, কারণ এরা দেখে মনে হচ্ছে কৌতুহল মেটাতে এসেছে। মর্গের সামনে অনেকেই আসে কৌতুহল মেটাতে। আসে, কিছু কৌতুহল মেটায়, তারপর চলে যায়। লাশের সাথে তাদের কোন যোগ নেই, কোন বিয়োগ নেই।। তবুও আসে, দেখে যায়। এদেশে অ-কাজে কৌতুহলী মানুষের সংখ্যা সবচাইতে বেশি।
ভীড় ঠেলে বের হয়ে আসতে গিয়ে দেখি, সুজন দাঁড়িয়ে আছে। সুজন এই মেডিকেলের নিরাপত্তারক্ষী। আমাদের মতই বয়স, আমাকে ভালো করেই চেনে। আমি ওকে ডাক দিলাম, 'সুজন, একটু শুনে যা তো!'
সুজন এগিয়ে আসল। আমাকে দেখে সবসময়ের হাসি হাসল না দেখে একটু অবাক হলাম। ধরা গলায় জিজ্ঞেস করল, 'কেমন আছেন?'
' এই তো, আছি একরকম। তুই কি করছিলি ওখানে? হরিপদ ওখানে পড়ে কাঁদছে কেন?'
হরিপদের কথা শুনে সুজনের মুখটা আরো গোমড়া হয়ে গেল।'এই কথা আর বলবেন না আকাশ ভাই, কি যে বলব আপনারে...। মানুষের জীবনে এমুনডা যে হয়, এইডা কেউ কইতে পারব?'
এরপর সুজন যা বলল, তা অনেকটা এরকমঃ
হরিপদ আজকে রাতে বাড়ি যায় নি। সারারাত মেডিকেলের পেছনে মদের আখড়ায় বসে ছিল। বাংলা গিলেছে, আর মেডিকেলের রান্নার লোক রইসের সাথে বসে বসে আড্ডা দিয়েছে। রাত তিনটের দিকে মদে চুর হয়ে হরিপদ মর্গের সামনে গিয়ে বসে। সুজন দু এক বা কোয়ার্টারে যেতে বলেছিল, কিন্তু কোন লাভ হয় নি। উলটো তেড়ে এসেছে হরিনাথ। সুজন আর জ্বালায় নি। চুপচাপ গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়।
ভোরবেলা, ঠিক চারটার দিকে একটা সাদা রঙের মাইক্রোতে করে দুজন লোক আসে। পুলিশের আইডি দেখিয়ে ভেতরে গাড়িটা নিয়ে ঢুকে যায়। মেডিকেলের ভেতরে জরুরী বিভাগে বেশ কিছুক্ষন ছিল ওরা। তারপর একজন গেটের সামনে সে সুজনকে বল, 'মর্গটা কোন দিকে বলতে পার?'
সুজন মর্গ দেখিয়ে দেয়। সুজন তেমন অবাক হয় না। আজকাল এরা প্রায়ই আসে। লাশের ময়না তদন্ত করে চলে যায়। উপরের আদেশ আছে, এদের যেন কোন প্রশ্ন না করে সে। করেও না সুজন। কেবল লাশের আসা যাওয়া দেখে।
যাই হোক, কতক্ষণ পর মনে হল মর্গের সামনে ঝগড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। সুজন এগিয়ে মর্গের সামনে এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে বুড়ো হরিনাথের সাথে লোকদুটোর ঝগড়া হচ্ছে । চেচাচ্ছেঃ ডাক্তারবাবু ছাড়া এই লাশে আমি হাত দিমু না। ডাক্তারবাবুরে ডাক দেও।
লোক দুটো কি যেন বুঝানোর চেষ্টা করে। হরিনাথ বোঝে না। ওরা কি যেন বলাবলি করতে থাকে। একজন শেষে হরিনাথকে বলে, ডাক্তার আসছে, সে যেন কাজ শুরু করে।
হরিনাথ তাও মানল না। মাতাল হরিনাথ বুড়ো গোঁ ধরে বসে থাকে। মর্গের দরজা আগলে দাঁড়িয়ে থাকে, কাউকে ঢুকতেও দেয় না।
লোকগুলো রেগে যায় হঠাৎ। সুজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হরিনাথের গালে চড় বসিয়ে দেয়। চেচিয়ে বলে 'করবি কিনা বল! নইলে আজকে তোরও লাশের ময়না তদন্ত হবে!
