আমার খেলা বিপিএলনামা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০৩/২০১২ - ৯:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেক অনেক কাল আগের কথা, আমাদের এলাকার সরকারী বিজ্ঞান কলেজ মাঠে এক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হইছিল। টিমের কোচ আছিল মিন্টু ভাই। উনার কোচ হবার ইতিহাস ছিল একটু চমকপ্রদ। মিন্টু ভাই ফুটবল ভাল খেলতেন কিন্তু ক্রিকেটটা একেবারেই যাচ্ছেতাই। প্রথম প্রথম মাঠে নামতেন উনি খুব হম্বিতম্বি কইরা, ওপেনিং নামতেন ব্যাটিং এ। পোলাপান মানুষের খেলা আছিল, তখন প্রায় খেলাতেই তিনি ২৫ বলে ৫ রান করতেন। খেলতামই ১০-১৫ ওভারের খেলা, এর ভিতরে উনি একটু দীর্ঘ সময় যে দিনই টিকতেন আমাদের খেলার বারোটা বেজে যেত। কপাল ভাল রুপম, শুভ আর জনির মতন তিনটা গেইল টাইপ ব্যাটসম্যান আছিল। উনার লগে ওপেনিং এ নামত বিপ্লব আর তিন নাম্বারে আমি । দুই-চাইর বার আমি আর বিপ্লব ষড়যন্ত্র করে উনারে রান আউট ও করে দিছিলাম, কাঁহাতক আর এই যন্ত্রনা সহ্য হয় ! উনি কিন্তু যতবারই আমাদের দুই পান্ডাদ্বয় দ্বারা রান আউট হইতেন কখন ও মাইন্ড করতেন না, উলটা ব্যাটিং শেষ কইরা ফিরা উনারে “সরি” বললে কাধ ঝাকায়া খুব স্পোর্টিং মনোভাব নিয়ে বলতেন “এইটা খেলারই অংশ”। উনারে “সরি” বইলা তেল দেয়ার কাহিনী ও একটু পরেই বলতেছি। বোলিং করতেন অফ স্পিন, বল কইলাম আধা ইঞ্চি ও ঘুরত না। এইটা উনার জন্য একটা বিব্রতকর ব্যাপার ছিল, মহল্লার পোলাপান হাসাহাসি করত। আমাদের সেই সময়ে তখন বল করার আগের একটা অলিখিত আইন ছিল আপনে বোলিং করতে যাওয়ার আগে আম্পায়ার জিজ্ঞেস করত “কি বল?”। পোলাপান ও খুব ভাব মাইরা আম্পায়ারের দিকে তাকায়া বলত “রাইট আর্ম মিডিয়াম পেস বোলার”। যদি ভুলে ও বলে ফেলবেন “রাইট আর্ম ফাস্ট বোলার”, তাইলে নির্ঘাত আপনার কপালে টিটকারি আছিল। আম্পায়ার যেহেতু প্রতিপক্ষের কেউ সে অবশ্যই টিটকারি মাইরা কইত “ইস, শোয়েব আখতার আইছে” নাইলে কইত “ইস, ওয়াকার ইউনুস আইছে”। এখন মিন্টুভাই বোলিং পরিচয় সংকটে ভোগা শুরু করলেন, হুট কইরা একদিন এক ম্যাচে আম্পায়ার জিজ্ঞেস করার পরে বললেন “টপস্পিন বোলার”। আমরা আম্পায়ার , ফিল্ডার, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানেরা ফ্যালফ্যাল কইরা উনার দিকে তাকায়া রইলাম। আমরা তখন ও কচিকাচার আসর, তাই মনে মনে নিজেরে বুঝ দিলাম হইব হয়ত কিছু একটা আমরা জানি না। ম্যাচ শেষ কইরা উনারে জিজ্ঞেস করলে উনি প্রত্যুত্তর দিলেন “ এইটা খুব বিরল প্রজাতির একটা বোলিং, সবাই পারে না। কি কি দুই-চাইরটা প্লেয়ারের নাম বললেন, তারা ছাড়া আর কেউ এই “টপস্পিন” নামের মায়াজালে হাত পাকাইতে পারেন নাই। বলাইবাহুল্য, গর্বে বুক, পেঠ দুইটাই ভইরা উঠছিল। পেঠ ভইরা উঠনের কারন ছিল, আমরা সবাই তখন মহল্লার নতুন হওয়া মিনি ফাস্টফুডে। তখনকার দিনে এইটা খুব অপ্রচলিত একটা খাবার ছিল। প্রতিদিন খেলা শেষ হইলেই আরো মিনিট তিরিশেক ঐ দোকানে খেলা নিয়া আলোচনা হইত, উইথ বার্গার,কাটলেট,হটডগ, পিজা এবং কোমল পানীয়। তাই মিন্টু ভাইয়ের কথা ও আমরা খুব মনোযোগ দিয়াই শুনতাম আর উনার বোলিং কইরা বেদম রান দিয়া ম্যাচ হারানির কথা ও ভুইলা যাইতাম। এলাকার মুরুব্বি বড়ভাইরা কেমনে কেমনে জানি উনার “টপস্পিন” বুজুরকি ধইরা ফালাইল। শুরু হইল উনার ব্যাটিং স্টাইল আর বোলিং নিয়া হাসাহাসি। মিন্টু ভাই বেদম মন খারাপ কইরা অবসর নেয়ার ঘোষনা দিলেন এবং বিদায়ি ম্যাচ খেলার ঘোষনা দিলেন। খেলা শেষ হবার পরে আমরা দুইদল মিলে উনার মাথার উপরে তলোয়ারের মতন ব্যাট