ইংল্যান্ডে বছর তিনেকের মত ছিলাম, প্রথম ওদের খাবার খেতে খুব কষ্ট হয়ে যেত। অবশ্য আস্তে আস্তে ভালই মানিয়ে নিয়েছিলাম।
চলুন আজকে ইংলিশ খাবার দাবার সম্পর্কে জেনে আসি।
ইংলিশরা আমাদের মত তিনবেলাই খায়। সকালের নাস্তা অবশ্যই ১১ টার মধ্যেই সেরে ফেলে। দুপুরের খাবার ২ টার মধ্যে এবং রাতের খাবার রাত আটটার মধ্যে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল দুপুর দুইটার পর এরা যাই খাক না কেন সেটাকে এরা ডিনার নামেই অভিহিত করে। প্রথম প্রথম এই ব্যাপারটাতে খুব অবাক হতাম।
ও আর একটা ব্যাপার আমি যতটুকু দেখেছি এদের দুপুরের খাবারের মেন্যু প্রায় একই থাকে। তবে রাতের খাবারে সালাদের ব্যাপারটাকে প্রাধান্য দেয়।
সকালের খাবার
ইংলিশদের সকালের বেশিরভাগ খাবারেই বেকন থাকে অথবা পর্ক সসেজ (দুইটাই শুওরের মাংস থেকে তৈরি হয়) এর সাথে থাকে ডিমের অমলেট, বিনস এবং ব্রাউন ব্রেড। আর কখনও কখনও হাশ ব্রাওন, যেটা সিদ্ধ আলু দিয়ে টোস্টের মত করে বানানো হয়।
আবার কেও কেও সাথে ভাজা মাশরুমও খায়। আর পানিয় হিসাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চা। এই চা কিন্তু বাংলাদেশি চায়ের মত না। এরা চা খায় গরম পানিতে একটা টি ব্যাগ সাথে কাচা দুধ আর খুব অল্প চিনি, দেখতে একবারেই টলটলে।
দুপুর এবং রাতের খাবার
ইংলিশদের দুপুর এবং রাতের খাবার নিয়ে লিখতে গেলে বই আকারে লেখতে হবে। দুপুর এবং রাতের খাবারের ব্যাপারে এরা খুব আয়েশি। আজকে এখানে এদের তিনটা জনপ্রিয় মেন্যু নিয়ে লিখব।
লাঞ্চ এবং ডিনারে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হল স্টেক। যেটাকে বাংলায় বলা যায় গরুর মাংস পিণ্ড। এই মাংস পিণ্ড গ্রিলে পুড়ে খাওয়ার উপযোগী করে সাথে লবণ মরিচ কিছুই থাকে না। এই স্টেক কয়েক প্রকারের হয়। আর এটা নির্ভর করে গরুর শরীরের কোন অংশের মাংস তার উপর। প্রধানত তিন ধরনের স্টেক হয়। যেমন রিব স্টেক, সারলায়ন স্টেক এবং রাম্প স্টেক। এই গুলা পোড়ানোর উপর নির্ভর করে কয়েক রকমের হয়। কেও বা কাচা কাচা খেতে পছন্দ করে। এটাকে বলা হয় রেয়ার। আর একটা হল অর্ধ সিদ্ধ সেটাকে বলা হয় মিডিয়াম আর মোটামুটি যেটা সিদ্ধ সেটাকে বলা হয় ওয়েলডান। এই স্টেকের সাথে এরা সাধারণত চিপস (বাংলাদেশে যেটা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই), কিছুটা সালাদ (সাধারণত ওয়াটার ক্রেস নামে এক ধরনের গোল গোল পাতা), গ্রিলে পোড়া টমেটো, ফ্রায়েড মাশরুম, ওনিয়োন রিংস আর কখনও কখনও ডায়ান সস নামে এক ধরনের সস যেটা বানানো হয় কনিয়াক এবং ক্যাপসিকাম দিয়ে।