সুজন এগিয়ে যায়। ''আমি দাদারে বুঝাই, এরা ভালা না। কথা শুনে যাও। একটা লাশ, কুনো কামই না দাদার জন্যে। বুঝাইয়া আমি তার লইয়া যাই মর্গে।''
লাশ খোলার সময় সুজনকে লোকগুলো ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলে। ভেতরে কি হয় সেটা আর সুজন বলতে পারে না। এক ঘন্টা পর মাইক্রোবাসটা চলে যায়।তখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। সুজনও আরেক নিরাপত্তারক্ষীর কাছে ডিউটিতে রেখে কোয়ার্টারে চলে যায় ঘুমানোর জন্য।
ভোরবেলা সুজনের বৌ কলতলায় গিয়ে দেখে হরিনাথের ছেলের বৌ কলতলায় বসে হাউমাউ করে কাঁদছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বৌটা বলে, তার স্বামী নিশিনাথ কাল রাতে মারা গিয়েছে। সকালে কারা যেন তার লাশ তাদের বাড়ির সাম্ননে রেখে গিয়েছে।
'আমি দৌড়াইয়া গেলাম। হরিনাথ দাদায় তো মনে হয় কোয়ার্টারে নাই। আমি এক ছুটে গেটে কাছে আইলাম। আইসা দেখি হরিদাদার চোখ লাল, ফোলা ফোলা। অবাক হইলাম। আমি দাদারে ডাক দিতেই দাদায় কয়, 'সুজন, আমি আর কোনদিন বডিতে হাত দিমুনা...।ওরা আমারে দিয়া আমার পোলাডারে...'
সকালের সূর্য বেশ খানিকটা উপরে উঠল বলে। তবুও কেমন যেন শীত শীত লাগছে। জ্বর এল নাত আবার?
সুজন বলেই চলেছে, 'আমি তো পরথমে বুঝবার পারি নাই দাদায় কি কয়। মনে করছি মনে অয় কারো কাছ থেইকা হুইনা রাইতের ঘটনা আর সকালের কাহিনী তালগোল পাকাইয়া ফেলসে। পরে মনে হইল, এহনত লাশ দেহে নাই, শুনল ক্যামন কইরা? বুঝার পরে তো আমার বমি চইলা আইল। দৌড়াইয়া কলতলায় গিয়া বমি করছি।... আকাশ ভাই, এইডা কি হইল? '
আমি কিছু বললাম না। মুখটা কেমন যেন লাগছে।
এইটাই আমার রিপোর্ট?
মর্গের সামনে জটলা কম। সুজনকে রেখে আমি মর্গের দিকে এগিয়ে গেলাম। দরজার সামনে দেখি বুড়ো হরিনাথ বসে আছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে খোলা আকাশের দিকে। কিছু খুঁজছে নাকি ওই আকাশটায়?
পাশে গিয়ে বসলাম। হরিনাথ আমার দিকে তাকালো না। আমিও চুপচাপ বসে রইলাম। মাথাটা ব্যাথা করছে...জ্বর বোধহয় ভালো করে লাগল।
হঠাৎ করে হরিনাথ বুড়োর মুখে কথা শুনতে পাই। হরিনাথ বলে, 'নিশির হাতটা বড় ছিল। হাত বড় ছিল বইলা সব পোলাপাইন ওরে খেপাইত। নিশি কত্তবার এই কারণে মারামারি করসে, তার কোন হিসাব নাই। আমি ওরে কোনদিন মারি নাই, কোনদিন গাইল পারি নাই। নিশি নিজের মতন, ভগবানের হাতে ছাইড়া দিসি।
একটা সিগারেট দিলাম হরিপদকে। বুড়ো কাঁপাকাঁপা হাতে সিগারেট নিল।লাইটার দিয়ে ধরিয়ে দিতেই আবার শুরু করল,
'কালকে যখন ওই ব্যাটাগুলা লাশ নিয়া আসে, আমি তখন কিচ্ছু ঠাওর করতে পারি নাই। বডিতে পচন ধরসে, মাথায় গুলি লাইগা পুরাই ছ্যারাবেরা। গায়ে একসুতা কাপড়ও ছিল না। আমি বডিতে তহন হাতও দেই নাই, তহন দেহি নিশি আমার সামনে খাড়ায়া আছে। আমারে কয়, 'কি কর বাপজান'? আমি তাকাইয়া দেহি নিশি সামনে দাড়ায়া হাসে। আমি কোন কথা কই না, চুপ মাইরা বইসা থাকি। নিশি চুপচাপ দাড়াইয়া থাকে কতক্ষণ। হেরপর কয়, 'আইজকা এই বডি কাটআই তোমার শ্যাষ বডি কাটা।' অবাক হইয়া তাকাইলাম। দেহি নিশি চুপচাপ মলিন হইয়া দাড়ায়া আছে। হেরপর কয়, 'বাজান, দেরি কইর না। তুমি দেরি করলে বডি কাটব ক্যাডা?'