উচায়া ধইরা গার্ড অফ অনার দিলাম। আমাগো ভিতরে নুরুন্নবি আছিল একটু পেটুক আর বদ কিসিমের। পোলাডা কি মনে কইরা চোখ দিয়া পানি বাইর কইরা ফালাইল সম্ভবত ভাবছিল আর খাওন কপালে নাই। মিন্টু ভাই ওরে জড়ায়া ধইরা প্রবল আবেগের সাথে ঘোষনা দিলেন, এই টিম ওনার সৃষ্টি, উনি এই টিম ছাইড়া যাবেন না। আজকা থেইকা উনি এই দলের কোচের গুরুভার কাঁধে নিলেন। শুরু হইল মিন্টু ভাইয়ের কোচিং জামানা, স্কুল শেষ কইরা মাঠে যাওনের পরে লালদীঘির মাঠ পুরাটা একবার চক্কর দিতে হইত, তারপরে ফিল্ডিং এবং ব্যাটিং প্র্যাকটিস। তবে উনার ফিল্ডিং প্র্যাকটিসটা অসাধারনই ছিল, দলের মোটামুটি সবাই বড় হয়ে এলাকায় নামকরা সব ফিল্ডার হইছিল। যাই হোক, টুর্নামেন্টের গীত গাইতে আইসা মিন্টু ভাইয়ের গীত বেশীই গাওয়া হয়া গেল, এইটার কারন ও অবশ্যই আছে। টুর্নামেন্টে মিন্টু ভাইয়ের কোচিং এ আমরা সেমিফাইনালে উঠি। টুর্নামেন্টের নাম আছিল কি এক রোপ্য কাপ , এখন ভুলে গেছি। সেমিফাইনালে আমরা হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে মিরপুরের এক টিমের সাথে হেরে যাই। খেলা শেষে মিন্টু ভাই, আমাদের সবারই মন খারাপ। পরেরদিন আমি স্কুলে ক্লাশে, টিফিন টাইমে বেলা দুইটায় হঠাৎ মিন্টুভাইয়ের দূত আইসা হাজির, বেলা তিনটায় ফাইনাল খেলা । এখনই মাঠে মিন্টু ভাইয়ের কাছে রিপোর্ট করতে হইব। ক্লাস পলানিতে আমার কোন কালেই কার্পন্য ছিল না, এইবেলাতে ও হইল না। কিন্তু মাথায় কিছুতেই কিছু আসতেছিল না, এইটা কিভাবে সম্ভব ! মাঠে গিয়ে শুনি যারা আমাদের হারিয়ে ফাইনালে উঠছিল তারা আসতে পারবে না, কিন্তু তাই বইলা ফাইনাল ম্যাচে তো আর ওয়াকওভার দেয়া যায় না। কমিটির একটা মানইজ্জত আছে, প্রধান অতিথি যিনি আসবেন তার ও একটা মান ইজ্জত আছে। তাই মিন্টু ভাইরে তারা জরুরী ভিত্তিতে টিম নিয়া মাঠে চইলা আসতে বলছে। আসল কাহিনী হইল , প্রতিপক্ষদলকে বহনকারী মাইক্রোবাসটিকে মিন্টু ভাইয়ের ছোটভাই মানিক রাস্তাতেই আটকায়া দিছিল। তাগোরে অস্র ঠেকায়া ফেরত পাঠায়া দেয়া হইছে। সেই মানিকই আবার ঐ টিমের এক ছেলেরে কমিটির কাছে নিয়া গেছিল এবং বইলাইছিল তারা খেলতে আসতে পারবে না। মানিক এইবার কমিটিরে বলল তারা যেহেতু আসবে না, তাইলে আমাদের টিমরে খবর দেয়া হোক। মানিক কইলাম আবার ঐ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজকদের ও একজন আছিল। আজকে পত্রিকা পড়ে বিপিএলের খবর পড়ে হঠাৎ করে পুরানো স্মৃতি জাগান দিয়ে উঠল। মিন্টু ভাইর সাথে যোগাযোগ নাই প্রায় এক যুগ হয়ে গেল। উনারা এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তবে উনি এবং উনার ভাই দুইজনেই যেইরকম ক্রিকেটপ্রেমী, উনাদের দুইজনেরই বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটি অথবা অন্য কোন পদে থাকাটা অসম্ভব না। মনে হচ্ছে আমার এখন উনাদের খবর নেয়াই উচিত, কিছু ফাও টিকেট যদি পাওয়া যায় !


মন্তব্য

সুপ্রিয় দেব শান্ত এর ছবি

আপনার লেখার স্টাইল পছন্দ হয়েছে। লেখাটাও ভালো লেগেছে।

তোফায়েল মিয়াজী এর ছবি

ভাল লেগেছে।

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

ভাই, পড়তে গিয়ে কয়েকবার খেই হারিয়ে ফেললাম প্রথম কয়েক লাইনেই। লেখা ভাল আপনার; কিন্তু একটা প্যারাই এতো বড় হলে পড়া কঠিন।

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

একটু ব্রেক দিয়ে লিখলে হয়তো আরও ভালো হতো।
আর আপনার নামটি তো জানা হল না...... পরবর্তীতে লেখার নিচে নাম দিয়ে দিলে ভালো হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।