ইংলিশদের আরেকটা জনপ্রিয় খাবার হল ফিস এন্ড চিপস। ইংল্যান্ডে তিন ধরনের ফিস সবচেয়ে জনপ্রিয়। কড, হাদক আর সিভাস। এর মধ্যে বেশি জনপ্রিয় হল কড। কারণ এটি দামে সস্তা অন্যগুলার চেয়ে। এরা আমাদের মত মাছ সিদ্ধ কিংবা ভাজি করে খায় না। সুপার স্টোরে সাধারণত ফ্রজেন কড পাওয়া যায়। যেটাকে বেসনে চুবিয়ে ডুবা তেলে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে টারটার সস নামে এক ধরনের সস দিয়ে খাওয়া হয় সাথে থাকে চিপস (ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস), পিজ আর লেবু। এই একটা ব্রিটিশ খাবার যে কোন বাংলাদেশিই পছন্দ করবে।
স্বাস্থ্য সচেতন যে কোন ব্রিটিশের খুব পছন্দের খাবার হল সালাদ। সালাদ যে কত ধরণের হতে পারে এটা ইংল্যান্ডে না আসলে জানতে পারতাম না। আমার দেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় সালাদ মেন্যু হল 'সালাদ চিকেন চরিজো' এবং 'সালাদ ডাক হয়সিন'।
সালাদ চিকেন চরিজো বানানো হয় গ্রিলড চিকেন, স্পিয়েনিস (পালং শাক), শসা, চেরি টমেটো (গোল গোল ছোট আকারের টমেটো), কাপ্সিকাম আর চরিজো (পর্ক দিয়ে বানানো হয়, কিভাবে বানায় জানি না!)
আর সালাদ ডাক হয়সিন ও প্রায় একই রকমের কিন্তু এখানে গ্রিলড চিকেন আর চরিজোর বদলে কুচিকুচি করে কাটা হাসের সিদ্ধ মাংস আর হয়সিন সস নামে এক ধরনের জাজালো সস ব্যাবহার করা হয়।
এই হল ইংলিশ খাবারের রকমফের। সর্বশেষ একটা কথা না বললেই নয়। ইংলিশরা পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যসচেতনার জন্য আস্তে আস্তে অনেকই নিরামিষভোজী হয়ে যাচ্ছে। তাই সবজির কদর এদের কাছে দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি ধকল যাচ্ছে বেচারা নিরীহ আলুর উপর। আলু যে কত ভাবে খাওয়া যায় না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। যেমনঃ মাশ পটেটো, নিও পটেটো, জ্যাকেট পটেটো, রোস্ট পটেটো আরও কত কি! যাই হউক আলুর গল্প আর এক দিন বলব।
--তোফায়েল মিয়াজী
মন্তব্য
ক্ষিধা লাগছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
কোনটা খাবেন?
আমারও (ইমো দিতে পারছি না কেন ?) এখানে মন খারাপের ইমো হবে। উৎসাহী পাঠকেরা নিজ দায়িত্বে বুঝে নিন।
বুজলাম না কাহিনি কি? গতকাল থেকে আমিও ইমো দিতে পারছি না।
"সিভাস" কি সি-ব্য়াস?
এই মাছ কি আসলেই চিপির দোকানে পাওয়া যায়? কড বা হ্য়াডকের চাইতে তো এ এর দাম অনেক বেশী। আর ব্য়াটারে ভেজে নষ্ট করার মত মাছ এটা মোটেও না। সি ব্য়াসের আসল মজা হল প্য়ানে অল্প মাখ্ন বা তেলে হাল্কা ভাজা, যেটা চিপির দোকানের কাজ না।
হুমম ঠিকই বলেছেন সি-বাস কডের মত করে খাওয়ার মাছ না। অসাবধানতার কারণেই এই নামটা চলে এসেছে। ধন্যবাদ।
ক্ষিধা লাগছে (জিভ দিয়ে পানি পড়ার ইমো হবে)!
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ঝটপট খেয়ে ফেলুন না!
দারুন একটা পোষ্ট। আমি আলুর বিভিন্ন রকম এর ব্যাপারে জানতে আগ্রহবোধ করছি। বেকড পটেটো দেখলাম ইউরোপ আমেরিকা দুইজায়গায়ি বেশ চলে। আমার নিজের ও বেকড পটেটো খেতে খুব ভালো লেগেছে।
বেকড পটেটোই ইংল্যান্ডে জ্যাকেট পটেটো নামে পরিচিত। চেডার চিজ দিয়ে খেতে খুবই মজা। পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
হ্যাভেন আর হেল-এর জোকটা মনে পড়ে গেলো।
দুনিয়াতে বেহেস্ত - আম্রিকান উপার্জন, বিলাতি ঘর, চৈনিক খাবার আর বাঙ্গালী বৌ
দুনিয়াতে দোজখ - আম্রিকান বৌ, বিলাতি খাবার, চৈনিক ঘর আর বাংলাদেশ-এর উপার্জন
ভাই চৈনিক ফুড শপে কেমন একটা গন্ধ নাকে লাগে, নাড়ীভুঁড়ি উল্টে আস্তে চায়। তবে আপনার জোক্সটা দারুন।
বিলেতি আমার দুটো প্রিয় খাবারের নাম বাদ গেছে, একটি হোল, শেপার্ডস পাই আর অন্যটি হোল রোষ্ট চিকেন উইথ রোষ্ট পটেটো। এগুলো আমি নিজেই এতো ভালো রান্না করি যে ইংরেজরাও খেয়ে বলে আহা কি খাবার
হুম শেপার্ডস পাই সাথে মিণ্টেড গ্রেভি। আমার নিজেরই মুখে পানি চলে এসেছে। ধন্যবাদ।
হ্যালিফ্যাক্সের একটু উত্তরে লূনেনবার্গ বলে এক জায়গায় খেয়েছিলাম ফিশ অ্যান্ড চিপস, সদ্য ধরা মাছ থেকে। কি যে অপূর্ব স্বাদ ভোলার নয়। এদের রোজা রমযান থাকলে এরা ইফতারে অবশ্যই ফিশ অ্যান্ড চিপস খেত।
লিখা চমৎকার, আরো চাই কিন্তু।
..................................................................
#Banshibir.
আমি যে কয়েক জায়গায় ফিস এন্ড চিপস খেয়েছি তার মধ্যে বেস্ট মনে হয়েছে ওয়েলসের কেনেটলি নামে এক গ্রাম-শহর জায়গায়। স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।
- আশ্চর্য আমার মনেও এসেছে অনেকবার।
আপনার চমৎকার প্রশংসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অফিস ক্যান্টিনে আমি পড়েছিলাম বিপদে। বৃট মাস্টার্ড দেওয়া স্যান্ডউইচ খেতে গিয়ে আমার তো নাকের পানি চোখের পানিতে একাকার। আবার মাস্টার্ড ছাড়া স্যান্ডউইচে পর্ক দেওয়া।
বৃটরা কিন্তু অনেক সময়েই দুইবেলা খায়। বেলা ১০-১১টার দিকে ওরা খায়। এটাকে ওরা বলে ব্রাঞ্চ। ব্রেকফাস্ট এবং লাঞ্চ মিলিয়ে হয় ব্রাঞ্চ। আমিও কিন্তু এই ব্রাঞ্চের দলের পাবলিক ছিলাম। হাউসে নিজে নাস্তা বানিয়ে খেতে বেজায় অনীহা আবার ১টা বাজা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে গেলে খিদেয় মাথার ব্রেইন আউট হয়ে যায়।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ব্রিট মাস্টার্ড আসলেই জব্বর জিনিস। তবে বিফের সাথেই ওরা মাস্টার্ড বেশি খায়। মাস্টার্ড সস দেখলেই কেন যেন আমাদের দেশের গরুর খাবারের কথা মনে পরে যায়।
লন্ডনার্সরা স্যান্ডউইচকে স্যামওয়িচ বলে, প্রথম শুনে হা করে মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম কি বলে?
তবে যে যাই বলুন ভাই, চট্টগ্রামের মেজবানের গরুর মাংস'র স্বাদ অতুলনীয়!
।। অজেয় ।।
মেজবান খাওয়া হয় নি কখনও। ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে, সে দেশে আসলেই এবার হবে।
নতুন মন্তব্য করুন