'উইঠা খাড়ায়া বডির কাছে গেলাম। বডিতে হাত দিলাম। হঠআৎ কি মনে হইল, হাত দুইডার দিকে তাকায়া থাকলাম। যহন বুঝলাম, তখন কানের কাছে শুনি, 'বাজান,আমি গেলাম। ভাল থাইক।'
হরিনাথ হাসপাতালের সামনের পুকুরের দিকে লাল লাল চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি চুপচাপ হরিনাথের কাধে হাত রাখি।তার চোখ দিয়ে দরদর করে জলের ফোটা বের হয়ে আসে। বিড়বিড় করে বলে 'আমার মতন রাক্ষসের হাত অনেক বডির উপর পড়সে। কিন্তু নিশির উপরে পড়ব এইডা ভাবি নাই।'
আমি বুড়ো হরিনাথের কাছ থেকে উঠে চলে আসি। রিপোর্ট লিখতে হবে। 'মৃত ছেলের লাশের পোস্টমর্টেম করলেন বৃদ্ধ পিতা'
প্রখর রোদে ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া মাটির খাজের সাথে বৃদ্ধ হরিনাথের চেহারার ভীষণ মিল।
।।।।।।।।।।।।।।।।প্যাপিরাস।।।।।।।।।।।।।।।
মন্তব্য
অসম্ভব ভালো লেগেছে।
ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে অনেকবার পোস্টমর্টেম দেখেছি। ৫ দিনের গলিত বাচ্চা থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ। আমার সহপাঠীদের অনেকেই প্রায়ই বমি করে দিত গন্ধের জন্য। আমাদের স্যার বলেন, এগুলো গন্ধ না, সেন্ট। অনেকে আবার আহা-উহু করত ছোট বাচ্চার লাশ দেখে। একবার একটা বাচ্চার লাশ পোস্টমর্টেমে গেলাম। গিয়ে দেখি বাচ্চা জন্মের পরে ফেলে দিয়েছে। ৫ দিনের বাচ্চা। পচে গলে একাকার। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এমনকি genetelia পচে গিয়েছিল, তাই বাচ্চাটা মেয়ে না ছেলে তাও বোঝা যাচ্ছে না। শুধু নিষ্পাপ মুখটা বোঝা যাচ্ছিল।
আবার বলছি, খুবই ভালো লেগেছে।
পোস্টমর্টেম সামনাসামনি দেখিনি। তবে মর্গে যাবার সৌভাগ্য হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ।
মনটা কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে গেল। সময়ের প্রতিফেলনই দেখা গেল লেখাতে।
সময়টাই এমন; যেখানেই যাই, বিষণ্ণতার পদচিহ্ন দেখতে পাই।
ভালো থাকবেন।
ভাল লেগেছে। লিখতে থাকুন।
মন খারাপ হয়ে গেল ।
নাওয়ারিদ
আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
লেখা খুব ভাল লাগল ।
মন খুব খারাপ হল ।
আরও লিখুন ।
শুভেচ্ছা ।
যতিচিহ্নের আগে স্পেস হয় না; পরে হয়।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
অনেক ধন্যবাদ।
আমি অন্য কিছু ভেবেছিলাম। যাই হোক ভাল লেগেছে (ইমো দিতে পারছিনা কেন?)
ইমো না, লিখতেও কেনো যেন সমস্যা হচ্ছে।
লেখা ভাল কিন্তু মন খুব খারাপ হল।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ভালো লেগেছে। চলুক।
আমি নিজে দু'বার মর্গের ভিতরে গিয়ে খোলা মৃতদেহ দেখেছি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমার দেখার অভিজ্ঞতা নেই, দেখতে হবে একদিন।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
নার্ভ খুব শক্ত না হলে দেখতে যাবেন না দয়াকরে, অসুস্থ হয়ে পড়বেন, লং টার্ম অসুস্থতা। বিশেষ করে যদি আপনজন কারো মৃতদেহ হয়, হাজার শক্ত নার্ভ হলেও যাবেন না প্লিজ।
আমি একবার স্বাভাবিক অবস্থায় এবং আরেকবার ড্রাঙ্ক অবস্থায় দেখেছি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ভয় পাইয়ে দিলেন তো...
আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে স্বাভাবিক জিনিসের তুলনায় অস্বাভাবিক একটা জিনিস মানুষের মনে অতি সহজেই দাগ কাটে। তাছাড়া, আমাদের আপনজনের সর্বশেষ দেখা চেহারাটাই মনের আয়নায় থেকে যায়। সেই সর্বশেষ দেখা চেহারাটা যদি হয় বিকৃত বা কাটাছেড়া একটা অবয়ব, তবে শত চেষ্টাতেও প্রিয়জনের সেই অস্বাভাবিক চেহারা মন থেকে তাড়াতে পারবেন না।
আমার এক মামা মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান কয়েকবছর আগে। তার টুকরো টুকরো শতটুকরো সারা শরীরটাকে জোড়াতালি দিয়ে জাস্ট একটা মানুষের মতো দেখতে- এমন কিছু একটা তৈরী হয়েছিলো। সেই ভয়বহ চেহারা আমরা মাত্র তিনজন আত্মীয় দেখেছিলাম। সেই মৃতদেহ আর কাউকেই আমরা দেখতে দেইনি। এমনকি আমার নানীকেও না। তারপর থেকে মামার কথা মনে পড়লেই সেই সর্বশেষ দেখা চেহারাটাই প্রথমে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। আমি আসলে কেনো জানিনা এগুলোতে তেমন একটা আক্রান্ত হইনা, তাই আমার কিছু হয়না। কিন্তু সবাই সম্ভবত আমার মতো নয়।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন